| 19 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে ফিচার্ড পোস্ট

বিশ্ব বিধবা দিবসে বিশেষ রচনা: বিচিত্র সাক্ষাৎকার । দিলীপ মজুমদার

আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট

[ স্যুট-বুট পরিহিত, বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী, টাকমাথা এক ভদ্রলোক দিল্লির এক অভিজাত হোটেলে নিজের ঘরের বারান্দায় বসে গুরুতর কোন ভাবনায় নিমগ্ন ছিলেন। তিনি ভাবছিলেন তাঁর ফাউন্ডেশনের কথা। দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই এই চারটি বড় শহরে ফাউন্ডেশনের শাখা গড়ে তুলতে হবে। কথা বলতে হবে সরকারের সঙ্গে। কথা বলতে হবে সমমনোভাবাপন্ন সংস্থাগুলির সঙ্গে   এবং দেশের বিশিষ্ট জনের সঙ্গে।

এমনি সময়ে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালেন  বেঁটেখাটো এক প্রৌঢ় মানুষ। পরনে ধুতি, গায়ে চাদর। ইনি বিদ্যাসাগর। কোন ভূমিকা না করে বিদ্যাসাগর স্যুট-বুট পরিহিত ভারতীয়টিকে প্রশ্ন করলেন—]

বিদ্যাসাগর:  তুমি তো রাজ লুম্বা?

[রাজ লুম্বা তাঁকে দেখে অবাক হলেন। মনে মনে ভাবতে লাগলেন এই অনাহূত মানুষটির পরিচয়। কোথায় যেন দেখেছেন। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছেন না। তার পরে হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে গেল কয়েক বছর আগে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন।  জাতীয় গ্রন্থাগারে এক বন্ধু তাঁকে এঁর ছবি দেখান। বিধবাদের জীবন ও সমস্যার সঙ্গে এই খর্বাকৃতি, দৃঢ়চেতা মানুষটির নাম জড়িয়ে আছে। সে সব মনে পড়ে যাওয়ায় রাজ লুম্বা আনন্দে চিৎকার করে বললেন —]

রাজ:  আপনি তো বিদ্যাসাগর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আমি আপনার উত্তরসূরী। আপনার দেখা পেলাম। ধন্য হলাম। তাই আমার দারুণ আনন্দ হচ্ছে।

বিদ্যাসাগর:  তুমি তো পঞ্জাবের মানুষ!

রাজ: হ্যাঁ , আমার বাড়ি পঞ্জাবের দিলওয়ানা নামে এক মফস্বল শহরে। আমার বাবা জাগিরিলাল লুম্বা ছিলেন এক সম্পন্ন ব্যবসায়ী। পুষ্পাওয়াতি লুম্বা আমার মা।

বিদ্যাসাগর: তুমি যে বিধবাদের, বিশেষ করে দরিদ্র বিধবাদের উন্নতির জন্য কাজ শুরু করেছ, তার প্রেরণা কি?

[বিদ্যাসাগরের কথা শুনে আনন্দের উদ্ভাস দেখা দিল রাজের মনে। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাৎ বিদ্যাসাগরের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাঁকে পালটা প্রশ্ন করলেন—]

রাজ:  আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দেব। কিন্তু তার আগে আপনি আমাকে বলুন আজ থেকে  একশো বছরেরও আগে আপনি বিধবা বিবাহের প্রেরণা কোথা থেকে পেলেন?  [রাজের কথা শুনে একটু হাসলেন বিদ্যাসাগর। তারপরে বললেন —]

বিদ্যাসাগর:বিধবাদের দুঃখ-দুর্দশা আমি দেখেছি। বীরসিংহের পাঠশালায় আমার এক সহপাঠিনী ছিল। তখনকার প্রথা অনুযায়ী বাল্য বয়সে  তার বিয়ে হয়। অল্পকাল পরে সে বিধবা হয়। তারপরে শুরু হয় তার লাঞ্ছনা। সাদা থান পরতে হয়, খুলে ফেলতে হয় সব অলঙ্কার , বর্জন করতে হয় আমিষজাতীয় খাদ্য,কোন মঙ্গলানুষ্ঠানে সে যেতে পারে না। সে যেন মূর্তিমান অমঙ্গল। তার সুখের অধিকার নেই, স্বামীর সম্পত্তির অধিকার সে পায় না, সংসারে সে গলগ্রহ। আমি দেখেছি এক বিধবা এই সব যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করেছিল, কারণ জীবিত থেকেও সে সমাজের চোখে মৃত, জীবন বিকাশের শুরুতে ফুরিয়ে যায় তার জীবন।

[বিদ্যাসাগরের কথা শুনে রাজ লুম্বার মুখে বিষণ্ণতার ছায়া পড়ে।  বিদ্যাসাগর তখন বলেন –]

বিদ্যাসাগর:তবে শুধু বিশেষ ঘটনা নয়, যুগেরও প্রভাব ছিল।

রাজ:  কি রকম?

বিদ্যাসাগর: তুমি রামমোহনের নাম শুনেছ?

রাজ:নিশ্চয়ই। তিনি তো সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিলেন।

বিদ্যাসাগর: তখনকার দিনে বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। কুলীন বংশের বীরপুঙ্গবরা একাধিক বিয়ে করতেন। স্বামী মরে গেলে তাঁদের স্ত্রীরা স্বামীর চিতায় প্রাণ বিসর্জন দিতেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধ হলে বিধবার সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যায়। আর তাদের সমস্যা নিয়ে ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা ভাবতে শুরু করেন।

রাজ:ইয়ং বেঙ্গল? ডিরোজিয়ানস? কিন্তু—

বিদ্যাসাগর: বুঝেছি তুমি কি বলবে। তুমি বলবে তারা উচ্ছৃঙ্খল ছিল। কিন্তু তারাই আবার প্রগতির ধ্বজা বহন করে এনেছিল। বিধবাদের সম্পর্কে তাদের কাগজে–এনকোয়ারার, জ্ঞানান্বেষণ, বেঙ্গল স্পেক্টেটরে এ সম্পর্কে লেখা বেরোতে থাকে। ব্রাহ্মদের কাগজ তত্ত্ববোধিনীতেও লেখা বেরোয়। আমি নিজেই একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। এই সব লেখার ফলে কোম্পানির কর্তাদের টনক নড়ে। ভারতীয় আইন কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করে, জে সি গ্রান্টের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু মজার কথা কি জান?

রাজ: কি?

বিদ্যাসাগর: আদালতের সঙ্গে যুক্ত ব্রিটিশ কর্মচারীরা ছিলেন বিধবা বিবাহের বিপক্ষে।

রাজ:রিয়েলি?

বিদ্যাসাগর: তার অবশ্য রাজনৈতিক কারণ ছিল। এদেশের অধিকাংশ মানুষ কুসংস্কার,আচার, প্রথায় বিশ্বাসী। রাজনৈতিক কারণেই তাদের চটাতে চায়নি ইংরেজ। যেমন দেশীয় শিক্ষার বদলে দিতে চায়নি পাশ্চাত্য শিক্ষা।

[রাজ বিদ্যাসাগরের মুখের দিকে চেয়েছিলেন। সে মুখে তিনি দেখলেন লৌহকঠিন দৃঢ়তা। ভাবা যায়! আজ থেকে একশো বছরের বেশি আগে এই মানুষটি কুসংস্কারের জগদ্দল পাথরের বিরুদ্ধে প্রায় একা লড়াই করেছিলেন! রাজ হেসে বললেন—]

রাজ: আপনি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চাইলেন।

বিদ্যাসাগর:কি করব বল? বেশির ভাগ মানুষকে শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয় বিধবা বিবাহ অন্যায়, অনৈতিক। তাই আমাকেও শাস্ত্রের দোহাই দিতে হল।

রাজ:পরাশরসংহিতা?

বিদ্যাসাগর: হ্যাঁ, পরাশরসংহিতার একটা শ্লোকে পেয়ে গেলাম বিধবা বিবাহের সমর্থন। দেখলাম অগ্নিপুরাণসহ কিছু পুরাণে অনুরূপ কথা বলা হয়েছে।

[ বিদ্যাসাগরের কপালে ঘামের রেখা। অনেকক্ষণ একনাগাড়ে কথা বলেছেন তিনি। ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক। এখন তাঁর বয়েস ২০২ বছর। এই বয়সে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। তিনি বললেন —]

বিদ্যাসাগর:এবার তোমার কথা শুনতে চাই।

[স্মিত হাসিতে ভরে গেল রাজ লুম্বার মুখ। বিধবা বিবাহের প্রবর্তক বিদ্যাসাগরের দেখা পেয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে মুখোমুখী কথা বলতে পারছেন। এ এক বিরল সৌভাগ্য তাঁর। এই ব্যতিক্রমী মানুষটি শুধু নিজে বলেন না, শোনেন অন্যের কথা। রাজ তাই দারুণ উৎসাহে বলতে শুরু করেন নিজের কথা —]

রাজ:আমার প্রেরণা আমার মা।

বিদ্যাসাগর:তোমার মা? কি রকম?

রাজ:আমার বয়স তখন দশ বছর। বাবা মারা গেলেন। মা বিধবা হলেন। ‘বিধবা’ শব্দটা প্রথম শুনলাম। ঠাকুরমা মাকে রঙিন কাপড় খুলে সাদা কাপড় পরতে বললেন। মার শরীর থেকে সব গয়না খুলে নেওয়া হল। রইল না বিন্দি। এসব কেন করা হচ্ছে, মা কি দোষ করল জানতে চাইলাম ঠাকুরমার কাছে। ঠাকুরমা বললেন এই সমাজের নিয়ম। খুব খারাপ লেগেছিল। মাকে অচেনা মনে হচ্ছিল। কিন্তু প্রতিবাদ করিনি। বোধ হয় প্রতিবাদ করতে জানতাম না। প্রতিবাদ করলাম বড় হয়ে,আমার বিয়ের দিন। পুরোহিত বলে দিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে মা যেন উপস্থিত না থাকেন। থাকলে অমঙ্গল হবে। আমি চিৎকার করে বললাম, মা থাকবেন। থাকবেনই। যিনি আমাকে জন্ম দিলেন,বড় করে তুললেন, কত ত্যাগ স্বীকার করলেন,তিনি থাকলে আমার অমঙ্গল হবে? বাজে কথা।

[রাজ একটু চুপ করলেন। খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। বিদ্যাসাগর বললেন—]

বিদ্যাসাগর:বাঃ। তুমি খুব মাতৃভক্ত না?

রাজ:আমি শুনেছি আপনিও খুব মাতৃভক্ত  আর সে ভক্তি প্রবাদে পরিণত হয়েছে।

[বিদ্যাসাগর সে কথা শুনে হাসলেন। তারপর বললেন –]

বিদ্যাসাগর:ঠিক বলেছ, মাকে আমি ভক্তি করি। কিন্তু—

রাজ:কিন্তু কি?

বিদ্যাসাগর:আমার ছেলে নারায়ণ যখন বিধবা বিয়ে করল,তখন আমার উপর রাগ করে মা কাশীবাসী হলেন। আরে,আমিই যে বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করেছি। যাক গে আমার কথা,তুমি বলো।

রাজ:মায়ের অবস্থা দেখে  আমি বিধবা নারীর অবস্থা বুঝতে পারি। বুঝতে পারি আমার বাবার পয়সা-কড়ি ছিল বলে মা আমাদের মানুষ করতে পেরেছেন। দরিদ্র বিধবার সে সঙ্গতি থাকে না। তাঁদের কি ভাবে সাহায্য করা যায় সে চিন্তা ঘুরতে লাগল মাথায়।

বিদ্যাসাগর:কি করলে তখন?

রাজ:প্রথমে আমি পৃথিবীর নানা দেশের তথ্য সংগ্রহ করতে লাগলাম। কোথায় বিধবা নারীর অবস্থা কি রকম সেই সব তথ্য।

[রাজের কথা শুনে বিদ্যাসাগর হাসলেন। রাজ অবাক হতে  তিনি বললেন –]


আরো পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ । দিলীপ মজুমদার


বিদ্যাসাগর: বিজ্ঞানের শক্তিতে  পৃথিবী আজ মানুষের হাতের মুঠোয়। তাই তোমরা এত তাড়াতাড়ি এত তথ্য সংগ্রহ করতে পারছ সারা পৃথিবী থেকে। কিন্তু দেখো, এই বিজ্ঞানের নিদারুণ অপব্যবহার হচ্ছে। যুদ্ধ বলো,পরিবেশ দূষণ বলো, নৈতিকতার বিনষ্টি বলো সব কিন্তু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলিকে হাতিয়ার করে।

রাজ: তা ঠিক।

বিদ্যাসাগর:কি তথ্য সংগ্রহ করলে ?

রাজ: ভয়ংকর সব তথ্য। সারা বিশ্বে বিধবা নারীর সংখ্যা ২৫৮ মিলিয়ন, তাঁদের সন্তানের সংখ্যা ৫৮৫ মিলিয়ন, ৩৮ মিলিয়ন বিধবা চরম দারিদ্র্যে পীড়িত। রাজনৈতিক সংঘর্ষে মধ্য প্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকায় বহু নারীকে বৈধব্য বরণ করতে হয়েছে। আফগানিস্তান, ইরাক, দক্ষিণ সুদান, নাইজিরিয়া, ক্যামেরুন,  সিরিয়ার বিধবারা সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত, কন্যা সন্তান আছে যে সব বিধবার এবং যাদের বয়স ১০—১২ তারা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বঞ্চনার শিকার। কোন কোন দেশে বিধবাদের ঘৃণ্য সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলতে হয়; যেমন মৃত স্বামীর শরীর ধোয়া জল পান করতে হয়, স্বামীর আত্মীয়ের সঙ্গে যৌনক্রিয়া করতে হয়। ভারত, নেপাল, আফ্রিকায় স্বামী হত্যার অলীক দায় চাপানো হয় বিধবার উপর।  স্বামীর সম্পত্তি থেকে বিধবাদের বঞ্চিত ও বিতাড়িত  করা হয় অ্যাঙ্গোলা, বাংলাদেশ, রিপাবলিক অফ কঙ্গো, ভারত, ঘানা, কেনিয়া, নাম্বিয়া, নাইজিরিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া, সেনেগাল, রাওয়ান্ডা, তানজানিয়া প্রভৃতি দেশে।

বিদ্যাসাগর: ভারতে বিধবার সংখ্যা কি রকম?

রাজ: বিশ্বের বিধবাদের ৪০% আছে ভারতে। আপনি বৃন্দাবনের কথা জানেন?

বিদ্যাসাগর: বৈষ্ণবধর্মের পীঠস্থান বলে শুনেছি।

রাজ:এখন সেই বৃন্দাবন বিধবাদের আশ্রয়স্থান।

বিদ্যাসাগর:বলো কি!

রাজ:সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে আশ্রয় খোঁজে বিধবারা।

[বিদ্যাসাগরের চোখে জল দেখা যায় । নির্নিমেষ নয়নেতাকিয়ে থাকেন রাজ লুম্বা। মানুষটিকে বজ্রের মতো কঠিন আর কুসুমের মতো কোমল বলে মনে হয়।চোখ মুছে বিদ্যাসাগর বলেন –]

বিদ্যাসাগর:বিধবাদের সাহায্যের জন্য তুমি যে সংগঠন গড়ে তুলেছ, তা কি সাড়া জাগাতে পেরেছে?

রাজ:মনে হয়।আমাদের সংগঠনের কাজকর্ম দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে রাষ্ট্রসংঘের। তাঁরা প্রতি বছর ২৩ জুন বিশ্ব বিধবা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।

[তাঁর কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠেন বিদ্যাসাগর। চমকে ওঠেন রাজ। তিনি কি কিছু ভুল বললেন? গভীরভাবে ভাবতে থাকেন তিনি। বিদ্যাসাগরের হাসির কারণ বুঝতে পারেন না। ঘাবড়ে যান।তখন বিদ্যাসাগর বলেন—]

বিদ্যাসাগর: ওসব দিবস-টিবস পালনে কিছু কাজ হবে না। তার চেয়ে তোমরা যা করছ, করে যাও। নামকরা লোকদের এর মধ্যে টেনো না। সব পণ্ড হবে। বলে না, বড় বড় বাঁদরের বড় বড় লেজ।

[আশ্বস্ত হন রাজ। যা বললেন বিদ্যাসাগর তাতো  মিথ্যে নয়। কত দিবস তো পালন হয়। কিন্তু আখেরে লাভ তো কিছু হয় না।রাজ দেখলেন বিদ্যাসাগর উঠে দাঁড়িয়েছেন। রাজ বললেন –]

রাজ: চলে যাচ্ছেন? বিধবা বিবাহের প্রবর্তককে আমার প্রণাম।

[ঘুরে তাকালেন বিদ্যাসাগর। তাঁর চোখে কৌতুকের ঝিলিক। বললেন —]

বিদ্যাসাগর: এর পরে আমি যা বলব তাতে আমাকে সিনিক বলবে।

রাজ: আপনি সিনিক হতে যাবেন কেন? আপনি তো শত দাগা খেয়েও মানুষের উপর বিশ্বাস হারাননি।

বিদ্যাসাগর: হ্যাঁ, আমি বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করেছিলাম। কিন্তু সাফল্য পাইনি। আমার সময়ে,নাম করব না, প্রগতিশীল মানুষেরা, ব্রাহ্মধর্মের নেতারা আমার পাশে দাঁড়ায়নি তেমন করে।কেন জানো? সেই সমাজের ভয়ে। একশো বছর তো পেরিয়ে এসেছ, বলো তো এখনও কটা বিধবার বিয়ে হয়? আমি শুনেছি ডিভোর্সি মেয়েদের যত বিয়ে হয়,তার সিকিভাগ বিধবার বিয়ে হয় না। কারণ সেই ধর্মীয় সংস্কার, যা কাজ করে যায় গোপনে গোপনে।আগে ছিল ধর্ম, এখন হয়েছে রাজনীতি। তারাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে পাঞ্চ করে যে সব দল হয়েছে, তাদের তো পোয়া বারো। তাই তোমাকে বলছি ধর্ম আর রাজনীতি থেকে দূরে থেকে কাজ করে যাও। একজন বিধবার জীবন যদি বদলে দিতে পারো, সেটাই হবে তোমার সাফল্য।

[বিদ্যাসাগর অদৃশ্য হলেন। রাজ অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন এটা স্বপ্ন না সত্য!]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত