| 19 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

এখানে আমি আমার প্রেমের কথা বলতে চেয়েছি । ইকবাল তাজওলী

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট
আপনারা আমাকে একটি প্রেমের গল্প বলতে বলেছেন। আমি অবশ্য মনে করেছিলাম গল্পের পেছনের গল্প বলব।
থাক, আপনারা যখন বলছেন আপনাদের কথা-ই রাখছি। আমি অবশ্য প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি।
এই গল্পটি হয়ত কোনো একটি লিটলম্যাগে পাঠিয়ে দেব। অথবা ওয়েবম্যাগে। অথবা অন্য কোথাও।
আপনাদের মনোযোগ কামনা করছি।
সিএনজি অটোরিক্সা থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছি নয়টার বড়লেখার বাস ধরব বলে। বছর তিনেক ধরে আমার এই লেফট-রাইট, লেফট-রাইট পর্ব চলছে। আরও কত বছর যে চলবে, তা যদি জানা থাকত তাহলে মনে হয় ভালোই হতো । অবশ্য সমস্যা নেই। যতদিন, যতবছর চলে, চলুক। ভালো-ই তো আছি। নিজ বাড়িঘর থেকে খেয়ে-পরে কলেজ করছি। যেটা অনেকে চিন্তাই করতে পারে না। চিন্তা কী, ভাবনার মধ্যেই আনতে পারে না।
আমি আবার নেহাত, নিপাট ভদ্রলোক। এই যে যাওয়া-আসা করি গাড়িঘোড়াতে, অপরিচিত কারও সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা হয় না । আসলে কথা বলি না প্রয়োজন ছাড়া। নতুন করে পরিচিত হতে চাই না এই আরকি। এই তো বেশ আছি। ভালো-ই তো আছি। আর আমার সঙ্গে বিমান রায় আছেন। আজ অবশ্য বিমান রায় নেই । বিমান রায় সঙ্গে থাকলে আর কি কিছু লাগে? গল্পে গল্পে সময় কাটে। হায়রে রাজ্যির গল্প ! এরই মধ্যে আবার ঘুমের রাজ্যেও বিচরণ চলে। আমি অবশ্য তেমন একটা ঘুমাইও না। যাইহোক, দেড়ঘণ্টার জার্নি তো আর চাট্টিখানি কথা না। এই টাইমলি আসো, এই সিট দখল কর, সিট আবার পেছনে হলে হবে না, সম্মুখে হতে হবে, পারলে বামদিকে হতে হবে। বাপরে কত হ্যাপা! একজনকে তো বাসস্ট্যান্ডে আসতে হয়। বেশিরভাগ সময় বিমান রায়-ই আসেন।
স্পিডব্রেকারে ওই বাস থেকে কে নামল? তিন্নি না? গেটআপে তো মনে হচ্ছে তিন্নি-ই। তিন্নি আবার এদিকে কোত্থেকে এলো! তাও আবার স্বামী সঙ্গে নেই।
ওর সঙ্গে যখন আমার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল, অথবা, আমার সঙ্গে ওর যখন খুব-ই ঘনিষ্ঠতা ছিল, যে কথাই বলি না কেন, তখন কী একটা প্রসঙ্গে একদিন ও বলেছিল, ওর পিসি না মাসির বাড়ি হেতিমগঞ্জ না কোনদিকে। মনে হয় ওই হেতিমগঞ্জের দিক থেকেই ও আসছে।
তো এই তিন্নিদের বাড়ি আর আমাদের বাড়ি কিন্তু বলা যায় প্রায় লাগোয়া। বলা যায় কী, আসলে বাস্তবতা তো অস্বীকার করতে পারি না। আমাদের বাড়ি পেরিয়ে এগিয়ে গিয়ে আরও দু-দুটি বাড়ি পেরিয়ে সাকোটা পেরুলেই তিন্নিদের বাড়ি শুরু হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় এই কারণে বলছি যে, ওরা এখানকার একেবারে স্থানীয় বাসিন্দা। ওদের শিকড় এখানে। তাই শহরতলী হলেও বংশানুক্রমে বেশ বড়োসড়ো বাড়িতে ওরা বসবাস করছে।
আর আমাদের এখানে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু হয়েছে সত্তরের দশকের শেষের দিকে। দেশভাগের শিকার হয়ে এ ভূখন্ডে দাদুকে সঙ্গে নিয়ে আসা আমার দাদাভাই তাঁর সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি বানিয়ে তাঁর একমাত্র ছেলের জন্যে একটা ঠিকানা করে গেছেন। সেই হিসেবে তিন প্রজন্ম ধরে আমাদের এ বাড়িতে বসবাস চলছে। তারপরও আমরা স্থানীয় না ! অন্যকিছু!
তো আমার দাদাভাইয়ের একমাত্র ছেলে আমার বাবার একটা স্বভাব ছিল, ছিল কী, এখনও সেই স্বভাবটি বহাল তবিয়তে তাঁর মধ্যে অবস্থান করছে। স্বভাব কি সহজে বদলানো যায়? যায় না। আর সেটি হচ্ছে, বাবা যাকে তাকে যখন-তখন ভাই-ব্রাদার-বোন-পিসি-মাসি বানাতেন! এবং সিরিয়াসলি সে সম্পর্ক রক্ষা করতেন।
বাবা আর তিন্নির মা, সরি, তিন্নির মা বলা ঠিক হলো না। আমাদের পারিবারিক শিক্ষা এরকম না। আমাদের পারিবারিক শিক্ষা হচ্ছে, যাকে যখন যে নামে ডাকো, ব্যতিক্রম ছাড়া সর্বাবস্থায় তাকে সে নামেই ডাকতে হবে। তো যে কথা বলছিলাম, বাবা আর তিন্নির মা অর্থাৎ আমাদের শেফালি পিসি কলিগ ছিলেন; একই অফিসে চাকরি করতেন। এবং বাবা তাকে বোন বানিয়ে ছিলেন।
সেই হিসেবে তিন্নিদের বাড়িতে আমাদের অবাধ যাতায়াত ছিল। আমাদের বাড়িতেও ওরা অবাধে আসত। ধর্ম এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। যেটা আজকাল হর-হামেশাই যত্রতত্র বেশ দেখা যাচ্ছে।
তো এই শেফালি পিসি কিন্তু আবার সঙ্গীত চর্চা করতেন। বাংলাদেশ বেতারের অ্যানলিস্টেড নজরুল সঙ্গীত শিল্পীও ছিলেন। মাসে একবার তাঁর কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত ইথারে ভেসে বেড়াতো। শুক্রবারে বাড়িতে সুরেলা কণ্ঠ নাম দিয়ে গানের একটি স্কুলও পরিচালনা করতেন।
এমনিতে তো পিসতুতো ছোটোবোন হিসেবে তিন্নির সঙ্গে একটা সম্পর্ক ছিল, তার ওপর আবার সেই সুরেলা কণ্ঠে বছর দুয়েক লেফট-রাইট, লেফট-রাইট করতে করতে আমার আর ওর মধ্যে একটা চমৎকার বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গেল। আর সেই বোঝাপড়ার সুবাদে ও আমাকে দিয়ে এটা-ওটা নানান কাজ করিয়ে নিত । আমিও কী জানি কেন যে না করতে পারতাম না! এখনও কি পারি? আর তখন তো ছিল অ্যাডোলেসেন্স পিরিয়ড। সবকিছুতে অবাক বিস্ময়ে বিস্ময়াভূত হয়ে যাওয়ার সময়।
তো সেদিনের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। ও তখন এইট আর আমি ক্লাস টেনে অধ্যয়ন করি। বাবা কী একটা কারণে মনে হয় কোনো একটা ফাইল-টাইল দিয়ে শেষ বিকেলের দিকে আমাকে শেফালি পিসির কাছে পাঠিয়েছিলেন। ফিরব যখন ও মা দেখি,চরাচরে তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে। শেফালি পিসি বললেন,‘একটু দম নিয়ে যারে বেটা। আশ্বির মাসের বৃষ্টি, এই আছে এই নাই! একটু দম নিয়ে যা।’
ও তখন ওর খুরতুতো বোনের সঙ্গে কী একটা বিষয় নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিল, তারপর আমার দিকে ধেয়ে এসে পিসির সম্মুখেই বলল,‘শাওনদা, শোনো, আমাকে কিন্তু মাসুদরানা পড়াতে হবে। কীভাবে কী, আমি জানি না। আমাকে এনে দেবে।’
তখন পর্যন্ত মাসুদরানা কী, আমার রানা-ই আমি জানতাম না! বইপড়ুয়া বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। ওকে তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না, প্রেস্টিজ পাংচারড হয়ে যাবে! বন্ধুরা হিন্টস দিয়ে বলল,‘বন্দরবাজার হকার্স পয়েন্টে যাবি, হকার ভাইদের জিজ্ঞেস করবি, তাহলেই কেল্লাফতে।’
তারপর থেকে একেবারে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগ পর্যন্ত কী একটা অমোঘ টানে প্রতি পনেরো দিন অন্তর আমার কেল্লাফতে করে দেয়া্ অব্যাহত ছিল!
পরে তো আমি আমার নিজ শহরেই থাকলাম না। ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পড়ব বলে প্রাণের এই শহর ত্যাগ করে সুদূর চাটগায়ে নিজেকে সমর্পণ করলাম। হাটহাজারির ওই পাহাড় ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসে ক্লাস, হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা আর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কাম ক্লাসমেট মৌরির সঙ্গে খুনসুটিতে দিনমান কেটে যেতে লাগল। ছুটিছাটায় বাড়িঘরে এলেও পুরনো বন্ধুবান্ধব, আর ওই মামাতো ভাইয়ের বাড়ি, ওই খালাতো ভাইয়ের বাড়ি করতে করতেই চোখের পলকে সময়টাও কেটে যেত। তিন্নিদের বাড়ি যাওয়া হতো না; আর তিন্নির সঙ্গেও দেখা হতো না। ওই সময়ে অবশ্য ওদের বাড়ির পেছনের যে মেঠোপথ, ওই মেঠোপথটি ডেভোলাপ হয়ে গিয়েছিল, ওরা শর্টকাট ওই পথটি ব্যবহার করত, ফলে রাস্তাঘাটেও ওর সঙ্গে দেখা হতো না।
তখন অবশ্য আমি দোটানার মধ্যে দিয়ে সময়টা অতিক্রম করছিলাম। ক্যাম্পাসে মৌরি আর নিজ এলাকাতে তিন্নি। যদিও তিন্নিকে তখন পর্যন্ত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারিনি। শেষ-মেশ দেখলাম, চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয় কথাটি আমার ক্ষেত্রে সত্যি হয়ে দাঁড়ালো । মৌরির জয় হলো। জয় হলেও হলো কী! ওকেও তখন পর্যন্ত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারিনি। অবশ্য বলার জন্যে ক্ষেত্র তৈরি করছিলাম আস্তে আস্তে তখন।
সেকেন্ড ইয়ারে উঠে যখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি, শোনা যাচ্ছে মাস তিনেক বাদেই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে, ওই সময়ে তিন্নির দিদির ঠাকুরপো আমাদের ডিপার্টমেন্টের বড়োভাই তপনদা একদিন আমাকে বললেন,‘ তিন্নির বুঝেছো, কী একটা অসুখ ওর হার্টে বাসা বেধেছে । দিন সাতেকের ভেতর ওকে কলিকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অপেন হার্ট সার্জারির জন্যে।’
মনটা ভীষণ ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
কী করব ? দিন দুয়েকের জন্যে কী ক্যাম্পাস ত্যাগ করব? সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। সু-মন না কু-মন কী একটা আছে না, সেটি-ই শেষ পর্যন্ত নিজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ফেলল। বলল,‘ বাড়িতে যাচ্ছ, যাও। কিন্তু গিয়ে কী লাভ? তুমি গেলেও যা, না গেলেও তা। তুমি তো আর অপেন হার্ট সার্জন না। নাকি তুমি? তুমি-ই সার্জারির অধ্যাপক?
নিজের যুক্তির কাছে নিজেই হেরে গেলাম।
পরীক্ষা শেষ হয়ে এলে মাস খানেকের জন্যে পাততাড়ি গুটিয়ে বাড়িতে এসে রেস্ট-টেস্ট নিয়ে পরদিন ফুরফুরে মেজাজে তিন্নিদের বাড়িতে যাওয়ার জন্যে ড্রেসআপ করছিলাম, বাবা বাগড়া দিয়ে বসলেন।
বললেন,‘পেনশন তুলতে যাবরে। আমাদের দুইটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প এনে দে। চারমাস হয়ে গেছে।’
জানি, বাবা-মা চারমাস অন্তর অন্তর পেনশন তোলেন। আমাদের পেনশন তুললেও যা, না তুললেও তা। আমাদের কোনো আর্থিক দীনতা নেই। আমাদের বড়োভাই আছেন অস্ট্রেলিয়াতে। বড়োভাই প্রচুর টাকাপয়সা পাঠান। ওখানে ডাক্তারি করেন বড়োভাই। ভাবিও অস্ট্রেলিয়ান। কাজেই, পেছন থেকে ‘তোমার কী কোনো ভূত-ভবিষ্যত নেই, সব-ই দিয়ে দিচ্ছ’ বলে গুঁতোগুঁতি করারও কেউ নেই।
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
টিলাগড় সোনালী ব্যাংকের নিচের ওই দোকানটি থেকে গোটা দশেক রেভিনিউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে পার্কিং করে রাখা গাড়ির দিকে যখন ফিরছিলাম, ‘শাওনদা’ আওয়াজে মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠল।
ও মা দেখি, গাড়ির কাছেই তিন্নি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
কাছে যেতেই বলল,‘এই শাওনদা। এই ডুমুরের ফুল! তোমার কি কোনো বোধ আছে? আছে কোনো কমনসেন্স?’
আমি কী বলব। সরি বলে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। বললাম,‘তপনদার মাধ্যমে খবর পেয়েছি। পরীক্ষা ছিল তাই আসতে পারিনি।’
ও তারপর ওর স্বরতন্ত্রীতে আবেগ ঢেলে এমনভাবে কথা বলল, শুনে আমার মনে যত আগডুম-বাগডুম ছিল,সবকিছু, হ্যাঁ, সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে গিয়ে একেবারে তাৎক্ষণিক ধুলিসাৎ হয়ে গেল।
আর ও তো সুন্দরী। সুন্দরী বললে ওর রূপের বর্ণনা দেয়া কম হয়ে যাবে, এখানে ওর ক্ষেত্রে জুতসই একটা শব্দ হচ্ছে হুরপরি বা হুরি। আর বছর দুয়েকের মধ্যে ওর রূপ যে এভাবে জেল্লা ছড়াবে তা কে জানত!
আমাকে কিছুই করতে বা বলতে হলো না। ওই গিয়ে দরোজা খুলে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসল।
নায়করাজ রাজ্জাক আমি তখন আমার শাবানাকে নিয়ে বালুচর-শাহিইদগাহ-চৌকিদেখি হয়ে রাজপথ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছি, আর,‘আমার গান তুমি শুনবে, জানি শুনবে, যদিওবা আজ নয় অন্য সেদিন’ গানটি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গাইছি।
তারপর আমরা আর থেমে থাকিনি। ইভেন ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও ওর আমার মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। ও সরাসরি আমার হলের ঠিকানায় চিঠি লিখত, আর আমি ভায়া ধরে ওর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতাম, এবং সময় ও সুযোগ মতো ফোন-টোনও কায়দা করে করতাম।
তারপর তো আমার বাড়ি আসাই বেড়ে গেল। স্পষ্ট মনে আছে, আগে যেখানে ছুটিছাটায় বাড়িতে ফিরতে চেষ্টা করতাম, ওর সঙ্গে সম্পর্ক দৃশ্যমান হওয়ার পর মাস দুয়েকও পেরুতো না, হুড়মুড়িয়ে রাতবিরাতে একদিন বা দুদিনের জন্য বাড়ি ফিরতাম। এবং অতি সঙ্গোপনে অভিসার চালাতাম। এখানে অভিসার বলতে আমি কিন্তু কোনো অশ্লীল কিছুর ইঙ্গিত করছি না, যদিও শব্দটির ভেতর অশ্লীলতার ছোঁয়া বেশ ভালোভাবেই লেপটানো-সেপটানো রয়েছে।
তো আপনি প্রেম-পিরিতি- ভালোবাস-টালোবাসা করবেন, অথচ, আপনার চরাচরের জন মানুষেরা কানাকানি-জানাজানি করবে না, তা তো হয় না। তো আমাদের ক্ষেত্রে এই কানাকানি জানাজানি হয়ে মাইল ছয়েক পাড়ি দিয়ে বাড়ি পৌছতে পৌছতে আঠারো মাসে বছর হিসেবে বছর দুই অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। আর ততদিনে আমি ইউনিভার্সিটির পাঠ-টাঠ চুকিয়ে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বিসিএস দিয়ে সরকারি কলেজে যোগদানের অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম।
ওই সময়ে হঠাৎ একদিন আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেফালি পিসির মৃত্যু তিন্নির ভাবনা-চিন্তার জগতকে ওলট-পালট করে দিয়ে একেবারে বিধ্বস্ত করে দিয়ে গেল।
তিন্নি দায়িত্ববান এবং পরিবার সচেতন হয়ে উঠল। এবং একদিন সময় ও সুযোগ বুঝে ভিন্ন সম্প্রদায়ের কারও সঙ্গে কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করলে কী কী বিপর্যয় পারিবারিক জীবনে নেমে আসতে পারে তা পুঙ্খানুপঙ্খভাবে বর্ণনা করে শোনালো।
আমি সহমত পোষণ করলাম। এবং ওকে ভালোবাসি বলেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানালাম।
না, ও তিন্নি না। তিন্নির ইমিডিয়েট ছোটোবোন আন্নি।
রিক্সায় চড়ে বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছি। বড়লেখার বাস মিস হয়ে গেছে। জীবন থেকে কত কিছুই না মিস হয়ে যায়। আর এটি তো বড়লেখার বাস!
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত