| 12 ডিসেম্বর 2024
Categories
শারদ অর্ঘ্য ২০২৩

শারদ অর্ঘ্য: একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা । ফেরদৌস নাহার

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

 

 

খুব ঝড় হচ্ছে

 

এক.  ঝড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে দুটি মানুষ

        ভীষণ ঝড়ের উন্মত্ততায়

        চমকে উঠছে চোখ

        কাঁপছে চোখের তারা

        আমি ঝড় ও বল্গাহারা

 

        মানুষ জন্মে নেই

        ইতিহাসের ঐক্য কোরাস

        কিছুই লাগে না চেনা

        নিয়ত চেনার ভান

        উফ! কিছু লাগে না ভালো

        জীবনের খেয়াঘাটে       

        পাল তোলা নৌকা

        ও-ই দেখা যায়

        যাব নিরুদ্দেশে

        যাব ভেসে ভেসে, কার উদ্দেশ্যে

        আর কি আসব ফিরে

        বালাই ষাট

        আর কী এসেছি ফিরে… …

 

দুই.   তোমাকে চুমু খাব বলে

        নিজেকে প্রস্তুত করেছি

        প্রস্তুতি সম্পন্ন হলো

        এখন কাঁপছে চোখ

        এখন বাজছে বুক

        দ্রিমি দ্রিমি দ্রিম দ্রিম

        এগিয়ে যাচ্ছে ঠোঁট

        ভীষণ হট্টরোল

        ভাবনা গুলিয়ে ফেলেছি

 

         আজ সারারাত ঝড় হবে

         জল হবে ঝড় হবে

         হ’তে হ’তে ঠোঁট হবে গাঢ়

         চোখ হবে প্রাচীন লোকগাথা

         উষ্ণ উদাস অথচ

         বিরহ বিরহ… … 

 

তিন.   প্রেমের কোনো বয়স নেই

          একবার এসে পড়লে

         পালায় কোথায়

         ঝড়ের কোনো প্রকৃতি নেই

         একবার উঠে পড়লে

         ঠেকায় কে তায়

 

         আমার প্রেম

         আমার বয়সের চে’ বড়ো

         আর পৃথিবীর ঝড়

         ভীষণ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে

         ইতি-উতি ছোটে

         বোধহয় লুকাতে চায়

         বোধহয় পালিয়ে বাঁচতে চায়

         আমার ঝড়ের পাশে

         তাকে খুব ছোট্ট দেখায়… …

 

চার.   খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়

         নিকট হয়েছে দূর

         ঘুমচোখ চেয়ে চেয়ে দেখে

         পৃথিবী প্রভাত

 

        খুব ঝড়ে ঘুম ভেঙে যায়

        বাতাস হয়েছে ক্রুর

        ঝড় এসে সব ভেঙে যায়

        যাপিত জীবন

          মানুষ স্বভাবে আছে

        ঝড় ঘুম ভোর

        আমার স্বভাবে নেই

        শুভ প্রেম সুখ

 

        ঝড়ের পৃথিবী ডাকে- আয়

        ঝড়ের মাঝেই জানি

        আমার যে যেতে হবে

        ঝড় থাবা ডাকে- আয় আয়… …

 

পাঁচ.   চোখ বুঁজলেই দেখতে পাই

         সে যেন জলপাই বন

        তার দেহে প্রাচীন বল্কল

        জাপটে ধরছে গাঢ় মায়াবী সবুজ

 

        তার হাত দীর্ঘ রাতের ভোর

        তার বুক দীর্ঘ ঘুমের দেশ

        অহংকার নিঃশব্দ আশ্রয় খোঁজে

        তার দুই চোখে

 

        আজ মরণের এই ঘোর

        আপ্লুত জড়িয়ে ধরে

        মরণের মাঝে আজ দেখতে পাই

        সবুজ আলোয় ঘেরা নিঃশর্ত ঝড়

        বার বার নাম ধরে ডাকে

        তাহার গলার স্বরে

        ঘুমায়ে যেতে যেতে

        পাশ ফিরে শুই… …

 

ছয়.   কাঞ্চনজঙ্ঘার  বুকে রোদ্দুর

        খুব বেশি দূরে নয়

        এক্ষুনি যোগ হবে

        অনাগত কালের লহরি

        বনান্তরের সবুজ আর

        আকাশের উদাস চোখ

        আমাকে মরণ চিনিয়েছে

        যদি কোনোদিন না বলে

        চলে যেতে চাই তা হবে না

        কারণ আমার মনের মাঝে

        শাশ্বত কালের ভারী পাথর

        গড়াতে গড়াতে আকাশে

        উঠছে ঝড়, মেঘরঙ গাঢ়

        মেঘেদের ছোটাছুটি

        যেনবা তৃণের ফলক

        আজানু লম্বিত কোনো

        ঘাসফুল দুলে দুলে

        মরুভূমির বালু ছুঁয়ে

        আলো নেয় শুষে… …

 

সাত.  ঘুমের মাঝে কুঁকিয়ে উঠলে

        তুমি ভাব দুঃস্বপ্ন

        আসলেই দুঃস্বপ্ন

        গতকাল কতকাল আমি

        এভাবে কুঁকিয়ে উঠছি

 

        চার দেয়ালের ফ্রেমে

        আমার বিশ্বাসের ছবি

        বাঁধাতে পারিনি আমি

        কাচের তীক্ষ্ণ দাঁত

        ছিনিয়ে নেয় স্বপ্নঘুম

 

       ঘুমের বয়স হলে

       সে কেমন একা একা

       ব্যথিত শব্দ করে

       চোখের পাতায় জমে

       কুয়াশা ছবি

 

       আলোর বন্যা নিয়ে

       যে-দিন হয়েছে গত

       তারই জন্যে ঘুম দেশে

       কুঁকিয়ে ওঠা

       ঘুম ভাঙা চোখ জেগে

       খুব ঝড় বুকে ক’রে

       ফুঁপিয়ে ওঠা… …

 

আট.  শুভেচ্ছা নিও

        শুভ ইচ্ছার বিপণিবিতানে

        শুভব্রত ভাবনা কিনিও

 

        আজ আকাশের কানায় কানায়

        প্রবীণ আলোর বান রচিল-বহিল

        জয় হোক জয় হোক অন্ধ পৃথিবীর

        আশ্চর্য কোলাহলে মত্ত রহিল

 

        শুভেচ্ছার দ্বারে দ্বারে

        সবুজ বৃক্ষ পুঁতিও

        না চিনে ভুলেছ যারে

        শুভেচ্ছায় তারে চিনিও… …

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত