শারদ সংখ্যা অসমিয়া অনুবাদ গল্প: ক্যাকটাসের ফুল । মহিম বোড়া
অনুবাদক: অর্চন চক্রবর্তী
লেখক পরিচিতি
প্রখ্যাত অসমিয়া সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯৯৮ সালে তিনি অসম ভ্যালি লিটারারি পুরস্কার পান। ২০০১ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। অসম সাহিত্য সভা তাদের সর্বোচ্চ সম্মান সাহিত্যাচার্য উপাধিতে তাঁকে ভূষিত করে। ২০০১ সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার পান।
অনুবাদক পরিচিতি
খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত। পেশায় ব্যবসায়ী। সাহিত্যপ্রেমী, অনুবাদ করতে ভালোবাসেন। দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে এছাড়া পত্রপত্রিকাতে লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
নদীর ধার দিয়ে অলস ভঙ্গীতে হাঁটছিলাম।ধুলিধুসরিত রাস্তা থেকে ধুলির যে ঘন পর্দা উঠে আকাশকে আড়াল করেছে তার পিছনে সূর্যের শেষ রশ্মি বিদায় নিচ্ছে। নদীর ধারে একটা মিলিটারি ক্যাম্প বসেছে। এই ক্যাম্পটাকে কেন্দ্র করেই যত কর্মকান্ড। বেশিরভাগ সৈন্যই মৃদুস্বরে কথা বলছে, কেউ একজন সজোরে হেসে উঠল, একজন রেগে গিয়ে চেঁচামেচি করছে, আর একজন গান গাইছে, সন্ধের বাতাস সেই সুরের মূর্ছনায় ভরে আছে।
সেই ক্যাম্পে প্রচুর নিগ্রো আছে যারা সেই দূর আমেরিকা থেকে এখানে এসেছে। সমস্ত কিছুতেই তারা আমাদের থেকে ভীষণ রকম আলাদা! তাদের কথাবার্তা, তাদের সঙ্গীত — এতটাই স্বতন্ত্র আর অসঙ্গত যে তা বুঝে ওঠা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বললেই চলে। দেখতেও তারা ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। মোটা ঠোঁট, মাথা ভর্তি চুল তো নয় যেন কোঁচকানো তারের জঙ্গল! নোংরা ঢলঢলে মিলিটারি পোশাক– আফ্রিকার জঙ্গল থেকে যেন একপাল গরিলা চলে এসেছে এখানে। তাদের গায়ের ঘন কালো রঙ তাদের আরো কুৎসিত করেছে।
এই প্রথম আসামের মানুষ নিগ্রোদের দেখছে। অসমিয়া ভাষায় একটা কথা আছে, অনুবাদে যেটা মোটামুটি বলা যায় ‘ কয়লার মতো কালো।’ আসামের মানুষ আগে যদি নিগ্রো দেখত তবে নিশ্চয় ও কথা না বলে বলত ‘ নিগ্রোদের মতো কালো।’ ইংরেজদের ব্যবহারও বাদামি চামড়ার অসমিয়াদের ক্ষুব্ধ করে। কোন ঔদ্ধত্যে তারা অসমিয়াদের কালা আদমি বলে উপহাস করে! বিশেষ করে ইংরেজরা যখন নিগ্রোদের সংস্পর্শে অনেক আগেই এসেছে।
( ইংরেজদের হয়ে জাপানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিগ্রোরা আসামে এসেছে। স্বদেশি সেনাবাহিনী ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ ‘ যারা জাপানিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে ভারতের মাটি থেকে ইংরেজদের তাড়ানোর লক্ষ্যে, সেই ইংরেজদের হয়েই লড়বার জন্যে নিগ্রোরা এসেছে এখানে। ওরা আমাদের ইংরেজদের পদতলে রাখতে চায়। এছাড়াও কোথাও কোথাও নিগ্রোদের বিরুদ্ধে অসমিয়া মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করার বদনাম আছে।)
আমি তখনও হাঁটছিলাম যদিও বেশ ভয় করছিল আমার। হঠাৎ দেখলাম এক নিগ্রো আমারই দিকে হেঁটে আসছে। হাঁটতে হাঁটতে সে তার ভারী বুট দিয়ে রাস্তার নুড়িপাথরগুলোকে লাথি মারছে যেন সেগুলো খেলার বল। কখনো বা রাস্তা থেকে ছোট ছোট পাথর কুড়িয়ে সেগুলো নিয়ে লোফালুফি খেলছে। তাকে বেশ হাসিখুশি আর উৎফুল্ল লাগছে। মুহূর্তমধ্যে আমি ঠিক করে নিলাম তাকে এড়িয়ে চলব। সে আমার সামনে এলে আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেবো। কিন্তু আমার মুখোমুখি হবার আগেই সে নদীর ধারে একটা ঘাসে ছাওয়া পরিচ্ছন্ন জায়গায় বসে পড়ল। তখন তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় রইল না। তার প্রতি ঘৃণা, ভয় সব মিলিয়ে তীব্র অস্বস্তি হচ্ছিল আমার।
পাশ দিয়ে যাবার সময়, সে মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে তার পাশেই একটা পরিষ্কার ঘাসে ছাওয়া জায়গা দেখিয়ে হিন্দিতে বলে উঠল, ” প্লিজ বসুন।”
আমার মন তখন তার প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আর বিতৃষ্ণায় ভরে উঠেছে। ” না, ধন্যবাদ” বলে তাকে সামান্য ভদ্রতাটুকুও আমি দেখালাম না।
জোরে হাঁটতে থাকলাম।
কোথা থেকে এরা হিন্দি শিখল? আমাদের এখানেও বেশি লোক হিন্দি জানে না। বাড়িতে এরা কী ভাষায় কথা বলে– নিশ্চয়ই ঐ ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতেই হবে– এ ছাড়া আর কি! আমার সঙ্গে কথা বলার সময় ও হাসছিল। তার সামান্য অনুরোধটুকুও আমি না রাখায় সে স্পষ্টতই হতাশা প্রকাশ করেছিল। ওহ, কি অদ্ভুত! নিগ্রোরাও যে হাসতে জানে এটা আমার শেখা হোল!.
নরম ঘাসের উপর দিয়ে আমি হাঁটছিলাম। সেখান থেকে বেশ কয়েকটা সরু নদীখাত জলের দিকে নেমে গেছে। যেখানে গ্রাম থেকে মেয়েরা আসে নদী থেকে জল নিতে। কিছুটা দূরে আমি দেখলাম মেয়েরা হাতে, কাঁখে পিতলের কলসী নিয়ে এসেছে। এদিক ওদিক কয়েকটা জাঁকালো রাজহাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে। কাছেই দেখলাম একটা সাদা ঝকঝকে কংক্রিটের ছাউনি সূর্যের শেষ আলোয় ঝলমল করছে। এটা নিশ্চয় কোন বিখ্যাত বা ধনী মানুষের সমাধির উপর তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি করা হয়েছে। আমি এখন একটা কবরস্তানের পাশ দিয়ে হাঁটছি, পার্থিব জীবন কাটিয়ে আমাদের সবাইকেই এখানে আসতে হবে। মানবজাতি, নির্ভীক ও বুদ্ধিমান। এই কারণেই কী আমাদের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই আছে? ওমর খৈয়ামের একটা কবিতার পংক্তি মনে পড়ে গেল,” জীবনের ফুল সে তো ফোটে একবারই… “এই মাটিতে মানবজীবন যদি প্রকৃতির চরম সত্য হয় তাহলে কী আমরা শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বেঁচে থাকাকে কোন সুযোগ না দিয়ে চূড়ান্ত অপরাধ করছি না? এই যুদ্ধ — হানাহানি, সম্পত্তিক্ষয় করে কী এমন লাভ হচ্ছে আমাদের?
এতক্ষণে ঐ নিগ্রোটাকে অনেকটা পিছনে ফেলে এসেছি। ফেরার সময় হয়ে গেছে। সন্ধের আগে যদি কলেজ হস্টেলে ফিরতে না পারি তাহলে প্রচন্ড বকুনির সঙ্গে সঙ্গে জরিমানাও খেতে হবে। এই জায়গাটায় বেশ কিছু ঘন কাঁটাওয়ালা ক্যাকটাসের ঝোপ আছে, আমরা তাদের বলি দোফলা কাইন্ত। এছাড়াও অনেক আগাছা আছে, ফার্ন জাতীয় গাছ আছে। আসামের জলো আবহাওয়ায় এরা তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে । বড় বড় পাতাওয়ালা কচুগাছ আছে, আর আছে বিহলঙ্গনি, যার পাতা ছুঁয়ে ফেললেই চামড়া জ্বলে যায়। কিন্তু সমস্ত আগাছা, ফার্ন আর অন্যান্য গাছগাছালির মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কাঁটাওয়ালা ক্যাকটাস। ক্যাকটাসের প্রতিটি শাখায় গোছা গোছা ফুটে আছে হলুদ রঙের অপূর্ব ফুল, মহীয়ান তারা, মৃদুমন্দ সমীরে ফুলগুলি দুলছে লীলায়িত ছন্দে, রাজকীয় প্রজাপতির বহুবর্ণ পাখনার মতো! হঠাৎ আমার মনে হোল এই তো প্রকৃতির যাদু যা সত্য যা চিরন্তন। কর্কশ, ভীতিপ্রদ চেহারার ক্যাকটাসে থোকা থোকা ফুলের গুচ্ছ! সৌন্দর্যে যা অতুলনীয়, অনুপম!
ফেরার পথ ধরেছি আমি। আবার সেই নিগ্রো মানুষটির কাছে এলাম যে এখনো শান্তভাবে সেখানেই বসে আছে। নদীর দিকেই সে তাকিয়ে আছে, নদীর ওপারের গাছপালা, ঝোপঝাড়ের দিকে তার দৃষ্টি। একহারা সুপারি গাছগুলো লক্ষ্য করছে যা আসামের গ্রামগুলির বৈশিষ্ট্য। আবার সে ঠিক আগের মতোই আমার দিকে তাকিয়ে হাসল, তার ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলি তার ঘন কালো মুখে যেন অদ্ভুত বৈপরীত্য! যেন বৃষ্টির পরে কালো বড় কচুপাতায় জলের স্ফটিক।
” তোমাদের দেশ সত্যিই খুব সুন্দর। এই দেশকে আমি ভালোবাসি।” হিন্দিতে সে বলল হাসতে হাসতে।
তার কথা শুনে আমার দারুণ গর্ব হোল। এখন আর তাকে দেখে আমার একটুও ভয় করছে না। নিগ্রোরা নিষ্ঠুর হয়-এমন একটা ধারনা আমার মনে গেঁথে ছিল। এছাড়াও, ইংরেজদের ভারতীয়রা ঘৃণা করে যাদের হয়ে আমেরিকানরা লড়তে এসেছে। আমি ভাবতাম সামান্য ছুতো পেলেই নিগ্রোরা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই ভয় পেতাম।
আমি তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ” প্লিজ বসুন।” পাশের ঘাসজমিতে হাত চাপড়িয়ে আগের মতোই সে আমায় অনুরোধ করল।
আমি নিশ্চিত নই আমার কী দেখে তার ভালো লাগল। তার পাশে বসে আমি তাকে শুধোলাম,” তুমি কি সত্যিই আমার দেশকে ভালোবাসো? সত্যিই মনে কর আমার দেশ সুন্দর? “.
সে হেসে ঘাড় নেড়ে নীরবে আমার প্রশ্নের উত্তর দিল।
তার আধ-খাওয়া সিগারেটটি মুখ থেকে বের করে নদীর চঞ্চল ঘুর্ণিস্রোতে ফেলে দিল। পকেট থেকে লাইটার আর এক প্যাকেট আমেরিকান সিগারেট বের করে আমাকে একটা সিগারেট অফার করল। লাইটার জ্বেলে
আমাকে সিগারেটটা ধরিয়ে দিয়ে সে নিজেও তার-টা ধরালো। তারপর আমি যাতে বুঝতে পারি, হিন্দি আর ইংরেজি মিশিয়ে নানান বিষয়ে কথা বলছিল। কখনো কখনো
তার সব কথা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, তার বাচনভঙ্গিও দুর্বোধ্য, তবু প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম যাতে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারি। মামুলি কিছু মন্তব্য করছিলাম, যেমন ” হ্যাঁ হ্যাঁ,” “ঠিক বলেছেন,” এইরকম আর কি! এর বেশি সাধ্যও আমার নেই।
আরো পড়ুন: শারদ সংখ্যা উপন্যাস: এই প্রেম এই নিঃসঙ্গতা । বিতস্তা ঘোষাল
এই সময়েই আমাদের উল্টোদিকের ঘাটে কয়েকটি মেয়ে এল নদী থেকে জল নিতে। তাদের প্রত্যেকের কাছেই দুটো করে জলের পাত্র রয়েছে– গাগোরি আর কলস। নিগ্রো মানুষটি কথা বন্ধ করে একদৃষ্টিতে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে চেপে ধরে আছে সিগারেটটা। এখন শুখা মরশুম , নদীটা চওড়ায় বড়জোর পনেরো কুড়ি ফুট হবে। তার এই ব্যবহারে হঠাৎ আমার প্রচন্ড রাগ হোল। তরুণী মেয়েদের দিকে তার এই নোংরা কামার্ত দৃষ্টি আমি কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারলাম না। কিছুক্ষণ আগেও তার প্রতি আমার কোনো অসূয়া ছিল না কিন্তু মুহূর্তমধ্যে আমি তখন তাকে তীব্র ঘৃণা করছিলাম। পলকের জন্য সে আমার মুখের দিকে তাকালো, অত্যন্ত কঠিন আমার সে মুখ, তীব্র বিদ্বেষ সেখানে। আমি যে ক্ষুব্ধ হয়েছি সে তা মুহূর্তেই বুঝে নিলো। অত্যন্ত অস্বস্তিতে পড়ে গেলো সে, মুখ থেকে তার হাসি মুছে গেল।
মেয়েগুলি হাঁটুজলে নেমে তাদের পাত্রে জল ভরে সেই পাত্র সাবধানে তাদের ডান কাঁখে বসিয়ে শক্ত করে হাত দিয়ে ধরে রাখল। জল থেকে উঠতে উঠতে তারা তাদের মেখলা একটু একটু করে নামিয়ে দিচ্ছিল। ( জলে নামার সময় তারা মেখলা একটু গুটিয়ে নেয়, যাতে ভিজে না যায়।) নারীসুলভ ভব্যতা তাদের পা অনাবৃত রাখতে বাধা দেয়।আমরা যে নদীর ওপ্রান্তে বসে আছি এ ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সচেতন, একজন অসমীয়া মহিলা কখনোই অচেনা মানুষকে তাদের পা দেখায় না– বিশেষ করে সে যদি পুরুষ হয়। তাছাড়া তারা আমার পাশে বসে থাকা নিগ্রো মানুষটির ব্যাপারে অত্যন্ত শঙ্কিত ছিল। মেয়েগুলি তাদের প্রথম জলেভরা পাত্রটি শুকনো বালির উপর রেখে দ্বিতীয় পাত্রটিও জলে ভরে নিল। প্রথম পাত্রটি বাঁদিকের কাঁখে রেখে দ্বিতীয় পাত্রের সরু দিকটা ডানহাতে ধরে নীরবে তারা ঘরে ফেরার পথ ধরে চলছিল।
কিছুক্ষণ পরেই তাদের আর আমরা দেখতে পেলাম না। নিগ্রো মানুষটি তখনও তাদের ফেরার পথের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মনে হোল লালসাপূর্ণ সে দৃষ্টি, মুখ থেকে যেন তার গ্রাস কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দুর্ভিক্ষের সময় ক্ষুধার্ত মানুষ যে ভাবে খাবারের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দৃষ্টি ঠিক তেমনই। একটু পরেই সে আমার দিকে তাকালো। আমার মুখে কোনো হাসি সে দেখতে পেল না, আমার চোখের ভাষাও বন্ধুসুলভ নয়। সে চেষ্টা করছিল যাতে আমার মুখের হাসি ফিরে আসে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে নিজে তার থেকে একটা নিয়ে আবার আমাকে বাকি প্যাকেটটা দিল।
” আমারও এক বোন আছে যাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি, যার কথা খুব মনে পড়ে আমার,” সে লাইটারটা জ্বালিয়ে সাবধানে আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি সিগারেটটা ধরানোর পর হঠাৎ হাওয়ায় লাইটারটা নিবে গেল। আবার জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল,” সেও
নদীখাত থেকে জল আনতে যায়, ঠিক এদের মতোই।”
খুব মন দিয়ে আমি তার কথা শুনছিলাম যাতে সবটুকু বুঝতে পারি।
” আমার একটা ছোট ভাইও আছে, বোনের থেকেও সে ছোট। ” বলছিল সে।
ধীরে তখন অন্ধকার নেমে আসছিল। সূর্যের শেষ রশ্মি নদীর জলে যেন ডানপিটে ছেলের মতো নেচে নেচে খেলে বেড়াচ্ছিল। আমি এখন জানি মানুষটির দৃষ্টি কোন দূর দেশে হারিয়ে গেছে, হয়ত এখন সে মনে মনে আমেরিকান নিগ্রো জীবনযাপন করছে। তার নিজের দেশে নিজের পরিচিত মানুষজনের মধ্যে — তার বোন, তার পরিবার, তার গ্রাম, সেখানেও নদীতে মেয়েরা জল নিতে আসে…
সে বলছিল তার এক ভাই আছে, আছে তার খুব আদরের বোন। তারা থাকে সেই সাত সমুদ্র পেরিয়ে হাজার হাজার মাইল দূরে…
এইবার আমি তার মুখের দিকে ঘন করে তাকালাম। সেখানে এক দরদী আর সংবেদী বড়ভাইয়ের ছায়া দেখলাম, যে তার স্বদেশ তার আপনার জনের মধ্যে ডুবে আছে।
সূর্যের শেষ আলো-কে অন্ধকার গ্রাস করে নিয়েছে। আমাদের মুখে আর কোন কথা নেই। নির্মল প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে আমাদের মন, ঠিক আমাদের ছেড়ে যাওয়া নদীতীরটার মতোই।