irabotee.com,চিন্তামণির দরবার

ধারাবাহিক: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-১) । জয়তী রায় মুনিয়া

Reading Time: 3 minutes

বন্ধুরা, চিন্তামণির দরবার-এ আপনাদের স্বাগত। চিন্তামণির দরবার ছোট বড় ছেলে বুড়ো মেয়ে বুড়ি… সক্কলের জন্য খোলা। এই রে, বুড়ো বুড়ি বললাম বলে রেগে যাবেন না। ওটা কথার কথা। বয়স হয় ত্বকের। মনের হয় না। আর, চিন্তামণির দরবার-এ চিন্তামণি বলবে আপনাদের মনের জগতের কথা। হ্যাঁ বন্ধুরা, মনের জগৎ। সে বড় রহস্যময় জগৎ। তার নানা দিক , নানা পথ, নানা অলিগলি। তো চলুন, আজ একটু উপকারি মানুষের গল্প বলি।

কথায় বলে, উপকারী কে বাঘে খায়। নিশ্চয় মনে পড়ে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সেই বিখ্যাত উক্তি? নিন্দা কেন করিতেছে? আমি তো তার কোনো উপকার করি নাই। এখনকার দিন আরো ভয়ঙ্কর অথবা এটি এই যুগের বৈশিষ্ট্য , উপকারিকে ভুলে যাওয়া। ট্রেন্ড বলা যেতে পারে। কৃতজ্ঞ কথাটা উচ্চারণ মাত্রে লোকজন ভাবতে থাকে তৈল মর্দন করা হচ্ছে। বলিউড বাদশা শাহরুখ খান প্রায়ই বলে থাকেন তিনি কতভাবে সাহায্য পেয়েছেন বিভিন্ন মানুষের। তার কোনো গড ফাদার ছিল না। উক্ত মানুষ গুলি তার পাশে না থাকলে, সাফল্যের লড়াই আরো কঠিন হত। এমন ঘটনা আমাদের সঙ্গেও নানা ভাবে হতে থাকে। উপকৃত হই। কিন্তু স্বীকার করতে কোথায় যেন দ্বিধা! যেন আঘাত করে অহং বোধে। মনে হয়, কি ই এমন করেছে! ওটা আমার যোগ্যতায় এমনি ই হত। নতুন লেখক, কেউ চেনে না। পাবলিশার যত্ন করে প্রকাশ করলেন বই। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল নাম। লেখকের কলার উঁচু। পাবলিশার? সে কে হে? আন্তরিক ধন্যবাদ অথবা স্বীকারোক্তি… নাহ্। প্রশ্ন নেই কোনো। বরং পারলে দু চার নিন্দে মন্দ করে দেয়। এত কিছুর পরেও যখন বিপদে পড়ে তখন গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে দ্বিধা নেই কোনো। ব্যাপারটা শাহরুখ খান বা পাবলিশার নন, পাশের লোকটির প্রতিও আমরা সমান উদাসীন। যেন, আমার সেবা করার জন্যই জন্ম হয়েছে তার।

দুই.

আধুনিক মনোবিজ্ঞান স্বীকার করেছে, কৃতজ্ঞ আর কৃতঘ্ন… দুই প্রকারের চরিত্রের মধ্যে ইতিবাচক থাকে প্রথম শ্রেণীর চরিত্র। যতই দাপটের সঙ্গে কেউ কৃতঘ্ন আচরণ করুক না কেন, যতই কেন না তার মনে শ্লাঘা বাজতে থাকুক , কাজ হয়ে গেলে সামান্য ধন্যবাদ নিদেন একটু হাসিমুখ না দেখিয়ে চলে যাওয়ার পরে, তাদের মনের মধ্যে একটা দ্বিধা, সংকোচ কাজ করে। এই খচ খচ ভাব, ছোট্ট কাঁকর বিঁধলে যেমন কুট কুট করে তেমন ধরণের মানসিক অস্বস্তি কৃতজ্ঞ লোকের মনের মধ্যে থাকে না। এ কথা সত্য যে জীবন যাত্রার নানান চাপে সবাই কমবেশি অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে। এমন নয় যে , তার মানেই সে মানুষটি কৃতঘ্ন। আলোচনার লক্ষ্য তারা নন। যে মানুষ গুলো মনে করে অন্যদের সাহায্য পাওয়া তার অধিকার এবং সেজন্য ওই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না, তারা প্রাকান্তরে নিজের এবং চারিপাশের জীবনে ক্ষতের সৃষ্টি করছে… সমস্যা তাদের নিয়ে। তাদের চাওয়ার যেন শেষ নেই। খুব সহজেই চাইতে পারে এবং খুব সহজেই ভুলেও যায়। খুব গভীরে কাজ করে এক ধরণের স্বার্থপর মনোভাব। একটা উপকারের পিছনে উপকারীর যে ত্যাগ স্বীকার আছে, সে দিকে তাদের নজর থাকে না। এই মানুষ গুলো তখনই কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে যখন ওই ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু একটা দরকার। দরকার ছাড়া কোনো খোঁজ রাখার প্রয়োজন মনে করে না। অকৃতজ্ঞ মানুষ গুলি সবসময় ভুক্ত ভোগী হওয়ার অভিনয় চালিয়ে যায়। যেন তাদের মত কষ্টে কেউ নেই।


আরো পড়ুন: গল্প: রামায়ণ এবং একটি দুপুর । জয়তী রায়


 তিন.

অকৃতজ্ঞতা কি জন্মগত

মানুষের চরিত্রের গঠন নির্ভর করে জন্ম এবং পরিবেশের উপর। পিতা – মাতার জিন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বংশের গতি প্রকৃতি অনুযায়ী সন্তানের আচরণ নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু, সেই সঙ্গে একটা দিক খুব মনে রাখতে হবে, সেটা হল, কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছে শিশু। ছোট থেকে ভালো শিক্ষা পেলে উৎকৃষ্ট বোধের জন্ম হয়। অপরের প্রতি ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত, কৃতজ্ঞ না কৃতঘ্ন … কোন পথে হাঁটবে মানুষ, এই বোঝার শক্তি কিন্তু গড়ে তোলা যায়। অর্থাৎ , জিন যেমন ই হোক, অকৃতজ্ঞতা রক্তে থাকার চাইতে বেশি থাকে শিক্ষায়। মনের ট্রেনিং ঠিক মত হলে, বোঝার শক্তি বৃদ্ধি পায়। অপরের অনুভূতিকে ” কেয়ার” করার প্রবণতা তৈরি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, বিশেষত এই সময়ে, ছোট সংসার শেখাচ্ছে যেন তেন প্রকারে স্বার্থপর হতে। স্বার্থ না দেখলে পিছিয়ে পড়তে হবে, দুনিয়ায় সকলে চালাক , বোকা হলে চলবে না… মায়েদের মুখে ক্রমাগত এইরকম কথা শুনতে শুনতে শিশু বড় হয় অবিশ্বাসী হয়ে। ভালো মানুষ অর্থ হল বোকা। লোকের উপকার করতে যে এগিয়ে আসে সে বোকা। সেজন্যেই অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে, সুতরাং তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাও। কৃতজ্ঞতা? সেটা আবার কি বস্তু!

 

চার.

জীবনের মূল্যবোধ ও কৃতজ্ঞতা

জীবনের ছোট ছোট মূল্য বোধ গুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। যৌথ পরিবারের কতগুলি শিক্ষা ছিল, যেগুলি সাহায্য করত মনের বিকাশে। পরিবারের অনেকগুলি সদস্য , সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে বৃদ্ধি পেত সহন ক্ষমতা। উপেক্ষা করার ক্ষমতা। কৃতজ্ঞ থাকার ক্ষমতা। দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা। পরিবারের বহু সদস্য একসঙ্গে থাকা সত্বেও সন্তান কৃতি হয়ে উঠত অনায়াসে। সেই সঙ্গে মনের কতগুলি ক্ষেত্রে আলো পড়ে যেত অনায়াসে। মনের ভূমি থাকত উর্বর। উৎকৃষ্ট চিন্তার ফসল ফলত অধিকাংশ ক্ষেত্রে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>