Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,কেউ

ধারাবাহিক: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-১৬) । জয়তী রায় মুনিয়া

Reading Time: 3 minutes

কেউ আর ফেউ: ট্রমা সৃষ্টির কারণ

 

রাগ কেন হয়? দুঃখ কেন হয়? অবসাদ কেন হয়? ভালো কেন লাগে না? হাজারো প্রশ্ন কুরে কুরে খায় মনকে। কুরে কুরে না কি খুঁড়ে খুঁড়ে? মনের নরম জমি খুঁড়ে খুঁড়ে পুঁতে দিচ্ছি কিছু হতাশার বীজ। কেউ ভালোবাসে না। কেউ বোঝে না। কেউ নেই। কেউ না।

সবচেয়ে আগে মনে রাখতে হবে, এগুলো কোনোটাই অস্বাভাবিক নয়। রাগ থেকে যৌনতা… সবটুকুই স্বাভাবিক। যখন আনন্দে থাকি, তখন কি জিজ্ঞেস করি কেন আছি আনন্দে? তাহলে রাগ হলে অসুবিধে কোথায়? তখন কেন মনে হয় এটা অন্যায়? অবসাদে ভুগে চোখের জল ফেলা খুব সহজ কাজ। খুব সহজ কাজ মেট্রোর সামনে ঝাঁপ দিয়ে পড়া। খুব কঠিন কাজ হল ,নিজেকে নিয়ে খুশি থাকা।

কেউ খারাপ কথা বললে কষ্ট হবেই। কেউ গালাগালি দিলে চোখ দিয়ে জল পড়বে। কেউ অপমান করলে সারাদিন ডিপ্রেসন হয়। কেউ ঠকালে মন ভেঙ্গে পড়ে। বাড়ির লোকের জন্য অকথ্য পরিশ্রম করে বিনিময়ে জুটছে কটু কথা, মন খারাপ হবে না? এ কখনো সম্ভব? স্বাভাবিক। কেউ হঠাৎ করে ফুল দিলে মন ভালো হচ্ছে আবার হঠাৎ গালি খেলে মন খারাপ হচ্ছে। স্বাভাবিক।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমার মন ওই বিশেষ কোনো কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। খুব ঘনিষ্ঠ কেউ অথবা দূরের কেউ। কেউ যেন ফেউ। ফেউ কাকে বলে? যে পিছন ছাড়েনা। পিছনে পড়ে আছে। কি করা যায়? কিভাবে বাঁচা যায়? রাগ হয় ভীষন। চিৎকার করে জিনিস ভেঙ্গে ফেলি। ফেউ আবার করে ঘেউ ঘেউ। আবার চিৎকার। আবার চুরমার। বাড়ির বাচ্চারা দেখে। তারাও শেখে। ফেউ যখন তাদের জীবনে আসবে তারাও চিৎকার করবে। যেন চিৎকার করলে ফেউ পালিয়ে যাবে? সমস্যার সমাধান হবে? পৃথিবী সুন্দর হবে? নাহ্। তাই কখনো হয়? ফেউ অথবা কেউ ঘেউ ঘেউ করেই যাবে, মাঝখান থেকে চিৎকার করে করে পাথর হয়ে যাবে আমার মনটা। যে একটা ফুল পেলেই খুশি হয়। যে একটা ক্যাডবেরি পাওয়ার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারে!

পরাবাস্তব। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা স্বীকৃতি দেয় নি। ইন্দ্রিয় গোচর জগৎ একমাত্র সত্য , একথাই লোক মেনে নেয়। তবে পরাবাস্তব মানে কি বাস্তবকে এড়িয়ে যাওয়া? না কি, বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে সেতু তৈরি করা। সূর্য অস্ত যায়, সেটাই নিয়ম। সূর্যাস্তের আভা মন সুন্দর করে তোলে, এটাও বাস্তব। গোলাপ নিয়মে ফোটে, সেই গোলাপ উপহার জীবন বদলে দেয়। আলো দূর করে ঘরের অন্ধকার। সেই আলো সুন্দর করে সাজিয়ে জ্বালিয়ে রাখলে মুহূর্তে তৈরি করা যায় রোমান্টিক দুনিয়া। আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ… অর্থাৎ আমারই মনের হুকুমে অতি বাস্তব সূর্যাস্তের রঙের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে মায়ালোক। কখনো কোনো বন্ধুর হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছি শালবনের মধ্যে দিয়ে। নাই বা রইল বাস্তব উপস্থিতি। সামান্য ফুলের গাছ দিয়ে সাজিয়ে তোলা ছোট্ট বাগানে ছোট্ট দুটো মোড়া নিয়ে বসে চা খেয়ে জীবন হতে পারে পূর্ণ। বস্তু জগতে অবস্থান করে পরাবাস্তব জগতের কল্পনা করা, এই ক্ষমতা একমাত্র মানুষের আছে। মানুষ ভালোবাসে অলীক দুনিয়ার জগতে হারিয়ে যেতে। ঠাকুরমার ঝুলি অথবা হ্যারি পটার ভালোবাসার কারণ এটাই। মায়া দুনিয়ায় সুখী হতে চাওয়া অপরাধ কিছু নয়। পাখির নীড়ের মত মত চোখ… বাস্তবে হয়? হয় না। অথচ কারো কারো চোখের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় আরাম। আশ্রয়। কল্পনা প্রয়োজন। যন্ত্রের নির্মম আঘাতে কল্পনার অবসান ঘটছে ক্রমাগত।


আরো পড়ুন: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-১৫) । জয়তী রায় মুনিয়া


মুশকিল হল, কেউ আর ফেউ জাতীয় মানুষ পিছনে লেগে থাকে। এদের হাত থেকে নিস্তার নেই। কত সমস্যা হয় মানুষের। কারো সন্তান জীবনে দাঁড়াতে পারেনি… সে জন্যে কটু কথা শুনিয়ে দাও। কেউ দেখতে খারাপ, কেউ লিখছে অথচ খ্যাতি নেই… শুনিয়ে দাও কথা। ভালো শব্দ খরচ কিছুতেই করবে না। বাজে শব্দ অনায়াসে ছড়িয়ে দেবে। কি অদ্ভুত দুনিয়া!

মন যদি নরম আর দুর্বল হয়, তবে কেউ ফেউদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে সে অনেক কিছু কল্পনা করে। কল্পনার জগৎ তৈরি করে নেয়। কারণ হল, মন তখন পালাতে চায়। আশ্রয় খোঁজে। আড়াল খোঁজে। একটা বাড়ি বানায়। একটা অন্য দেশের কথা বলে। প্রজাপতি ওড়ে সেখানে। এটুকু তবু ভালো, কেউ কেউ হত্যাকারী দেখতে পায়। অনেক কাগজ ছিঁড়তে থাকে। ভুলতে থাকে হিসেব। বাড়ির ঠিকানা। বন্ধুর নাম। ধীরে ধীরে লোক তাকে বানিয়ে দেয় মনোরোগী। দুর্বল মনের, সুন্দর মনের অধিকারী জানতেও পারেনা কখন সে তলিয়ে গেল অতলে।

কেউ আর ফেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে আশে পাশেই। খুবই কাছের মানুষ। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। চিৎকার করে লাভ নেই। নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করেও লাভ নেই। ঘুরে দাঁড়াতে হবে নিজেকেই।

ম্যাজিক কিন্তু ঘটতেই পারে। একটু বদল করতে হবে দৈনন্দিন ভাবনার। বিপ্লব কেবল বন্দুক দিয়ে হয়না। চিন্তার বন্দুকের নিশানা আরো সাংঘাতিক। এতদিন সে নিশানার লক্ষ্য ছিলাম নিজেই। এখন বরং সেটা ঘুরে যাক কেউ আর ফেউদের দিকে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>