| 19 এপ্রিল 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: অমৃতস্য পুত্রা (পর্ব-৮) । অনিন্দিতা মণ্ডল

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

কথা ৩

কাশী সম্পর্কে আমাদের একটা হরষে বিষাদে মেশানো অতীতচারিতা ছিল। আমাদের ছেলেবেলার কাশী-র কচুরি গলি বাঙালি টোলা দশাশ্বমেধ ঘাটের পেছনে আর একটা কাশী ছিল। আমাদের পিতৃপুরুষের একটি বাড়ি ছিল কাশী-তে। বেশির ভাগ বাঙালিরই একটি বাড়ি তখন থাকত সেখানে। সেই বাড়ির তেতলার ঘর থেকে বিশ্বনাথের মন্দিরের চুড়ো দেখা যেত। অবরে সবরে সে বাড়িতে কলকাতা থেকে পরিবারের কেউ কেউ যেতেন। একবার সেখানে সপরিবারে গেলেন ঠাকুরদা। প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়স তখন তাঁর। বিলেত ফেরত গাম্ভীর্য ছিল না। বরং কিছুটা ছেলেমানুষ ছিলেন। আগেও তো কতবার এসেছেন সকলে! কত আনন্দ যে! কাশী-র দাদু আর ঠাকুরদা ছেলেবেলার বন্ধু। কিন্তু এইবারের আসাটা অন্যরকম। এবারে ঠাকুরদা এসেছেন তেতলার ঘর থেকে বিশ্বনাথ মন্দিরের দিকে চেয়ে দিন কাটাবেন বলে। সঙ্গে আছেন ঠাকুমা ও পাঁচ ছেলেমেয়ে। বাবার বয়স সাত। ঠাকুমা আঠাস ও ঠাকুরদা আটত্রিশ। সাল ১৯৩৮।

ঠাকুরদা তেতলার ঘরে খাটে শুয়ে জানলা দিয়ে মন্দিরের চুড়োর দিকে চেয়ে থাকেন। মুখের কথা বন্ধ হয়েছে অনেকদিন। কাশী-র দাদু এসে বসে থাকেন মাথার কাছে। ঠাকুমা নিস্পলক চেয়ে থাকেন। ধীরে ধীরে খাওয়াও বন্ধ হচ্ছে।

ঠাকুরদা বিশ্বনাথের দিকে চেয়ে চেয়ে মণিকর্ণিকায় গেলেন।

কলকাতা ফিরলেন ঠাকুমা। পৌঁছে দিতে এলেন কাশী-র দাদু। বিধবা পুত্রবধূকে চোখের সামনে দেখতে পারবেন না বলে বাবার ঠাকুমা ঘরে খিল দিলেন। এ বউ কী বুঝবে পুত্রশোক? যতকাল ধীরু ছিল শুধু তোয়াজ পেয়েছে বউ। সুন্দরী সোহাগী বউ। একটা প্রতিহিংসা যেন পুত্রশোক ছাপিয়েও চরিতার্থ হচ্ছিল। কে বলবে শোক বড় না প্রতিহিংসা বড়?

সদ্যবিধবাকে পৃথক করার চেষ্টা জারি রইল। তারপর তো সামান্য ছুতোয় পাঁচিল উঠল। ওপরে নীচে চারখানি ঘর দিয়ে আলাদা করা হল আমাদের ঠাকুমাকে।

বাড়ির বাকি অংশে পড়ে রইল আমার ঠাকুরদার বিশাল আইনের লাইব্রেরি। বৈঠক খানা। এবং আরও আরও নানা সম্পদ। তবে যা হারিয়ে গেল তা হল একটি নির্মল হাসি, শিশুর সারল্য মাখা।

যেসব স্থাবর সম্পত্তি পড়ে রইল তাতে ঠাকুরদার আপন সন্তানদের কোনো অধিকার রইল না। কালের নিয়মে ঠাকুরদা হারিয়ে গেলেন পরিবারের স্মৃতি থেকে। শুধু রয়ে গেলেন বাবাদের মনে। বেদনার সঙ্গে রয়ে গেলেন ঠাকুমার মনে।

বড় হয়েই বাবা বরাবর কাশী যাওয়া শুরু করেছিলেন। কাশীর দাদুর কাছেই গিয়ে উঠতেন। কারণ বাবার কাকারা কাশী-র বাড়ি আর রাখেননি।

কাশী-র এই স্মৃতি বাবা সারাজীবন লালন করেছেন। তাই ‘ভাই’ বলতে মীর সাহেব, আর পিতৃসমান কাশী-র দাদু। বাবা সারাটা জীবন ভাড়াটে থেকে গেছেন। ভুলোকাকার মতো। অজস্র বাড়িতে আমরা ভাড়া থেকেছি। আর মনে পড়েছে ভুলোকাকার কথা। একটা বাড়িতে ভিত গেড়ে বসে থাকলে কি আর দুনিয়াটা দেখা চলে? দুনিয়া দেখতে গেলে পাহাড় নদী মরুভুমি সাগরতট আসমুদ্র প্রান্তরে ঘর বাঁধতে হয়। আবার কিছুদিন পর সেই ঘর ছেড়ে নতুন ঘরের সন্ধানে যেতে হয়। সেই সব ঘর তো ভাড়াটে ঘরই হয়! সেখানে কি আর মাটির ওপরে নাম লেখা চলে?

তবে একটাই দুঃখ। ভুলোকাকার মতো নদীর মোহনায় ঘর বাঁধা হয়নি। তার জন্য আবার জন্মাতে রাজি আমি।

বড় হবার সময় যে যে সংস্কৃতি আমাদের মনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছিল তার মধ্যে একটি হল বৈশাখ মাস। পঁচিশে বৈশাখ। আমাদের বড় হওয়ার দিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন স্মৃতিসত্ত্বাবাহিত এক চেতনা। একটি মানুষ, যার অবশ্যই একটি রূপ আছে ও থাকবে, অথচ যা চিত্রায়িত বহুকাল, কেননা আমার জন্মের বহু বহু আগেই, সম্ভবত আমার মায়েরও জন্মের আগে যিনি সেই বন্দিত রূপটি ছেড়ে গেছেন, তাঁর সেই চিত্রসহ একটি অব্যক্ত রূপ আমাদের চেতনায় গাঢ় প্রভাব ফেলেছিল শৈশবের শুরুতেই।


আরো পড়ুন: অমৃতস্য পুত্রা (পর্ব-৭) । অনিন্দিতা মণ্ডল


মনে পড়ে, মা শিখিয়েছিল দুটি কবিতা। একটি বীরপুরুষ, দ্বিতীয়টি ছেলেবেলার গান। বীরপুরুষ আবৃত্তি করত মা, আমাদের মুখের দিকে তার করুণা টলটল চোখ দুটো মেলে। “আমি আছি, ভয় কেন মা করো?” বললেই আমাদের ছোট্ট ধুকপুকে বুক যেন চওড়া হয়ে উঠত। মায়ের দিকে চেয়ে ভাবতাম, তাই তো? আমি তো আছি! আমার ছোট্ট চার বছরের ভাই কাঁপা কাঁপা গলায় বলত -মনে কলো, দেনো বিদেত ঘুলে। মা আমাদের আদর করে দিত। আর একটি কবিতা বলত মা, শ্রাবণের ঘন অন্ধকারে ঢাকা আকাশ যখন আমাদের মনের আকাশকেও বিষণ্ণ করে রাখত। মা বলতেন – বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান। আমরা অবাক হয়ে ভাবতাম, মায়ের ছেলেবেলা? সেখানে বৃষ্টি পড়লে এরকম টাপুর টুপুর শব্দ হতো? কীরকম যেন কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইত না যে মায়েরও ছেলেবেলা বলে কিছু ছিল। মা তো মা-ই! এরকমটাই চিরকাল! তবু আকাশের সেই ঘনঘটা আর মায়ের গলায় শোনা কবিতা মিলেমিশে এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করত। কল্পনার চোখে উথালপাতাল নদী দেখতাম। দেখতাম তাকে ঢেকে রেখেছে মেঘের চাদর। আর ওপারের মন্দিরে কাঁসর বাজছে ঢং ঢং।

বালিকা বয়সে সেসময় আমরা মার্চ মাস থেকে মনে মনে তৈরি হতাম। একটা উৎসব তো আসছে।

পাড়ার মেয়েদের নিয়ে কখনও বড় দিদিরা গান নাচ নাট্যে অনুষ্ঠান ভরিয়ে দিতেন। মনে পড়ে, ঠাকুমার কালো টিস্যু বেনারসীর সোনালী বুটি আমাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরতে পারেনি। কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, কিন্তু শাড়ি সেকথা শুনল না। ক্রমশ আমার ছোট্ট শরীর ছাড়িয়ে সে হারিয়ে যেতে থাকল। বড় কেউ এসে চট করে আমাকে কোলে তুলে স্টেজ থেকে নেমে গিয়েছিল মনে আছে।

পরের বার ডাকঘর নাটক। বাবা তখন গ্রুপ থিয়েটারে মগ্ন। বিপ্লব চলছে। সুতরাং এসব ছোটখাট ঘটনায় তাঁর মন নেই। কিন্তু ধরা হল বাবাকেই। পরিচালনা করে দিতে হবে। নাটক করতে কে জানে? আমি হবো অমল। যদিও তখন আমার দশ বছর। বাবা এসে প্রথমেই হুকুম দিলেন, তোমার পার্ট মুখস্থ করো। জোরে জোরে পড়া শুরু হল। বাবা বলতে শুরু করলেন, ওভাবে নয়। একটা ছোট্ট ছেলে, যে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনা, যে তোমাদের মতো মাঠে খেলতে যেতে পারেনা। অসুস্থ শরীর। তার গলায় যে অবসাদ সেটা কই? তোমায় যদি কাল থেকে বাড়ি থেকে বেরোতে না দেওয়া হয়? যদি তুমি এমন অসুস্থ হয়ে পড়ো যে ডাক্তারবাবু বলে যান, অসুখটা ভালো হবার নয়? রান্নাঘর থেকে মা ছুটে এল। বলে উঠল -ও কি বলছ? মেয়েটা যে রুগ্ন! আমি বুঝতে পেরেছি মা ভয় পেয়েছে। বলে উঠলাম -আচ্ছা পিসেমশাই? আমি কি ওই উঠোনটাতেও যেতে পারব না? কাতর গলা শুনে বাবা বললেন, ঠিক। এইরকম করে পড়ো।  

কিন্তু সেই ডাকঘর থেকেই আমার রাজাকে দেখতে বড় ইচ্ছে। কবে দেখব কে জানে?

একবার ঠিক হল শ্যামা হবে। আমাকে দেওয়া হল সখীর দলে নাচতে। তখন ক্লাস সিক্স। মনে মনে ইচ্ছে একটু বড় হবো। রোজ রিহার্সাল চলছে। একদিন বলে ফেললাম, আমি সখী হবো না। তবে তুই কি হবি? আমি উত্তীয় হবো। হুঁউ? উত্তীয়? ওরে বাবা! বলিস কি? বড় দিদিরা মুখ টিপে হাসাহাসি করতে লাগল। স্বপ্নাদি তখন বাংলায় এম এ ফার্স্ট ইয়ার। আমার গাল টিপে দিয়ে বলল, আচ্ছা বল তো প্রেম কাকে বলে? আমি ঘাড় নাড়লাম। জানি। জানিস? কি জানিস? বললাম, কেন? ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে জানিনে। শুধু তোমারে জানি তোমারে জানি ওগো সুন্দরী। স্বপ্নাদির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আসলে ও জানত না যে বইয়ের অভাবে আমি তখন শেষের কবিতা পড়ছি। বাবা দেখে একবার চেয়েছেন শুধু। বলেছেন, ও বই সারা জীবনে বহুবার পড়তে হবে।

এভাবেই গানে কবিতায় গল্পে নাটকে বড় হয়ে গেলাম। রেডিওতে শম্ভু মিত্রের অতীন আমাকে পাগল করে ফেলল। ভাবলাম বাবা কেন যে এমন নাম রেখেছেন? এলা রাখতে পারতেন! এলি বলে কেউ ডাকতে পারত আমাকে! ‘ঘরে বাইরে’ পড়ে আমি এরপর নিখিলেশের প্রেমে পড়লাম। এরকম মানুষ হয়? বাস্তবে? অনেক পরে অনুভব করেছি, এ চরিত্র জ্যোতিদাদার আদলে আঁকা।

বৈশাখ এলেই আমি কিছুদিন আগে পর্যন্ত সেই বালিকাবেলার মতো চঞ্চল হতাম। চিরকালীন চিত্রায়িত ঠাকুরটিকে সামনে আনতাম। স্বপ্নের মধ্যে কখনও সুধা, তো কখনও ফটিক হতাম। কখনও নন্দিনী হতাম তো কখনও নিখিলেশ।

মনে মনে টের পেয়েছি, এ জন্মে এই প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারব না।

এখন এক অন্য শব্দ শুনতে পাই। স্মৃতির সরণী পলিতে ঢেকে যাচ্ছে। মগজের কোষে কোষে বাসা বাঁধছে মৃত্যুর ঘুণপোকা। একদিন হঠাৎ মরণ আসে। তাই আমরা সকলে জানি। কিন্তু আদতে মৃত্যুর একরকম পোকা আছে। ধীরে ধীরে তা গ্রাস করে আমাদের। দেহে নামে বহু পরে। আগে সে আমাদের চিন্তা চেতনাকে গ্রাস করে। তারপর দেহে নামে। লোকে অবাক হয়ে যায়। বলে, আরে! ও লোকটা মারা গেলো? কি করে? ওকে তো এই সেদিনও দেখেছি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। কাঁধের ঝোলাটা আঁকড়ে ধরে ছিল! পাশ থেকে কেউ একজন হয়ত বলে উঠল, লোকটা সদাই বিমর্ষ থাকত। হয়ত ওই থেকেই জীবনীশক্তি উবে গেলো। কিন্তু কেউ বুঝতে পারল না, প্রাণপণে ঝোলা আঁকড়ানো লোকটার জীবনে টান ছিল। নয়ত ঝুলি থেকে আরও কি বের হবে এই আশায় ও অমন করে ঝোলা ধরে থাকত না। আসলে ওর চেতনায় মৃত্যুপোকা ঢুকে পড়েছিল। সেটা ও মোটেই টের পায়নি। পুরনো বাড়ির সোঁদা নোনাধরা দেওয়ালে যেমন নিঃশব্দে উই চলে, ওষুধ দিলেও শেষ হয়ে যায়না, ঠিক তেমনই। অনেকে আবার ওই পোকার সঙ্গে বেশ একটা সমঝোতায় আসে। খাক। চেতনা বোধ স্মৃতি খাক। সব খাক। কুরে কুরে খাক। তার বিরোধিতা করব না। তাহলে লাভ? লাভ আছে বইকি!

আমাদের বাপের বাড়ির পাড়া-য় একটা পাগল ছিল। তখন আমার তরুণ বয়স। মনের উঠোনে রোজ নব নব ইমারত খাড়া করি। জীবন একেবারে হাতের মুঠোয়। তখনও সুপ্ত মৃত্যুপোকা জানান দেয়নি তার অস্তিত্ব। তো সেই পাগলটার সঙ্গে আমার ভারী ভাব ছিল। আমি ছেলে পড়িয়ে রোগা শরীরটা নিয়ে একরকম হাওয়ায় উড়তে উড়তে বাড়ির দিকে যেতাম। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মহীয়সী নারীটি সেখানে বসে থাকত তার রুগ্ন কুৎসিত হাঁসের ছানাটির পথ চেয়ে। এমন সময়ে সে আমার পথ আগলে  দাঁড়াত। আমি ভয় পাইনি তাকে কোনোদিন। রোগা পটকা একটা লোককে ভয় কেন পাবো? সে তার ঝোলা থেকে  বার করত একটার পর একটা ইট পাথরের টুকরো। আমি ভাবতাম এত ভারী বোঝা ও বয় কি করে? কিন্তু লোকটা ওসবে মন না দিয়ে সেই টুকরোগুলোকে পথের ধারে সাজিয়ে রাখত। বলত – দ্যাখো তো খুকি, এর মধ্যে একটা বিরাট হীরে আছে। খুঁজে নাও। ওটা আমি তোমাকে দেবো। আশেপাশের লোকজন আমার এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এবং পাগলকে প্রশ্রয় দেওয়া ভালো চোখে দেখছে না তা বোঝা যেত। কেউ কেউ ডেকে বলত, কেন একে পাত্তা দাও? পাগল একটা! যাও না, বাড়ি যাও। এই সব লোকের কথায় একটা প্রচ্ছন্ন প্রভুত্ব থাকত। সমাজের প্রভুত্ব। পাগল কখনই সামাজিক নয়। তাকে পাত্তা দিলে সমাজ ভালো চোখে দেখবে না। তোমাকেও অসামাজিক ভাববে। তবু যাই হোক, আমার মায়া হত, আমি ওরই মধ্যে একটা চকচকে গোল নুড়ি কখনও কুড়িয়েছি। এইটে ভালো। পাগলের চোখ চকচক করে উঠত। ওহ বড় হীরেটা নিলে দেখছি। যাক। ওদিকে যাই। পাগল ওর ভারী ঝোলাটা তুলে হাঁটা লাগাত। অন্য পাড়ায় অন্য কোনওখানে ও ওর সম্পদ বিলি করতে যেত। ওর যে বিশাল এক সাম্রাজ্য ছিল, যার ওই ছিল সম্রাট। সেই সব নুড়িপাথর ওর কাছে ছিল অমূল্য। ঠিক যেমন আমাদের কাছে হীরে জহরত অমূল্য।

আমি এখন মৃত্যুপোকার কটকট করে কুরে খাওয়ার আওয়াজ টের পাই। মগজের কোষে কোষে কি অবলীলায় ওরা ঘরবাড়ি বাঁধে। আর সেই সব সময়ে আমার ওই নুড়ি পাথরের সম্রাটকে খুব মনে পড়ে। সত্যিই লোকটা পাগল ছিল? সত্যিই ওর সাম্রাজ্য কিছু ছিল না? ঠিক তখনই খেয়ে যাওয়া সাদা হয়ে যাওয়া মগজের কোষ বলে ওঠে, ওরে! ওই তো আসল সাম্রাজ্য! যখন সব নুড়ি হীরে হয়ে যাবে তখনই জানবি ঠিক সম্রাট হলি। কিন্তু সেই শব্দকে ঢেকে অন্য একটা কণ্ঠস্বর টের পাই। সে বলে, সব নুড়ি। হীরে টিরেও শেষ পর্যন্ত নুড়িই। কিছুরই দাম নেই।

আমি এখন প্রতিদিন ওই পাগলের পদধ্বনি শুনি। সে পোকার সঙ্গে হাঁটে।

এ পথেই হেঁটে গিয়েছেন আমার পূর্বপুরুষ। সে কি কেবল আমার বাপ ঠাকুরদা? উঁহু। ভুলোকাকার বাপ ঠাকুরদাও হেঁটেছেন। তাঁরাও আমার পূর্বতন পুরুষ। মহাপ্রস্থানের পথে, এই পার্থিব জগত ছেড়ে সকলেই হেঁটেছেন সেই পথে। আমিও যাবো। তার আগে পিছনে তাকাই। রেখে যাই অমৃতের সন্তানদের স্মৃতি। একক জীবনে যেটুকু সঞ্চয়, রেখে যাই উত্তরপুরুষের জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত