| 20 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

তরুণ হিন্দি কবির নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ । অনুবাদক: মিতা দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 8 মিনিট

 ভূমিকা: হিন্দি বলয়ে তরুণ প্রজন্মের কবিরা কি লিখছেন, তাদের কবিতার বিনির্মাণ, দৃশ্যকল্প ও মনোজগৎ জানতেই অনুবাদক মিতা দাস খোঁজ করেছেন সমসাময়িক হিন্দি বলয়ের কবির। মিতা দাসের অনুবাদে হিন্দি বলয়ের সমসাময়িক সময়ের কবির কবিতা থাকছে ইরাবতীর পাঠকদের জন্য।


 
 
 
 
 
 
সময় , চিঠি , ধর্য্য ও আমরা
নিশান্ত
কবি পরিচিতি- নিশান্ত ,জন্ম – ৪ অক্টোবর,১৯৭৮ , বস্তি ( উ: প্র ) পেশায় এসিস্টেন্ট প্রফেসার , কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় , বর্ধমান (প:ব)। সম্মান – ২০০৮ সালে ভারত ভূষণ আগরওয়াল সম্মান,২০০৯ সালে নাগার্জুন কৃতি সম্মান, ২০১০ সালে শব্দ সাধনা সন্মান।
 
কিছু চিঠির উত্তর দেয়া এখনো বাকি রয়েছে তোমার
সূর্য একটু জিরিয়ে নিক
বাচ্চারা ঘরে ফিরে যাক
ঘামটা শুকিয়ে যাক
তারপর লেখো
 
 
কত কিছু আমায় তুমি শিখিয়েছো
ধৈর্য ধরা ও
আর বেশ অনেক কিছু কে মিটিয়ে দেয়া
 
 
সিদ্ধান্ত , সিদ্ধান্তই হয়
জীবন – জীবন হয়
এ ও শিখিয়েছো
 
 
কত দিন তো হয়ে গেল
সিদ্ধান্ত মেনে
জীবন যাপন করা
এক সঙ্গে চায়েও চুমুক দেয়নি
ঘামের স্বাদ ও নেয়নি
আত্মা কে স্পর্শ করে
এখনো আছি অপেক্ষায়
 
 
তোমার কোন দোষ নেই সাথী
দোষ হল
এই সময়ের
সময় হল সবার ওস্তাদ
যেমন সে আজ আমার
আমার কাছে তোমার শেখানো ধর্য্য রয়েছে
তোমার কাছে আমার চিঠি গুলির উত্তর ।।
 
 
 
 
 
প্রমাণপত্র
 নিশান্ত
 
বাবা পেনশনের জন্য
যত দিন বেঁচে ছিলেন
‘জীবিত আছি ‘ প্রমাণপত্র নিতেন
 
 
আমি জীবিত
এটা বলার জন্য
পকেট থেকে বার – বার
বের করে দেখাই
নিজের ছবি ও প্রমাণপত্র
সবাই মেনে নেয় যে আমি জীবিত !
আমি সেই , যে ছবিটিতে রয়েছি !
 
 
একলা রাতের অন্ধকারে
সে আমায় সন্দেহ করে
সে ও চায় আমার জীবিত থাকার প্রমাণপত্র
সে আবার কাগজের টুকরো কে মানে না
আমার নাড়ি ও দেখেনা
সে প্রত্যেক রাতে সোজা আমার চোখে চোখ রেখে উঁকি দেয়
আর আমায় প্রত্যেকটি রাতে মৃত ঘোষিত করে দেয় ।
 
 
 
 
 
 
চিঠি গুলো
কমলজিত চৌধুরী 
কবি পরিচিতি- কমল জিৎ চৌধুরী ,জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বার কালী বাড়িতে ১৩ ই আগস্ট ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি অভিবাসী পরিবারের অন্তর্গত (ছাম্ব থেকে।)তিনি জম্মু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ (স্বর্ণপদক), এম.ফিল-হিন্দি। হিন্দির বিশিষ্ট তরুণ কবি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হিন্দি কা নমক’ ২০১৬ সালে দখল পাবলিকেশন দিল্লী কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এটি ‘অনুনাদ সম্মান-২০১৬’ দ্বারা সম্মানিত হয়। ‘মুঝে আই ডি কার্ড দিলাও’ সম্পাদক হিসেবে কমল জিৎ চৌধুরীর আরেকটি কৃতিত্ব। এটি জুম্ব-কাশ্মির এর ১৫ জন সমসাময়িক কবির কবিতা সংকলন। তিনি খুব ভালো সমালোচকও। কিছু কবিতা ওড়িয়া, মারাঠি এবং বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশিত।
 
লেখা হল ফোনে চিঠি
বোঝা হল ফোনে চিঠি
পড়া হল ফোনে চিঠি
 
 
আলমারি খুলে এক দিন দেখলাম
শুধু সাদা কুয়াশায় ছিল ভরা …|
 
 
ডায়ল করলাম আবার
আবার ভাবলাম চিঠি
কিন্তু কিছু নম্বর ও
কিছু মানুষ
বদলে গেছে
 
 
পায়রা ও মরে গেছে |
 
 
 
এখন কবিতা লেখার ঠিক সময়
কমলজিৎ চৌধরী
পড়শির ঝান্ডা পুড়িয়ে
ঝুপড়ি তে ক্ষুধার্থ ঘুম পাড়িয়ে
লেহিয়ানে জল দেয়ানো হচ্ছে
নৌকো গুলি পুড়িয়ে
চিনির শিরায় চোবানো দরবারে
লিকলিকে একটি রাজার
স্তূতি গান গাওয়া হচ্ছে
মার্শাল আইন লাগু করে
রাষ্ট্রীয় উৎসব মানানো হচ্ছে
 
 
ওই পোকায় খাওয়া
লোক গুলি ফেসবুকে
কুড়োল দিয়ে ঝগড়া করার কোথায় মেতেছে
সত্য হতে মুখ বেঁকিয়ে
শিক্ষকেরা মঞ্চ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন
 
 
ফটো শ্যুট করাতে মত্ত
ইতিহাসবিদেরা
প্রেস বিজ্ঞপ্তি গুলি কে
সবচেয়ে প্রামানিক ও বিশ্বাস যোগ্য
দস্তাবেজ বলে বেড়াচ্ছেন
 
 
পৃথিবীর সব শ্বেতপাথর
উন্মোচনের শিলায় পরিবর্তিত হয়ে গেছে
 
 
দেশের সুরক্ষার নাম করে
জন নেতা দেড় গ্রেপ্তার করা হয়েছে
রাজনেতা নিজের মূর্তির
করছে অনাবরণ
আমরা ভাড়ায় করা লোক আমরা
নারা উচ্চারিত করছি
 
 
গান্ধী সেবা সদন
চীন নির্মিত জিনিস গুলির
লাগানো হয়েছে প্রদর্শনী
গান্ধীবাদিরা কমন্যুকেশন স্কিল কোর্স করাচ্ছেন
কম্যুনিস্টরা ওয়াল মার্ট এর মোকাবিলা করছে
সেল লাগিয়ে
পৃথিবীর নসবন্দি করিয়ে
পৃথিবীতে মুষ্টিময় ঘরানা ওয়ালা দের
মঙ্গল গ্রহে প্লট বিক্রি করছে
যদি গুলি তে তালা দিয়ে
চাবি গুলি কালো কুয়ো তে ফেলে দিয়েছে
স্বপ্নের গর্ভপাত করানো হচ্ছে
রাতে লিঙ্গ পরিবর্তিত করা হচ্ছে
 
 
মরা ও মরদের তফাৎ করতে না পেরে
মেয়ে মানুষেরা দুধ শুকিয়ে যাওয়ার ইঞ্জেক্সান লাগাচ্ছে
 
 
ওদিক দলের সম্রাট
বাচ্চাদের সামূহিক কবর খোঁড়ার ফরমান জানিয়েছে
এইদিকে মিডিয়া ফুলের ও হীরা দিয়ে ভরা
সবচেয়ে দামি প্রেম প্রস্তাব দেখিয়ে চলেছে
 
 
উঠোনে মরা পুড়িয়ে
আমার গাঁয়ের বাচ্চারা
চিতার আগুনে আগুন সেঁকছে
 
 
এখনই কবিতা লেখার ঠিক সময় ।।
 
 
 
 
 
 
আজকাল
উমা শংকর চৌধুরী
 
কবি পরিচিতি-উমা শঙ্কর চৌধুরী , ছোটগল্প, কবিতা এবং সমালোচনার সমসাময়িক হিন্দি লেখক। কেহতে হ্যায় তব শাহানশাহ সো রাহে তার ৩টি কাব্য সংকলন রয়েছে, ভে তুমসে পুচেঙ্গে দার কা রং এবং চুনকি সাওয়াল কাভি খাতাম না হোতে এবং ২টি ছোটগল্পের সংকলন – অযোধ্যা বাবু সানক গেয়ে হ্যায় এবং কাট টু দিল্লি তাথা অন্য কাহানিয়ান। এছাড়া সমালোচনা বিষয়ে তার তিনটি বই রয়েছে। প্রথম উপন্যাস আন্ধের কোনা শীঘ্রই আধার প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হতে পারে।তাঁর প্রগতিশীল চিন্তাধারা এবং লেখার জন্য উত্সর্গীকৃত, উমা শঙ্কর চৌধুরী হিন্দি সাহিত্য জগতের  ৪টি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যথা সাহিত্য অকাদেমি যুব সম্মান, ভারতীয় জ্ঞানপীঠ নবলেখান সম্মান, রমাকান্ত স্মৃতি কাহানি পুরস্কার এবং অঙ্কুর মিশ্র স্মৃতি সম্মান।বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় লেখাগুলো ব্যাপকভাবে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।ছোটগল্প অযোধ্যা বাবু সনক গয়ে হ্যায় মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন দেবেন্দ্র রাজ অঙ্কুর, একজন সুপরিচিত থিয়েটার ব্যক্তিত্বের পরিচালনায়।
 
 
আজকাল শরীরে কমে আসছে নুন
শরীরে কমে যাচ্ছে লোহা ও
আজকাল কিছুটা পথ হাঁটলেই হাঁপিয়ে উঠি
আজকাল নিজের শ্বাস – প্রশ্বাস নিজেই শুনতে পাই
আজকাল কমে আসছে বর্যায় জলের ফোটা
কমে আসছে সূর্যের কিরণের তাপ
বাচ্চারা খেলতে যায় বাইরে কিন্তু
উদাস হয়ে বাড়ি ফিরে আসে
আজকাল আমি নিজে খবরের কাগজ ও টিবি কে
এড়িয়ে চলি
আজকাল সত্যি শরীরে লোহা আর নুন কমে আসছে
আজকাল ক্রমশ বাচ্চাদের খিদে মরে যাচ্ছে
চোখের জলে নুনের মাত্র ক্রমশঃ বাড়ছে
মানুষেরা নিজেদের দুঃখ – কষ্টের কথা
বলা কমিয়ে দিয়েছে
এখন লোকতন্ত্রের বিষয়ের চিন্তা ও কমিয়ে দিয়েছে
সত্যি আজকাল মানুষের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে
আজকাল নিজের পাঁচ বছর পুরানো ছবির সঙ্গে
আমার মুখের কোনো মিল নেই
কোনো মিল ও খুঁজে পাওয়া যায়না ওই ছবি তে নিজের ছেলের হাঁসি টুকুও
নিজের বৌয়ের মুখের লালিমা ও নজরে পড়েনা
আজকাল আমাদের মুখের স্বরূপ ও নিয়ে নিয়েছে একটা আলাদা ধরনের আকার
আমাদের চেনা মুশকিল হয়ে উঠেছে
আমাদেরই পরিচয় পত্র দিয়ে
আজকাল মুখ গুলি কেমন যেন কালো হয়ে উঠেছে
শরীরে হাড় গুলি ও উঠে এসেছে বাইরে
আজকাল সত্যি শরীরে কম হয়ে আসছে নুন ও লোহা
আজকাল আমার কবিতায় বার – বার উঠে আসছে দুখঃ
বার – বার রাগে অস্থির হয়ে উঠছি
এই কবিতায় উঠে আসছে একটি বালিকা
যে আমায় প্রশ্ন করে কি হয়েছে আজকাল
আমি তাকিয়ে রই আকাশের দিকে , সমুদ্রের দিকে ও সবুজ ঘাসের দিকে
তারপর নিজেই প্রশ্ন করি সেই বালিকার ই প্রশ্ন
কি হচ্ছে আজকাল
কিন্তু কোনো জবাব আসেনি
আজকাল সত্যি কোথাও থেকে কোনো জবাব আসেনা
আমাদের হাথ থেকে দেখো কেমন করে ফসকে যাচ্ছে আমাদের লোকতন্ত্র আজকাল ||
 
 
 
 
 
 
 
 
 
সমীহ করো
ঘনশ্যাম দেভ্যাংশ
কবি পরিচিতি – ঘনশ্যাম দেভ্যাংশ জন্ম ১২ জুন ১৯৮৬ , গোন্ডা উত্তর প্রদেশ , এম.এ.বি.এড , কবিতা সংকলন – আকাশ মে দেহ , নব লেখেন পুরস্কার , মোহন রাকেশ এওয়ার্ড , নবোদিত লেখক পুরস্কার ।
 
 
সমীহ করো
কিন্তু ঈশ্বর থেকে নয়
একটি পরাজিত মানুষ থেকে
সূর্য থেকে নয়
আকাশের নদী তে মৃত পড়ে থাকা চন্দ্রমা থেকে
ভারী ও বজ্রের মত কঠোর শব্দ থেকে নয়
ওর চেয়ে কোমল ও রাতের তৃতীয় প্রহরে
চাপা সুরে গাওয়া হয়
 
সমীহ করো
ধার বা তীক্ষ্ন কোণ থেকে নয়
একটি নরম ঘাসের মাঠের বিশালতা ও সবুজ থেকে
সাম্রাজ্যের বিরাট ললাট থেকে নয়
একটি বৃদ্ধের ভেজা নিষ্কম্প চোখ থেকে …
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
রোদের টুকরো
বিশাখা মূলমূলে
কবি পরিচিতি- বিশাখা মূলমূলে , জন্ম – ২৩ জুলাই , ছত্তিশগড় ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসী , স্নাতক ইন সাইন্স । কবি ও অনুবাদক । কাব্য গ্রন্থের নাম – ” পানি কা পুল ” এর জন্য দীপক অরোরা স্মৃতি সম্মান ।
 
রোদের টুকরো যা জ্বলজ্বল করছে
শিশিরের উপর, ফুলের উপর
যার উপর নৃত্য করছে ধূলিকণা উল্লাসিত হয়ে
আমি তাকে হাতের তালুতে ধরে আছি
আর আমার হাতের তালু জ্বলছে জোনাকির মতন
 
 
রোদের সেই টুকরোটা ব্যালকনিতে ছড়িয়ে আছে
সরিষা ফুলের উপর
আখের উপর তুলোর উপর
যে ফুলকে শস্যে পরিণত করবে
আর আখ কে মিষ্টি করবে
তুলো কে দুধ সাদা ফাইবারে
ঠিক সেই ভাবে তিনি পরিবর্তন করেছেন
অন্ধকার কে আলো তে পরিণত করেছে
 
 
রোদের টুকরো হল শক্তি
স্পার্ক হল চুলার আগুনের
সকালে ঘুম থেকে উঠে সে রান্নাঘরে
যে পেটের আগুন নিভিয়ে দেয়
দেহ পুড়িয়ে , ঘাম ঝরিয়ে
সেই ঘামের উপর হীরার মতো জ্বলজ্বল করবে
রোদের টুকরো ।।
 
 
 
 
 
 
রাখাল
দেবেশ পথ সারিয়া
কবি পরিচিতি – দেবেশ পথ সারিয়া , কবি , লেখক ও অনুবাদক । জন্ম – ১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৬ , ভরতপুর , রাজস্থান । এখন তাইওয়ান (চীন) থেকে ডক্টরেট করছেন । বেশ পরিচিত এক নাম সাহিত্যের জগতে । নূহ কি নাও , নিজের কবিতা সংকলন ও তাইভানি কবি – লি মিন – হিউং এর কবিতার হিন্দি অনুবাদ – হাকীকত কে বিচ দরার ।
 
সে এক রাখাল।
জঙ্গল গ্রামের সঙ্গে লাগানো জঙ্গলের সীমানা
রাখাল তার পাল নিয়ে
গ্রাম থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে
বনের পথে হেঁটে যায়।
 
 
কানের দুল,
ভরাট মুখে মোটা গোঁফ,
তার গানের গ্রাম্য ভাষা
লোকদেবতার প্রশংসা করে,
পালের জন্য এই সঙ্গীত এবং
ভেড়ার চারপাশে বাজতে থাকা ঘণ্টা রাখালের জন্য সঙ্গীত।
 
 
তার পালের মধ্যে প্রায় শতাধিক ভেড়া রয়েছে,
যাদের প্রত্যেকে রাখাল চেনে।
ভেড়া তার গলার স্বর অনুসরণ করে,
তার সংকেতের দিকে ফিরে, তার ডাকে থামে
 
 
প্রতিটি মেষপালকের একটি ভিন্ন অঙ্গভঙ্গি,
লাঠি নিক্ষেপের একটি ভিন্ন উপায়,
যার দ্বারা সে তার পালের রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে
 
 
আজকাল, জঙ্গল সংকুচিত হয়েছে,
চারণভূমি সংকুচিত হচ্ছে,
রাখালের ভবিষ্যত সন্দেহের মধ্যে রয়েছে,
এবং সে আজকের অবশিষ্ট চারণভূমিতে
নিশ্চিন্তে চরাচ্ছে ভেড়া
রাখাল আগামীকালের চিন্তা করে না।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
গণতন্ত্রের হত্যা
অঞ্জন কুমার
 
কবি পরিচিতি- অঞ্জন কুমার , জন্ম ০৯ অক্টোবর,১৯৭৬, এম.এ (হিন্দী),বি.এড, এম.ফিল, নেট, সেট, পিএইচডি শেষ করে এখন
সহকারী অধ্যাপক, হিন্দি বিভাগ,কল্যাণ পি.জি.কলেজ, সেক্টর -7, ভিলাই নগর, জেলা – দুর্গ (সি.জি.), পিন-490006 ম্যাগাজিন:–পোয়েট্রি এবং সমালোচনা প্রকাশ ।
 
 
এখন তোমার হত্যা
গণতন্ত্রের হত্যা নয়
বরং গণতন্ত্রের রক্ষা বলা হবে
 
ওদের যখন মনে আসবে
তুমিই ওদের ভয়ের কারণ
ওরা গণতন্ত্রের কথা বলে
তোমার হত্যা করে দেবে
 
হত্যার
গণতান্ত্রিক উপায় ও
খুঁজে নিয়েছে…
গণতন্ত্রের বিরোধীরা ।।
 
 
 
 
 
 
 
ওরা ফিরছে
অঞ্জন কুমার
 
 
সব প্রজাপতি নিজের কোমল ও
নানান রঙের ডানা সঙ্গে নিয়ে ফিরছিল
ফিরছিল পাখিদের
গুঞ্জন নিয়ে আগের মত
ঘরে – অঙ্গনে
ফিরছিল
ওই পশুরা ও
যাদের জঙ্গল উজাড় করে
আমরা তৈরি করে নিয়েছি কংক্রিটের জঙ্গল
ফিরছিল
মাছ গুলি ও পাড়ে
যারা ছোট – বড় জাহাজের ভয়ে ও
বাষ্প দূষণের আতঙ্কে
লুকিয়ে ছিল অতলে…
 
ফিরছিল
চাঁদ ও নিজের পুরো আলো নিয়ে
ঠিক তেমন করেই ফিরছে
হারিয়ে যাওয়া অসংখ তারা ও
 
 
ফিরছিল
বাতাস ও নিজের শুদ্ধতা নিয়ে
যে ভাবে ফিরছিল জল
ওর ফিরছে
ভাবতে – ভাবতে
মানুষ ও কি শেষে ফিরবে ?
চিন্তায় আছে ফিরবে কি
নিজের হারানো মানবতা কে সঙ্গে নিয়ে
কিছু বাকি থেকে যাক পৃথিবী
বাকি থেকে যাক সমান – সমান
সবার ভাগের জীবন ।।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
সিরিয়ার রুটি
পল্লবী মুখার্জি
কবি পরিচিতি- পল্লবী মুখার্জি , জন্ম – ২৬ নভেম্বর ১৯৬৭ , রামানুজগঞ্জ , সারগুজা , ছত্তিশগড় । শিক্ষা – স্নাতক , সঙ্গীত বিশারদ । নানান পত্র – পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত । দশ টার মত সংকলনে পল্লবীর কবিতা সংকলিত । এখন বিলাসপুর , ছত্তিশগড় এ বসবাস ।
 
 
আমি চাই না
তোমার গ্রাসের রুটি হোক পোড়া
কি কোন শহর পুড়ছে যেমন সিরিয়া
দিশেহারা মত পালিয়ে বেড়াচ্ছে
রক্তে ভিজে চুপচুপ বাচ্চাদের চেহারা
ভেসে উঠে , সেই রুটিতে
এক বার
পুড়ে যাওয়ার পর সেই স্থিতিতে ফেরা
কখনো সম্ভব নয়
কোথায় গেলো সেই সব বাচ্চারা
যারা বন্দুক আর ডায়নামাইট এর শিকার হল
ডায়নামাইটের চোখে পট্টি থাকে কী
ওরা তাই অবোধ বাচ্চাদের
করে ফেলে টুকরো – টুকরো
সিরিয়ার অবস্থা ও বাচ্ছাদের
দেখতে ছেঁড়া কাপড়ের মত
একটি ফোলা রুটির জন্য করি কসরত
যে পৃথিবী সিরিয়া হওয়ার থেকে বেঁচে যায় ।।
 
 
 
 
 
 
 
নারীর সংসার
পল্লবী মুখার্জী
 
সে নিজের ভাগের জীবন
পূর্ণ করে নিয়ে ছিল
তাই …..
ওর পায়ের ছাপ
মেঠো পথে পাবে
তুমি …….
ওর হাতের ছাপ ও
দেওয়ালে পাবে
সে ঘুঁটে দিয়েছিল
বড় যত্ন করে ,
ভালোবেসে
বেশ স্বাচ্ছন্দে
ঘরের মেঝে
লেপন করার সময়
ছোট্ট – ছোট্ট পায়ের ছাপ
যা
তুমি দেখতে পাওনা
এও হতে পারে
সে চিহ্ন রয়েছে
ঘরে প্রদীপ দেওয়ার সময়
যখন সূর্য ডুবছে অস্তাচলে
চুপিসার
সূর্যের লুকোচুরি খেলা
আর ওর উড়ন্ত চুলের দোলন
ওর উনুনে চাপানো হাঁড়িতে
নিশ্চই দিয়েছিল উঁকি
বাড়ির ভেতরের উদাসী ভাব কে
লুকিয়ে রেখেছে বেশ যত্নে
 
নারীরা
এই ভাবেই লুকিয়ে রাখে
ঝড় – ঝাপটা সব আর সেই অন্ধকারে
যার ভেতরের নোনা ধরা সেঁতসেঁতে দেওয়ালে
লেগে থাকা শেওলা
নারী এই ভাবেই
বিলুপ্ত ও হয়ে যায়
আর ছেড়ে যায়
একটি চিহ্ন
প্রেমের
যা
তোমার কপালে
আঁকা থাকে ।।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
বন্দী আত্মা’রা
গৌরব ভারতী
 
 
ওদের কি করা যায় যারা ঘরেই ফিরে আসেনা
কখনো – সখনো যদিও দেহ ফিরে আসে কিন্তু
আত্মারা খেটে মরে মিলে , খনি তে , বড় – বড়
বিল্ডিং এ কি মালিক ওদের পুরো মেইন ফিরিয়ে দেবে
প্রতীক্ষারত চোখ বকুনি খেয়ে
ফিরে আসে নিজেদের কাজে ……
ক্ষনিকের জন্য অসহায় চোখে গুলি আপসে যুক্ত হয়
পথ চেয়ে থাকে চোখ কিন্তু
বাড়ি ও ঘরের রাস্তার মাঝে যেই পথ স্থির হয়েছিল
হাথুরির প্রহারে সেই সেতু ধ্বংস করে দেয়
এখানে শুধু দেহ বন্দী নয় , আত্মাও বন্দী
কখনো – কখনো ওদের দেখা যায় ইন্ট গাঁথতে
রাতের তৃতীয় প্রহরে
শুনেছি মালিক নাকি কোনো জাদুকর
ওর কাছে নাকি কোনো মন্ত্র আছে
সেই মন্ত্র দিয়ে সে বন্দী করে রাখে সব আত্মাদের
আত্মার বন্দী
খেটেই চলেছে
নিঃস্ব হয়ে চলেছে
ফিরে আসেনা ঘরে
শুধু ঘুরতে শব্দের ঘুরতে থাকে
চোখ ওদের পেছনে চলতে থাকে
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত