| 28 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-২২) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-২২।


 

ফাইনাল খেলাটা হবে নাকি  তারা যেখানে খেলে সেই মিল মাঠেই। মৈনাকস্যাররা অনেক চেষ্টা করে ফাইনাল এখানে করার ব্যবস্থা করেছেন। এমন মাঠ এ অঞ্চলে আর কোথাও নেই।  এ মাঠটা  ওই অঞ্চলের প্রাণ। ফাইনাল হবে বলে মাঠটাকে সাজানো হচ্ছে। ড্রেসিং চলছে দিনরাত। রাজের খুব ভাল লাগছে। মাঠটা কতদিন খারাপ অবস্থায় পড়ে ছিল। তা পালটে সুন্দর করা হচ্ছে।স্যারের মুখে, তীর্থজেঠূর মুখে সে এ মাঠের অনেক গল্প শুনেছে। এই মাঠে বড় বড় প্লেয়াররা খেলে গেছেন।তখন মাঠে খেলা দ্যাখার জন্য বিরাট ভিড় হত। এবারও কয়েকজন নাম করা প্লেয়ারদের আনার চেষ্টা করা হচ্ছে ফাইনালের দিনে। প্রধান অতিথি হিসেবে  এক বিখ্যাত গোলকিপারকে আনা হবে।শুভাশিস মুখার্জী। ইন্দ্রদার চোখে সেরা গোলকিপার তিনি। ইন্দ্রদাকে নাকি শুভাশিষ মুখার্জী টিপসও দিয়েছেন।  এলাকায় তাকে নিয়ে সবার টান আছে। কারন তিনি এলাকার লোক। রাজদের আরো বেশী থাকার কথা। তিনি  রাজদের স্কুলেরই  প্রাক্তন ছাত্র।

সে যাই হোক, অনেকদিন বাদে স্কুল খেলায় নাম করতে চলেছে তেমন একটা হাবভাব ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যেও টের [পাওয়া যাচ্ছে। পাঁচটা কথা বললেই খেলার কথা উঠে আসছে। সেদিন বাবার কথা শুনেও রাজ অবাক হয়ে গেছিল। বাবা খাবার টেবিলে বসে হঠাৎ ছোটমামাকে বলছিলেন, “কি ব্যাপার বল তো? এখন তো ফুটবল নিয়ে কোথাও আগ্রহ নেই।কিন্তু এবার স্কুল ফাইনালটা বেশ হইচই ফেলেছে।“

ছোটমামা যেন কত জানেন এমন ভাব করে মাথা নাড়াতে নাড়তে বললেন,“আরে।বুঝছেন না। জামাইবাবু।ওদের স্কুল এবার প্রথম উঠল।আর খেলাটাও এবার  মিলের মাঠে হচ্ছে। সেজন্য লোকজন খুব মাথা ঘামাচ্ছে।“

বাবা বললেন,”হু! ঠিক কথা। এখন তেমন খেলাই হয় না।আমাদের সময় ছিল। বাপরে! উফ! মোহনবাগান- ইষ্টবেঙ্গল। কি সব প্লেয়ার তখন। এখন আর তেমন নেই। বাঙালী  কটা প্লেয়ার আছে বল দেখি এখন?”

ছোটমামা নির্বিকারভাবে খাবার খেতে লাগলেন। আর উত্তর দিলেন না। বাবাও উত্তর  না পেয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কি রে? তুই টিমে আছিস তো?

  বাবার কথায় সায় দেবার পরই  আচমকা একটা কথা তার মনে পড়ল। সাংঘাতিক একটা কথা সে মাকে বলতে ভুলে গেছে। সবার সামনে তা বলা যাবে না। বিকেলে নির্ঝরের মুখে কথাটা শোনবার পরই তার মনে হয়েছিল।

 আজ স্কুলে ম্যাচ প্র্যাকটিশ হয় নি। দুদিন  আগে বৃষ্টি হয়েছিল। হঠাৎ বৃষ্টিতে মাঠ,রাস্তা সব জলে থইথই। পাঁচদিন পরে খেলা। একটু প্র্যাকটিশ করার সময় পাচ্ছে না কেউ। তবু খেলা না হলেও সে  নির্ঝর ও বর্নিক সাইকেল নিয়ে একবার ঘুরতে বেরিয়েছিল।।তার হঠাৎ মনে পড়েছিল একটা কথা।যেতে যেতে সে বলেছিল, “এই সেদিন তোর জেঠু খেলা দেখতে এসেছিল?”

 নির্ঝর বলেছিল, “হ্যাঁ।“

“যাহ! আমি খেয়াল করি নি।“

“জেঠু ওই রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল।দেখবি কি করে?”

“যাক! ভাল হয়েছে। ফাইনালটা যেতে বল। তোর খেলা দেখবে।“

 নির্ঝর মাথা নেড়ে বলেছিল, “ হু।“

“কি? হু! উফ! তুই না! একটু জোরে বলতে পারিস না।“

“না মানে।“

রাজ ওর কথা আর মাথায় নেয় নি। সে বর্নিককে দেখেছিল। এদিকটায় নিরিবিলি বলে বর্নিক    হ্যান্ডেল থেকে হাত ছাড়িয়ে সাইকেল চালাচ্ছে। হাত চালিয়ে সাইকেল চালানো মোটেই সহজ কাজ নয়। তার উপর বর্নিক সাইকেলই এখনো ভাল করে চালাতে পারে না। সে ওকে সাবধান করার জন্য বলেছিল,”অমন চালাস না। পড়ে যাবি।“

“তোর মাথা! দ্যাখ না।“

 রাজ আর কিছু  বলে নি।  বর্নিক টলমল করতে করতে এগিয়েছিল। একটু পরেই ও আর ব্যালেন্স রাখতে পারে নি।।বর্নিক  হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেছিল।

 রাজ বলেছিল, “ দেখলি তো। বারণ করলাম।“

বর্নিক উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের ধুলো ঝেড়ে বলেছিল,  “ কোন ব্যাপার নয়। চল। চল।“

একটুপরে সেই পুরান জায়গাটায় রাজরা পৌছে গেছিল। দু-পাশে ফাঁকা বাড়িগুলো দেখে তার মনে পড়েছিল এখানেই  তীর্থজেঠু থাকেন।জেঠু একা কিভাবে থাকেন তা বিষ্ময়।!সে বলেছিল,“চ!  তীর্থজেঠুর বাড়ি যাবি?”

“তীর্থজেঠুর বাড়ি কোথায়?”

রাজ হাত দিয়ে দেখিয়েছিল।

নির্ঝররা সামনে তাকিয়েছিল। বনজঙ্গলের মধ্যে সরু একটা রাস্তা।বর্নিক ঢোক গিলে বলেছিল, “এর মধ্যে?”

“হ্যাঁ।“

“এখন থাকবে জেঠু?

“চল। দেখি। না থাকলে চলে আসব”, বলে রাজ তরতর করে রাস্তার পাশে নেমে পড়েছিল। সাইকেল একপাশে রেখে সে সরুপথ ধরে নিয়েছিল। দু-পাশে জঙ্গল, তারমধ্যে পা বাড়িয়ে তারা পৌছে গেছিল তীর্থজেঠুর বাড়ি।  এক-দুবার হাঁক দিতেই ভেতর থেকে জেঠু বেরিয়ে এসেছিলেন। তাদের দেখে চমকে উঠে ছিলেন। বলেছিলেন, “তোরা?”

রাজ বলেছিল, “আজ খেলা হল না। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাই এলাম।“

“ আয়, কোথায় যে বসাই তোদের। কেউ তো আসে না।“

ঘরে ঢোকে রাজরা। বাইরেটা ভাঙাচোরা হলেও ভেতরটা পরিচ্ছন্ন।একটা ছোট টেবিল আছে। তার উপর সাজানো আছে নানারকম মেডেল। রাজ সেদিকে তাকিয়ে বলেছিল, “এগুলো  সব খেলে পেয়েছেন জেঠু?”

“হু।“

রাজরা  ট্রফিগুলোর দিকে  অবাক  হয়ে  চেয়েছিল। দেওয়ালে দু-চারটে  খেলোয়াড়দের ছবি। ছবির দিকে তাকিয়ে বর্নিক  বলেছিল, “ইনি তো  পেলে। এটা কে বল দেখি?”

রাজ ছবিটার দিকে তাকায়। ঝাঁকড়াচুলো।কোমরে হাত। সে বলে , “লেভ ইয়াসিন।“

বর্নিক চেঁচিয়ে বলে, “ইয়া। পৃথিবীর সেরা গোলকিপার। আচ্ছা। ইনি কে বল?”

রাজ তাকিয়েছিল। খেলোয়াড়টির দিকে।ওর ইচ্ছে হয় বর্নিকের মাথায় চাঁটি মারতে।  সে কিছু  বলার আগে নির্ঝর বলে,“মারাদোনা।“

তীর্থজেঠু বলেছিলেন,“আমার খুব ভাল লাগত মারাদোনার খেলা।  ওই তো একা দলটাকে চাম্পিয়ান করেছিল।“

বর্নিক  বলেছিল,“উনিশ শো নব্বই।“

জেঠু বলেছিলেন, “ঠিক। আমাদের তখন কুড়ি-বাইশ বছর বয়স। উফ! মারাদোনার বাঁ- পায়ের ভেলকি! টেরিফিক। এক একটা শট করত আমরা এসে চেষ্টা করতাম। আমি বঙ্কু  দুজনেই নকল করতাম। অবশ্য বঙ্কু ছিল মিড ফিল্ডার। ওই আমাকে গোল করার জন্য বল সাজিয়ে দিত।“

“কে?”

“তোরা চিনবি না। বঙ্কু একসাথেই খেলত। সে খুব বড় প্লেয়ার ছিল।“

রাজ হেসেছিল।  তীর্থজেঠুকে চমকে দেবার ইচ্ছে হয়েছিল।তিনি জানেন না নির্ঝর কে? সে বলার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।শোনার পর খুব খুশি হবেন তিনি। সে বলার জন্য মুখ খুলতেই  সে হঠাৎ হাতে ব্যাথা  অনুভব করেছিল। নির্ঝর  তার হাতে একটা বিরাট চিমটে কেটেছে।কি কারণে সে বোঝে নি।হতবুদ্ধি হয়ে সে ওর দিকে চেয়েছিল।  হতবুদ্ধি হয়ে সে ওর দিকে চেয়েছিল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত