| 29 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-২১) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-২১।


পরপর দুটো ম্যাচ জিতে গেল সুর্যনাথ হাই স্কুল। গ্রুপের শেষ খেলায়  মন্মথনাথ স্কুলকে  রাজরা বেমালুম উড়িয়ে দিল  ২- ০ গোলে।  নির্ঝর ব্যাপক খেলল। ওর পায়ে যেন ভেলকি আছে। এমন খেলা আশেপাশের কেউ অনেকদিন দ্যাখে নি। তাছাড়া সে ছোটখাট, অন্যদের তুলনায় সে নেহাতই বাচ্চা। কিন্তু ওর খেলা দেখে তা বলবে কে? পরের নকআউট  ষ্টেজে মানে সেমিফাইনালে   রাজদের উল্টোদিকের টিম  দিব্যসুন্দর স্কুল। এদের হারাতেও কোনো অসুবিধা হল না। তিন-এক  গোলে তারা জিতল। নির্ঝর দুটোও অনীকদা একটা গোল করল।

রাজরা দিব্যি  ফাইনালে উঠে গেল। রাজ নিজেও ভাল খেলেছে।নির্ঝরকে ঠিকঠাক পাস বাড়িয়েছে। তবে তাকে নিয়ে কেউ তেমন কিছু বলছে না বলে সে মনে মনে একটু আশাহত। স্যার, ইন্দ্রদা সবাই শুধু পড়ে আছে নির্ঝরকে নিয়ে। মনের মধ্যে খচখচানি এলেও সে কাটিয়েছে। ফুটবল টিম গেম। সুতরাং তারা জিতেছে এটাই বড় ব্যাপার।

দুচারদিন স্কুলেও খেলা নিয়ে একটু হইচই হল।ফাইনাল খেলা নিয়ে স্কুলে উদ্দীপনা তৈরী হচ্ছে। অন্যান্য স্যাররাও  কৌতুহল দেখাচ্ছেন।  এর কারন উল্টোদিকে  আবার তাদের সামনাসামনি রামলাল বিদ্যালয়।  গ্রুপ লিগের খেলায় তাদের একবারে গোহারান হারিয়েছিল রামলাল স্কুল।ও দের একটা জবাব দেবার ইচ্ছে সবার মধ্যেই। তাছাড়া  রাজরা  এই প্রথম শৈবালচন্দ্র টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে। উত্তেজনা স্বাভাবিক। নির্ঝর কে  নিয়ে সবাই কথা বলছে। তবে সে একইরকম  নিস্পৃহ। তার যেন কোনো উত্তেজনা নেই। যেমন স্কুলে এসে চুপ করে বসে থাকে, তেমনই রয়েছে।

ফাইনাল খেলার জন্য মাঝে সাতদিন ছাড় আছে। রাজরা রীতিমত আত্মবিশ্বাসী। স্যার  বলেছেন এ কদিন শুধু মন দিয়ে প্র্যকটিশ করতে। রাজরা তাই করছে।  তীর্থজেঠু  পুরো দায়িত্ব নিচ্ছেন তাদের কোচিংএর।

  এ কদিন স্কুল থেকে তাদের টিফিন পিরিয়ডে ছেড়ে দিচ্ছে।  প্র্যাকটিশ করার জন্য। শোনার পর বাবা বিরক্ত হয়েছিলেন। বলছিলেন,”এক সপ্তাহ  হাফছুটি? এটা কি ঠিক?”

মা বলেছিলেন,”আহা! মোটে সাতদিন। দেখতে দেখতে চলে যাবে।“

“সামান্য খেলার জন্য এমন ছাড় দেওয়া উচিত নয়।“

“দ্যাখো। সামান্য তোমার কাছে। কিন্তু যারা খেলছে তাদের কাছে এটা বিরাট ব্যাপার। তাছাড়া রাজ  টুর্নামেণ্ট খেলছে এটা কি কম বড় ব্যাপার?”

ছোট্মামাও পাশে ছিলেন। মায়ের সাথে গলা মিলিয়ে ছোটমামাও বলেন, “এটা কিন্তু আপনি ঠিক করছেন না। ওকে আটকাবেন না জামাইবাবু। ওর মন ভেঙে যাবে।“

বাবা মাথা নাড়িয়ে বলছিলেন,”হুম।“

টিফিনের পর স্কুল থেকে বেরোল রাজরা। স্কুলব্যাগ ছাড়াও একটা কিটস সে নেয়। অন্যরা সমীহের চোখে তাকায়। ভালোই লাগে রাজের। মিল লাগোয়া  মাঠে সাইকেলে যেতে  অল্প সময় লাগে। স্যার  পরে আসলেও ক্ষতি নেই। তাদের প্র্যাকটিশে কোনো অসুবিধা নেই।এখনো অনেকে আসে নি। খেলা শুরু হতে হতে তিনটে।তবে তীর্থজেঠু আছেন। এখন তিনি তাদের রীতিমতো প্র্যাকটিশ করান।

রাজকে দেখে তীর্থজেঠু বললেন,” আয়। আর সব কোথায়?”

“আসছে।“

“আচ্ছা। আসুক। তারপর শুরু করব।“

রাজ একবার তাকাল  তীর্থজেঠুর দিকে।মাঠ অন্ত প্রাণ লোকটার। স্যার বলছিলেন খেলা ছাড়া কিছু বোঝেন না জেঠু। সে জিজ্ঞেস করল, ” জেঠু। আপনি কোথায় খেলতেন?”

“আমি?”

“হু!সবাই বলে আপনি নাকি খুব বড় প্লেয়ার ছিলেন।“

“কে বলে?”

“স্যার বলেন। মা বলেন“

“তোর মা? কি নাম?”

রাজ নাম বলে মায়ের।

তীর্থজেঠু দরাজ হাসেন।  তারপর বলেন,”তাই নাকি!ইরা  তোর মা ? তোর মা তো বলবেই। ইরা খুব ভাল অ্যাথলিট ছিল। ছোটবেলা থেকে দেখছি। খুব ভাল দৌড়াত। তোর মা দৌড়াত আমি টাইম দেখতাম। সে কি আর আজকের কথা।“

“জানি। আপনি নাকি দারুন খেলতেন।“

জেঠু চোখ গোল গোল করে বলেন, “শুধু আমি নই আরেকজনের কথা বলে নি ইরা?”

রাজ অনুমান করল কার কথা কথা বলছেন জেঠু। সে তবু সংশয়মাখা গলায় বলল,”কে?”

 জেঠুর কথা শেষ হল না। তার আগেই ইন্দ্রনীল, নির্ঝররা চলে এসেছে। জেঠু তড়াক করে উঠে পড়লেন। এখন এক্মুহূর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না। রাজও উঠে পড়ল।তীর্থজেঠু  নির্ঝরের জেঠু  কথাই বলছেন। রাজ জানে। সে মায়ের কাছে কিছুটা শুনেছে। ওরা দুজন নাকি একসঙ্গে খেলতেন। দুই বন্ধু। অথচ ওদের মধ্যে এখন কোনো সম্পর্ক নেই। রাজ তার কারণ জানে না। মা তাকে কিছু বলেন নি।


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-২০) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


 ম্যাচ শুরু  হবার আগে  নির্ঝর দৌড়াতে দৌড়াতে এল। ওর মুখ দেখে অবাক হল রাজ। এত হাসিখুশী কোনদিন ওকে দ্যাখে নি সে। রাজ কৌতুহলের চোখে তাকাল।নির্ঝর খুশী হলে সেও খুশী হয়। সে বলল,”কি রে?”

“ জানিস! আজ না জেঠু আমাদের প্র্যাকটিশ দেখতে আসবে।“

রাজ অবাক হয়ে চেয়ে রইল। সে খুব খুশী হল । বঙ্কু জেঠা যে কি সাংঘাতিক রাগী লোক তা নিজের চোখেই দেখেছে। কদিন আগেই নির্ঝরের পড়া, খেলা, সবেতেই তার আপত্তি ছিল। অথচ এখন তিনি বদলে গেছেন। সে বলল,  “বাহ! দারুন খবর।“

 নির্ঝর বলল,”এসব কিন্তু কাকিমার জন্য হয়েছে। আমাকে জেঠু বারবার তোর মায়ের খেলার গল্প বলে। জেঠু এখন  আবার আগের মত হয়ে গেছে। যে ভাবে হোক আমি খেলি বলে আমাকে খাবার এনে দেয়। রোজ এখন ডিম কলা খাই।“বলতে বলতে নির্ঝরের গলা ধরে আসে।

রাজ ওকে জড়িয়ে ধরে। সে বলে ,”দুর বোকা। কাঁদিস কেন? এখন চল। ওদিকে খেলা শুরু হয়ে যাবে।“

“চল।“    

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত