আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট
বৌকে মেয়েকে কি বলে তার রাক্ষসের কথা
কবি, কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক অনুপম মুখোপাধ্যায়– এর শুভ জন্মতিথিতে ইরাবতী পরিবারের শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুবকামনা। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য থাকলো অনুপম মুখোপাধ্যায়-এর একগুচ্ছ কবিতা।
বন ও জীবন
বনে গেলেই আমি পেয়ে যাব নতুন জীবন
হাতিদের উঁচু গুঁড়ি শীতের দুপরে
আমার প্রতিটা ভুল- জনশূন্য মন্দিরের ভাঙা অন্ধকার
বাঘের শিকার যথা হরিণের টেনে ছেঁড়া ছালে
বিখ্যাত গাছেদের গোপন কোটর
লুকিয়ে রাখব আমার অচেনা মুকুট
না চেয়ে পেলেও এই মন্ত্রণা ঠিক
যে দিনের আলোয় নেই ছায়ার আমেজ
হরিণের খুরে সেই দিন জ্বলে যায়
আমি দেশপ্রেমিক
তোর ইটরঙের দুঃখ খুলনার জানলা থেকে
রাজস্থানের শীতের কথা বলে
তোর সিমেন্টরঙের সুখ কলম্বোর জানলা থেকে
তামিলনাড়ুর গ্রীষ্মের দিকে আসে
হরপ্পার রাত এসে ঢাকতে চাইছে তোর
বহরমপুরীয় শরীর আর খুঁত
সেক্স করার পরে তোর একটুও তেষ্টা পায় না
উৎসবের পরে তোর গোড়ালি লেগে
জলভর্তি কলস উলটে যায়
দ্যাখ মা সারা দেশে রাষ্ট্রহীন জল গড়িয়ে যাচ্ছে
তোর সঙ্গে তোর বাড়ির মহার্ঘ্য উপনিবেশে
আমার তো এটুকুই আঞ্চলিক থাকা
অশ্বমেধ
ফুলের অন্তর ফুঁড়ে লাফিয়ে ঢুকছে সেই আরবী ঘোড়া
ঘোড়ার পাপড়ি খাবো
ফুলের মাংসও
স্তনবৃন্ত ছিল শিশ্নের শিখর
ভগাঙ্কুর ছিল নেশা পেরিয়ে যাওয়া খাঁড়ির নোঙর
শীৎকার চিনে নিতে তবু কেন লেগে গেল সমস্ত জীবন
হোক হোক
শুরুর আগেও কিছু মৈথুন হোক
চাঁদের কিডনি
মানুষ ঘৃণা করতে করতে উন্মাদনার জঙ্গল হয়ে যাচ্ছে
ভালবাসা ঘৃণার চেয়ে কিছুটা নিরাপদ
সমুদ্রের ধারে যেখানে অনন্তের আগাছা ওপারেও
প্রেম করতে করতে তুই টান মেরে খুলছিস
চাঁদের উজ্জ্বল কিডনি
অল্প দুধে জিভ দিচ্ছিস
গরম গরম উচ্ছল পেচ্ছাপ
জিভ তো সবারই গরম
কারো কারো ঈষৎ গোলাপি
বাতাস যখন ছেয়ে আছে সাংঘাতিক বাতাসের বীজে
নার্শিসাস
নিজেকে যে ভালবাসি খুব অনায়াসে তা বোঝা গেল না
জীবন আমাকে করেছে হলুদ পাতাটি
জীবন আমাকে করেছে সবুজ শিকড়
অত জ্ঞানী নই
প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র তো নই
নিজেকে চেনার চেয়ে নিজের প্রতি টান
বোঝা তাই কঠিন
লাক্ষা ও পাসপোর্ট
স্মরণীয় কিছু আমি এ জীবনে স্বীকার করি না
সারিবদ্ধ স্মৃতি না কি পিয়ানোর দাঁত
কুয়াশার মধ্যে নামে ঝর্নার জল
তার দেহ ধরতে না পেরে
অথচ কিছু লোক মনগড়া নাম পেয়ে যায়
আমারও বাগানে আছে জঙ্গলের ছায়া
জাঁতি থেকে ছিটকে যায় সুপারির গুঁড়ো
পুত্রবধূর নাম মনে করতে গিয়ে
আমারও বাবা শুধু লাক্ষা আর পাসপোর্ট খোঁজে
বীভৎস মফস্বল
ট্রেন যত ধীর হয় ওভারব্রিজ তত জোরে কাঁপে
সনাতন হোটেলের নীলাভ ঋজু ধোঁয়া
নত হয় বেঁকে যায়
পরশ্রীকাতরভাবে রাস্তায় বসে যায়
বৃষ্টিভেজা ক্লান্ত বাতাসের চাপে
খ্যাপা কুকুর সামনে এলে বৃদ্ধ রিক্সাচালক প্রাণপনে
পিচ্ছিল ব্রেক আঁকড়ে ধরেন
মফস্বল শহরের এইসব বীভৎস ছবি দেখতে
শিরাওঠা লোকটি মনে মনে পেনিট্রেট করেন
তাঁর নির্বোধ গৃহিনীর অলিন্দ অবধি
হিংস্রভাবে চা খান বাড়ি ফেরার আগে
ভাত-পোড়া রুটি
।
চমৎকার রাত এই। অ্যাত ভালো ঘর
আমাকে খাওয়ার। ২-টো রুটি বেলে রেখো
।
রুটিগাছ ঢেকে দ্যায়। জানালার আলো
সে বাড়িতে থাকি আমি। ভাত খাই রাতে
।
রাজনীতি করা লোক। মাঝরাতে ফিরে
।
বৌ কি বলেছে তাকে। দুপুরের রোদে
কে তার কব্জিতে মৃদু নখ রেখেছিল
।
দুয়ার গুটিয়ে গেলে। থুতুটি লাগাই
হাঁয়ের সুবাস। জাগে বাড়ির ভিতর
।
বুকে থাকে পোড়া দাগ। ভাত-পোড়া রুটি
আঙুলে না ছেঁড়া গেলে। দাঁত দিতে হয়
।
খড়ের প্রতিমা
।
ধান ক্ষেতে খেতে এসেছিল খড়ের প্রতিমা
খেল। মুখ মুছে নিল। উঠে চলে গ্যালো
।
কী যে পরে এসেছিল। বোঝাই গ্যালো না
শাড়ি। নাকি সালোয়ার। লেহঙ্গা অহং। না স্কার্ট
।
খড় কিছু পড়ে আছে আলো-ছায়া খড়
হিমপথে লেগে আছে। উমের ঝালর
।
পাগল ছাড়ো রাখো পা
।
পাগল। রেখেছে তার পা আছে কোথায়
জানালায় সার্ট ছিল। ডো রা কা টা সার্ট
।
চেয়ারে গামছা ছিল। পরে বোঝা গ্যালো
বালিশ হাফিস হলে খাট চলে যায়
।
আগুন টিনের চাল। বেড়াল ফেটেছে
তাকে কে বরফ দ্যায়। কে দ্যায় লোশন
।
আমি। যাকে মেরেছি সে। কনুই আমার
রেখে গেছে গোল টাকা। লয়ে মম প্রাণ
।
বরফে মরেছি আমি। লোশনে মরেছি
নিজেকে গরম সুখ। কোন মার দ্যায়
।
শীতের নূপুর
।
হ্যালো জেন। কী যে নাম। সোডিয়াম আলো
মেঘ এসে ঢেকে দেবে। সে বালাই নেই
।
জানালা বেঁকেছে। তার কাচ অনুসারে
যৌনতা ছাড়াও কিছু নির্জনতা পরিবার হয়
।
অসংখ্য বুদবুদ। আর বাতাসের পাশে
চা-দোকান ছায়া মেখে বুঁদ হয়ে আছে
।
ছায়া দাস। বসে আছে। জ্যোৎস্নার দাসী
কে যেন দু-হাত মেলে তাড়িয়ে দিয়েছে
।
পাঁচিল জড়িয়ে আছে। ডিসেম্বর মাস
হাত দিই। উঠে আসে। ভরা ইটভাটা
।
দপ্ করে মুছে গ্যালো। সিঁড়ির হাতল
গিয়ার বদল করে। কপিশ বাইক
।
ওভেনের পাশে রাখা। ঘরোয়া রবার
খাঁ। খাঁ। ধূ। ধূ। শুনশান। শুধু বিবরণ
।
ঘুমের প্রস্তুতি নেয়। শীতের নূপুর
বিছানার পাশে মিহি নাচ সেরে নেয়
।
ন্যুড
।
হাওয়া যে ঘিরেছে দেহ। তাই হোল ন্যুড
রঙের বাহিরে কোনো ক্যানভাস নেই
।
সুতোতেই ঢেকে যায় এমন শরীর জীবন
পৃথিবীতে আজও আমি নজর করিনি
।
দেবীর কোমরে দোলে কাটা হাতগুলো
মায়ের যোনিটি দ্যাখে। সে সাহস নেই
।
শরীরে সভ্যতা নেই। পোশাকেও নেই
যে কোনো আড়াল থেকে। রস খসে যায়
।
মনের পাথর। তার সুখস্থান নেই
চোখের সমান মাপে হাত ফুরিয়েছে
।
মেয়েদের জলে ভাসে। এ মুখ আমার
ঠোঁট রেখে জিভ চাই। এমন অসুখ
।
পাথরকে কাটি। যথা। মূর্তির পোশাক
যে কোনো দূরত্ব থেকে। সেক্স করে নিই
।
।
মগ হোল সিংহাসন। কফি। হ্যাঁ প্রতিমা
ফ্যানা থেকে উঠে আসে কফির প্যাকেট
।
মগ। দিয়ে খুলে নাও ঠোঁট আর দাঁত
কফি আর চলবে না। চিবুকে হোঁচট
।
কফির যা বৌ হয় কফির তা বর
কফিগাছ স্পার্ম দ্যায় ক্যাফে’র দেবীকে
।
কফির জরায়ু। যথা। শীতল বাগিচা
কফি হয় পিয়াসের। উত্তাপের নয়
।
কফি তার রঙে আছে। রং মেরে দাও
আমি ভাবি কফি ফেলে রেখে কফি খাওয়া বেস্ট
।
দুধ ছাড়া কফি। কফি। কালো হয়। কফি
সেখানে সে সাদা মগ খেলিয়েছে বেশ
।
বাহ অসাধারন সবকটি কবিতা ।
শুভ জন্মদিন কবি সম্পাদক ।