Categories
তৃতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা: ফকির ইলিয়াস এর একগুচ্ছ কবিতা
আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
মেঘযাপনের ঘ্রাণ
দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনাগুলোকে কেউ কেউ
হার্টএ্যাটাক বলে!আর যারা ঘুমিয়ে পড়ে কাউকে
না বলেই-
যারা আর কোনোদিন জাগতে পারে না,
তাদেরকেও মৃত ঘোষনা করে ডাক্তার।
পোস্টমর্টেমের পর সমাহিতের অনুমোদন দেয় পুলিশ
দেহটির শেষকৃত্যের পর, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে কিছু
প্রার্থনাও করে। কেউ কাঁদে, কেউ হাসে!
ঘুমিয়ে গেলে মানুষের আর পৃথিবীর কথা মনে থাকে
না।বলতে পারে না,কত বার শয্যা পরিবর্তন করেছিল,
কতবার যাপন করেছিল মেঘের ঘ্রাণউৎসব। কতবার
পথ ভুলে গিয়ে হাজির হয়েছিল
সুমিত্রা সেনগুপ্তের বাড়িতে!
মূলত ঘ্রাণ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। ঘুমিয়ে গেলে আর
ঘামঘ্রাণে ডুবে যাওয়ার নেশা,
মানুষকে কাবু করতে পারে না।
হেমন্তে সংরক্ষিত জ্বর
জ্বর এলেই শরীরে কাঁপন উঠবে- এমন কোনো
কথা নেই।স্পর্শ পেলেও প্রাণ কেঁপে উঠতে পারে।
অথবা সূর্যের দিকে তাকালে-
জলের ছায়ায় নিজের মুখ দেখলে-
আর প্রেমিকার আঁচলে জমা রাখলে ভোরবিদ্যা-
কারও হৃদয়ে অনুভূত হতে পারে ভূকম্পন।
হেমন্তের হাওয়াকে জড়িয়ে ধরে যে কিষাণ
ফসলের ঢেউ গোণে,
আমি তাকেই বলি শ্রেষ্ঠ ঋতুরক্ষক-
যার জন্যে সংরক্ষিত থাকে মাটির প্রতিটি প্রেমকণা।
বিজ্ঞানশিক্ষার বারুদঘর
‘নিশ্বাস হচ্ছে মূলত স্রষ্টার দেয়া দাওয়াই’-
বলতে বলতে শিক্ষক একটু থামেন।
নাক বন্ধ হয়ে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা
আরেকবার হা করে দম নেয়ার চেষ্টা করে।
‘অক্সিজেন বলতে পৃথিবীতে কিছুই নেই!’
‘বুঝলে হে!’
‘মানুষের মাথা একটু ঘুরলেই তার মনে হতে পারে
পৃথিবী ঘুরছে!’
বলতে বলতে শিক্ষক ডাস্টার দিয়ে মুছতে থাকেন
কালো ব্ল্যাকবোর্ড।
ততক্ষণে মস্কো থেকে নিক্ষেপিত একটি শক্তিশালী
মিসাইল, কিয়েভ থেকে কক্ষচ্যুত হয়ে
ওয়াশিংটনের দিকে ছুটতে শুরু করেছে!
যুগলবন্দি বীজ
উত্তরে একটি ছায়া পড়ে আছে। আরেকটি ছায়া
পড়ে আছে পশ্চিমে। পূব ও দক্ষিণ;
আপাতত খালি।যেখানে কোনো পাতা নেই,
বৃক্ষ নেই,হাওয়া নেই ।
একজন হাওয়াব্যবসায়ী খুব সাবধানে এসে
খালি জায়গাটিতে দাঁড়ালো। তারপর তার
পকেট থেকে দুটি বীজ ছড়িয়ে দিল মাটিতে।
জগতে আমরা হিংসা ও বিচ্ছেদ বলে যে দুটি
গ্রহকে চিনি-
এগুলো সেই বীজ থেকেই
জন্ম নেয়া দুটি ছায়াদানব!
কবি, প্রাবন্ধিক,গল্পকার।
প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২২। তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়ায়।
স্থায়ীভাবে বসবাস করেন নিউইয়র্কে।