প্রলয়ঙ্ককরী

ইতিহাসের প্রলয়ঙ্ককরী দশটি ভূমিকম্প

Reading Time: 3 minutes

তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে, যুদ্ধ ফেলে মানবতার কাছে হার মেনেছে রাশিয়া, ইউক্রেন। পত্রিকায় কিংবা ফেসবুকে বারবার খবর আসছে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা প্রতিক্ষণ। আসুন জেনে নিই ইতিহাসের প্রলঙ্কারী ১০ টি ভূমিকম্পের কথা। উল্লেখ্য এক্ষেত্রে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা বিবেচনা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করলে হয়তো তালিকাটা অন্য রকম হতে পারত।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-১০

ইতিহাসের প্রলয়ঙ্ককরী এ ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছিল আসাম ও তিব্বতে ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্টে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৬। দিনটি ছিল ভারতের তৃতীয় স্বাধীনতা দ্বিবস, কিন্তু আসামবাসীর জন্য ভয়ঙ্কর স্মৃতি হয়ে রয়েছে আজও ।এ ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধ্বসে আসামে ১৫২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। অন্যদিকে তিব্বতে ৭০ টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ভূমিকম্পের প্রভাব চলেছিল প্রায় আট দিনের মত। ভূমিকম্পের পরপরই শুরু হয়েছিল বন্যা। ফুলে ফেপে উঠেছিল নদীগুলো। সুবানশিরি নদীর সাত মিটার উচু ঢেউ আছড়ে পড়েছিল পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে। ভূতত্ত্ববিদরা জানান, এ ভূকম্পনের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, ইংল্যাণ্ড ও নরওয়ের মত দূরবর্তী দেশগুলোর হ্রদের পানিতেও এর ধাক্কা লেগেছিল।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০৯

ইতিহাসের প্রলয়ঙ্ককরী এ ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছিল লুইস ফিগো আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশ পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে।৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি লিসবনে আঘাত হেনেছিল ১৭৫৫ সালের ১ নভেম্বরে। পর্তুগাল ছাড়াও উত্তর আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ, ফ্রান্স এবং ইতিলিতেও এর প্রভাব পড়েছিল।ভূমিকম্পের পরপরই খাঁড়ার ওপর বিষফোড়ার মত ধেয়ে এসেছিল সুনামী আর অগ্নিকাণ্ড। এই ভূমিকম্পে লিসবন শহরে এক চুতুর্থাংশ মানুষের মৃত্যু হয়।তবে এ ভূমিকম্পের ভীন্ন একটি প্রভাব পড়েছিল তৎকালীন পুরো ইউরোপ। এনলাইটমেন্টের যুগ চলছিল তখন ইউরোপে।লিসবনের মানুষের ভাগ্যে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা চরমভাবে নাড়া দেয় ইউরোপীয় সাহিত্যিক, দার্শনিক,চিত্রকার, বিজ্ঞানীদের। ফরাসী দার্শনিক ভলতেয়ার ভূমিকম্পকে নিয়ে একটি কবিতা লেখে ফেলেন। বিজ্ঞানীরা নতুন করে ভাবা শুরু করেন, পৃথিবীর গঠন নিয়ে।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০৮

প্রলয়ঙ্ককরী এ ভূমিকম্পটি ১৯০৬ সালের ১৩ জানুয়ারী আঘাত হেনেছিল ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার উপকূলে।রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৮। ভূমিকম্পের ফলে সুনামী সৃষ্টি হয়েছিল যা ১২ ঘন্টার মত স্থায়ী হয়েছিল। সুনামীর প্রভাব পড়েছিল মধ্য আমেরিকা থেকে শুরু করে সানফ্রান্সিসকো শহর পর্যন্ত। এ ভূমিকম্পে আনুমানিক ১৫০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০৭

১৬ শতক থেকে করে এ পর্যন্ত অনেকগুলো ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়েছিল চিলিবাসী। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রলয়ঙ্করী ভূমিকেম্প হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে।বলাবাহুল্য এ ইতিহাসটা নিশ্চয় চিলিবাসীর জন্য সুখকর নয়। সর্বশেষ চিলিবাসী প্রলয়ঙ্ককরী ভূমিকম্পের শিকার হয় ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীতে।রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৮.৮।এর ফলশ্রুতিতে ৫২১ জন মানুষের প্রাণহানী ঘটে আহত হয় ১২,০০০ এর মত মানুষ, ঘরছাড়া হয় আটলক্ষ মানুষ। ভূমিকম্পের ফলাফল পড়েছিল চিলির অর্থনীতির উপরেও। ভূমিকম্পের ফলে বছর শেষে ৩০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখোমুখি হয় দেশটি। এক বিংশ শতাব্দীর পর এটা ছিল অন্যতম প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প, যার আঘাতে বড় বড় সব আধুনিক স্থাপনা ভেঙ্গেপড়ে খেলাঘরের মত। প্রযুক্তির শীর্ষে উঠার পরও মানুষ আরো একবার অসহায় হয়ে পড়ে প্রকৃতির কাছে।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০৬

পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম প্রলয়ঙ্করী এ ভূমিকম্পটি ২৬ জানুয়ারী ১৭০০ সালে। ভূমিকম্পটি আাঘাত হেনেছিল উত্তর প্রশান্ত মহাসাগার সংলগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে।রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৯। এ ভূমিকম্প সম্পর্কে এর থেকে বেশি কিছু জানা যায় নি।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০৫

পৃথিবীর ইতিহাসের প্রলয়ঙ্ককরী এ ভূমিকম্পটিও সংঘটিত হয়েছিল চিলির আরিকা নামক স্থানে ১৮৬৮ সালের ১৩ আগস্টে।তবে সে সময় আরিকা পেরুর অন্তর্ভূক্ত ছিল। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৯, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও ছিল ব্যাপক। প্রশান্ত মহাসাগরের বেসিনে সৃষ্ট এ ভূমিকম্পে দক্ষিন আমেরিকার বেশ কয়েকিট দেশ আক্রান্ত হয়েছিল। সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, প্রান হারায় ২৫ হাজারেরও বেশি লোক।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০৪

১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর এ ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল কামশ্চটকায়।ভূমিকেম্পের মাত্রা ৯ হলেও এ ভূমিকম্পের ফলে কোন প্রাণহানী ঘটেনি।যদিও ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল রাশিয়ার উপকূলের নিকটে,তারপরেও যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের ব্যপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০৩

আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ২০০৪ সালের সুনামী। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রার উপকূলে ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে এ সুনামীর সৃষ্টি হয়। সুনামীর আঘাত লেগেছিল এশিয়া ও আফ্রিকার ১৪ টি দেশে, মৃত্যু হয়েছিল দুই লাখ ত্রিশ হাজারেরও বেশি সংখ্যক মানুষের। এ ভূমিকম্পের সবচেয়ে বড় শিকার ছিল ইন্দোনেশিয়া। সুনামীতে নিহত দুই লাখ ত্রিশ হাজার মানুষের মধ্যে এক লাখ সত্তর হাজার মানুষ ছিল ইন্দোনেশিয়া নাগরিক। প্রচুর মানুষের মৃত্যু ছাড়াও ২০০৪ সালের সেই সুনামী উপকূলবর্তী মৎসজীবী মানুষদের জীবনে বয়ে এনেছিল বিভীষিকা।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০২

পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ ভূমিকম্পটি ২৮শে মার্চ ১৯৬৪ তে আঘাত হেনেছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড নামক এলাকায়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯.২।এ ভূমিকম্পের আঘাতে আলস্কা উপসাগরের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, ওই অঞ্চলের অনেক দ্বীপের উচ্চতা ১১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যায়। ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল ১২৮ জন, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ৩১১ মিলিয়ন ডলারের মত। ভূমিকম্পের মাত্রা ব্যাপক হলেও ওই অঞ্চলের মানুষের সংখ্যা কম থাকায় প্রাণহানীর সংখ্যাও ছিল কম।

সবেচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প-০১

পৃথিবীর ইতিহাসের সবেচেয়ে ভয়ঙ্করতম এবং শক্তিশালী ভূমিকম্পটি সংহটিত হয়েছিল চিলিতে। ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি চিলিতে আঘাত হেনেছিল ১৯৬০ সালের মে মাসের ২২ তারিখে।ভূমিকম্পের প্রভাবেই চিলির দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছিল ৪ হাজার ৪৮৫ জন এছাড়া আহত হয়েছিল আরো অনেকে। গৃহহীন হয়েছিল দুই লাখেরও বেশি মানুষ।ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভূমিকম্পের পরবর্তী সুনামীর বড় অঙ্কের ক্ষয়ক্ষতী করেছিল। সাভেডরা নামক একটি বন্দরকে রীতিমত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল সুনামীর আঘাতে।একই সুনামীর আঘাতেই জাপান ও ফিলিপাইনে ১৭০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

তথ্যসূত্র : দি গার্ডিয়ান অনলাইন, ভয়েস অফ আমেরিকা ওয়েবসাইট ও ইয়াহু নিউজ

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>