| 25 এপ্রিল 2024
Categories
সাক্ষাৎকার

ইরাবতীর মুখোমুখি কবি,কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক জয়া চৌধুরী

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্য ও অনুবাদের সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের কাছে জয়া চৌধুরী খুব পরিচিত নাম। জয়া চৌধুরীর মুখোমুখি হয়েছিলেন শৌনক দত্ত। জানা অজানা অনেক কথা উঠে এসেছে সেই আলাপচারিতায়। অনেক বিষয়ে জয়া চৌধুরী আলো ফেলেছেন। কথা বলেছেন অনুবাদ, কবিতা- গল্প ও আরো অনেক বিষয় নিয়ে। এই আলাপচারিতার আগে এভাবে জয়া চৌধুরী কে এত বড় ক্যানভাসে জানা বা চেনা যায়নি।


 

শৌনক দত্ত: তোমার নাম উচ্চারিত হলেই পাঠকের মনে প্রথমেই আসে অনুবাদক জয়া চৌধুরী কিন্তু অনুবাদ ছাড়াও তোমার অনেক মৌলিক কবিতা,গল্প বা অন্যান্য লেখা আছে সেগুলো সেভাবে আলোচিত হয়না কেন?

জয়া চৌধুরী: পাঠক কী মনে করবে! আমি নিজেই তো ওগুলোকে সাহিত্য মনে করি না! Jokes apart আসলে আমি মৌলিক লেখার জন্য সময় দিই না। যে সামান্য লেখালিখি করি তাতে কিছু কিছু গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় এবং গল্প সংকলনে প্রকাশিত হলেও ধারাবাহিক ভাবে লেখায় সময় দিই নি। একটি ই-উপন্যাস প্রকাশিত কিন্তু সেটার খবর বোধহয় প্রায় কেউই রাখেন না। লোকে আমায় লেখক ভাবেই না! প্রায় শুনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আমার গদ্য নাকী অনেকেই পছন্দ করেন। অথচ প্রকাশক কেউ তো বলেন না আপনার মৌলিক লেখা দিন, ছাপাব। আর নিজে কাউকে অনুরোধ করতে লজ্জা লাগে। কিংবা ভয় বলতে পারো। খারিজ হওয়ার ভয়। আমি আর কী করি! ইচ্ছের গলা টিপে রাখি। এবং অনুবাদ দিতে থাকি।

তবে সম্প্রতি একটি মৌলিক কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এখন থেকে কিছু কিছু মৌলিক লেখা ছাপাতে চাইব, Provided প্রকাশকেরা যদি প্রস্তাব দেন, তাহলে। প্রত্যাখ্যানের খুব ভয় আমার।   

অনুবাদের শুরুটা কিভাবে?

জয়া চৌধুরী: লেখক হবার স্বপ্ন ছিল স্কুল থেকে। অনেক বেশি বয়সে যখন স্প্যানিশ শিখতে গেলাম তখন তরুণ ঘটক আমায় বললেন অনুবাদ কর, মূল স্প্যানিশ থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ প্রায় কেউ করেন না। অথচ বিদেশে মূল ভাষার অনুবাদ ছাড়া যোগ্য অনুবাদ মনেই করা হয় না। ভেবে দেখলাম সেটাই করা ভাল। ব্যস।

 

মৌলিক লেখার চেয়ে অনুবাদে বেশি সময় দেয়ার পেছনে কি কোন বিশেষ কারণ আছে?

জয়া চৌধুরী: হ্যাঁ। আসলে স্প্যানিশ ভাষা পড়তে আসা আমার জীবনের এক সন্ধিক্ষণে ঘটেছিলে। পুরনো সম্পর্ক, পুরনো ভালবাসা- অভিনয়-নাটকের দল … সেসবের জীবন ছেড়ে এই নবীন জয়ার অস্তিত্ব গড়েই উঠেছে স্প্যানিশ ঘিরে। এখন সেটাকে আর ছাড়তে চাই না। মৌলিক লিখি, লিখবও, তবে সেটা কত ঘনঘন হবে সেটা পাঠকের আর প্রকাশকদের উপর নির্ভর করছে।  

অনুবাদের ক্ষেত্রে কোন বিষয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ- যুক্তি, বিচারবুদ্ধি নাকি সহজাত জ্ঞান?

জয়া চৌধুরী: খুব ভাল প্রশ্ন। কিন্তু এর উত্তর ক্রম অনুসারে দেয়া সম্ভব নয়। কেননা তিনটি বিষয়ই পাশাপাশি ভূমিকা রাখে। সহজাত জ্ঞান (আমার যা মূলধন) দিয়ে আমি সাহিত্যটি বিচার করি, যুক্তি দিয়ে নিজেকে বোঝাতে চাই কেন করব, আর বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করার চেষ্টা করি কখন করব। তিনটে ঠিকঠাক থাকলে প্রশংসা ও পাঠকপ্রিয়তা দুইই লাভ হয়। নইলে কোন বই আর কিছু না পাক, সেটি অনুবাদের চেষ্টা করার ফলে আমার কিছুটা স্প্যানিশ চর্চা তো হয়। কোন কাজই তো নিষ্ফলা হয় না! অতএব আমি সেটাকেই Positive দৃষ্টিতে নিই।

অনুবাদ করতে গিয়ে ইংরেজির সঙ্গে বাংলার কী কী পার্থক্য অনুভব কর? এক্ষেত্রে বাংলার সীমাবদ্ধতা, ব্যাপকতার বা ইতিবাচক গুণ সম্পর্কে তোমার অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

জয়া চৌধুরী: একটু বিভ্রান্তিকর লাগছে প্রশ্নটা। কারণ আমি তো ইংরিজি ভাষা থেকে অনুবাদ করি না। তবে স্প্যানিশ থেকে ইংরিজি করেছি অল্প কিছু। মূলত স্প্যানিশ থেকে বাংলাতেই করি। ব্যক্তিগত ভাবে স্প্যানিশ ও বাংলা ভাষাকে আমার অনেক বেশি কাছাকাছি মনে হয়। সম্ভবত ভারতীয়দের মতই লাতিন আমেরিকার যে প্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকার রয়েছে, তাদের যে বাঙালিদের মত মূলত শান্তিকামী একটি সংস্কৃতি রয়েছে, বাঙালির মতই পরস্পরকে কাঁকড়ার মত ল্যাং মেরে ফেলে দেবার নিরন্তর চেষ্টা রয়েছে, বাঙালির মতই অর্থনৈতিক ভাবে তারা কোণঠাসা, সেরকমই মিষ্টি স্বভাব, যৌথ পরিবার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ইত্যাদি বহু মিল থাকার কারণে ভাষায় পরিচিত শব্দ পাই। জানো Ulular শব্দের মানে উলু দেয়া, saya মানে শায়া, কিংবা Vela শব্দের মানে ভেলা, Santa অর্থ সন্ত কিংবা Agresión অর্থ আগ্রাসন… এরকম অসংখ্য শব্দের উচ্চারণ ও অর্থ এক। এ থেকে অনুবাদকের প্রাণে যে ভরসা আসে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু স্পেনের সাহিত্য থেকে ব্রিটেনের ভাষায় অনুবাদ করতে গেলে অনুবাদকের বিষয়গত চ্যালেঞ্জ ছাড়া অন্য চ্যালেঞ্জের মুখে খুব একটা পড়তে হয় না। ওই যে বললাম দুটোই ইউরোপিয় ভাষা হওয়ায় প্রাথমিক মিলগুলো তো কাজ সহজ করেই দেয়। 

বাংলা অত্যন্ত শক্তিশালী ভাষা এবং বিদ্যাসাগরের সময় থেকে ইংরিজি শিক্ষার প্রভাবে এটিতে যতখানি ইউরোপীয় প্রভাব পড়েছিল, তাতে তাদের শব্দভান্ডারও বিপুল সমৃদ্ধ হয়েছিল। সুতরাং অনুবাদ করতে গেলে আদি সংস্কৃত ভাষার জাতক হওয়ার সুবাদে তার ব্যাপক বিস্তারের ক্ষেত্র আগে থেকেই ছিল। ইংরেজ শাসনের ফলে ইউরোপীয় ধারাটিতে সে প্রভাবিত হল। দুইয়ে মিলে অনুবাদকের কাছে বিশাল বড় দিগন্ত এসে গেল শব্দভান্ডারের। আমার তো মনে হয় আফ্রিকান ভাষার সাহিত্য অনুবাদ করতে গেলেও বাংলা ভাষায় কোন সমস্যা পড়তে হবে না। এতই আমাদের সম্ভার।

অনুবাদের ক্ষেত্রে ফরেনাইজেশন বলে যে কথাটি আছে, তোমার অভিজ্ঞতার আলোকে এর ব্যাখ্যা জানতে চাই, এ বিষয়টি কি মানা হয়?

জয়া চৌধুরী: এতক্ষণে মনের মত প্রশ্ন পেলাম। দেখো লরেন্স ভেনুতির বিখ্যাত বই দ্য স্ক্যান্ডালস অফ ট্রান্সলেশন আমার পড়া হয় নি। কিন্তু যখন জেনেছি এর মূল বিষয় Domestication কে তীব্র তিরস্কার করা এবং foreignization কে উৎসাহ দেয়া- সেটা পড়ে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আসলে প্রথম দিন থেকেই আমি নিজস্ব সেন্স থেকে অনুবাদ শুরু করেছিলাম। প্রথমত ডোমেস্টিকেশন করা ইংরিজি অনুবাদের ক্ষেত্রে খুব প্রচলিত। এর অর্থ হল ওই ভাষার অনুবাদকেরা পৃথিবীর যে কোন সাহিত্যকেই তাদের পাঠকের কাছে তার চেনা জগতের মত করে তুলতে গিয়ে বড্ড বেশি সাধারণীকরণ করে ফেলেছে। আফ্রিকার কোন সাহিত্য, তার সংস্কৃতি, রীতিনীতি যেভাবে প্রকাশ করে, মিশরীয় সাহিত্যে তা পাওয়া সম্ভব নয়। আবার লাতিন সাহিত্যের ইংরিজি অনুবাদে তাদের যে পুরানো সভ্যতার জনজাতির কৃষ্টি ইত্যাদি রয়েছে তা ইংরিজি অনুবাদে সবটুকু উঠে আসে নি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। কারণ সেখানে লক্ষ্য ভাষার পাঠকদের কাছে উৎস ভাষার বিষয়ের ডিটেইলিং এর চেয়ে, উৎস সাহিত্যের মূল বক্তব্যটি সরলভাবে চেনা পাঠকের কাছে উপস্থাপিত করার ভাবনা ছিল। তাতে যদি মূলের বিকৃতিও ঘটে তাও পরোয়া নেই। ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা বলছি। আমি তো মূল স্প্যানিশ বা কাস্তিলিয়ান ছাড়া কোন ভাষা থেকে অনুবাদ করি না। সেগুলির ইংরিজি অনুবাদ প্রচলিত থাকলেও তা পড়ি না। আমার মনে হয় আমার আর মূল সাহিত্যের মাঝখানে কোন তৃতীয় ব্যক্তি থাকবে না। সম্পর্কে তাহলেই ভাঙন ধরার সম্ভাবনা। কিন্তু ৯ বছর আগে স্পেনের স্বর্ণযুগের একটি উপন্যাস Lazarillo de Tormes উপন্যাস করতে গিয়ে প্রথমবার ১৯০৮ সালে স্যার ক্লেমেন্ট মার্কহ্যাম কৃত ইংরিজি অনুবাদটির শরণাপন্ন হই। কেননা উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল ১৫৫৪ সালে, যখন দন কিখোতেও লেখা হয় নি। তখনকার স্প্যানিশ ভাষা অনেকখানি অগঠিত ছিল। এবং পুরনো স্প্যানিশ হওয়ায় বাক্য গঠনে খুব  আড়ষ্টতা ছিল। এটিকে প্রথম স্প্যানিশ ভাষায় লেখা উপন্যাস বলে গণ্য করা হয়। ভাষাটি নিজের কাছেও অনেক অবোধ্য ছিল বলে অনুবাদ করবার সময় স্প্যানিশ ও ইংলিশ দুটি বইয়ের সাহায্যে অনুবাদ করি। কিন্তু তার বহু বছর পরে যখন সে উপন্যাসটি ফের অনুবাদ করতে বসি তখন বুঝতে পারি ইংরিজি এই অনুবাদটিতে কত সার সংক্ষেপ করা হয়েছে। সেই ডোমেস্টিকেশান মনোভাব। উৎস ভাষা থেকে অনুবাদ করে লক্ষ্য ভাষায় সারাংশ তুলে দেব। এর ফলে আমার নূতন অনুবাদে নিজেরই করা পুরনো অনুবাদের প্রায় ৭০ শতাংশ ফেলে দিতে বাধ্য হই। নতুন করে বইটি অনুবাদ করি। এবার মূল স্প্যানিশ থেকে পুরোটা।

Foregnization বিষয়টা নিয়ে আমি নিজেও খুব ভাবি। এটাকে পূর্ণ সমর্থন করি। তবুও একটা দ্বিধাও কাজ করে মাঝে মাঝে। আমি মনে করি সহজ করে চামচে গুলে খাওয়ানোর মত অনুবাদ করা অন্যায়। বিদেশী সাহিত্য পড়ছি অজানাকে জানব বলেই। আমি এমপানাদা খাবারের অনুবাদ করতে গিয়ে পুঁইশাক চচ্চড়ি লিখব না। এর চেয়ে  আমার চেষ্টা থাকবে যতখানি মূল ছুঁয়ে অনুবাদ করি তাতে যদি খাবারের কনসেপ্টটাই আলাদা হয় প্রয়োজনে ফুটনোট দিয়ে দেব। তবু মূলানুগ রাখব অনুবাদ। সেইসঙ্গে এটাও ভারসাম্য রাখতে হবে কত ফুটনোট দেব? সেটা ভারী না হয়ে পড়ে পাঠকের কাছে। নিজে সাধারণত একটা বোঝাপড়ায় আসি। নতুন বিষয়, নতুন শব্দ অনিবার্য কিনা, মানানসই কিনা, পাঠকের কাছে বিব্রতকর দূরগামী যেন না হয়। এই ভারসাম্যটাই নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ। নিশ্চিন্তে আরাম করে অনুবাদ করা সম্ভবই নয়।     

অনুবাদ তো একটা পরিণত কাজ। তোমার কাছে কী মনে হয়, অনুবাদক হয়ে ওঠার প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?

জয়া চৌধুরী: হ্যাঁ প্রস্তুতি লাগে। ম্যাচুরিটি লাগে। জীবনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হতে হয়। অনুবাদ একটু বেশি বয়সেই করা ভাল। আমাদের জ্ঞান হতে হতে মিনিমাম চল্লিশ তো পেরোয়ই। তার আগে তো যার যার নিজেদের জীবন সংগ্রামই থাকে। দুনিয়াকে কতটুকু চেনা হয়? অনুবাদককে সরল হতে হয়। নিজের মনের আধারটি স্বচ্ছ রাখতে হয়। যাতে অনুবাদের সময় বায়াসড না হই। নির্মোহ অথচ শিশুর মত নূতনকে গ্রহণে উদার – এই দুটি গুণ থাকা আবশ্যকীয়। পাঠ অভ্যাসের কথা তো জানাই আছে। উৎস ভাষা খুব ভাল জানতে হয়। আর লক্ষ্য ভাষা জানতে হয় তার চাইতেও অনেক বেশি। কারণ পাঠক তো লক্ষ্য ভাষায় পড়বেন। সে ভাষায় দক্ষতা বেশি প্রয়োজন।


আরো পড়ুন: ইরাবতীর মুখোমুখি কবি,কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক তৃষ্ণা বসাক


একজন লেখক তো লেখায় মেজাজ-মর্জি-ছন্দ-গতি দিয়ে লেখেন। অনুবাদেও সেই মেজাজ-ছন্দের জন্য ওই লেখকের ওপর প্রস্তুতি দরকার। সে ক্ষেত্রে অনুবাদের জন্য একজন লেখককে নির্বাচন করাই কি ঠিক বলে মনে কর?

জয়া চৌধুরী: এ ধারণাটি অনেক অনুবাদক পোষণ করেন। এটা নির্ভর করছে অনুবাদকের মানসিক গঠনের উপর। কেউ একটি বিষয় খুঁটিয়ে পড়তে চান। কেউ বিবিধ বিষয়ের স্বাদ নিতে চান। এর কোন এক কথায় নিদান দেয়া চলে না। আমাকে একজন শ্রদ্ধেয় অনুবাদক বলেছিলেন কোন একজন লেখকের সব কাজের উপর অনুবাদ করতে। সে পরামর্শ আমার মনের মত হয় নি।

একটি ভাষার উপর তোমার বিশেষ দক্ষতা আছে। আমাদের দেশে সাধারণত যে অনুবাদগুলো হয়, সেগুলো মূল ভাষা থেকে নয়, দ্বিতীয় কোনো ভাষা, বিশেষত ইংরেজি থেকে। মূল ভাষা থেকে অনুবাদ আর দ্বিতীয় কোন ভাষা থেকে অনুবাদ কি একরকম? অনুবাদককে একটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে সেই ভাষার অনুবাদ করাকে কি ঠিক মনে কর?

জয়া চৌধুরী: এর উত্তর উপরের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। ইংরেজিতে বহু সাহিত্যের দুর্দান্ত সব অনুবাদ রয়েছে। কিন্তু তার তো কোন প্যারামিটার নেই! অনেক খাজা ইংরেজি অনুবাদও তো আছে। সুতরাং যিনি হিস্পানিক সাহিত্য করছেন, তিনি মূল ভাষা না জেনে ইংরিজি থেকে করলে অবশ্যই ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বাজে অনুবাদ করবার। সেটা শুধু স্প্যানিশ নয় দুনিয়ার সব ভাষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।  

 

অপরিচিত কিন্তু শক্তিশালী লেখক বা বই তেমন কোনো আবিষ্কার নেই। এটা কি অনুবাদকের দুর্বলতা?

জয়া চৌধুরী: পাঠকের পছন্দ ভেবে অনুবাদ করা চাপের। কেননা পাঠকের পছন্দ বলে জেনারেল কিছু হয় না। নানা মুনির নানা মত। পাঠকও নানান কিসিমের, অনুবাদকও তাই। আর অনুবাদক নিজে তো আগে পাঠক। সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। তাই অনুবাদকের নিজের পছন্দের অনুবাদ করাই ভাল। তাহলে সম মতের পাঠক পেতে সুবিধে। কিন্তু অনুবাদকের পাঠ পরিধি বিস্তৃত না হলে অবশ্যই অপরিচিত শক্তিশালী লেখক খুঁজে পেতে দেরী হবে। এটা অনুবাদকের দুর্বলতা বটে, তবে পুরো দায় তার একার কাঁধে চাপিয়ে দেয়াও অন্যায়। পারিপার্শ্বিক অনেক কারণ এতে কাজ করে।

অনুবাদ তো দুইভাবেই হতে পারে। বিদেশি সাহিত্য দেশি ভাষায়, দেশি সাহিত্য বিদেশি ভাষায়। আমরা কিন্তু তা দেখছি না। এ থেকে উত্তোরণের উপায় কী মনে কর?

জয়া চৌধুরী: উপায়- ১- স্পনসর পাওয়া। অনুবাদকের কাজে টাকার জোগান দেবার লোক থাকলেই সম্ভব দেশি সাহিত্য বিদেশী ভাষায় করা। কারণ অনুবাদ একটি জীবিকা। এবং ২- একই সঙ্গে যশ পাবার জায়গা। অনুবাদক টাকাও পাবেন না, পিঠ চাপড়ানিও পাবেন না… এমন নিঃস্বার্থ কাজ বেশিদিন কেউ করতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। সে জন্যই এসব হয় না ধারাবাহিক ভাবে। রাজ্য বা কেন্দ্র কোন সরকারেরই মাথা ব্যথা নেই অনুবাদ সেক্টরটি নিয়ে। অতএব এসব প্রশ্ন আলোচনাও মূলতুবি থাক। কেননা এ বিষয়ে লক্ষ কথা হবার পরেও এক পাও কিছু এগোয় না। আরে বাবা অনুবাদের উপর সামান্য এক ঘন্টার একটা স্লট পর্যন্ত থাকে না সাহিত্য অ্যাকাডেমি বা বাংলা অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে বা মেলা টেলায়। যদি বা থাকেও এক আধ সময়, সেখানে ভারতীয় ভাষার অনুবাদ সাহিত্য থাকলেও বিদেশী সাহিত্যের স্থান প্রায় নেইই। বড়জোর একটি পুরস্কার ধরিয়ে দেয়া হয় বছরে একবার। ব্যস ওভাবেই নগদ বিদায়। অনুবাদকে বাঁচিয়েই রেখেছে লিটল ম্যাগ।

 

কবিতার অনুবাদ কবি, গল্পের অনুবাদ একজন গল্পকার করলেই সেরাটা পাওয়া সম্ভব? তোমার কী মনে হয়?

জয়া চৌধুরী: একজন সার্থক অনুবাদককে সব জানতে হবে। একি আধুনিক ডাক্তারি নাকি! দেহের সব অঙ্গের জন্য বিশেষজ্ঞ চাই! সার্থক ডাক্তার পুরো দেহটি ভাল করে চেনেন। অনুবাদককেও তাই সম্পূর্ণ সাহিত্যিক হতে হয়। মানে সোজা কথা সার্কাসে যেমন জোকারের কাজ সবচেয়ে কঠিন। তাঁকে সব খেলা জানতে হয়। অনুবাদকের ভূমিকাও তাই। তাঁকে সব জানতে হয়। নইলে ছাই কীসের অনুবাদক!

তোমার মৌলিক কবিতার নির্মাণ ভাবনা বা বিনির্মাণ নিয়ে জানতে চাই?

জয়া চৌধুরী: কবিতা নির্মাণ করতে পারি না। বিনির্মাণ তো দুরস্ত। কবিতা লিখতেই জানি না। কিন্তু ক্রমাগত বিশ্ব সাহিত্যের কবিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য দু চারটে আমিও লিখে ফেলি। কোন ছন্দ শিখি নি, মাত্রা বৃত্ত, অক্ষর বৃত্ত কিস্যু জানি না। মনে লেখা এলে লিখে ফেলি। ক্লাস টু-তে পড়বার সময় স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য প্রথম কবিতা লিখেছিলাম। চার লাইনের কবিতা ছিল।

“আকাশে আজ কালো কালো

মেঘ করেছে।

পাখিরা সব দলে দলে

বাসায় ফিরেছে।”… এরকমই ছিল সেটা। আগেই বলেছি গোটা স্কুল জীবন গল্প কবিতা লিখে টিখে তারপর ক্লাস ইলেভেনে পড়বার সময় আচমকা শপথ নিয়ে সব সাহিত্য সৃষ্টি বন্ধ করে দিই। সেটা ফের শুরু করি স্প্যানিশে প্রথম উপন্যাস অনুবাদ করে প্রকাশিত হওয়ার পরে। সিরিয়াসলি সাহিত্য চর্চা তখন শুরু হয় আবার। একটা নতুন কবিতা সিরিজ থেকে এই কবিতাটা দিই বরং-

অন্ধ

এ শরীর কত সম্ভাবনাময় ভেবে অবাক হতে হয়

একবার এক সাধু প্যাঁচ খুলে খুলে দেখিয়েছিল তার জননাঙ্গ

আর এক জন তো বারো বছর নামায় নি তার পা ঊর্ধ্বে

ফুলে যাক টাটাক তীব্র যন্ত্রণা করলেও শরীর সম্ভাবনার মোহ যায় না

সে তো সাধু না হলেও কীর্তি দেখায় কারখানায় ইট ভাটায় পাথর খাদান

ও চাষের জমিতে নিরন্তর শরীর নিংড়ে নিংড়ে ভানুমতির খেল ও

সম্ভাব্য সবরকম আখ মাড়াইয়ের পরে ঘেয়ো কুকুরের মত

বহুপ্রসবী মাদী বেড়ালটার মত ছিবড়ে হয়ে যায়

সন্ধ্যের শেষ সিরিয়ালের আওয়াজ বন্ধ হলে যেভাবে

মশারীর তলা গোঁজা হয়ে যায় তোশকে ন্যাতানো পাঁপড় শরীর

 

 

তোমার কাছে কবিতা আদতে কি?

জয়া চৌধুরী: জানি না তো। বরং আরেকটা কবিতা বলি। সেটা শোন।

এসো

কাছে আছ

কিন্তু ছুঁতে পারছি না।

যেভাবে আঙুল ছোঁয় আঙুলকে

ঠোঁট ছোঁয় ঠোঁট

নাভি বিপরীতকে

কাছে আছ

রাখতে পারছি না

চোখের গহনে চোখ

বুকের গভীরে বুক

মাঝখান দিয়ে ঝরাপাতারা উড়ে যাচ্ছে ফাগুনে

কাছেই আছ…তবু

আমার মজ্জা মাংস শোণিত ব্যাকুল চাওয়ায়

পুড়ে যাচ্ছে ফোঁটা ফোঁটা পল

এসো প্লিজ… কখনো তো ভাবুক না ভেবে

মানুষ ও ভাবতে পারো…

সমাজে নারীর যে অবস্থান তা কি লেখক সমাজেও দেখা যায়? একজন নারীর লেখক হতে চাওয়াটা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং? এর সমাধানই বা কী?

জয়া চৌধুরী: দেখো প্রশ্নটা। তুমি এর উত্তর নিজেই জানো।

সমাধান বলতে পারি একটাই। নিজের কাজটা নিষ্ঠা ভরে নিজের মনে করে যাওয়া। আর নিরন্তর কঠোর পরিশ্রমে দরজায় আঘাত করা। দরজা একদিন খুলবেই। শ্রীরামকৃষ্ণের কথা আছে না- “হাজার বছরের অন্ধকার ঘর থেকে ঘুচে যায় যদি একটা দেশলাই কাঠি জ্বলে ওঠে”। ওই দরজা খোলা মানে দেশলাই কাঠি জ্বলে ওঠা। আলো ছড়িয়ে পড়া সময়ের অপেক্ষা শুধু।   

 

তোমার মৌলিক লেখায় যে ফর্ম দেখা যায় তাতে বিদেশী সাহিত্যের প্রভাব কতটা?

জয়া চৌধুরী: হুম। আছে প্রভাব। অনেকেই বলে থাকেন সেকথা। আমিও টের পাই। And I am happy for that. ভাল জিনিষ যেখানে পাই সেটাই নিই। স্বদেশ বিদেশ আবার কী! আর সচেতন ভাবে নয় অজ্ঞাতসারেই সেটা প্রবেশ করেছে। আমি শুধু মনকে খুলে দিই। ব্যস। বাকিটুকু কলম জানে, থুড়ি কম্পিউটারের কী বোর্ড জানে। 

 

লিটল ম্যাগাজিন একটি আন্দোলন। লিটল ম্যাগের লড়াই ও টিকে থাকা প্রসঙ্গে তোমার চিন্তাভাবনা কি?

জয়া চৌধুরী: সত্যি বলতে কী লিটল ম্যাগাজিন মানে যে পরীক্ষা নিরীক্ষা বরাবর বাংলা সাহিত্যে ছিল তার কিছুমাত্র বদলায় নি। সেসব এখনও আছে। কিন্তু তার পাশাপাশি আছে অজস্র লেখা সংকলন যার কোন সম্পাদনা নেই। কেননা লেখা সংগ্রহ করে একটা পেপার ব্যাকে ছাপিয়ে দিয়ে মানুষ লিটল ম্যাগাজিন ঘোষণা করলে তো সেটা চারিত্রিক দিক দিয়ে লিটল ম্যাগাজিন হল না।

আর রাজনীতির সোচ্চার উপস্থিতি আগে লিটল ম্যাগে হামেশাই পেতাম এখন সেটা তীব্রভাবে অনুপস্থিত। মানে রাজনীতি থাকলে লেখা ছাপানো হবে না এমন ঘোষণা করে দেয়া থাকে এখনকার লিটল ম্যাগে। অতএব সমাজের ত্রুটি দেখানোর মাধ্যম হিসাবে যেসব জঁরের সাহিত্য আগে পাওয়া গেছে সেসব আর পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ যে সব নিরীক্ষা মূলক লেখা ছাপানো হয় সেগুলিও আদতে আলংকারিক নিরীক্ষা। সিরিয়াস কোন কাজ নয়। মূলগত পরিবর্তনের কোন ভাবনা সেখানে না থাকার কারণে দিনের শেষে সেগুলিও আদতে বৃথা সাহিত্য হয়ে স্তূপ হয়। অজিত রায়দের মত বিচ্ছিন্ন কেউ কেউ অবশ্যই সেরকম সিরিয়াস কাজ করেছেন এবং করে চলেছেন। তবে সার্বিক ভাবে আপাতত এর কোন বদলের সম্ভাবনা নেই। অজস্র কবরখানা থাকতেই পারে, কিন্তু তাজমহল বানাতে অনেক রক্ত ঘাম প্রয়োজন হয়। সৌখিন ভাবে তা কী করে করা সম্ভব!

লেখার ক্ষেত্রে বিষয়, কাঠামো, চরিত্র নির্মাণ, ভাষার বিশেষ গঠন (কন্সট্রাকশন)) এবং প্রকাশভঙ্গি এসবের কোনটিকে তোমার গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়? নিজস্ব কোনো নির্মাণকৌশল আছে কি? 

জয়া চৌধুরী: সবকটাই ভিন্ন ভাবে বহু সার্থক সাহিত্যে আমরা পেয়েছি। তবুও আমার কাছে এর গুরুত্ব ক্রমানুসারে চরিত্র নির্মাণ, বিষয়, প্রকাশভঙ্গি এবং শেষে ভাষার বিশেষ গঠন হবে। আমি নির্মাণ কৌশলের প্রতি শ্রদ্ধাবান তবে তার উপর চূড়ান্ত গুরুত্ব দিই না। মানে আপনি আবদুল করিম খাঁ সাহেবের গান শুনুন। নির্মাণ কৌশলের চমৎকারিত্ব আপনাকে বুঁদ করে রাখবে। কিন্তু অলস ভাবে অর্থাৎ সতর্ক মনে ও গান না শুনলে কোন লাভ নেই। রস পাবেন না। কিন্তু আপনি ভীমসেন জোশির গান বা রবিশংকরের সেতার যে কোন অবস্থায় শুনবেন। কারণ তখন মাথা ও মন দুইই তৃপ্ত হবে। মাথা কাজ না করলেও রস পেতে অসুবিধা নেই। আবার দুটোই কাজ করলেও তোফা। যদিও পোষ্ট মডার্ন সাহিত্যে এখন নির্মাণ কৌশল নিয়েই মাতামাতি। ভেবে দেখবেন দুশো বছর আগের দস্তয়ভস্কি পড়তে আজও আপনার এনি টাইম ভাল লাগে নাকি?

একজন লেখকের পাঠকের কাছে পৌঁছানো কতটা জরুরি?

জয়া চৌধুরী: যা বাবা! সেটাই সবচেয়ে জরুরি। আর সে পাঠকের নাম লেখক নিজে। তারপর সম মনের পাঠক তার জুটেই যাবে।

রিডার রেসপন্স থিওরি নিয়ে তোমার মত কী?

জয়া চৌধুরী: পাঠকের মন বোঝা ভগবানকে বোঝার সমান। আমি হয়ত নিমগ্ন কোন মুহূর্ত লিখেছি, পাঠক হয়ত অফিসে টিফিনের ঘন্টায় পড়ছেন সেটা। কতটা মন দিয়ে তখন পড়া সম্ভব? তাহলে পাঠকের রিয়াকশন কিরকম হতে পারে? আবার তার নিজের কোন নিবিড় মুহূর্তে হয়ত লেখাটা পড়ল সে। তার রিয়াকশন তাহলে অন্যরকম হবে। অতএব আমার কোন থিওরি নেই। যা জোটে যেভাবে জোটে সব শিরোধার্য।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সাহিত্য কি ঘুরে দাঁড়ানোর মতো শক্তির যোগান দিতে পারবে বলে মনে কর?

জয়া চৌধুরী: আপাতত বাংলা সাহিত্যে সেটা হবে কি না খুব সন্দেহের। মানুষের সহ্যের সীমা এখন আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। কোন বিচ্যুতিই তার কাছে যথেষ্ট বিচ্যুতি নয়। কারণ সে নিজেই গত শতকের ন্যায় নীতি বোধের মাপকাঠি থেকে বিচ্যুত। অতএব এ শতাব্দী যেমন আসছে তার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডও সেরকমই হবে- মাঝারি। খুব খারাপও নয়, খুব ভালও নয়। এ মতের মধ্যে আমি বাংলা সিরিয়ালের মত লেখা গল্প কবিতাদের ধরছি না। সো কল্ড পুরস্কার প্রাপ্ত লেখা নিয়েই বললাম। আমাদের তাই আপাতত সু সাহিত্যের খোঁজে গত শতক নিয়ে টানাটানি অব্যাহত থাকবে আরো অন্তত দু দশক।

বাংলা গল্পের বাঁক পরিবর্তনের দিশারী বললে কাদের কথা বলবে? কেন?

জয়া চৌধুরী: এ প্রশ্নের উত্তর দেবার যোগ্যতা নেই।

তোমার প্রিয় বই? যা সব সময় কাছে রাখতে চাও?

জয়া চৌধুরী: ভেবে দেখেছি। শরদিন্দু বড্ড প্রিয়। এবং টিনটিন (কমিক্সকে দৃশ্য সাহিত্য বলে মান্য দিই)। এবং রবীন্দ্রনাথের গদ্যসাহিত্য। অনেক পড়া বাকি। শেষের কবিতাই আবার পড়লাম গত মাসে। আর কথামৃত এবং লীলাপ্রসঙ্গ। লীলাপ্রসঙ্গ অত্যন্ত জটিল বই। আমার মনে হয়েছে সুররিয়ালজমের এপিটোম। বুঝি নি দুবার ট্রাই করে। ওটা আবার পড়বার চেষ্টা আছে বলে কাছে এনে রেখেছি নতুন করে বই দু খন্ড কিনে।

প্রিয় কবি?

জয়া চৌধুরী: আছেন তো অনেক মহান কবি। আমি সামান্য মানুষ আমার প্রিয়- তারাপদ রায়, খাইমে সাবিনেস, আলফোনসিনা স্তোর্নি।   

প্রিয় কবিতা?

জয়া চৌধুরী: নির্দিষ্ট নেই।

প্রিয় গল্প ও প্রিয় গল্পকার?

জয়া চৌধুরী: শরদিন্দুর সব লেখা, বরদা সিরিজ বাদ দিয়ে। এবং ইসাবেল আইয়েন্দে।

প্রিয় উপন্যাস?

জয়া চৌধুরী: যোগাযোগ।

ভবিষ্যতে কি মানুষ সাহিত্য লিখবে–পড়বে? সাহিত্যের কি আর প্রয়োজন হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে?

জয়া চৌধুরী: সভ্যতা থাকলে সাহিত্য থাকবে। ফের গুহা যুগে ফিরলে আর দরকার হবে না।

ধন্যবাদ ইরাবতীকে। এসব ভুলভাল কথা শুনতে আগ্রহী হলে বলে।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত