| 24 এপ্রিল 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-১১) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-১১। 


 

 

ইমন বলল,“কেন? রাগ হবে না? গতবছর আমার ব্যাগ থেকে  জ্যামিতি- বক্স ঝেঁপে দেয় নি? বল।“

 এরকম একটা ঘটনা গতবছর ঘটেছিল। ইমন একটা সুন্দর জ্যামিতি বক্স এনেছিল। তা নাকি নির্ঝর  ঝেঁপে দিয়েছিল। তা ওর ব্যাগে পাওয়া গেছিল। রাজ অবশ্য বিশ্বাস করে নি। ইমন যেমন স্বভাবের, ও যে কারুকে ফাঁসাতে পারে। রাজ এখন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলল,“ফালতু বদনাম করছিস কেন? তুইও জানিস নির্ঝর এরকম করতেই পারে না।

ইমন বলল,”তুই তো ওর হয়ে বলবিই।

 রাজ বলল,- “যা সত্যি তা বলবই তো। তাছাড়া নির্ঝর আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।

ইমন বলল,“ফাইভে কিন্তু আমি তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।“

রাজের মনে পড়ল সে কথা।  সত্যি কথা।  একসময় ইমনই তার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল।রাজের মনে পড়ল সুর্যনাথ হাই স্কুলে  ক্লাস ফাইভে প্রথম  ক্লাস শুরু হবার দিনটার কথা। তখন সে ভয়ে কেদেঁকেটে লাল। মায়ের হাত সে কিছুতেই ছাড়ছিল না। অনেক কষ্টে মা তাকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়েছিলেন ।মা তাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন। মা বলেছিলেন,“কিসের ভয় রে বোকা।আমি আছি বাইরে। এই দ্যাখ না। তোর কত বন্ধু।“

রাজ কাঁদতে কাঁদতেই চারদিক দেখেছিল।  সে আগে যেখানে পড়ত  সেটা এত বড় ছিলনা। সিঁড়ি ভাঙতে হত না। এখানে স্কুলে ঢোকার মুখেই মস্ত বড় একটা লোক গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছিল। রাজের বুক ধকপক করতে শুরু করেছিল। একটা মাইকে কে কিসব নির্দেশ দিচ্ছিল। আরো ভয় পাচ্ছিল রাজ।মায়ের হাত শক্ত করে সে ধরেছিল।মা কিছুক্ষন থাকার পর ক্লাসের মধ্যে তাকে একা রেখে ধীরে ধীরে চলে গেছিলেন। রাজ  সেকেণ্ড বেঞ্চে বসে কিছুক্ষন  একা একা কাঁদার পর থম মেরে বসেছিল।ভয়ে ভয়ে সে অন্যদের দিকে তাকাচ্ছিল।

এ সময়ই সে পেছন থেকে একটা ঠেলা খেয়েছিল। সে চমকে পেছনে তাকিয়েছিল। সে দেখছিল  একটা মোটাসোটা চেহারার ছেলে তার সামনে একটা লজেন্স ধরে আছে। রাজ হাত বাড়ায় নি। তার যেন লজ্জা হচ্ছিল। ছেলেটি তাকে আবার একটা ঠেলা মেরে বলছিল,“ কি রে? নে?“

এবার নিয়েছিল রাজ।দু-হাত দিয়ে আগে চোখ মুছে নিয়েছিল।ছেলেটা বেঞ্চ টপকে তার পাশে এসে বসে বলেছিল,“আমি ইমন। তোর নাম কি রে?ভেউ ভেউ করে কাঁদছিস কেন?”

রাজ কান্না থামিয়েছিল। নিজের ভাল নাম বলেছিল।কিছুক্ষন যাবার পর তার সঙ্গে ইমনের বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল।


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-১০) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


এখন তা মনে পড়লে ওর মুখে হাসি ফুটল।কে জানে কবে ওর সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল!  সে তবু এখন জোর করে বলল,“কেন? এখনো আমরা বন্ধু আছি।“

ইমন কাঁধ ঝাঁকাল। তার মানে কথাটার কোন মানে নেই। তা সত্যি।রাজ একটা শ্বাস ছাড়ল।এখন তাদের ফাইভের মত বন্ধুত্ব নয়। ইমনকে নিয়ে সে একদম ভাবেই না। বরং তার আচরণে সে বিরক্ত। অথচ একদিন ছিল  ইমন না এলে তার সময় কাটত না! স্কুলে দুজন পাশাপাশি বসত। ছুটি হলে একসঙ্গে বেরোত।

ইমনের কারণেই তা নষ্ট হয়ে গেছে। ও খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে পড়াশুনার করার বদলে গোলমাল পাকিয়েছে। ওর সাথে বন্ধুত্ব রাখা সম্ভব হয় নি।

রাজ আর মাথা ঘামাল না এখন। সে বলল,“ অত ভাবিস না। যা হবার হবে। এখন তো খেলি।“

ইমন শুনল।কিন্তু উত্তর দিল না।

রাজ ধীরে ধীরে মাঠে ঢুকল। ইন্দ্রদা অঘোষিত ক্যাপ্টেন। স্যার না থাকলে সবাই তার কথা শোনে। সে তাকে দেখে বলল,“যা! আগে দু-পাক দিয়ে আয়। তোর বন্ধু নির্ঝর কোথায়?”

রাজ মাথা নাড়ল। সে একবার রাস্তার দিকে তাকাল।সত্যিই তার চিন্তা বাড়ছে। এই তো একটু আগে তাকে “আসছি” বলে গেল। তারপর ওর আসার নাম নেই। সে ঠোঁট উলটে বলল,” জানি না।“

“ও বাদ দে। শোন। তোর আমি খেলা দেখেছি।তোর কিন্তু ট্র্যাপিং-এ প্রবলেমআছে।“

রাজ হাঁ করে শুনল। খেলার নানারকম টার্ম সে শুনছে এখন।ইন্দ্রদা অনেকদিন ধরে খেলছে। তারা জানেও। সে বলল, ” কি বললে? বুঝলাম না।“

ইন্দ্রদা বলল, “আমার দিকে তাকা। এই যে যখন তুই বল রিসিভ করছিস  তখন গোড়ালি মাটিতে  রেখে পা উঁচু করবি। তাহলে দেখবি ট্রাপিং মানে বল রিসিভ করতে সুবিধা হবে।

“খুব জ্ঞান দিচ্ছিস না, বাচ্চা পেয়ে?”

স্যার কখন এসেছেন তারা কেউ দেখতে পায় নি। ইন্দ্রদা পেছন ফিরে স্যারকে দেখেই জিভ কামড়াল।সে বিড়বিড় করে বলল,“না স্যার। মানে!”

স্যার রাজের দিকে তাকিয়ে বললেন,“ইন্দ্র ভুল বলে নি। ওর কথা ফলো করিস। এবার চল শুরু করি খেলা।“

রাজরা  প্র্যাকটিশ শুরু করল। সে আনমনে রাস্তার দিকে তাকাল। নির্ঝরের পাত্তা নেই !

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত