| 29 মার্চ 2024
Categories
ইরাবতী তৃতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা

তৃতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা: তৈমুর খানের কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
 
 
ঈশ্বরচন্দ্র
 
 
শতাব্দী শতাব্দী ধরে পুরুষ সিংহের কাছে
আমরাও আলো পাই
এই পথে হেঁটে, বহুদূর হেঁটে
আমাদের নিঃস্ব প্রজন্মগুলি
উদ্ভাসিত হয় গৌরবে
 
 
প্রথম পাঠ, প্রথম পাঠশালা
আর তুমুল আকাশ
যতদূর চোখ যায়
অবিরাম তোমারই উন্মুখ আহ্বান
ডেকে নেয় আমাদের সাহসী সংকল্পের দৃঢ়তায়
 
 
শিরদাঁড়া বেয়ে নামে ঝড়
সমুদ্র উথলে ওঠে
চৈতন্য জুড়ে অভূতপূর্ব জাগরণ
 
 
অম্লান বিস্ময় তুমি প্রাজ্ঞ পুরুষ
মহাকালের সীমানায় দাড়িয়ে থাকো
পূর্ণচ্ছেদবিহীন বিস্ময়
 
 
 
 
 
 
 
রথযাত্রা
 
 
বরং আমাদের রথযাত্রা হোক মানবতার দিকে
আমরা হিংসা বিজয় করে ফিরি
আর একটি অহিংস পৃথিবীর দিকে
 
আমি তুমি আমরা সবাই
আজ ও আগামীকাল এই শপথ নিতে থাকি
 
 
 
 
 
 
 
সৌভাগ্য
 
 
সৌভাগ্যের দরজার কাছে বসে থাকি
একবার এসেও দ্যাখে না ;
সারারাত কাঁদছে আকাশ
কত নক্ষত্র ঝরে গেল
পাহাড়ে ও বনে ডাকছে নিশাচর।
স্বপ্নের বিছানায় সৌভাগ্য কি ঘুমুচ্ছে এখন?
আলতা রাঙা পায়ে তার সুষমা বৈভব
চুলেও লেগেছে রঙ বিদ্যুৎবেলার।
হাওয়া বইছে ওর জানালায়, খুব ভালো হাওয়া
চাঁদ একা চুপিচুপি চুম্বন পাঠায়…
 
 
বসে আছি অবিশ্রান্ত
রাত বেড়ে যাচ্ছে জীবনের ভেতরে বাহিরে
থেকে থেকে ডাকছে ক্লান্ত নিশাচর
 
 
 
 
 
 
 
ভালো আছি
 
অন্ধকারে সব ক্ষত ধুয়ে নিই
তারপর নক্ষত্রের আলোয় ঢেকে রাখি
সভ্যতায় আমিও চুপিচুপি
হতে চাই বিজয়ী
 
রক্ত ক্ষরণের সেই গোপন প্রবাহ
এখনও ঘুমায় বুকে
টের পাও কেউ ? কেউ টের পাও ?
ভালো আছি , ভালো আছি
সমস্ত অবিশ্বাসের কাছে আমিও বিশ্বস্ত গান
গেয়ে চলে গেছি
 
দূর রাস্তার ধারে যেখানে ঔরস এক
মানবিক বোধ চায় অথবা পড়তে আসে বোধের স্কুলে
সেও জানে প্রজাপতি মরে গেলে
ফুল ঝরে যায় তার শোকে
 
 
 
 
 
 
 
 
অনাবিষ্কৃত
 
 
পথের পাশেই এক পথ পড়ে থাকে
তাকে কেউ আবিষ্কার করে না
মানুষের ভেতর আর এক মানুষ
তাকে কেউ চিনতে চায় না
 
 
প্রতিদিন অনাবিষ্কৃত এবং অচেনা
অন্ধকার সেখানে খেলা করে
পাথর ও কাঁটাগাছ জন্মায়
লাল টুকটুকে বন্য ফুল ফোটে
 
 
আমরা শীতে আপেল খেতে খেতে
একপাল পায়রার ওঠানামা দেখি
কেউ কেউ নারী হয়ে যায়
কেউ কেউ বেড়াল
 
 
কারোরই পোশাক নেই
কেউ কেউ নিতান্ত বাউল
আলো-আঁধারির একতারায় সুর কেটে কেটে যায়
 
 
 
 
 
 
আমার দুর্গা
 
 
এক পাশে আজও এসে দাঁড়াই
আজও তুমি সংহারিণী দুর্গতিনাশিনী
আজও তুমি বরাভয় আলো সঞ্চারিণী
তবু আমার আকাশখানি কেন তবে ছোট?
সারল্য হারাচ্ছে চারিপাশ
হইচই আছে তবু নেই আনন্দের ডাক
মানব-দিঘিতে রোজ কত পদ্ম ফোটে
তোমার পূজার পদ্ম তুলে জমা করি
অঞ্জলি দিতে আসি রোজ
তুমি তো হৃদয়ে আছ
তুমি এক সর্বব্যাপী মানবিক বোধ।
 
 
 
 
 
 
মরীচিকা
 
 
এপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই
ওপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই
এপাশ ওপাশ জুড়ে শুধু মরীচিকা
ঘরকন্না করে
 
 
আমি তবে কার গর্ভে জন্মালাম?
একখণ্ড আকাশ বৃষ্টির অক্ষরে চিঠি লেখে
এক ঝলক বাতাস উড়িয়ে দেয় ধুলো
আমি খুঁজে পাই ফাগুন মাস
 
 
আমার নিগূঢ় ধান, আমার নিগূঢ় চাষ
মাঠ আর মহিমার সূর্য, নিগূঢ় পাখির গান
রোজ ফিরে আসে মরীচিকার মেয়ে…
 
 
 
 
 
 
 
 
সমস্ত শোকাঞ্জলির পর
 
 
অনুশোচনার সূচনা হলে
আমরা এখনও মরে যাইনি তো?
অক্ষম প্রশ্নটি জেগে ওঠে
 
 
সব দাবানল দূরে
আমরা শুধু তাপটুকু পাই
তবু হাওয়া কলঙ্কিত করে, উড়িয়ে আনে ছাই
 
 
এ জীবন মেঘদূতের হোক
আমরা সবাই ব্যর্থ কালিদাস
শব্দের চন্দ্রযানে চলে যেতে চাই নষ্ট মহাকাশ
 
 
সমস্ত শোকাঞ্জলির পর, হে জীবন
বসতে চাইছ অনুকরণ-প্রিয়ার পাশে!
প্রজাপতি ধরতে চাইছ নতুন বার্ধক্যে এস
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত