বনলতা সেন । জীবনানন্দ দাশ—(বনলতা সেন)
বনলতা সেন জনপ্রিয়তম বাংলা কবিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কবিতাটির রচয়িতা বিংশ শতাব্দীর আধুনিক বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ। কবিতাটি প্রধানত রোমান্টিক গীতি কবিতা হিসেবে সমাদৃত। কবিতাটি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু তার কবিতা পত্রিকায়। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রকাশিত কবিতার পৌষ, ১৩৪২ সংখ্যার মাধ্যমে বনলতা সেন সর্বপ্রথম পাঠকের হাতে এসে পৌঁছায়। কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা ১৩৪৯, ইংরেজি ডিসেম্বর ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তার বনলতা সেন নামক তৃতীয় কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন। কবিতা-ভবন কর্তৃক প্রকাশিত এক পয়সায় একটি গ্রন্থমালার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে। প্রকাশক ছিলেন জীবনানন্দ দাশ নিজেই। ১৬ পৃষ্ঠার প্রথম সংস্করণে কবিতা ছিল মোট ১২টি। প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছিলেন শম্ভু সাহা।[১] পরবর্তীকালে জীবনানন্দ দাশ ১৯৪৪ এ প্রকাশিত তার চতুর্থ কাব্য মহাপৃথিবীতে উক্ত বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থের সকল কবিতাই অন্তর্ভুক্ত করেন। অতএব, মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থেরও প্রথম কবিতা ছিল “বনলতা সেন”। কবির জীবদ্দশায় বাংলা শ্রাবণ, ১৩৫৯, ইংরেজি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার সিগনেট প্রেস থেকে বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণটি প্রকাশিত হয়। ৪৯ পৃষ্ঠার বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত সংস্করণে আগের ১২টি কবিতার সাথে আরও ১৮টি কবিতা যোগ করে মোট ৩০টি কবিতা প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছিলেন সত্যজিৎ রায় ও মূল্য ছিল ২ টাকা। সিগনেট সংস্করণের প্রকাশক ছিলেন দিলীপকুমার গুপ্ত।[১] পরবর্তীতে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে প্রকাশিত জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটিতেও কবিতাটি সংকলিত হয়। এছাড়া আবু সয়ীদ আইয়ুব এবং হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের যৌথ সম্পাদনায় ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত আধুনিক বাঙলা কবিতা শীর্ষক গ্রন্থেও কবিতাটি সঙ্কলিত হয়েছিল। কোলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে সুরক্ষিত পাণ্ডুলিপিসমূহের ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ চিহ্নিত ৮ নং খাতায় এ কবিতাটি আছে। তাই, পাণ্ডুলিপির হিসেবে, ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে কবিতাটি লিখিত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়।
ইরাবতীর পাঠকদের জন্য পুনর্পাঠ সম্পাদকের পছন্দে আজ থাকছে বনলতা সেন কবিতাটি।
কাব্যগ্রন্থ বনলতা সেন
কবি, শিক্ষাবিদ। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রামে। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুলশিক্ষক ও সমাজসেবক। তিনি ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি।
জীবনানন্দ ছিলেন বাংলা কাব্যান্দোলনে রবীন্দ্রবিরোধী তিরিশের কবিতা নামে খ্যাত কাব্যধারার অন্যতম কবি। পাশ্চাত্যের মডার্নিজম ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গীয় সমাজের বিদগ্ধ মধ্যবিত্তের মনন ও চৈতন্যের সমন্বয় ঘটে ওই কাব্যান্দোলনে।
জীবনানন্দের কাব্যচর্চার শুরু অল্পবয়স থেকেই। স্কুলে ছাত্রাবস্থায় তাঁর প্রথম কবিতা ‘বর্ষ-আবাহন’ ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় (বৈশাখ ১৩২৬/এপ্রিল ১৯১৯) প্রকাশিত হয়। মূলত কবি হলেও তিনি অসংখ্য ছোটগল্প, কয়েকটি উপন্যাস ও প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলি হচ্ছে ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), রূপসী বাংলা (রচনাকাল ১৯৩৪, প্রকাশকাল ১৯৫৭), বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)। এছাড়াও বহু অগ্রন্থিত কবিতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। এছাড়া জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটিও ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৪) লাভ করে। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।