ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-১২) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-১২।
মাঝে মাঝে রাজ সত্যি ব্যস্ত থাকে । মা তাকে বলেছেন, পড়ায় ফাঁকি দেওয়া চলবে না। সে নিজেও তাই করে। পড়াশুনায় তার কেমন একটা জেদ চলে এসেছে। সময়টা সে কাজে লাগাবার চেষ্টা করে। প্রাইভেট স্যারদেরও পড়া আছে, তারও চাপ আছে। নির্ঝর অবশ্য তার চেয়ে বেশী খাটে। রাজ ওকে দেখত ক্লাসেও সময় পেলে সে টাস্ক করত। রাজ স্কুলে কোনো কাজ করতে পারে না। কিন্তু পাশে বসে ওকে দেখার পর একটু অস্বস্তিও হত তার। কথা না বলে এত পড়া পড়া বাতিক তার ভাল লাগে না। সে মাঝে মাঝে ওর বইখাতা বন্ধ করে দিয়ে বলত,“কি বই পড়ছিস? রাখ না। বাড়ি গিয়ে পড়িস।“
নির্ঝর বলত,“বাড়ি!”
রাজ জানে। নির্ঝরের উপর জেঠুর এতই রাগ যে ও বইপত্র নিয়ে পড়তে বসলেই তিনি রেগে যান। একটা মাত্র ঘর। তারমধ্যেই তিনি টিভি চালিয়ে দেন। যখন তখন দোকানে পাঠান, হঠাৎ ইচ্ছে হলে ঘরের লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়েন। বেচারী নির্ঝর আর কি করে? ইদানিং সে তাই যে ভাবে হোক ভোরে উঠে পড়ছে, যতটা পারবার পড়ছে। তাছাড়া তার ভয় আছে জেঠু যদি তাকে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়!
রাজের কষ্ট হয় শুনে। কিন্তু তার এখানে কিছু করার নেই। মা যতটা সম্ভব সাহায্য করেন ঠিকই তা তুলনায় কম। ইদানিং বাবাও নির্ঝরের জন্য বিরক্ত।রাজ নিজের কানেই তা বাবাকে তা বলতে শুনেছিল। বাবা মাকে বলছিলেন ,“ইরা তুমি বল কি করে পারব ? মাসে মাসে বই,খাতা পেন তুমি নির্ঝরকে দাও না? রাজ যাদের কাছে পড়ে সেইসব স্যারদের কাছেও ভর্তি করে দিই নি?”
মা বলেছিলেন,“জানি আমি। তুমি অনেক উপকার করেছ।“
“তাহলে আর কি করব বল? জার্সি,প্যান্ট, জুতো এসবও কি দেওয়া সম্ভব? তাও দিয়েছি। এরপর আর কি করব?
“আহা। ছেলেটা বড় গুনী।“
“শোনো। পড়াশুনো করবে আবার খেলে বিরাট কিছু করবে। এসব না ভাবাই ভাল। কিছু হবে না। তালেগোলে সব গোলমাল হয়ে যাবে।ওকে পড়ার জন্য যা পারো সাহায্য কর এর বেশী কিছু করো না। প্লিজ।“
মা বলেছিলেন,“ও কিছ হবে বলে আমি করছি না। আমার ছেলের কথাও ভাবছি।ওরা দুজন কি সুন্দর বন্ধু তুমি জান না! ওই জন্যই ছেলেটার জন্য মায়া ধরে গেছে আমার।
বাবা বলেছিলেন, “ তুমি বড় ইমোশনাল ইরা।
উত্তরে মা কি যেন বলেছিলেন। তা রাজ শুনতে পায় নি।পরে মায়ের মুখ দেখে তার কষ্ট হয়েছিল। মায়ের উপকারী মনটা যেন বাবা একটু হলেও দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিলেন।তার নিজের মা বলে নয়, রাজ দেখেছে তার মা চিরকালই একটু অন্যরকম। তাকে কতদিন শিখিয়েছেন, টিফিন নিয়ে গেলে বন্ধুদের সাথে ভাগ করে খেতে। কারুর সঙ্গে তার ঝগড়া হলে মা কখনও তার হয়ে কথা বলতেন না। তার ভুল হলে সবার সামনেই তাকে বকতেন মা। রাজের অভিমান হয়েছে কিন্তু সে দেখেছে তার বন্ধুরা কোনো সমস্যায় পড়লে মায়ের কাছে এসেছে। তারা জানত মা এমন একজন তিনি সঠিক বিচার করবেন।
আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-১১) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
প্রজেক্টের কাজ করতে করতেই রাজ এসব ভাবছিল । সন্ধ্যেবেলা খেলাধুলো করেই সে কাজে বসে পড়েছে। সেদিনের পর দুদিন চলে গেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত নির্ঝর স্কুলে আসে নি।নির্ঝর আসছে না দেখে ইমন খুব খুশী। কালকেও তাকে সে একই কথা বলেছে।
-“কি রে? কি করছিস?”
রাজ মুখ তুলে দেখল। ছোটমামা এক বাটি মুড়ি চিবোতে চিবোতে ঢুকছেন। বাবাদের নাটকের রিহার্সাল এবার সত্যিই সত্যিই শুরু হতে চলেছে। তাদের বাড়ির ছাদে বাবার বন্ধুরা সব আসাযাওয়া শুরু করেছেন।এ খন ছোটমামাকে আর পায় কে! তিনি আনন্দে উড়ছেন! যদিও ছোটমামা এখনো কোনও পার্ট পান নি। কিন্তু পুরোন ডায়ালগ মাঝেমাঝেই তিনি বলছেন। রাজ সবেতেই মাথা নাড়ায়। সে এখন বলল, প্রজেক্ট।
ছোটমামা গা করলেন না। ধপ করে একটা ডিভানের ধারে বসে বললেন,“এবার বুঝলি! ফাটিয়ে দেব।“
“রোল পেয়েছ?”
“পেয়েছ মানে। সেরা রোলটাই তো আমার।“
“ঠিক হয়ে গেছে?”
“এখনো হয় নি।হবে।“
রাজ বলল,“দাদু জানে?”
“ইয়ার্কি করছিস?”
“ইয়ার্কি করব কেন?”
“বাবাকে ডাকবই। দেখিস না কেমন করব নাটক।“
রাজ জানে ছোটমামা-র যত হামবড়াই সামনে, কিন্তু দাদুর কাছে ছোটমামা-র একদম সাড় নেই। কিন্তু দুজনের মধ্যে টানও খুব। দিদুনকে সবসময় ফোন করেন। খোঁজ নেন দাদু ওষুধ খেয়েছেন কিনা। মাঝেমাঝে আবার বাড়িও ঘুরে আসেন।
ছোটমামা বললেন, “বাদ দে। তোদের এবারের টিম কি হল?”
“কি জানি। রোজই তো স্যার বলছেন।“
“এদিকে খেলার সময় চলে এল।এবার মনে হয় স্যার তোকে চান্স দেবেন।“
শুনে রাজ মাথা নাড়ল। সে জানে না। সে আদৌ চান্স পাবে কিনা! চান্স পেলে খুবই আনন্দের ব্যাপার।সে বলল,-“ দেখি”
ছোটমামা স্বান্ত্বনা দিয়ে বললেন,”হবে। হবে।“ তা পরের ম্যাচটা কোন স্কুলের সঙ্গে?”
“রামলাল স্কুল।“

দেড় দশক ধরে সাহিত্যচর্চা করছেন। পেশা শিক্ষকতা। নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। ‘কাঠবেড়ালি’ নামে প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়তে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস : ‘চার অঙ্গ’, ‘তিথির মেয়ে’, গল্পগ্রন্থ : ‘গল্প পঁচিশ’, ‘পুরনো ব্রিজ ও অন্যান্য গল্প’। ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘বীজমন্ত্র’ নামে একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখেছেন।
Partha Ghosh says:
মাঝে অনেকদিন পড়া হয়নি। 6 থেকে 12 একবারে পড়লাম। এক সঙ্গে পড়ে দারুন অনুভূতি হল। বেশ একটা রহস্যময় লাগছে নির্ঝর কে, সঙ্গে গল্পটা ও। অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের।