ইরাবতীর মুখোমুখি কবি, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়
কবি, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায় নিভৃতচারী হলেও তাঁর লেখা পাঠককে আলোড়িত করে প্রতিনিয়ত। পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায় এর মুখোমুখি হয়েছিলেন শৌনক দত্ত। জানা অজানা অনেক কথা উঠে এসেছে সেই আলাপচারিতায়। অনেক বিষয়ে তিনি আলো ফেলেছেন। নিজের জীবন, লেখালেখি থেকে সেই আলাপ বিস্তার লাভ করেছে এমন সব দিকে যেখানে পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়কে নতুন করে চেনার সুযোগ মেলে এবং এই আলাপচারিতার আগে পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়কে এতটা মুখর ও অন্য আলোয় চেনা-জানার সুযোগ মেলেনি কোথাও।
শৌনক দত্ত: তোমার লেখালেখির শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: খুব ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি একটা সহজাত আকর্ষণ ছিল। নতুন ক্লাসের বই এলেই বাংলা ইংরিজি দুটো বইয়েরই কবিতাগুলো ঝটপট মুখস্থ হয়ে যেত। তারপর নিজের মন থেকেই শব্দ বাক্য ছন্দ উঠে আসা শুরু হল। স্কুলের সাপ্তাহিক ওয়াল ম্যাগাজিন আর বাত্সরিক পত্রিকার প্রশ্রয়েই কবিতার হাতেখড়ি। আমার কবিতা শিক্ষিকারা খুব পছন্দ করতেন। এখন সেগুলো আবার পড়ে দেখি স্ট্যান্ডার্ড খুব খারাপ ছিল না। তাছাড়া, তখনকার ছোটদের পত্রিকায় লেখা ছাপা হত। তখনকার দিনে অনেক লেখার প্রতিযোগিতা হত। সেসব প্রতিযোগিতায় সব সময়েই পুরস্কার পেয়েছি। এরপরে কলেজ জীবনে বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখা পাঠাতাম। আস্তে আস্তে পরিচিতি তৈরি হল। তবে নামী পত্রপত্রিকায় লেখা পাঠিয়েছি চাকরি বাকরি পাবার পর। অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব আমার জন্য খুব জরুরী ছিল।
একান্নবর্তী পরিবারে বড় হওয়া,বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা এইসব তোমার লেখালেখিকে কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: একান্নবর্তী পরিবারের একটা সুবিধা হল এই যে তুমি পরিবারের রুটিন মেনে স্নান খাওয়া করে নিয়ে কারুর অসুবিধা না ঘটালে কেউ তোমাকে নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় পাবে না। তুমি কোন আলমারির কোণে বসে পড়ার বই না পড়ে গল্পের বই পড়ছ বা দুপুরবেলা না ঘুমিয়ে একা একা উঠোনে বসে আকাশ পাতাল ভাবছ কি না সেসব দেখবে না। এগুলো হয়ত লেখার উপযুক্ত জমি তৈরি করে দিয়েছে। ছোটবেলায় বাড়িতে নিজের মনের মত অতিথি কেউ এলে তাকে স্বরচিত কবিতা শোনাতাম। একটা নোটবুক ছিল। তাতে লিখতাম। এক ভাই এত দুষ্টু ছিল যে বাড়ির সদর দরজায় চক খড়ি দিয়ে লিখে দিয়েছিল- কবি হইতে সাবধান। তাছাড়া প্রচুর আত্মীয় আসত বলে অনেক রকম চরিত্রের মানুষ দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেগুলো মনের ভেতরে থেকে গেছে। পরবর্তীকালে গল্প লেখার সময় এই সব চরিত্র ঢুকে পড়েছে গল্পের বিভিন্ন চরিত্র হয়ে।
বিজ্ঞান নিয়ে পড়াটা বোধহয় আমার ভুল সিদ্ধান্ত। সাহিত্য বা তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়লে শঙ্খ ঘোষ, নবনীতা দেবসেন এঁদের শিক্ষক হিসেবে পেতাম। ইলেভেন টুয়েল্ভে বাধ্যতামূলক বাংলা ইংরিজিতে প্রচুর নম্বর পেতাম বলে শিক্ষিকারা বলতেন যে সাহিত্য নিয়েও পড়তে পারতে। কিন্তু তখন আমার মাথায় কোনোভাবে একটা দৃঢ় ধারণা তৈরি হয়ে গেছিল যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি চাকরি পাব।অন্তত ভালো ভালো টিউশনি পাব। আমার যা পরিস্থিতি ছিল তাতে অর্থনৈতিক চাপ ছিল। চাকরি তাড়াতাড়ি পেয়েওছি। কিন্তু পরে বুঝেছি যে সাহিত্য নিয়ে পরলেও সমস্যা হত না। বরং লেখালেখির ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সুবিধা হত।
জীবনের কোন ঘটনা বিশ্বাস গঠনে প্রভাব ফেলেছে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: জীবন তো ঘটনার স্রোত। প্রতি মুহূর্তেই কিছু না কিছু ঘটছে। সব ঘটনারই প্রত্যক্ষ পরোক্ষ প্রভাব মানুষের জীবনে পড়ে। আমার মা খুব ব্যস্ত ছিলেন ঘরে বাইরে দুদিকে। আমাকে তেমন সময় দিতে পারতেন না। কাকা যতটুকু সময় পেতেন দিতেন। কাকাই স্নান করানো খাওয়ানো করতেন। তারপর অন্য ভাইবোনরা জন্মালো। আমাকে আড়াই বছর বয়েসেই বড় হয়ে যেতে হল। বড়দি কিছুটা আগলে রাখত। কিন্তু মাত্র আঠেরো বছর বয়েসে তার বিয়ে দেওয়া হল হঠাত ভালো সম্মন্ধ আসায়। ফলে ছোটবেলা থেকেই বুঝে গেছি যা তুমি ভালবাসবে তা তুমি পাবে না। সব কিছু ছেড়ে দিতে হবে।
কোন কোন বই তোমার বিশ্বাসকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়:আমার গোগ্রাসে পড়ে ফেলার অভ্যাসের দরুণ প্রচুর পরস্পর বিরোধী দর্শনের লেখকের বই ছোটো থেকেই পড়ে ফেলেছি।সেসব মাথায় গিজগিজ করছে। রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্কর, মানিক, বিভূতিভূষণ,শরদিন্দু, গজেন্দ্র, গৌরকিশোর, আশাপূর্ণা, নবনীতা- অন্তহীন তালিকা। বাড়িতে প্রচুর বই ছিল। বড়দের মধ্যে এক এক জনের পাঠ রুচি এক এক রকম। তাছাড়া, পাড়ার দুটো লাইব্রেরির মেম্বার ছিল আমাদের বাড়িতে। আমরা যা পড়ি তার একটা প্রভাব তো অবচেতনে থেকেই যায়। সেখান থেকে নিজেকে বিযুক্ত করা খুব কঠিন। আমি তো পারিনি। সবটাই ভেতরে জট পাকিয়ে থেকে গেছে। যেমন, মানুষের জিনে পূর্ব পুরুষদের সব বৈশিষ্ট্যই থেকে যায়। কোনোটা প্রকটভাবে কোনোটা প্রচ্ছন্ন ভাবে। এক এক প্রজন্মে এক এক বৈশিষ্ট্য আত্মপ্রকাশ করে। সেই রকমই কখন যে মন কোন প্রভাবে চলবে তা পরিষ্কার করে বলা মুশকিল।
একটি গান,একটি চলচিত্র,একটি নাটক, একটি বই অথবা তার অংশবিশেষ যা তুমি অন্যকে শুনতে দেখতে বা পড়তে উত্সাহিত করবে। তুমি কি নারীবাদে বিশ্বাসী? তোমার ভাবনায় নারীবাদ কেমন?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: এমন তো অজস্র আছে । যখনই কিছু ভালো লাগে তা সমমনস্ক মানুষদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে মত বিনিময় করি। নারীবাদে বিশ্বাস করি। খুব ছোটোবেলা থেকেই এই ভাবনাগুলো দিশাহীন অগোছালো অবস্থায় মনের মধ্যে আপনা থেকেই আসত। সীতা দ্রৌপদী রাধা এইসব চরিত্রের সঙ্গে হওয়া অবিচারগুলো ছোটবেলা থেকেই অনুভব করতাম। কিন্তু সেই চিন্তাগুলো ভাগ করে নেবার লোক পেতাম না। কেউ পাত্তা দিত না। মল্লিকা সেনগুপ্তর সঙ্গে পরিচয় হবার পর এইসব ভাবনা প্রশ্রয় আশ্রয় আর দিশা পেল। মল্লিকা সেনগুপ্তর সঙ্গে পরিচয় হওয়া বিধিনির্দিষ্ট ছিল। আমি সমাজের যে কোনো অন্যায় অত্যাচার অবিচারের বিপক্ষে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসহায়, দরিদ্র আর নিম্ন বর্গীয় মানুষেরাই সহজে সমাজ দ্বারা অত্যাচারিত হয়। আমি শোষণহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম। তবে, আশ্চর্য এই যে, নারীর ওপর অত্যাচার অবিচার কিছুটা যেন সমাজ স্বীকৃত। যেহেতু সমাজ পুরুষতান্ত্রিক এবং পুরুষ নিয়ন্ত্রিত, তাই সমাজ অনেক সময়ে নারীর প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায় অত্যাচার ও বৈষম্যমূলক আচরণকে চিহ্নিতই করতে পারে না। শেখেনি। এই বিষয়টাই আমাকে নারীবাদী করে তুলেছে। অন্যায়ের বৈষম্যের জায়গাগুলো চিহ্নিত করাও একটা কাজ। এখন অনেক কবি লেখক সেই কাজটা করে চলেছেন। আমি যখন লেখা শুরু করেছিলাম তখন শুধু কবিতা সিংহ, কৃষ্ণা বসু, মল্লিকা সেনগুপ্ত আর চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের লেখাতেই তীব্র প্রতিবাদ লক্ষ্য করেছিলাম।
আরো পড়ুন: ইরাবতীর মুখোমুখি কবি, চলচ্চিত্র সমালোচক অদিতি বসুরায়
কোন বিষয়টি তোমাকে কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে? কিংবা এমন কোনো পরিস্থিতি যা তোমাকে কবিতা লিখতে বাধ্য করে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: কবিতা লিখব ভেবে কোনোদিন কবিতা লিখতে পারিনি। সে আমার বাধ্য নয়। আমি তার ক্রীতদাসী। সে নিজের মর্জি মতো নিজেকে লিখিয়ে নেয়। কখনও হয়ত একদিনেই পনেরোটা কবিতা লিখে ফেললাম। কখনও মাসের পর মাস একটাও কবিতা লিখতে পারলাম না। তখন খুব ভয় করে। মনে হয়,আর কি কবিতা লিখতে পারব না? সত্যি কথা বলতে কী, দিনের পর দিন কবিতা লিখতে না পারলে যে পরিমান ডিপ্রেসন হয়, তেমন আর কোনো ঘটনাতেই হয় না। আবার, একটা ভালো কবিতা লিখে উঠতে পারলে যে আনন্দ হয় তা আর অন্য কিছুতেই হয় না। কিন্তু নিজের ইচ্ছে মত কখনও লিখতে পারি না। অনেকেই আছেন যারা সামাজিক কোনো ঘটনার প্রভাবে বা কারুর মৃত্যুতে তত্ক্ষণাত কবিতা লিখে ফেলতে পারেন। আমি এ ব্যাপারে অক্ষম, অপারগ। তারমানে এই নয় যে আমি সেসব ঘটনায় প্রভাবিত নই । আমি গদ্য লিখে দিতে পারব। কিন্তু কবিতা পারব না। তবে, এমনও হয়েছে যে, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেছে ঘুমের মধ্যেই মাথায় কবিতার আনাগোনায়। কখনও রাস্তাঘাটে বিপদসঙ্কুল অদ্ভুত পরিস্থিতিতেও কোত্থেকে একটা বীজের মত কবিতার পঙক্তি এসে মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করতে থাকল। কখনও মাথার মধ্যে একের পর এক পঙক্তি চলে আসছে অথচ লেখার উপযুক্ত পরিস্থিতি নয়। তখন চেষ্টা করি মুখস্থ রাখতে। কিন্তু যতক্ষণে লিখতে বসার সময় পাই তখন অনেকটাই আর মনে থাকে না।অনেক শব্দ বদলে যায়। কত কবিতা হারিয়ে যায় জন্মলগ্নেই। নষ্ট ভ্রূণের মত তারা জন্মাতে পারে না।
কবিতা নিয়ে তোমার ধারণা কী? কবিতা থেকে কী চাও? কবিতা তোমাকে কী দিয়েছে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: যে বয়েস থেকে কবিতা নিয়ে আছি, সেই বয়েসে চাওয়া পাওয়ার হিসেব থাকে না। কবিতা মনে হয় সব কবির ক্ষেত্রেই নিয়তি নির্ধারিত।ভুতুড়ে হাওয়ার মত না-জন্মানো কবিতারা ঘুরে বেড়ায়। কারুর কারুর ঘাড় উপযুক্ত মনে হলে তার কাঁধে চেপে বসে। তাদের আর নিষ্কৃতি নেই।আমৃত্যু কবিতার ক্রীতদাস হয়ে থাকতে হবে। কবিতা একহাতে দিয়েছে। একহাতে নিয়েছে। কবিতা ক্রমশ জাগতিক ভাবে ঠিকঠাক মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে কমিউনিকেট করা অসম্ভব করে দিয়েছে। আরেক দিকে তিন ভুবনের দরজা খুলে দিয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে, কবিতার মধ্যে দিয়েই আমি আমার মন খুলে দিতে পারছি। তা সকলের সঙ্গে ভাগ করা না গেলেও, কিছু লোক সেটা ডিকোড করতে পারছে।
নৈ:শব্দ্য তোমার কবিতার প্রধান বিষয়। তুমি কি স্রোতের শব্দের মত একাকীত্ব উদযাপন করো? কখনও কখনও তোমার কবিতাকে মনে হয় না পাবার কান্না। কবিতার দর্শন ও নন্দন তাত্ত্বিক জায়গা থেকে ব্যাখ্যা কী?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: হতে পারে না পাবার কান্না। আমার যখন অঢেল সময় ছিল তখন আমার মা ব্যস্ত ছিল। যখন মা সময় পেলেন তখন আমি বহির্জগতে ব্যস্ত। মাকে ভালোবাসা সত্তেও জীবনে মায়ের সঙ্গে কাটানো মোট সময় খুব কম। মায়ের সঙ্গতৃষ্ণা আমার মেটেনি। এই অপ্রাপ্তি হয়ত অবচেতনে ঘোর প্রভাব ফেলে থাকবে। এই অপ্রাপ্তিই হয়ত সমস্ত জীবন ধরে আমার সমস্ত লেখাকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। কবিতা তো প্রকৃত পক্ষে কারুরই সচেতন প্রয়াস নয়। অবচেতন থেকে উঠে আসা সৃষ্টি। তার গঠন কৌশল, নির্মান পদ্ধতি হয়ত বা সচেতন সজ্ঞান প্রয়াস। কিন্তু মূল ব্যাপারটা কখনই কারুর সচেতন ভাবে হয় না।
একটা পরিবর্তিত ভূগোল,তার ইতিহাস,সামাজিক কাঠামো,তার ইকোলজি একজন কবিকে কতখানি নিয়ন্ত্রণ করে বলে তোমার মনে হয়?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: এই প্রত্যেকটি বিষয়ই সব মানুষকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, নিয়ন্ত্রণ করে। পৃথিবীতে কোনো মানুষ সঠিক অর্থে স্বাধীন নয়। কোনো না কোনোভাবে সে নিয়ন্ত্রিত, শর্তাধীন। কবি যেহেতু অনেক বেশি সংবেদনশীল, তাই, যে কোনো ঘটনার অভিঘাতে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিতে নানা ক্রিয়া বিক্রিয়া তৈরি হয়। তাই তাঁর লেখায় কোনো না কোনোভাবে এগুলো উঠে আসবেই।
লেখা নিয়ে তোমার ভীষণ খুঁতখুঁতে একটা ব্যাপার আছে। কখন এবং কীভাবে বুঝতে পারো যে একটা লেখা হয়ে উঠল।
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: আদৌ আজ পর্যন্ত কোনো লেখাই লেখা হয়ে উঠেছে কি না সে নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ী। বাংলা সাহিত্য এত সমৃদ্ধ আর এত বেশি পড়ে ফেলেছি যে অগ্রজদের লেখার পাশাপাশি নিজের লেখাগুলো ছাইপাঁশ ছাড়া কিস্যু না। কিন্তু নিয়তিতাড়িত হয়ে লিখে যেতে হয়। আমি কনিষ্ঠতম সম্পাদককেও উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করতে থাকি যেটা পাঠালাম সেটা চলবে কি না। তাই নিজের লেখা নিয়ে বিন্দুমাত্র কনফিডেন্ট নই। এর কারণ হল, খেলাধূলা, গান বাজনা সহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে হল কি হল না সেই বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট সর্বজনমান্য সূচক আছে, সংজ্ঞা আছে, নিয়ম আছে। একমাত্র কবিতার ক্ষেত্রে সর্বজন গ্রাহ্য কিছু নেই। তাই, যে সম্পাদক দেখছেন বা যে পাঠক পড়ছেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর উপরই সবটা নির্ভর করে। নির্দিষ্ট সর্বজনমান্য কিছু না থাকায় কিছু কবি ওভার কনফিডেন্ট। তারা ভাবে তাদের সব লেখাই শ্রেষ্ট কবিতা। কিছু কবি সারা জীবনেও বুঝতে পারেন না যে তাঁর কবিতা কবিতা হয়ে উঠছে কি না।
তুমি একটা চাকরি করো,পরিবার সামলাও। লেখা চলাকালীন তোমার শারীরিক মানসিক অবস্থা কেমন থাকে? অফিস ও বাড়ির কাজকর্ম, বাজার হাট, দৈনন্দিন খুঁটিনাটি কাজকর্ম করতে কি তখন ভালো লাগে? সব ঠিকঠাক চলে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: একটা লেখা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অথচ সেটা নিয়ে বসতে পারছি না, অফিস বা বাড়ির দৈনন্দিন কোনো বাধ্যতামূলক কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে এরকম হলে ভেতরে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়। মনে হয় কতক্ষণে নিস্তার পাব। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তখন কেউ বিরক্ত করলে একেবারে উগ্রতারা রূপ। এমনকী তখন বাড়িতে কোনো প্রিয়জন এলেও মনে হয় কতক্ষণে যাবে রে বাবা। এগুলো একটু অসামাজিকতা এবং স্বার্থপরতা মনে হলেও কম বেশি অনেক কবিরই এরকম মনে হয়। তবে কি না একজন কবি তো প্রতি মুহূর্তেই কবি। তাই ওই সব প্রতিকূল অবস্থাও তার মধ্যে নিজের মত বীজ বুনতে থাকে। কখনও তা কবিতা হয়ে ফুটে ওঠে।
কবিতা বা কথাসাহিত্য কোনটা নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা করো? কেন?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: কথাসাহিত্য নিয়েই বেশি চিন্তা করতে হয়।ঘটনা নির্মাণ, চরিত্র নির্মাণ, পুঙ্খাণুপুঙ্খ বর্ণনা, সমাপ্তি,সূচনা – সব। কবিতার আসা যাওয়া তো তার নিজের ইচ্ছে মত। তাকে বাঁধব কী করে? কিছুটা পরিমার্জনা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এমনকী, ছন্দের কবিতাতে পঙক্তিগুলো ছন্দবদ্ধ অবস্থাতেই মাথায় আসে। নিজে ভেবে চিন্তে এই ছন্দে লিখব এমনটা কখনই হয় না।
প্রিয় কোন বই যা তুমি সব সময়ে মাথার কাছে রাখতে চাও?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: শুধু মাথার কাছে রাখা নয়, সব সময় মাথার মধ্যে নিয়ে ঘুরি যে বই তা হল গীতবিতান। সব পরিস্থিতিতেই গীতবিতান যেন আমাকে অভিভাবকের মত আগলিযে রাখে। পথনির্দেশ করে। গীতবিতান আমার গীতা,বাইবেল,কোরান-সবকিছু।
লেখার সময়ে এবং লেখার পরেও কোনো নির্দিষ্ট গোপন পাঠকগোষ্ঠীর কথা কি তোমার মাথায় থাকে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: পাঠকগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে লেখা যায় না। লেখক লিখে ফেলার পর তার লেখা পড়তে পড়তে নির্দিষ্ট পাঠককূল তৈরি হয়ে যায় পাঠরুচির ভিন্নতা অনুযায়ী। সেই সংখ্যাটা এক এক লেখকের এক এক রকম। হয়ত সকলের লেখা সব পাঠকের চোখে পড়ার মত উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকলে পাঠক সংখ্যার অনুপাতে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটত। তবে,যেরকম ফুচকা, মিষ্টি, ফল, বিরিয়ানি- সব দোকানই পাশাপাশি থাকে, খাদ্যরসিক নিজ রুচি অনুযায়ী স্থির করে কোন দোকানে ভিড় জমাবে, সেরকমই যে পাঠক যে লেখা খুঁজছে সে সেই লেখার কাছে পৌঁছতে চাইবে। কবিতার ক্ষেত্রে সর্বজনমান্য সংজ্ঞা না থাকায় কিছু কবি,সম্পাদক ও পাঠক নিজ রুচির বাইরের সব লেখাকে নস্যাত করে দিতে চান। সকলের লেখা সব পাঠকের কাছে পৌঁছনোর মত পরিকাঠামোও নেই।তবুও দীর্ঘকাল লিখতে থাকলে কিছু পাঠক তৈরি হয়েই যায়। কবিকে শুধু নিজের কাছে সত থাকতে হবে। এছাড়া তার আর কোনো দায় নেই।
গল্প লেখার ক্ষেত্রে বিষয়,কাঠামো, চরিত্র নির্মাণ, ভাষার বিশেষ গঠন( কনস্ট্রাকশন) এবং প্রকাশ ভঙ্গী – এসবের কোনটিকে তোমার গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়? নিজস্ব কোনো নির্মাণ কৌশল ব্যবহার করো কি?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: সবচেয়ে আগে দরকার একটা নিটোল গল্প। গল্পটা একটা গল্পই হতে হবে। গল্প শোনার আগ্রহ মানুষের একটা বিশেষ রিপু। সেই আগ্রহ থেকেই কলতলা, পুকুরঘাট, ছাদ, অফিস করিডোর, ক্লাব, রক- এসব জায়গায় আড্ডা, গসিপ, পিএনপিসি তৈরি হয়। এই আগ্রহ থেকেই বাচ্চারা চোখ গোলগোল করে দিদিমা বা ঠাকুমাকে প্রশ্ন করে- তারপর? কাজেই ওটা থাকতে হবে। আগ্রহ তৈরি করার মত ঘটনা।তারপর সেই আগ্রহকে ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়াই হল লেখকের কলমের কারসাজি। ঘটনার হাত ধরেই আসে চরিত্র। চরিত্রনির্মাণ বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা কঠিন কাজ। ভাষার ক্ষেত্রে, কোন চরিত্র কথা বলছে, সেই চরিত্র কোন ভাষায় ভাবে, তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কেমন হতে পারে সবটা লেখকের চোখের সামনে ফুটে উঠতে হবে। তা না হলে পাঠককে বিশ্বাস করানো যাবে না। এইজন্য লেখককে আশেপাশের বিভিন্ন মানুষকে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতে হয়। এই বিষয়টায় একজন অভিনেতার সঙ্গে লেখকের পার্থক্য নেই।
একটা বহু পুরোন বিতর্ক আছে। শিল্প সাহিত্যে দুটি ডমিন্যান্ট ধারা। যদিও সব সময়ে বিভাজনটা স্পষ্ট নয়। একদল ” আর্ট ফর আর্টস সেক” পন্থী। আরেকটা দল আবার শিল্পকে সরাসরি রাজনীতির হাতিয়ার বানাতে চায়। অনেকের মনে হয় এটা প্রোপাগান্ডার মাধ্যম। এই দুই এক্সট্রিমের মাঝামাঝিও আছে। তোমার অবস্থান বা এই বিষয়ে কিছু বলার আছে কি?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: আমার বিশ্বাস রাজনীতিনিরপেক্ষ বলে আদৌ কিছুই হয় না। অরাজনীতিও রাজনীতি। ব্যক্তিগত বলেও কিছু হয় না। আমরা প্রত্যেকে এক বিরাট অদৃশ্য রাজনৈতিকতায় এমনভাবে গাঁথা আছি যে আমাদের প্রত্যেকটি আপাতনিরীহ, নিরপেক্ষ শব্দও রাজনীতি। ” আর্ট ফর আর্ট সেক ” ধারণার বহুল প্রচারও একটা রাজনীতি। একটাই কথা বলা যায় যে কারুর লেখায় প্রত্যক্ষভাবে থাকে,কারুর একটু কৌশলী মোড়ক থাকে। আমার এটাই বিশ্বাস। অন্য কেউ অন্য রকম বিশ্বাস পোষণ করতেই পারেন। নানা রকম ভাবনা নিয়েই তো ভুবন। নইলে পৃথিবী তাসের দেশ হয়ে যাবে।
লিখতে আসার পরে বন্ধু, শত্রু, নিন্দুক, সমালোচক – এসব কীভাবে সামলিয়েছো?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: কাউকে আলাদা করে সামলানোর চেষ্টাই করিনি কখনও। যখন প্রশ্বাস গ্রহণ করি তখন কি বায়ু থেকে অক্সিজেন আর কার্বনডাইঅক্সাইড আলাদা করে শ্বাস নেবার উপায় থাকে? সবই তো একসঙ্গে ভেতরে ঢোকে। তারপর শরীর নিজস্ব আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াতে অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিত্যাগ করে। সেরকম সকলে চারপাশে থেকে যায়। মন নিজের অভিজ্ঞতার প্রক্রিয়ায় বাহুল্য অংশকে বর্জন করে। তাছাড়া, শত্রু, নিন্দুক,সমালোচক এরা একজন মানুষকে এবং লেখককে ভেতরে ভেতরে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে তোলে।
নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস কি লেখায় উঠে আসে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: আমার মনে হয়, মানুষের সব কাজের মধ্যেই তার নিজেরই অজান্তে রাজনৈতিক বিশ্বাসের ছাপ পড়ে। আর,লেখা তো নিজের ভেতরের অন্তর্লীন অনুভূতির বহি: প্রকাশ। তাই, সেখানে তো থাকবেই। পাঠক যদি সচেতন ভাবে পাঠ করে তাহলে তো অবশ্যই পাবে। তবে,স্পষ্ট করে রাজনৈতিক মত ব্যক্ত করে কবিতা আমি কমই লিখেছি। এটা ঠিক না ভুল জানি না। খুব বিপর্যয়ের সময়ে যখন নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরী তখনই শুধু এরকম ধারার লেখা লিখেছি। নইলে আমার এরকম কবিতা আসে না।
অধিক পাঠে কি একই লেখা দুজন লেখক লিখতে পারে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: প্রশ্নটা খুব স্পষ্ট হল না। তবুও আমি যেভাবে বুঝলাম সেভাবেই উত্তরটা দিই। এখন ইন্টারনেট দুনিয়ায় সারা পৃথিবীর সকলেই সকলের লেখা পড়ছে। অনুবাদও আগের চেয়ে বেশি। ফলে,ভাব বিনিময় হচ্ছে। তাছাড়া, অনুভূতিসম্পন্ন সচেতন মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসে একই ভাবনা ভাবতে পারে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন লেখার প্রভাব মনের মধ্যে জট পাকিয়ে থাকে। এখন আর সেই অর্থে কোনো ভাবনাই মৌলিক নয়। কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত। এই নিয়ে কিছুদিন আগে যশোধরা রায়চৌধুরীর একটি কবিতা পড়লাম। কবিতার নাম ” জলাভূমি থেকে”। তবে, একদম একই প্লটে গল্প লেখা বা কবিতার এক রকম পঙক্তি কী করে সম্ভব যদি না সচেতন ভাবে অনুকরণ ও নকলনবিশী না করে? সম্প্রতি আমার একটি প্রকাশিত গল্পের অনুকরণ দেখলাম বহুল প্রচারিত সংবাদ পত্রে।
প্রিয় কবি প্রিয় লেখক, প্রিয় ব্যক্তিত্ব?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: প্রিয় কবি লেখকের তালিকা দীর্ঘ। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্য যেরকম মণিমুক্তোর ভাণ্ডার তাতে অপ্রিয় কবি লেখকের নাম বলাটা বরং সহজ এবং সেই লিস্টটাই ছোটো।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব হল একটি কাল্পনিক চরিত্র। জাদুকর ম্যানড্রেক। কোনো রকম শারীরিক বল প্রয়োগ না করে শুধু জাদুর মাধ্যমে দুর্নীতি আর অন্যায়ের সঙ্গে লড়াই করেন। আমার একটা গোটা কবিতার বই রয়েছে, অভিযান পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত, ” জাদুদেবতার জন্য” এই নামে। এখানে ম্যানড্রেক যেন বাস্তবের কোনো পুরুষ। তার সঙ্গেই প্রেম, বোঝাপড়া, মানঅভিমান। বাস্তবের কোনো চরিত্রের কথা যদি বলতেই হয় তবে এমন কয়েকটা নাম বলব যাদের বিষয়ে শুধু বই পড়ে জেনেছি। মেরি কুরি, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, অসীমা চট্টোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবী,কবিতা সিংহ। আর দেখা চরিত্র হিসেবে বলব মল্লিকা সেনগুপ্তর নাম। আমার মায়ের নাম বলব না। কারণ তিনি তাঁর সঙ্গে হওয়া সব অন্যায় সহ্য করতেন। অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে দিতেন।মায়ের ব্যক্তিত্বের এই অংশটা কোনোদিন মেনে নিতে পারিনি।
এমন কিছু আছে যা সব সময়ে কাছে রাখতে চাও?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: আমি এক পরম শুভ শক্তিতে বিশ্বাস করি। এক মহাশক্তি। সেই শক্তিকে আমি যে রূপে ভজনা করি, আমার সেই আরাধ্যের প্রতিকৃতি সব সময়ে সঙ্গে রাখি।
ভবিষ্যতে কি মানুষ কবিতা লিখবে, পড়বে? কবিতার কি আর প্রয়োজন হবে ভবিষ্যত পৃথিবীতে?
পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়: এখনও কি সব মানুষ কবিতা লেখে,গান করে,ছবি আঁকে? কিছু ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ মনের গভীরে এগুলো লালন করলেও এগুলো নিয়ে জীবন কাটানোর সুযোগ পায় না। বাস্তবের আঘাতে সেসব তছনছ হয়ে যায়। একদল মানুষ জাগতিক সুখ সমৃদ্ধি নিয়েই তোফা থাকে। কবিতা,গান,ছবি- এসবের ধার না মাড়িয়েও দিব্যি তাদের জীবন কাটে। অল্প কিছু মানুষ যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কবিতা,গান,ছবি আঁকড়িয়ে বেঁচে থাকে। তাদের কাছে বাকি সব কিছু একদিকে আর অন্যদিকে কবিতা,গান,ছবি। কিছু মানুষ এগুলোর মূল্য দেয়। চিরকালই এমন ছিল। ভবিষ্যতেও এমনটাই থাকবে।
কবি ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ৭ আগস্ট, উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। সম্পাদনা করেছেন বেশ কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা এবং ওয়েবজিন। বর্তমানে ইরাবতী ডেইলি ওয়েবজিনের সাথে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : জল ভাঙে জলের ভেতর [২০১১], ঠোঁটে দাও জ্যোৎস্নার বিষ [২০১২], ডুব সাঁতার [২০১৭], নিরুদ্দেশ গাছে সন্ন্যাসীর মুখ [২০১৭]। গল্পগ্রন্থ : কারুময় খামে অচেনা প্রেম [২০১২]। উপন্যাস: ইতি খন্ডিত জীবন [২০২২]। প্রবন্ধ সংকলন: মাটির গন্ধ [২০২২]। সম্পাদনা গ্রন্থ: দুই বাংলার সাম্প্রতিক গল্প [২০২২] ।
শখ বইপড়া, লেখালেখি, ছবিতোলা, গান শোনা ও ভ্রমণ। বেশ কিছু গানও লিখেছেন তিনি।
অকপট সাক্ষাৎকার ভালো লাগল
খুব ভাল লাগল। বিজ্ঞানীর মত স্বচ্ছ ধারণা সব বিষয়ে। আমিও কিছু শিখলাম।
পাপড়িকে নতুনভাবে জানলাম। লিখে যান, প্রিয় কবি!