কবিতা: তোমাকে লেখা চিঠি মা । পঞ্চতপা
এখানে আকাশে অকারণ সমুদ্র ছড়ানো,
এখানে গাছের গায়ে আনন্দ লেগে আছে
বসন্ত এখানে নিথর পাহাড়ের মতো,
এখানে পরিপাটি সুখের প্রলেপ নদীটির গায়ে,
পথেও ছড়িয়ে আছে কাঙ্ক্ষিত প্রেম
সুন্দর এখানে কৃষ্ণকায়া মেঘ,
বসতি গড়েছে শহরের সমস্ত শরীরে
সুন্দর বলেই তার অসীমে গমন
সুন্দর বলেই তার আদিসত্য রূপ
আরও এক সত্য আছে
গভীরে লুকোনো,
আরও এক সত্য আছে বাতাসে নিহিত
আরও এক সত্য আছে চরাচর জুড়ে
তুমি নেই,
তুমি নেই,
তুমি নেই কোথাও,
সুন্দর বিষণ্ণ তাই ভ্রমেরও অধিক
সুন্দর ব্যথায় নীল কুয়াশার মতো
তোমার প্রস্থান পথে মাতানত
দাঁড়িয়ে আছে।
আরো পড়ুন: শিশির রাজনের গুচ্ছ কবিতা
২.
গাছটি সেখানেই আছে,
এবং তোমার ছোঁয়ারাও
সেভাবেই আছে এদিক সেদিক,
প্রশ্রয়ে দুলে উঠছে, এখনও।
অনামী পাখিরা এসে
স্নেহ দৃষ্টি মেখে যায় গায়ে
ঠোঁটে করে নিয়েও যায় কিছু,
খড়কুটোর সঙ্গে স্নেহ মেশালে
বাসা যে টেকসই হয়, ওরাও জানে।
জৈষ্ঠ্য দুপুরের মতো উদাসীন পথটি,
তোমার বাড়ির আঙিনা দিয়ে হেঁটে যায় রোজ,
এর শেষ কে জানে কোথায়।
পথের আশেপাশে
চাঁদ রঙে ঝলসে আছে
বিদেশিনী গোলাপের সারি
ওদেরও গায়ে লেগে আছে
অপার মুগ্ধতা তোমার চোখের,
মুগ্ধতা পেড়ে আনতে গিয়ে
আঙ্গুলের গায়ে তুমি-ই বিঁধে যাও…
বীতোশোক ঘাসে ঘাসে
পদচিহ্ন ছড়ানো এখনও তোমার
মুঘল মিনিয়েচার ছবির মতোই…
এই গাছ, এই পাখি, চাঁদরঙা গোলাপ,
বীতোশোক ঘাস অথবা
পাখিদের স্নেহের কুটিরে
আদতে তুমিই রয়ে গেছো…
তোমাকেই খুঁজতে গিয়ে আমি
এদেরই কুড়িয়ে পাই বারবার
শুধু তুমি-ই কাছে নেই,
শুধু তোমাকেই দেখতে পাইনা,
দেখারও অধিক যে দেখা, সেখানে রয়ে গেছো নির্বিকারে, নীরবে সরবে।

কবি, নৃত্যশিল্পী ও পর্যটক