| 8 অক্টোবর 2024
Categories
প্রবন্ধ সাহিত্য

প্রবন্ধ: আইসছ্যে মকর দু’দিন সবুর কর । গৌতম মাহাত

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

চুটিয়ানাগপুর জুড়ে যে ঐতিহ্য সুপ্রাচীন কাল থেকে কুড়মিরা নিজের প্রশস্ত কাঁধে বহন করে আসছে তা লৌকিক পার্বণের নৌকোয় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। নানান কুড়মালি পরব আজ আর নতুন করে লোকসমাজে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না সে সবই আজ সুপরিচিত ও সর্বজন বিদিত। জাড়কাল মানেই আমরা বুঝি মকর আর মকর মানেই মকরডুব। এই মকর ডুবেরও একটা উন্মাদনা আছে আছে একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও শিল্পের পারম্পরিক সহাবস্থান।

অগ্রহায়ণ মাসের শেষদিন ছোট-মকর। জমি থেকে ঠাকুর(ডিনিমাঞকে) ঘরে আনা দিয়েই এই দিনটিতে হয় টুসুর বোধন যা চলে পুরো মাস(পুষ মাস) জুড়ে। পৌষ মাসের শেষ দিন পর্যন্তু এই টুসুই হল চুটিয়ানাগপুর অঞ্চলের মেয়েদের কাছে একমাত্র বিটি(কন্যা), সই/ সখী। টুসু শব্দটি এসেছে তুঁষ/ তুষালি.. ইত্যাদি থেকেই। তাই মকরের দিন অনেকেই “ফুল”(সই) পাতায়। গান আছে–

“হামদের টুসু ফুল পাতাবেক দেশে কি আর ফুল আছে![br]
লদি ঢঢ়ার নিমঅছা লাড়ু লো ফুলের হাথে ফুল খাছে।”[br]

       ধানের খোসাকে বলে ‘তুঁষ’ বা ‘তুষ’। এটি মৃত ধানের রূপ। ড. বিনয় মাহাতোর মতে- “জলাশয়ে টুসু বিসর্জনের অর্থ হল মৃত শস্যকে কবর দেওয়া। মৃতকে কবর দেওয়ার অনুষ্ঠান হলেও টুসু উৎসব শোকোৎসব নয়। বরং মৃতের অবশ্যম্ভাবী পুনর্জন্মকে ত্বরান্বিত করার জন্য যাদুক্রিয়ার মাধ্যমে আনন্দোৎসব। গোবর, পিটুলিগোলা প্রভৃতি উর্বরতাশক্তিকে বৃদ্ধি করে মৃত শস্যের পুনর্জন্মকে তরান্বিত করার কৌশল মাত্র।” 

ড. সুহৃদ কুমার ভৌমিক এবং জেমস ডি রবিনসন লিখেছেন, “Tushu is a female deity, worshipped for the whole month, but for what purpose this deity is worshipped has not been ascertained. Some think that she is the emblem of wealth and others take her to be the incarnation of the Goddess Ganga, the most sacred river Ganges. Perhaps in the beginning it was a folk festival of harvest time in the tribal zone, and it had no link with religion though it will be lost into Hindu practice, conjoining with various local deities.”

মুণ্ডারী ভাষায় ‘টুসু’র অর্থ পুতুল। Austro Asiatic গোষ্ঠীর ‘টুসাউ’ থেকে ‘টুসু’ আসতে পারে বলে মনে করেন ড. সুহৃদ কুমার ভৌমিক। এর অর্থ টাটকা ফুলের গুচ্ছ। “Perhaps tushu is a non-Sanskrit word from an Austro-Asiatic Kol origin, to mean flower, a bunch of flowers, bud etc. In Santali baha tushu means a bunch of flowers; tushu means simply a bud, a leaf of a bud-a symbol of youth and beauty. Tushu-this word has been taken to express the heart’s beauty and joy.” তিনি লিখেছেন, “Tushu is a folk festival without any touch of religion or a ritual brata but that it was to be celebrated when wealth, paddy or the main crops were gathered into the granaries from the farms to guard against loss.” 

মিশরীয় দেবতা টেষুব {Teshub [also written Teshup, Teššup, or Tešup; cuneiform, hieroglyphic Luwian (DEUS) TONITRUS, read as Tarhunzas] was the Hurrian god of sky, thunder, and storms.} থেকে টুসুর উৎপত্তি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু ‘টেষুব’ হল পুরুষ দেবতা। আর টুসু হল নারী দেবতা। তেমনি মধ্যপ্রদেশের একটি লোক উৎসবের নাম ‘টেসু’। যদিও তা শষ্য উৎসব নয়, নবরাত্রি ও দশেরার সঙ্গে সংমিশ্রিত। তাই ‘টেসু’ থেকে ‘টুসু’ সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।


আরো পড়ুন:  টুসু গানে সমাজ জীবন । তপনকুমার সেন


        এই অঞ্চলের এই পরবটিকে মূলত চারটি পর্যায় ভাগ করা যেতে পারে– স্থাপন,পালন, জাগরণ ও বিসর্জন। আঘন/মাইসর(অগ্রহায়ণ) মাসের শেষদিনে বাড়ির আঞনগার(আঙিনা) উপযুক্ত স্থানে চইখপুরা চিত্রিত করে সেখানে টুসুকে থাপন(স্থাপন) করা হয়। এখানে টুসু হল সেই ‘ডিনিমাঞ’ যা ধান কাটার পর জমিতে রেখে দেওয়া পরিপুষ্ট একগোছা ধানআঁটি।যা ছোট মকরের দিন অর্থাৎ আঘন মাসের পয়লা দিন শুদ্ধ কাপড়ে না কথা বলে একমনে বিল/জমি থেকে এনে থাপন করতে হয়। কিন্তু বিসর্জনের সময় বিসর্জিত হন শুধু মাটির সরা, যাতে থাকে তুঁষ ও তিল মিশ্রিত লাড্ডু, ফুল, গুলাচ ফুলের মালা, কড়ি, কুঁচ, সরষে ইত্যাদি…

গীত–[br]

“গাই আউলি বাছুরি আউলি[br]
আউলি ভগবতি গউ,[br]
দেউতা ভুতাই, সঞঝা লে গঅ,[br]
ডিনি ঠাকুরানি গঅ।[br]
সাঁঝ লেগঅ সঞঝা লেগঅ,[br]
লেগঅ দিআ বাতি গঅ,[br]
সঞঝা লেইএ ঘার সামহালি,[br]
ঘারেক কুলবতি গউ ।।”[br]

     পরদিন সাঁঝে টুসুকে ঘুম পাড়ানোর মাধ্যমে  পালন পর্ব উদযাপন হয় আর পৌষ-সংক্রান্তির আগের রাতটা হল ‘জাগরণ’-র রাত। সারা রাত ধরে গানে গানে হয় টুসু আরাধনা। অবশেষে পৌষ মাসের শেষ দিন টুসুর ‘বিসর্জন’ পর্ব।
      পৌষের শেষ চারদিন পরিচিত ‘আঁউড়ি’, ‘চাঁউড়ি’, ‘বাঁউড়ি’, ‘মকর’। মকরের পরের দিন ‘আখ্যাইন যাতরা’। যা কৃষিবর্ষের প্রথম দিন।

★আঁউড়িঃ-  ‘আঁউড়ি’ অর্থে আগমণি বা আনয়ন। আঁউড়ি(মুল)>আউণি>আনয়ন। ডিনিমাঞকে বাড়িতে আনয়নের মাধ্যমে এর সূচনা। তবে টুসু পরবের যাবতীয় উপকরণ একত্রিত করে রাখার প্রাকপ্রস্তুতির নামই ‘আঁউড়ি’।

★  চাঁউড়ি” – ‘চাঁউড়ি’ শব্দটি ‘আঁচানো’ শব্দ থেকে উদ্ভুত হতে পারে।

চাঁউড়ি> চাউণি> আ-আগম হয়ে আঁচাউণি> আঁচানো
   ‘আঁচানো’ শব্দের অর্থ পরিস্কার বা পরিচ্ছন্ন বা ধৌত করা। চাঁউড়ির দিন পরিবার ও সমাজের অনিষ্টকারী অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো জঙ্গলের নির্জন স্থানে ফেলে আসা হয়। পরিবেশ স্বচ্ছ রাখার একটা প্রয়াস। গাঁয়ের মেয়েরা ঘরদোর গোবর দিয়ে ভালো করে নিকোনো হয়। এই দিন ‘গুঁড়িকুটা’ অর্থাৎ গুঁড়ি কুটার দিন। 

    ★বাঁউড়িঃ বাঁউড়ি> বাউণি>বাঁধনি/’বন্ধনী’। বাঁউড়ি আদি শব্দ যা থেকে শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বাঁধনি/বন্ধনী’ শব্দটির আগম। এই দিনে অনেক কৃষক পরিবারের গৃহকর্তীরা খড়ের টুকরো দিয়ে ‘বাঁউড়ি বাঁধা’ সারেন। বাড়তি খাদ্য শষ্য ভবিষ‍্যতের জন্য সঞ্চয় করা অর্থাৎ ধান পুড়া বাঁধা হয়। অন্যান্য এলাকায় তা মকর সংক্রান্তির দিন বিকেলে বাঁধা হয়। বলা হয় ‘আউনি বাউনি’ বা (‘বিচালী’ বাঁধা) বিঁড়া বাঁধা বাঁউড়িতে নানা ধরনের পিঠে পুলি হয় গেরস্থের বাড়িতে। সবে নতুন ধান চালে পরিনত হয়েছে। সেই চালের গুঁড়ি দিয়েই বিভিন্ন পিঠা তৈরি হয়। যার অন‍্যতম হল মাংসপিঠা।
     এই দিন রাতে হয় ‘টুসু জাগরণ’। সারা রাত ধরে চলে টুসু গান। নানা ভাবে সেই রাতে সেজে ওঠে টুসুমনি। রাত্রি বেলায় এই সময়ে খুব ঠাণ্ডার কারণে শোয়ার আগে পায়ের তলায় সরিষার তেল ভালো করে মালিশ করা হয়। বিশ্বাস যে, কোন অপদেবতার নজর না লাগে। আসলে(বিজ্ঞান ভিত্তিক কারণ) সিজনচেঞ্জের জন্যই এই প্রথা। বাঁউড়ির দিনে বিভিন্ন জায়গায় যে হাট হয়, তা ‘বাঁউড়ি হাট’ নামে পরিচিত। এইদিন অনেক জায়গায় খুখড়া সাঁঢ়া(মোরগ) লড়াইও হয়।

★”মকর” – বাঁউড়ির পরেরদিন ‘মকর সাঁকরাইত’ বা মকর সংক্রান্তি। অর্থাৎ কুড়মালি বছরের শেষ ‘জাড় মাস’ (পুষ) এর শেষ দিন। এইদিনে মকর ডুব ও টুসু ভাসানো অন্যতম প্রথা। সারারাত জাগরণের পর টুসু গান গাইতে গাইতে টুসুখলাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় জলাশয়ে। চৌডলে চাপিয়েও নিয়ে যাওয়া হয় শোভাযাত্রা সহকারে। টুসু বিসর্জন তথা টুসু ভাসানের পরেই মকরস্নান। 
      পুজোর উপচার নিতান্ত মামুলি। তেমন কিছু বিশেষত্ব নেই। পিটুলি গোলা দিয়ে সরার গায়ে আঁকা হয় নানা চিত্র। সরার ভেতরে থাকে নতুন ধান, তুষ মেশানো লাড়ু, গোবরের দলা।সরা সাজানো হয় ফুল, গুলাচ ফুলের মালা, কড়ি, কুঁচ, সরষে ইত্যাদি দিয়ে। মাটির সরার চারপাশে জ্বলে মাটির প্রদীপ। বর্তমান সময়ে অন্য উপাচারের সাথে সংস্কৃতির সংমিশ্রণের ফলে সরার বদলে কেউ কেউ ঘটও ব্যবহার করে থাকেন। কেউ কেউ আবার ঘটের ওপরেও সরা বসায়। আজকাল মূর্তি পুজোও করছে অনেকে যা কুড়মালী সংস্কৃতি বিরুদ্ধ। বিসর্জনের দিন চোড়লের ভেতরে সরা বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নদী বা খালে।

      ★ ‘চৌড়ল’, যেমন একটি শিল্পের নান্দনিকতাকে বহন করে তেমনই বহন করে কুড়মির ধরোহরকেও। এই ‘চৌড়ল’ শব্দটি এসেছে চৌ-ডোল থেকে। কোনও কোনও গবেষক চতুর্দোলার গ্রাম রূপকেই চৌড়ল নামের নামান্তর বলে সরলীকরণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ব্যুৎপত্তি আমাদের সংস্কৃতির বিলকুল উল্টো। তাই আগের ব্যুৎপত্তিটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়।যদি ডামাডোল শব্দটারই ব্যুৎপত্তি করা যায় তাহলে যা দাঁড়ায়– এমন একটা ডোল(ধান রাখার পাত্র) যেটা ডম্বর আকৃতির। অর্থাৎ ডম্বরটি ডোলের বিশেষণ। (প্রাচীন বাংলা) ডাম্বডোল>; (তৎসম বা সংস্কৃত) ডম্বর> ডামা+মুণ্ডারি. ডোল;। এই সুত্র ধরেই বল যেতে পারে ‘চৌ’ হল ডোলের বিশেষণ। চৌ অর্থাৎ চারকোনা আকৃতির ডোল। ‘ডোল’ হল ধান রাখার বিশেষ পাত্র। নতুন ধান ওঠায় পুরোনো ডোলকে নদীতে বিসর্জনের প্রথাই পরবর্তীতে শিল্পগ্রাহ্যের রূপে রূপান্তরিত হয়ে উন্মাদনা জুড়ে কুড়মির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে  সমৃদ্ধ করে।

★আখ্যাইন যাতরাঃ

                পরেরদিন কুড়মালি মতে কৃষিবর্ষের প্রথম দিন। আখ্যাইন যাতরা। এই দিন হালচার বা হালপুইন্যাহ করা হয়। এই হালপুইন্যাহ হল বছরের প্রথম দিনই কৃষির প্রতিকী সূচনা। কুড়মিরা যেহেতু কৃষিজীবি আদিবাসী তাই সেই প্রথা মেনেই এই সূচনাপর্ব।   
   কুড়মি উপজাতি বছরের শেষ দিনটিতে যাবতীয় পুরোনো সবটুকুই বিসর্জন দিয়ে স্নান সারেন। মকর পরিশুদ্ধিতার দিন। আর পুর্বপুরুষদের পরম্পরা স্মরণের দিন। আগামি বছরের সূচনা ‘যাত্রার’ দিন ধরে আপামর কৃষিজীবী কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের হাল বা লাঙ্গল থেকে ধান রাখার ডোল-পুড়ার সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার পরবের নামই মকর পরব।”
      একটু পুরো সময়ের পেছনে গেলেই আরও বেশ কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠবে। যেমন “মকর কুঁইড়্যা” তৈরি এই কুঁইড়্যা জ্বালানো হত মকরডুবের পর। তাতে কিঞ্চিৎ শরীর গরমও যেমন হত তেমনই নানান কৃষিজ কন্দ আগুনে পুড়িয়ে খাওয়ার আমেজটাও ছিল অসাধারণ।
    কিছু কি মিল লক্ষ্য করছেন? মানে ‘চাঁচুড়ি’র সাথে! তাহলে বলব ভুল নয় আপনার ভাবনা। কারণ তারপর দিনই থাকে দোল। আর দোলটাও সমস্ত নোংরা পরিস্কারের পরিকল্পনা থেকেই হয়তো আগত। যা কিন্তু বাংলা বছরের শেষ মাসেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সম্ভবত এই কনসেপ্টও কুড়মিদের এই রীতি থেকেই সঙ্করায়ন হয়ে থাকতে পারে।

“আইখ্যান” — মকরের পরের দিন তথা পয়লা মাঘ হয় আইখ্যান। সীমান্ত বাংলায় মাঘের প্রথম দিনেই ‘আইখ্যান যাতরা’ পালিত হয়।

   আইখ্যান>এখ্খান >অক্ষ অয়ণ

যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন, “ষোলশত বৎসর পূর্বে পৌষ সংক্রান্তির দিন উত্তরায়ণ দিন আরম্ভ হইত। পরদিন ১ লা মাঘ নূতন বৎসর আরম্ভ হইত।” এই দিনটা কুড়মালি নববর্ষ। তাঁদের কাছে ১২ টি মাস হল – মধুমাস, বিহা মাস, মহুআ মাস, নিরন মাস, ধরন মাস, বেরসা মাস, রপা মাস, করম মাস, টান মাস, সঁহরাই মাস, মাইসর মাস এবং জাড় মাস। 

এদিন ভোরে কাস্তে গরম করে শরীরে ‘চিড়ুদাগ’ দেওয়া হয়। বাইট্যা দিয়ে দড়ি তৈরি করা হয়। সারা বাড়িতে গোবরলাতা দেওয়ার পর স্নান সেরে সেই ভিজে কাপড়েই গরু বা মহিষকে (এঁদের পা ধুইয়ে শিং-এ তেল মাখিয়ে বরণ করে বাড়ির বউ) লাঙ্গলে জুড়ে জমিতে আড়াইপাক লাঙ্গল করে বাড়িতে ফিরে আসে। এই প্রথা হল ‘হালচার’ বা ‘হালপুইন্যা’। [রহৈনের দিন সন্ধ্যার মুখে গৃহকর্তা সম্পূর্ণ শুদ্ধ হয়ে ধুতি পরে নতুন টুপায় (বাঁশের তৈরি ঝুড়ি) করে নির্বাচিত বীজধানগুলি নিয়ে নিজের জমিতে ‘আখ্যাইন যাত্‌রা’-র দিন যেখানে হাল পুইন্যাহ্‌ করেছিলেন সেখানকার মাটিতে প্রতীকি বীজবপন করে। একে বলা হয় ধানমুইঠ্যা। একমুঠোতে যত ধান উঠবে তা দিয়েই জমির উর্বতা পরীক্ষার জন্য এটা চাষের প্রাক প্রতীকী মাত্র।(ধানের মুইঠ্য বারকরা হয় বলে এর নাম ধানমুইঠ্যা)]
    এভাবেই আখান দিনে কৃষিকাজের আরম্ভ করে কুড়মি সম্রদায়ের মানুষজন। আসলে বাঁদনা পরবের সময় চাষের হাল হাতিয়ার ঘরের মাচায় তথা ‘আড়াচে’তে তুলে রাখা হয়। তাই কৃষিকাজের বিরতি। লাঙল করা বন্ধ। আর এই পয়লা মাঘ তথা আইখ্যান দিন হল কৃষিবর্ষের শুরু। এই দিনেই কৃষিকর্তা একজনকে কৃষিকাজের জন্য সহযোগী তথা ‘গলা’  নিয়োগ করেন। যাঁদের বাড়িতে নিযুক্ত হন, তাঁরা হলেন ‘গলাঘর’। শুধু তাই নয়, যাবতীয় মাঙ্গলিক কাজ যেমন ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, কনে দেখতে যাওয়া ইত্যাদি শুভ কাজের সূচনা করেন গেরস্থের লোকজন। এই দিনে অনেক যায়গায় অনেকেই শিকার উৎসবে মেতে ওঠেন। আর গ্রামে গ্রামে গরাম পূজা ও বড়াম পূজাও আয়োজিত হয়। এই দিনই সমস্তু শুভ কাজের শরুওয়াৎ হয়। যেমন বাড়ির বিবাহযোগ্য ছেলেদের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়া, বাড়ি তৈরির ভিত স্থাপন,  সম্পত্তি ক্রয় বা তার শুভ উদ্বোধন, ব্যবসা-বাণিজ্যের বা দোকান শুভারম্ভ ইত্যাদি ইত্যাদি।
      এই উৎসব আসলে এতিহ্যের পরব। উন্মাদনার পরব কিম্বা বলা ভালো সাবলীল সংস্কৃতির বিকাশের পরব। শুধু কুড়মিদের মধ্যে এই পরব আর সীমায়িত নয় এই টুসু আজ হয়ে উঠেছে সীমান্ত/রাঢ়বাংলা ছাড়িয়ে আপামর বাংলার মেয়ে, সই বা ফুল।
   

  ঋণঃ ভাস্করব্রত পতি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত