Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,উপহার

তৃতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা অণুগল্প: উপহার । চুমকি চট্টোপাধ্যায়

Reading Time: 3 minutes

ডিম্পির বিয়ে। তাজ বেঙ্গল হোটেলের সব কটা ব্যাঙ্কোয়েট বুক করেছে ডিম্পির বাবা রোহিত শর্মা। রোহিত- মধুজার একমাত্র মেয়ে ডিম্পি বিয়ে করছে শহরের অন্যতম বড় জুয়েলারি চেনের মালিকের ছোট ছেলেকে।

বিশাল আয়োজন। রোহিত মস্ত বড় ব্যবসায়ী। রিয়েল এস্টেট, কোল্ড স্টোরেজ, গ্যালারি, কী নেই ব্যবসার তালিকায়। তার মেয়ের বিয়েতে প্রবল জাঁকজমক হবে তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে! কোনো পক্ষই কম যায় না। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ!

জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ঢুকে মধুজার আলাপ হয়েছিল রোহিতের সঙ্গে। পাশ করে রোহিত পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেয়। সেই ব্যবসা রোহিতের হাত ধরে ফুলে ফেঁপে ওঠে, সংখ্যাতেও বাড়ে।

রোহিত মধুজার বিয়ে হয়ে যায়। মধুজা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরিতে ঢুকেছিল। বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে ব্যবসাতেই ঢুকে পড়ে। পরিবারের সকলে মিলে ব্যবসা দেখাশোনা করার ফলে তরতরিয়ে এগোয় ব্যবসা।

মধুজা আর ঋতজা দুই বোন। পৌনে দুবছরের ছোট বড়। ভারি মিল দুজনের। একেবারে বন্ধুর মতো। ঋতজা দিদিয়া বলতে অজ্ঞান আবার মধুজাও বোনকে চোখে হারায়। ওদের এমন সম্পর্ক অনেকেরই আলোচনার বিষয়।

মধুজার বিয়ের পর অনেকদিন মুখ গোমড়া করে ছিল ঋতজা। প্রতিদিন নিয়ম করে বোনকে ফোন করে মধুজা। দিদিয়ার ফোন পেলেই উল্লসিত হয়ে ওঠে মধুজা, ‘ দিদিয়া,তুই ঠিক আছিস তো? সারাক্ষণ তোকে মিস করছি। ভাল্লাগছে না। ‘

বোনের গলার স্বরেই তার দিদিয়া বুঝতে পারে বোনের চোখে জল। মধুজা তড়িঘড়ি বলে, ‘ কালকেই যাব তোর কাছে, মন খারাপ করিস না। ‘

এভাবে কিছুদিন চলার পর দুজনেরই খানিকটা অভ্যেস হয়ে যায় একে অপরকে ছেড়ে থাকার। মধুজার বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ঋতজার বিয়ে ঠিক হয়। 

পরিচিত মহল থেকেই সম্বন্ধ আসে। স্বচ্ছল পরিবার। দুই ভাই, বাবাকে নিয়ে সংসার। মা নেই। বড় ছেলে প্রতীমের বউ হতে যাচ্ছে ঋতজা।

বিয়ে হয়ে যায় ঋতজার। কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে হিরের সেট বোনকে দেয় মধুজা। ভগ্নিপতি প্রতীমের জন্য দামী স্যুট থেকে শুরু করে ঘড়ি, জুতো, সোনার চেন — সে এলাহি তত্ত্ব সাজিয়ে দেয় মধুজা।

বিয়ের পর স্বভাবতই দুই বোনের যোগাযোগ আগের মতো থাকে না। ঋতজার সংসার আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই। মধুজার সংসারে যেমন গন্ডা কয়েক সাহায্যকারী, ওর তা নেই। দুজন ঠিকে লোক আছে ঠিকই তবে ঋতজাকেও কিছু কাজ সামলাতে হয়।

মধুজার সন্তান আসে। ডিম্পি জন্মায়। খুশির বন্যা বয়ে যায় ওদের সংসারে। পরিবারে মেয়ে কম তাই মেয়ে হওয়াতে বাড়তি খুশি হয় শর্মা পরিবার। ঋতজাও উল্লসিত। খুশি মধুজা-ঋতজার বাবা মা-ও।

দিন যায়। মধুজার সঙ্গে যখনই ঋতজার কথা হয়, দিদিয়ার বৈভবের গল্পে ভেসে যায় মধুজা। ডিম্পির জন্য কী প্ল্যান ওদের, সেসব শুনে অবাক হয় সে। কোথাও কি হীনমন্যতা জন্ম নিচ্ছে মনে ? ওর যখন সন্তান হবে, তার জন্য কি এত কিছু করতে পারবে মধুজা-প্রতীম? সম্ভবই নয়।

এখন কালেভদ্রে কথা হয় দুই বোনের। ঋতজা একটু এড়িয়েই চলে দিদিয়াকে। ওর গল্প শুনলে দিনভর মন খারাপ থাকে মধুজার। মনে হয় যেন জীবনে কিছুই পাওয়া হল না তেমন ভাবে। অকারণে প্রতীমের সঙ্গে খিটমিট করে। তার থেকে এই ভালো। দিদিয়া ওর মতো থাক, আমি আমার মতো থাকি।

ডিম্পির বিয়েতে কী উপহার দেওয়া যায় যাতে মান সম্মান বাঁচে সেটা ভেবে ভেবে নাকাল হয়ে যায় ঋতজা। প্রতীমের সঙ্গে আলোচনা করেছে এই নিয়ে। প্রতীম বলেছে, ‘ দেখো ঋতু, দিদিয়াদের সঙ্গে তাল রেখে কিছু দেওয়া তো সম্ভব নয়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো ভালো কিছুই দেব। তুমি দেখো না, সোনার দুল বা মুক্তো আর সোনার কম্বিনেশনে কোনো গয়না। শনিবার চলো সোনার দোকানে যাই। ‘

প্রতীমের প্রস্তাব যথেষ্ট ভালো। আজকাল সোনার যা দাম!  কিন্তু ছোট একটা দুল বা মুক্তোর ছড়ায় সোনার লকেট — এসব ডিম্পি পরবেই না। তাছাড়া এ ধরনের উপহার পাবেও অজস্র। তার মধ্যে মাসিমণির উপহার আলাদা করে দাগ কাটবে না ওর মনে। তাহলে? 

ডিম্পি চকলেট খেতে খুব ভালোবাসে। বিয়ের দিন সকালে ঋতজা ডিম্পির হাতে একটা বড় মিক্সড চকলেটের হ্যাম্পার দিয়ে বলল, ‘ তোর গিফট আমি বউভাতের দিন দেব। তোর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে।’

‘ কিন্তু মাসিমণি, রিসেপশন তো রোমান প্যালেসে হবে, বাড়িতে নয়।’

‘ তত্ত্ব নিয়ে তো তোর শ্বশুরবাড়িতেই যাবে। ওদের সঙ্গে আমিও যাব।’

‘ কি মজা! প্লিজ এসো মাসিমণি।’ খলবল করে ওঠে ডিম্পি।

এক লরি ভর্তি তত্ত্বের ট্রে এল। আর সকলের সঙ্গে এল ঋতজা। হাতে সযত্নে একটা চারাগাছ ধরা। নীচেই দাঁড়িয়ে রইল ঋতজা। মাসিমণি নীচে দাঁড়িয়ে আছে শুনে নেমে এল ডিম্পি আর ওর বর নীলেশ।

‘ নীলেশ, আমি একটু তোমাদের বাগানে যেতে চাই। ‘

‘ আরে নিশ্চয়ই মাসিমণি। আসুন। ‘

বাগানের একটা উপযুক্ত যায়গা দেখে ডিম্পি আর নীলেশকে ঋতজা বলে, ‘ এটা চন্দন গাছের চারা। তোমরা দুজনে মিলে পুঁতে দাও। এই গাছ যখন বড় হবে, দেখবে কি অপূর্ব গন্ধ বেরবে, মাতিয়ে রাখবে আশপাশ। আমরা চাই তোমাদের যৌথ জীবনও এমন সুগন্ধময় হোক। যতদিন এই গাছ থাকবে, তোমরা আমাদের  কথা মনে করবে। এটাই তোমাদের বিয়েতে আমার আর প্রতীমের উপহার। ‘

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>