শারদ অর্ঘ্য কবিতা: একলা চলো । পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়
( উত্সর্গ- শিকড়-ছেঁড়া শিখর-ছোঁয়া মানুষদের)
পাহাড়ের গা বেয়ে সর্পিল পথ ধরে
এগোতে এগোতে পৌঁছিয়েছি এই চূড়ায়।
কত কষ্ট করে হোঁচট খেয়ে হাঁফিয়ে হাতড়িয়ে।
কত জন মাঝপথে থেমে গেল,
কত জন পড়ে গেল খাদে।
কমতে কমতে এক সময়ে আমি একা হয়ে গেলাম।
#
প্রথম যখন চূড়ায় পৌঁছলাম
ভারি আমোদ হয়েছিল-
আমি একা পেরেছি, আর একজনও পারেনি।
এখন আর ভালো লাগে না।
নীচে কত ভিড়!
আমার ফটো তুলছে, সাক্ষাত্কার নিচ্ছে
টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে আমার মুখ।
কিন্তু কখন যেন আপন জনেরা দূরে সরে গেছে।
#
এখন আর কোনো বন্ধু নেই
প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই কোনো।
শত্রুরা অনেক নীচে পড়ে আছে।
শুধু সকলের চেয়ে উঁচুতে এই আমি
আর মাথার ওপর আকাশ।
#
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে
মনের কথা বলতে চাই।
মনের কথাও আর নেই।
আপনজন,বন্ধু, প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু
কেউই না থাকলে মনের কথা থাকে!
শুধু মনে আছে
ছোটোমেয়ে গান গাইত,
” ওলো সই,আমার ইচ্ছা করে তোদের মত
মনের কথা কই “
দক্ষিণ কলকাতার মধ্যবিত্ত পাড়ায় একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা। বিজ্ঞানের ছাত্রী হলেও সাহিত্যে আগ্রহ অতি অল্প বয়স থেকে।দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি। নয়ের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে কবিতাকে পাকাপাকি ভাবে আপন করে নেওয়া। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ “এক-দুপুর ভ্রমণ ” এর জন্য কৃত্তিবাস পুরস্কার প্রাপ্তি। কবিতার পাশাপাশি গল্প ও মুক্ত গদ্যও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্র পত্রিকায়। এই বছর প্রকাশিত হয়েছে প্রথম গল্প সংকলন।