| 16 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

ইরাবতী অণুগল্প: হিসেব । অমিতা মজুমদার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
রমাপদ গোয়ালঘরের খুঁটিতে বাঁধা আসন্নপ্রসবা গাইকে হাতে ধরে জাবনা খাওয়াচ্ছিল। খাওয়াতে খাওয়াতে আড়চোখে ঘরের দাওয়ায় বসে সেলাইরত বৌয়ের দিকে দেখতে থাকে। দেখতে দেখতে রমাপদর হিসেব কষা শুরু হয়ে যায়। মনে মনে হিসেব কষে গতবছর গাইটাকে কিনেছিল ত্রিশহাজার টাকায়। এই একটা বছর যত্নআত্তি করে পালন করতে খরচ হয়েছে হাজার পনেরোর মতো। দিন পনেরোর মধ্যেই মানে  পূর্ণিমার দুই একদিন আগেপরে বিয়োবে বলে মনে হচ্ছে। গাইয়ের যা লক্ষণ তাতে চার কেজি সারে চার কেজির কম দুধ দেবে বলে মনে হয় না। ভালো করে তাজাঘাস খুদেরজাউ  ভুষি খাওয়াতে পারলে পাঁচকেজিও দিতে পারে। আজকাল খাঁটি দুধের কেজি একশ টাকার কম নয়।নিজেদের আর বাছুরের জন্য রেখেও তিন-সারে তিন কেজি দুধ বিক্রি করতে পারবে। তাহলে তার রোজ আয় হবে কম করে হলেও তিনশ টাকা।মাসে নয় হাজার,বছরে আয় হবে একলক্ষ আটহাজার টাকা। টানা দুইবছর তো সে দুধ বিক্রি করতে পারবে অনায়াসে।
না রমাপদ মানুষটা আবার বেশি লাভের আশায় দুধে জল মেশানোর কথা ভাবে না।তার একটাই সমস্যা সে সব কিছুতেই লাভক্ষতির হিসেব করে। এই জন্য সে বাজার করতে চায় না,নিজের ক্ষেতের আলুটা,মুলাটা,পুঁইশাক,পুকুরের কলমি শাক,কচুরলতি এসব দিয়েই চালিয়ে নিতে বলে। দু’একদিন যে একটু ভালোমন্দ খাওয়া দরকার বা মন চায় রমাপদ সেটা মানতে চায় না। তার কথা হলো কাহাতক পয়সা খরচের কি দরকার। পেটভরা নিয়েতো কথা। এই রমাপদর যেদিন থেকে মা তাকে বিয়ে করিয়েছে সেদিন থেকেই বৌয়ের উপর রাগ,মায়ের উপরও রাগ। কি দরকার ছিল সংসারে বাড়তি একটা মানুষের! বেশতো ছিল মায়ে বেটায়। এই বৌ আনতে কত খরচ হলো তার,মা বলে কী সুন্দর লক্ষ্মী প্রতিমার মতো মেয়ে। এই মেয়েকেই বৌ করে আনতে হবে। তা আনা হলো বৌ করে। বিয়েতে এককাড়ি টাকা খরচ করে মা কত কী করলো। শুধু কী তাই? বৌ আসার পর একটা মানুষের খাওয়াপরার খরচতো বাড়লই তার সাথে আজ এটা কাল এটা। বায়নাক্কার অন্ত নেই। লাল শাড়ি,স্নো-পাউডার,রেশমি চুড়ি, সেলাই ফোঁড়াইর সুই সুতা,আরো কতো কী! জলের মতো টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। কিছু বলতে গেলে মায়ের সেই এককথা বৌ এখন পোয়াতি,তাই যা চায় তাই এনে দিবি।সেদিন তো হদ পার করে দিলো। বলে নরেন ময়রার দোকানের গুড়ের জিলিপি আর রসমালাই খাবে। এই যে গাইগরুটাও তো বিয়োবে দু’দিন পর,কিন্তু তারতো কোনো বায়না নেই। আবার বিয়োনোর পরপরই কী সুন্দর দুধ দেবে। আর বৌয়ের তো বাচ্চা হলেই আর একটা খাওয়ার মুখ বাড়বে। তার পিছনে কত কত খরচ হবে সে হিসেব করতে গেলে তো রমাপদ পাগল হয়ে যাবে।
এতক্ষণে হাতের জাবনা শেষ হয়ে গেছে। গোরুরও পেটভরে গেছে। সে সানন্দে রমাপদর হাত চাটতে থাকে।আর তাতেই সম্বিৎ ফিরে আসে রমাপদর। নাঃ এসব কী ভাবছে সে। বৌতো তাকে অনেক যত্ন আত্তি করে,তাদের ঘর গৃহস্থালি সামলায়,মাকে সেবাযত্ন করে। তার বিনিময়ে তাকে এটুকুতো দিতেই হবে। আর যে আসছে ! সেতো আমাদের সন্তান, তার ভালো থাকার জন্যই তো সে এত হিসেব করে চলে সে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত