আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিটআমাদের ঢেঁকি এখনও ধান ভানে
পাড়াপ্রতিবেশীদের কলহবিবাদে
ঢেঁকিটি এখনও অবিরাম ওঠে নামে
সব পেছনে ফেলে সনাতন ঢেঁকি
মুখ বুজে পড়ে থাকে, দাঁতে দাঁত চেপে
সভ্যতার অনেক চাল বের করে দেয়
যুবতীর আলতা পরা রাঙা পা দু’খানি
ঢেঁকিকে দোলায় এসে, শিবের গীত গেয়ে
রাত পার করে, তুষগুলি উড়িয়ে দেয়
কিছুটা কুয়াশা মেশালে সব অস্পষ্ট হয়ে যায়
ছবিগুলি ভেসে ওঠে স্মৃতির গভীর জলে
আমরা সীমানা এঁকে রাখি, বাহ্যত কৌশল
সব জানে আমাদের ঢেঁকি, নারদসমাচার…..
দু একটি বীর যুদ্ধ থেকে ফেরে
তারপরে সব স্ট্যাচু হয়ে যায়
তরবারি শুধু প্রদর্শনী বোঝে
এই রাস্তায় একটু দাঁড়িয়ে দেখি
স্ট্যাচুর মাথায় চাঁদ নামে নাকো
ইচ্ছেগুলি তবুও দাঁড়াতে চায়
এমন নীরব বাঁশি কে এসে বাজায়?
এ ছাড়া আর কী থাকে আমাদের?
মাঝখানে চেতনার রাস্তাগুলি
মেঘ বার্তা দিয়ে গেছে ভাসিয়ে দেবে শব
রক্তে ব্যথা লুকিয়ে রাখিনি
গড়ালেই গড়ে যাব যেদিকেই যাওয়া যায়
অথবা পেয়ে যাব যা কিছু পাওনা অভিশাপ
নীল কলেবর হরিণ ছুটে যাচ্ছে
সিংহনাদ যদিও ঘুমাচ্ছে স্মৃতির অরণ্য জুড়ে
বাতাস উড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসি শিস
নিভে যাওয়া আগুনেই খুঁজিনি সত্য শিব
জল ঢেলে দাও মেঘ, খুলে রাখো তোমার উষ্ণীশ
ঘাস খেতে খেতে, ঘাস খেতে খেতে এই ঘাসজীবনে কখন জেব্রা হয়ে গেছি নিজের দিকেই তাকাতে পারছি না ।
সোজা হব না তির্যক দাঁড়াব ?
হাতির বৃংহণ , ঘোড়ার হ্রেষা
দেখতে দেখতে উদাস হয়ে গেছি ।
কী খেলা দেখাতে হবে আমাকে আজ ?
ভুলে গেছি, ভুলে গেছি, ভুলে গেছি সব !
বৃষ্টি দেয় না , শুধু বজ্রের আবেগ
মাখামাখি পীড়াপীড়ি সান্ধ্যঘুমে কাৎ
বাজার বসে না , তবু হয় বাজার মাৎ
কাননের ফুলগুলি কন্যাসম ফোটে
মাছিরা মৌমাছি হয়ে যায় মধু চেটে
হরতন রুইতন গানে পাড়াপ্রতিবেশী
শরম ত্যাগ করে কামুক সন্ন্যাসী
প্রস্থ মেপে , দৈর্ঘ্য মেপে গৃহ হয় ঘর
শামুক যন্ত্রণা থেকে নামে স্বয়ম্বর
জলকাদায় ভরা রাস্তা গুমোট প্রহর
কণ্ঠে তবু কণ্ঠ মেলায় কূজন কুহর
নিজের আস্তাবলে আজ নিজেই অবাধ্য
সিদ্ধি নেই , নিধি নেই , মূর্খের আরাধ্য
প্রেমের রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে সন্ধে হয়ে এল
এই অন্ধকারে সব নির্জন গ্রাম্য স্টেশনে
কোনটা প্রেমের ট্রেন ? কোন দিকে যাবে ?
কোনও কোনও জানালায় কিশোরী রাই
কোনও কোনও জানালায় নিমাই সন্ন্যাসী
স্টেশনেই হয়তো আমার রাত কেটে যাবে
কেউ জিজ্ঞাসা করবে না কুশল
কেউ ভিক্ষা দেবে নাকো প্রেমে অন্ধ ভিখিরিকে
শুধু নির্বাসনের হুইসল বাজবে
আমি মানুষ হতে ভুলে যাচ্ছি
তবু কেউ কেউ তোমরা বলেছ সুখসন্ধানী
আমি হাতের মুঠোয় নিতে চাইনি চোখঝলসানো রমণী
তবু কেউ কেউ তোমরা বলেছ সুযোগসন্ধানী
দুরুদুরু বুক কেঁপে উঠেছে আমার
চোখের সামনে উড়ে এসেছে মুঠো মুঠো ছাই
মানুষ মারার এত তরবারি কখনও দেখিনি আগে
কাদের হৃদয়ে এত ফণিমনসা জন্মায়?
এই সন্ধেবেলা আমি মানুষ হতে ভুলে যাচ্ছি
পৃথিবীটা ভাবছি শুধু একটি পান্থশালা !
কোথায় বসাব ওকে? এত কম্পনের পর
কথা হারিয়ে গেছে; বিষণ্ণ ফ্যাকাসে মুখে
হাত নেই, পা নেই, নেইকো কুশল-সমাচার
তবুও এসেছে আজ!এপাড়া করছে তোলপাড়।
আমাদের মৃতদেহগুলি আমরা লুকাচ্ছি একে একে
আমাদের মরে-যাওয়াগুলি যেন কেউ না দ্যাখে।
সত্য-ন্যায়ের পুলিশ কে কোথায় আছে?
চারিপাশে অবিশ্বাস আমাদের ঘিরেছে।
কিছুতেই বেরনো যাচ্ছে না রাস্তায়
ভালোমানুষের মতো মুখ ঢেকে আছে ভয়।
জন্ম: ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে ।পিতা ও মাতার নাম :জিকির খান ও নওরাতুন । বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো । প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতায় পি এইচ ডি। বর্তমানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কোথায় পা রাখি’(১৯৯৪)। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : বৃত্তের ভেতরে জল, জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা, উন্মাদ বিকেলের জংশন, স্তব্ধতার ভেতর এক নিরুত্তর হাসি, নির্ঘুমের হ্রস্ব ধ্বনি, আকাঙ্ক্ষার ঘরের জানালা, সভ্যতা কাঁপে এক বিস্ময়ের জ্বরে, সর্বনাশের ডায়েরি ইত্যাদি ।পুরস্কার পেয়েছেন :কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য পুরস্কার, নতুনগতি সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি ।
ঠিকানা :
রামরামপুর (শান্তিপাড়া),
ডাকঘর রামপুরহাট,
জেলা বীরভূম,
পিন কোড ৭৩১২২৪,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ফোন ৯৩৩২৯৯১২৫০
Related