তুরস্ক

তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্প: মৃতের সংখ্যা ২৬০০ ছাড়াল

Reading Time: 2 minutes

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু অংশে এক প্রবল ভূমিকম্পের পর শুধু তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা আবার বেড়ে ২,৬০০-এ দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে।

 

ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় অন্তত ২,৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিনের শুরুতে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেক ভূকম্পন আঘাত হানে। শক্তিশালী ভূকম্পনের ধাক্কা টের পাওয়া গেছে সুদূর গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত। গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগ এ তথ্য জানায়। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে প্রবল শীতের মধ্যেই হাজারো বাস্তুহারা মানুষের দুর্দশা চরমে উঠেছে। হিমেল আবহাওয়া উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে।  ভূমিকম্প তুরস্কের শহরগুলোতে ধবংসলীলা চালিয়েছে, এতে সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড অনেক আবাসিক এলাকা। অন্যদিকে, যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু লাখ লাখ সিরিয় নাগরিকের দুর্ভোগও উঠেছে চরমে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে এ দুর্যোগ আঘাত হানায়, মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কাও রয়েছে।  

সিরিয়ার আত্রায়েব শহরের বাসিন্দা আবদুল সালাম আল-মাহমুদ বলেন, ‘এ যেন রীতিমত কেয়ামত। একে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তার সাথে হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত, এই অবস্থায় দুর্যোগ-কবলিত মানুষকে বাঁচাতে হবে।’ এর আগে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থাকা তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে ৭০ জন, ওসমানিয়েতে ২০ জন, সানলিউরফাতে ১৮ জন, দিয়ারবাকিরে ১৪ জন এবং আদিয়ামানে ১৩ জন নিহত হয়েছে। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু মানুষ; পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  ভূমিকম্পে অনেক ভবন ধসে পড়েছে এবং ভেতরে বহু মানুষ আটকা পড়েছে। ভবনের নিচে চাপা পড়াদের উদ্ধারে ইতিমধ্যে রেসকিউ টিম এবং সাপ্লাই এয়ারক্রাফট পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য ‘লেভেল ৪ অ্যালার্ম’ ঘোষণা করা হয়েছে।  

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সয়লু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আঘাত হানে ভূমিকম্পটি। উদ্ধারকারী সংস্থা হোয়াইট হেলমেটসের একজন সদস্য টুইটারে সিরিয়ার একটি শহরের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বলেছেন, “পরিস্থিতি খুবই  দুঃখজনক, সালকিন শহরে দশ হাজার ভবন ধসে পড়েছে।” শহরটি তুর্কি সীমান্ত থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে অবস্থিত। সিরিয়ার ১২ বছরব্যাপী চলা দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে এই অঞ্চলের অনেক ভবন আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত।ভূমিকম্প তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা এবং অন্যান্য শহরেও অনুভূত হয়েছে। গাজিয়ানতেপের উত্তর-পূর্বে মালতিয়া প্রদেশে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সানলিউরফাতে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দিয়ারবাকির এবং ওসমানিয়ে থেকেও মৃতের খবর আসছে।

দিয়ারবাকিরে থাকা বিবিসির তুরস্ক প্রতিনিধি জানান, শহরের একটি শপিংমল ধসে পড়েছে। বিবিসির প্রযোজক রুশদি আবুয়ালুফ জানান, তিনি যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড ধরে কম্পন অনুভূত হয়েছে। এদিকে তুর্কি ভূ্তাত্ত্বিকরা অনুমান করছেন, ভূমিকম্পটি ৭.৪ মাত্রার ছিল। তারা জানান, ভূমিকম্পটি আঘাত হানার কয়েক মিনিট পরেই দ্বিতীয় আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়। প্রসঙ্গত, তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত। এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান টুইট করেছেন যে, তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।

তিনি বলেন, “তুর্কি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানিয়েছি যে, আমরা তাদের যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।” 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>