| 19 এপ্রিল 2024
Categories
খবরিয়া খেলাধুলা ফুটবল

বিশ্বকাপ সাক্ষাৎকার: সবার নজর ফ্রান্সের দিকে: পাভার্ড

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

উয়েফা নেশনস লিগে প্রত্যাশিত ফুটবল দেখাতে পারেনি ফ্রান্স। তারপরও কাতার বিশ্বকাপের হট ফেবারিট তারা। সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে দুর্দান্ত এক দল ফ্রান্সের। রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আসরের সেরা গোল করা বেঞ্জামিন পাভার্ডও দল নিয়ে খুশি।

তার মতে, এই ফ্রান্স দলের দিকে সবাই বন্দুক তাক করে আছে। ফ্রান্সকে হারাতে চায় সকলেই। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়ে ফিফাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাভার্ড দল, কোচ, নিজের ফর্মসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। মূল অংশ তুলে ধরা হলো:

ফিফা: রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় আপনি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অসাধারণ গোল করে ইতিহাসে ঢুকে গেছেন। ওই গোলের সময়ে যদি ফিরে যান?

 

 

পাভার্ড: আমরা ওভাবে খেলার পক্ষে ছিলাম না। দেখলাম যে, মাতুইদি লম্বা করে লুকাস হার্নান্দেজকে পাস দিয়েছেন। ওই সময় কেন আমি উপরে ছিলাম তা এখন বলতে পারবো না। সাধারণত, একজন ডিফেন্ডার প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডকে প্রেসিং করলে অন্য ডিফেন্ডার নিচে থাকেন। কিন্তু আমি তখন উপরে ছিলাম। বল যখন আসলো আমি বুটের সাইড দিয়ে জোরের ওপর শট নিলাম। পরে কী ঘটেছে তা সবার জানা।

ফিফা: ওটা রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা গোল হওয়ায় একটু কি অবাক হয়েছিলেন?

পাভার্ড: হ্যা আবার না। ওটা গুরুত্বপূর্ণ গোল ছিল। কারণ আমরা জিততে নেমেছিলাম। ওমন গোল করে যদি হেরে যান, হজম করতে পারবেন না। আমি পুরস্কার পাওয়ায় খুশি, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ম্যাচ জেতা এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতা।

ফিফা: ডিফেন্ডার হিসেবে লিলিয়াম থুরামের ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোলের পর রাশিয়া বিশ্বকাপে আপনি গোল করলেন। বিষয়টি ভেবে কেমন লাগে?

পাভার্ড: আমি নিজেকে কিছুটা লিলিয়ানের মতো মনে করি। স্টুয়ার্টগার্টে আমি সেন্ট্রাল ডিফেন্সে খেলতাম, ফ্রান্সে খেলতাম রাইট ব্যাকে। তিনি কিংবদন্তি। তিনি ফ্রান্স এবং ক্লাব যেখানেই খেলেছেন শিরোপা জিতেছেন। আশা করছি, একদিন তার সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা হবে।


ফ্রান্সের হয়ে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী দিদিয়ের দেশম। ছবি: ফিফা


ফিফা: থুরামের মতো ২০১৮ সালে আপনি সবকিছুই জিতেছেন। শিরোপা উচিয়ে ধরার অনুভূতি কেমন?

পাভার্ড: বিশ্বকাপের আগে নিজেকে বলতাম, আমার বিশ্বকাপ দলে থাকতে হবে। সুতরাং আমি প্রতিটি মিনিট সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত আমি প্রথম পছন্দ হয়ে বিশ্বকাপ শুরু করি এবং বিশ্বকাপ জিতে শেষ করি। একটা পাগলাটে মুহূর্ত। শিরোপা নিয়ে দেশে ফেরা, ভক্তদের সামনে যাওয়া অসাধারণ মুহূর্ত।


আরো পড়ুন: বিশ্বকাপ সাক্ষাৎকার: বিশ্বজয়ের আশা দিচ্ছে স্পেন: বুসকেটস


ফিফা: যদি ২০১৮ বিশ্বকাপের দিকে ফিরে তাকান, ফ্রান্স দলের জাদুকরী  কী এমন ব্যাপার ছিল যা বিশ্বকাপ জিতিয়েছে?

পাভার্ড: একসঙ্গে থাকা এবং মাঠে ও অনুশীলনে অসাধারণ পরিবেশ ধরে রাখা। সকলেই উজ্জ্বীবিত ছিল এবং আমরা মজা করেছি। টুর্নামেন্ট এতো দ্রুত চলে যায় যে, বিরক্ত হওয়ার সময়ই পাওয়া যায় না। আমরা জানি, যারা বদলি হয়ে খেলছিল তারা মনে মনে অখুশি ছিল, কিন্তু তারা তা প্রকাশ করেনি। বরং তারা অনুশীলনে সর্বোচ্চটা দিয়েছে, যা আমাদের সেরাটা দিতে বাধ্য করেছে। বিশ্বকাপ কটা সপ্তাহের ব্যাপার মাত্র। দলের পরিবেশ ভালো না গেলে মাঠে তা বোঝা যায়।

ফিফা: আপনাদের কোচ দিদিয়ের দেশম দশ বছর দায়িত্বে আছেন। কীভাবে তিনি এতো লম্বা সময় দায়িত্বে?

পাভার্ড: দশ বছর! কারণ তিনি লড়াকু। আমরাও। তিনি জিততে চান। তিনি তার দৃঢ়তা এবং সংকল্প দিয়ে আমাদের জিততে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার অধীনে আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অসাধারণ। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে তিনি শিরোপা জিতেছেন। তিনি টিম মিটিংয়ে অসাধারণ কথা বলেন এবং জিততে খেলোয়াড়দের সবটা দিতে উদ্বুদ্ধ করেন।


 বিশ্বকাপ জয়ী দলের উদযাপন। ছবি: ফাইল


ফিফা: অধিনায়ক হুগো লরিসও অনেকদিন দায়িত্বে?

পাভার্ড: হুগোর অসাধারণ ক্যারিয়ার। একশ’র ওপরে (১৩৮) ম্যাচ খেলেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি আমাকে খুব সহায়তা করেছেন। একদম বড় ভাইয়ের মতো। অলিভিয়ের জিরুর মতো হুগো এমন একজন খেলোয়াড় যার সঙ্গে আমি খেলতে পছন্দ করি। হুগোর প্রতি আমার অগাধ সম্মান।

ফিফা: কাতার বিশ্বকাপ চলে এলো। অথচ ২০২১ সালটা আপনার কিছুটা খারাপ গেছে। বাছাইপর্বে দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। ওই সময়টা কেমন মনে হচ্ছিল?

পাভার্ড: করোনায় খুব কঠিন সময় কাটিয়েছি। করোনা সকলের জন্যই কঠিন ছিল কিন্তু ব্যক্তি জীবনে আমার জন্য একটু বেশি খারাপ ছিল। একা দেশের বাইরে থাকা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিছু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে যা খেলায় প্রভাব ফেলেছে। ওটা এখন অতীত। আমরা বাছাইপর্ব পেরিয়েছি। কীভাবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। হাতে এখন বিশ্বকাপের টিকিট। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমরা বিশ্বকাপে যাচ্ছি।

ফিফা: বিশ্বকাপ ধরে রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং। যে চ্যালেঞ্জ ফ্রান্সের অপেক্ষায়। ১৯৬২ সালে ব্রাজিল ছাড়া কোন দল পরপর বিশ্বকাপ জেতেনি।

পাভার্ড: আমরা জানি, বিশ্বকাপ জেতা সহজ নয়। কারণ সব দল আমাদের হারাতে উন্মুখ হয়ে আছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, সব দল আমাদের দিকে বন্দুক উচিয়ে থাকবে। আমাদের কেবল প্রতিপক্ষের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোন কথা হবে না- শুধু নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে, বিশ্বকাপ জিততে সর্বোচ্চটা দিতে হবে। বিশ্বকাপে যাওয়া মানে জিততে যাওয়া। নয়তো ঘরে বসে থাকাই ভালো।


গত বিশ্বকাপের তরুণ এমবাপ্পে এবার ফ্রান্সের বড় তারকা। ছবি: ফাইল


ফিফা: বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘ডি’ তে আপনাদের প্রথম ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এরপর ডেনমার্ক এবং তিউনিসিয়া।

পাভার্ড: কোনটাই সহজ ম্যাচ নয়। সকলেই বলছে ফ্রান্স শেষ ১৬ তে বসে আছে, কিন্তু ম্যাচগুলো আগে খেলতে হবে। ২০১৮ বিশ্বকাপে আমরা গ্রুপ পর্বে খুব ভালো ফুটবল খেলিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কারণ টুর্নামেন্টে গড়াতেই আমরা বেশি ভালো করেছি।

ফিফা: ২০১৮ এবং এবারের ফ্রান্স দলের মধ্যে পার্থক্য কী দেখছেন?

পাভার্ড: পার্থক্য হলো আমরা সকলেই চার বছর করে বুড়িয়ে গেছি এবং দলটা বদলে গেছে। আমার নিজেকেই তো একটু বুড়ো মনে হচ্ছে। যদিও আমি কেবল ২৬। একদম তরুণ কিছু খেলোয়াড় এসেছে। আবার মাতুইদি, স্টিভ মানদান্দা দলে নেই। কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া তবে তরুণদের নিয়ে দলটা অসাধারণ।

ফিফা: অন্য পরিবর্তন হলো ফ্রান্স দলে বেনজেমা ফিরেছেন।

পাভার্ড: আগে আমি করিমকে চিনতাম না। তাকে চিনতাম শুধু টিভিতে, অনেক অনেক গোল এবং শিরোপা জয়ের জন্য। তার সঙ্গে পরিচয়ের পর, তিনি যেভাবে সকলের সঙ্গে কথা বলেন তাতে করে দেখলাম তিনি সত্যিকারের একজন পেশাদার খেলোয়াড়। আমার চোখে তিনি এখন বিশ্বের সেরা নাম্বার নাইন। যখনই ফ্রান্সের হয়ে তিনি খেলেছেন পারফর্ম করেছেন।

 

 

কৃতজ্ঞতা: সমকাল

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত