| 29 মার্চ 2024
Categories
শারদ সংখ্যা’২২

শারদ সংখ্যা গল্প: অশ্বথামা হত ইতি গজ । জয়তী রায়

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

                                           

   

    আমি অশ্বথামা। হ্যাঁ মশাই। মহাভারতেরই । এত অবাক হবার কি আছে! আমি  অমর। সে যুগেও ছিলাম। এ যুগেও আছি। আরো কত যুগ ধরে থাকব, নিজেই জানি না।

     এখন, এই মুহূর্তে অন্ধকার রাতে, চিৎ হয়ে শুয়ে আছি কলকাতা শহরের ময়দানে। আকাশে তারার মেলা। চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। হাল্কা মেঘ। শরৎকাল না কি? কি জানি ? মাস দিন বছর সব ভুলে যাই আজকাল।  পুলিশ টুলিশের ভয় নেই। আমি দেখা দিলে, তবে লোক  দেখতে পাবে আমায়। এই একটা সুবিধা আছে। নইলে, এই বিশাল লম্বা চওড়া চেহারা,  কপালে একটা মণি ছিল, সেটা খুঁচিয়ে বার করে নিয়েছে, ভীম অর্জুন তাই সেখানে বড় গর্ত লোকের চোখে পড়তই। অদৃশ্য হবার মন্ত্র জানা থাকায়, সুবিধে অনেক। 

    

   আপনাকে এসব কথা কেন বলছি? কারণ, আপনি একজন সাধারণ মানুষ।  পাঁচহাজার বছর আগে হোক বা এখন… শুনে যাওয়া আপনাদের কাজ। শুনতে শুনতে হাই উঠতে পারে, বিরক্ত লাগতে পারে! ক্লান্ত লাগতে পারে। ঠোঁট কামড়ে, চোখ উল্টে ভাববেন কেন শুনব অশ্বত্থামা-র কাহিনী? বলে, হাতি ঘোড়া গেল তল মশা বলে কত জল। নেতাদের ভাষণ শুনব, অর্জুনের প্রেমের গল্প শুনব, দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ হাঁ করে গিলব না কি শুনব অশ্বত্থামা-র কথা! পুরো মহাভারতের যাঁর অবদান শূন্য। বরং , শেষ পযর্ন্ত তাঁর কু কীর্তির জেরে গোটা পৃথিবীর জীবন সংশয় হতে বসেছিল। 

  শুনুন মশাই, যা রটে তার সব সত্যি হবে এমন কিন্তু বলা যায় না। তাই শুনে নিন। ক্ষতি কি! বসেই তো আছেন। জেনে নিন , বলা যায় না, কাজে লাগতেও পারে। কমসে কম তর্ক করতে পারেন কারো সঙ্গে।

 

 আপনার চোখে প্রচুর প্রশ্ন।  ভাবছেন মহাভারতের মানুষ এমন ভাষায় কথা বলে কেন? আরে ধুর মশাই, আমি তো যুগের সঙ্গে আছি। যুগের মতই কথা বলব। এ আর বড় কথা কি! 

      

  স্নেহ! জানেন কি, মনের দুঃখ বা মানসিক ব্যাধির প্রধান কারণ হল স্নেহ? জানেন না? মনসো দুঃখমূলং তু স্নেহ ইত্যুপলভ্যতে। এ শ্লোক আপনার ঐ ব্যাসদেবের রচিত। এর মানে হল, মানুষ স্নেহের বশেই এমন ভাবে জড়িয়ে যায় যে, এক সময় সেটাই তার মানসিক ব্যাধি তৈরি করে। স্নেহ অতি বিষম বস্তু হে। স্নেহ থেকেই মানুষের যত দুঃখ ভয় শোক চেষ্টা ক্লেশ … ! পরিণতি? ভয়ঙ্কর! 

    অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের একমাত্র পুত্র ছিলাম আমি। চোখে হারাতেন। বুকের মাঝে সাত রাজার ধন মানিক ছিলাম আমি তাঁর। 

    

    প্রথম জীবনে  বাবা ছিলেন, সাধাসিধে ব্রাহ্মণ। অস্ত্র বিদ্যা শিখেছিলেন। কিন্তু তখনো তেমন কাজে লাগান নি। পাহাড়ের কোলে ঘর ছিল।  কৃপী আমার মায়ের নাম। বেশ ছিলাম তিনজন মিলে। অভাব ছিল প্রচুর তবু বেশ ছিলাম।

    কনকন শীতের রাতে, বাবা জড়িয়ে নিয়ে ওম দিতেন শরীরের। 

  : ধনী হতেই হবে , বুঝলি আশু। অনেক অর্থ।  যেন কোনো অভাব না থাকে। দুধের বদলে সাদা জল যেন খেতে না হয়। 

   বিড় বিড় করে ক্রমাগত বলতেন দ্রোণাচার্য।

আমি ছোট। বাপ ন্যাওটা ছেলে। বলতাম: কেন বাবা?  বেশ আছি। 

: কিসের বেশ আছিস? দুধ দিতে পারি না তোকে। 

: লাগবে না দুধ । তুমি কোথাও যাবে না। 

: না রে। কোথাও যাব না। যেতেই হবে না। অন্ধকারেও ধরতে পারলাম, বাবার  গলায় বেজেছে বিশ্বাসের সুর: 

আমার বন্ধু এখন মস্ত রাজা। চল । কালকেই যাই তাঁর কাছে। তারপর দ্যাখ তোকে কত দুধ খাওয়ানো যায়। 

 সে এক রাজা বটে। কি তাঁর ঐশ্বর্য। কি তাঁর দাপট!  পাঞ্চাল রাজ দ্রুপদ!  বাবার ধুতির খুঁট ধরে অবিশ্বাসের গলায় বললাম:

 এই তোমার বন্ধু? 

: ওরে হ্যাঁ রে। 

বলেই দরাজ হেসে বললেন:

 ওহে দ্রুপদ। দেখো, আমার ছেলে অশ্বথামা, বিশ্বাস করতে চাইছে না, তুমি আমার বন্ধু। এসো হে। সিংহাসন থেকে নাম দেখি। বুকে জড়াই। 

 চোখ বুজে ফেললাম ভয়ে। যেন এখুনি একটা অঘটন ঘটবে! 

এখনো মনে আছে, রাজার কর্কশ কণ্ঠ: 

এ্যাই। কে আছিস। দরিদ্র ব্রাহ্মণকে দুটি চাল কলা দিয়ে বিদায় কর। 

বাবার ধুতির খুঁট টেনে  বেরিয়ে আসতে আসতে বললাম:

 চলো। চলো। আর একটুও থাকবে না। চলো। 

বাবা কেমন একটা হেসে বললেন: 

যাবি? তা চল। রাস্তায় মিঠাইয়ের দোকান থেকে জল খাস বরং।আসলে, রাজ কাজের এত চাপ…! দ্রুপদ আর পারে না। 

 ওই ঘটনায় বদলে গেল সব। বদলে গেল বাবা। চোখ গুলো কেমন লালচে হয়ে থাকত। সব সময় রাগ রাগ ভাব। হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজে যাচ্ছে। মা আমাকে ঠেলে দিতেন: 

বাবাকে এমন করতে বারণ কর। 

আমি বলতাম: 

তুমি বলো মা। 

মা মলিন হেসে বলতেন: 

তোর বাবা আমাকে পছন্দ করেন না। তোর জন্মের পর থেকে, তোকে নিয়েই তিনি ভালো থাকেন। 

তখন বড় হচ্ছি। বাবা মায়ের সম্পর্ক স্বাভাবিক না, বুঝতে পারি একটু একটু। 

মা সুন্দরী নন তেমন, কারণ কি সেটাই? 

  দ্রোণাচার্য তখন টগবগ যুবক। একবার তাকালে চোখ ফেরান মুশকিল। যাতায়াত শুরু করেছেন হস্তিনাপুর রাজসভায় । সেখানে বিদুষী সুন্দরী নারীদের দেখেন। মা কি সেটাই বোঝাতে চাইল?

    অবশেষে সুদিন এলো।    ব্রাহ্মণ হলেও দ্রোণাচার্যের খ্যাতি ছিল অস্ত্র বিদ্যায়। জুটে গেল চাকরি। হস্তিনাপুর রাজ্যের রাজপুত্রদের অস্ত্র শিক্ষা দেবার কাজ।

   অর্থের সঙ্গে সঙ্গে সম্মান উপচে পড়তে লাগল। প্রচুর বেতন। সঙ্গে বসবাসের জন্য নিজস্ব প্রাসাদ। ততদিনে উপযুক্ত প্রতিশোধ নিয়েছেন দ্রুপদ রাজার উপরে। পায়ের নিচে বসে ক্ষমা চেয়েছে‌ সে।  তবু, বাবা সুখী নন। মুখে হাসি নেই।  হঠাৎ হঠাৎ তাকিয়ে দেখতেন আমার দিকে। স্বপ্নে পাওয়া চোখ তুলে বলতেন: 

  তোকে সব দেব। সব। সম্মান পাবি। অর্থ পাবি। আমার জায়গা একদিন তোর হবে। 

  আমি মন্ত্রমুগ্ধ। স্বপ্ন সঞ্চারিত হচ্ছে ভিতরে ভিতরে। দ্রোণাচার্য যেন পিতা নন। যেন ঈশ্বর। 

তিনি ফিসফিস করে বলতেন: 

আশু! তোর মনে আছে, দুধ দিতে পারিনি একদিন। আজ তোকে কৌরব রাজসভায় উঁচু পদে দেখতে চাই। সেরা অস্ত্রগুলো শেখাব তোকে। 

আমি সন্দেহর গলায় বলতাম: 

আমি তো রাজপুত্র নই! 

: তাতে কি? তুই বড় হয়েছিস ওদের সঙ্গে। কোনো অংশে তুই কম নোস। 

সে ই স্নেহ! অন্ধ অনুরাগ। সর্বনাশা মায়া কাজল! আমিও ফাঁদে পা দিলাম। ময়ূরের বেশ ধারণ করলে ময়ূর হওয়া যায় না। রাজপুত্র আর আমার অবস্থানের ফারাক হাজার যোজন। এ সত্য মেনে নিতে পারলে, জীবনে সুখী হতাম জানেন! আজ মণি হারা জীবন্ত প্রেতাত্মার মত ঘুরে বেড়াতে হত না। 

  দ্রোণাচার্য স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেই স্বপ্নের আগুনে জ্বলে যাচ্ছিলাম আমি। গুরু পুত্র হিসেবে খাতির কম ছিল না। ধনুর্বিদ্যায় আমার সমকক্ষ তখন কেউ নেই। অর্জুন পযর্ন্ত সমীহ করে।  এমন কি সমবয়সী রাজপুত্রদের মাঝে মাঝে অস্ত্র শিক্ষাও দিতাম আমি। কিন্তু, শান্তি ছিল না মনে! ভালো লাগত না কিছু। বেতনভোগী রাজকর্মচারী হতে চাই না আমি। চাই, রাষ্ট্র শাসনের ক্ষমতা। আমার কাছে আছে ব্রহ্মাস্ত্র, আছে ব্রহ্মশির অস্ত্র যা দিয়ে ধ্বংস করা যায় পৃথিবী। অথচ , আমার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই! এ জ্বালার কথা আপনাকে বলছি বটে, বুঝবেন কি না জানি না। সাধারণ মানুষ বড় সুখী । তাদের কোনো স্বপ্ন নেই। তাদের যন্ত্রণা অনেক কম। 

   রাজপুত্রের দল তখন রাজ্য রাজনীতিতে ঢুকছে।  রাজ্য শাসনের ভার নিচ্ছে। কিন্তু, আমার গুরুত্ব শুধু দ্রোণাচার্যের পুত্র হিসেবে। তার বেশি কিছু না।  গুরুপুত্র এসেছেন। বসতে আজ্ঞা হোক, জল খেতে আজ্ঞা হোক আর রাজ কাজের বেলায় যত পরামর্শ করবে কর্ণের সঙ্গে। আমাকে ডাকবেই না।  মাথা গরম হয়ে যেত। রাষ্ট্রের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হত কর্ণের সঙ্গে পরামর্শ করে। কেন? সামান্য সারথির পুত্র সে। আমার থেকে কোন অংশে  পারদর্শী? সে তো বাইরের লোক! ভীষন মন খারাপ লাগত। নিজেকে কেমন অবাঞ্ছিত মনে হত। পায়ের উপর পা তুলে মিটিমিটি হাসত কর্ণ। আড়ালে চিমটি কেটে বলত: 

  যত চেষ্টাই করো, তুমি থাকবে গুরু হয়ে, রাজা হতে পারবে না। 

চিৎকার করে উঠতাম: 

  তুই চুপ কর স্বার্থপর। তোকে দেখে নেব আমি। 

: দুর্যোধনকে একটা কথা বললে, তোমার শাস্তি হবে নির্বাসন। চুপচাপ থাকো । যদি নিজের ভালো চাও। 

: তুই দাঁড়াতে পারবি আমার অস্ত্রের সামনে? 

: বেতন ভোগী দাস যাঁরা, তাদের অস্ত্র রাজার সেবায় উৎসর্গিত। তোমার অস্ত্র বলে কিছু নেই আর। স অ ব দুর্যোধনের। 

  বলে , সে কি হাসি কর্ণের! আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম, দুর্যোধন আমাকে বিশ্বাস করে না। তার কারণ ঐ কর্ণ। ও বুঝিয়েছে দুর্যোধনকে, যে, মনে মনে আমি আর বাবা পাণ্ডবদের প্রতি অনুরক্ত! এ রটনা ছিল মিথ্যা। আমরা পাণ্ডবদের পছন্দ করলেও, একশ ভাগ বিশ্বস্ততা দিয়েছিলাম দুর্যোধনকে। বাবার মাথা নিচু দেখতে ভালো লাগত না। বাবা হেরে যাচ্ছিলেন। আমার অসম্মান ছুরির মত গেঁথে যাচ্ছিল তাঁর বুকে।  পৃথিবী বিস্বাদ লাগত। মনে হত, ব্রহ্মশির অস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে দেব না কি সমস্ত কিছু? যা আমার কাজে লাগল না, তাকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ! সবসময় ক্ষিপ্ত থাকত মেজাজ। লোক এড়িয়ে চলত আমাকে। দিনে দিনে একলা হয়ে যেতে লাগলাম।   

    কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ চলছে তখন। কৌরব পক্ষের সেনাপতি নির্বাচন শেষ। কর্ণ নির্বাচিত। আমি নই। সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার। আমার জায়গা ঠিক কোথায় , চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দুর্যোধন।  মহামতি ভীষ্মর পতন হয়েছে।  সেনাপতি হিসেবে দ্রোণাচার্য কাঁপিয়ে দিচ্ছেন যুদ্ধক্ষেত্র।  বিলাস বহুল শিবিরে  থাকতেন বাবা। আমিও আছি তাঁর সঙ্গে। যুদ্ধ শেষে রাতে বসে থাকতাম দুজনে। বাবা আর আমি। 

বাবা তাকাতে পারতেন না আমার দিকে। 

স্বপ্ন বুনেছেন কিন্তু ফসল জ্বলে পুড়ে গেছে। তিনি ফিসফিস করে বলতেন: 

সব দোষ আমার। দোষ আমার। আমি বুঝিনি। বুঝিনি। 

 : কারো দোষ না বাবা। দোষ আমার ভাগ্যের। জন্মে যার প্রতারণা, দুধের বদলে যাকে খেতে হয় পিটুলি গোলা, কর্মে সাফল্য মেলা অসম্ভব তাঁর। 

:  শোনো পুত্র, ভেবেছিলাম আমার পরে তুমি সেনাপতি হবে। সে আশা সফল হবার কোনো লক্ষণ আমি দেখছি না। 

: থাক বাবা। 

: বলতে দাও আজ। নির্বোধ উচ্চাশার অন্ধকারে ঠেলে না দিয়ে, যদি আমি তোমাকে জীবনের সঠিক রাস্তা দেখাতাম, তুমি সুখী হতে অশ্বত্থামা। 

বাবা চুপ করে বসে রইলেন। তাঁর বুকের মধ্যেকার ভয়ানক তোলপাড় অনুভব করতে দেরি হল না। রাত গভীর। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভেসে আসছে আহতের চাপা গোঙানি। বুভুক্ষু শৃগালের চিৎকার।  আগামীকাল যুদ্ধ আছে। আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরে শয্যায় নিয়ে গেলাম। 

     পরের দিন । দ্রোণাচার্য সেদিন অজেয়। কেউ সামনে দাঁড়াতে পারছে না। ওইরকম রণ উন্মত্ত সময়, কে যেন ওনার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল: 

  অশ্বথামা নিহত। অশ্বথামা নিহত। 

উনি আমল দিলেন না। পুত্র তাঁর মহাবীর। পুরো বিশ্বাস আছে। বললেই হল আর কি! তিনি মন দিয়ে যুদ্ধ করতে লাগলেন। পান্ডব পক্ষ ত্রাহি ত্রাহি রব তুলল। 

এবার সামনে এলো সত্যবাদী যুধিষ্ঠির। মৃদু স্বরে, অনিচ্ছার সঙ্গে বললে: 

 অশ্বথামা হত। ইতি গজ:! 

দ্রোণাচার্য তাকালেন। হাত থেকে খসে পড়ল ধনুক বাণ। তিনি বিশ্বাস করলেন।  ধৃষ্ট্রদ্যুম্ন দৌড়ে এসে চেপে ধরল চুল, কচাৎ করে কেটে দিল গলা। 

     তখন সূর্য মধ্যগগনে। যুদ্ধ শেষ হতে দেরি ছিল । হঠাৎ বেজে উঠল শঙ্খ। যুদ্ধ আজকের মত শেষ। কুরুক্ষেত্রের অন্য প্রান্তে ছিলাম আমি। বুকের মধ্যে কেমন ধড়াস করে উঠল। আকাশ জুড়ে হো হো হো করে কেঁদে উঠল কারা? নেই? আর নেই? চলে গেছেন পিতা? বাবা? গুরু? আমারই জন্য চলে গেলেন? আমার নামে মিথ্যা না বললে, পৃথিবীর কোনো শক্তির ক্ষমতা ছিল না, তাঁকে হত্যা করে! 

  এত স্নেহ! এত মায়া! এত অন্ধত্ব! এত উদ্বিগ্ন ছিলে তুমি! এতটুকু বিশ্বাস ছিল না আমার উপর! 

চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, একজন যোদ্ধা হয়ে অস্ত্র ফেলে দিলে কেন?

যোদ্ধার ধর্ম ভুলে গেলে? অশ্বত্থামা হত! কি হল তাতে? অর্জুন পুত্র হারা হয় নি? যুদ্ধ মানেই তো তাই। তুমি অস্ত্র ত্যাগ কেন করলে? 

  

  পাঁচ হাজার বছর ধরে ঘুমোতে পারি না। চোখ বুজলে দেখি , ছোট্ট ছেলে চলেছে বাবার হাত ধরে। তারপর …! 

  প্রতিশোধ নিয়েছিলাম। নির্মম হত্যা করেছিলাম। হত্যার উত্তরে হত্যা করে   শান্তি এলো না। ছিন্নমূল হয়ে ঘুরছি। ঘুরছি। এক যুগ থেকে অন্য যুগ। আরো কত বছর ঘুরে বেড়াতে হবে কে জানে! 

শুনুন মশাই। বলে রাখি, যত বড় বিশ্বাসী বন্ধু এসে যাই বলুক, নিজের অস্ত্র ফেলে দেবেন না। সন্তানের মৃত্যুর খবর পেলেও , লড়ে যাবেন । দেখবেন, শেষ পর্যন্ত মিথ্যার কালো আবরণ ঠেলে ফেলে আপনি বিজয়ী হবেন। 

চলি। আবার কখনো দেখা হবে। অশ্বত্থামা হত? ফু:!

     

  

     

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত