অসমিয়া অনুবাদ উপন্যাস: অর্থ (পর্ব-২৩) । ধ্রুবজ্যোতি বরা
ডক্টর ধ্রুবজ্যোতি বরা পেশায় চিকিৎসক,অসমিয়া সাহিত্যের একজন স্বনামধন্য লেখক ২৭ নভেম্বর ১৯৫৫ সনে শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন ।শ্রীবরা ছাত্র জীবনে অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন ।’কালান্তরর গদ্য’ ,’তেজর এন্ধার‘আরু’অর্থ’এই ত্রয়ী উপন্যাসের লেখক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। ২০০৯ সনে ‘ কথা রত্নাকর’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাকি উপন্যাসগুলি ‘ভোক’,’লোহা’,’যাত্রিক আরু অন্যান্য’ ইত্যাদি।ইতিহাস বিষয়ক মূল্যবান বই ‘রুশমহাবিপ্লব’দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ’,’ফরাসি বিপ্লব’,’মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ’।শ্রীবরার গল্প উপন্যাস হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, মালয়ালাম এবং বড়ো ভাষায় অনূদিত হয়েছে।আকাডেমিক রিসার্চ জার্নাল’যাত্রা’র সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ।’ কালান্তরর গদ্য’ উপন্যাসের জন্য ২০০১ সনে অসম সাহিত্য সভার ‘ আম্বিকাগিরি রায়চৌধুরি’ পুরস্কার লাভ করেন।শ্রীবরা অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি।
অনুবাদকের কথা
কালান্তর ট্রিলজির তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হল’অর্থ’। সশস্ত্র হিংসার পটভূমি এবং ফলশ্রুতিতে সমাজ জীবনের দ্রুত অবক্ষয়ের মধ্যে বেঁচে থাকার তাড়না এবং বেঁচে থাকার পথ অন্বেষণেই আলোচ্য উপন্যাসের কাহিনী ভাগ গড়ে তুলেছে। সম্পূর্ণ পৃথক একটি দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে অসমের মানুষ কাটিয়ে আসা এক অস্থির সময়ের ছবি আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের অন্বেষণ চিরন্তন এবং সেই জন্যই লেখক মানুষ– কেবল মানুষের উপর আস্থা স্থাপন করতে পারে।
এবার উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ নিয়ে এলাম।আশা করি ইরাবতীর পাঠকেরা এই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত অসাধারণ উপন্যাসটিকে সাদরে বরণ করে নেবে। নমস্কার।
বাসুদেব দাস,কলকাতা।
পাতলা নীল পাহাড় এবং ছাই রঙের বালুচরের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র অতি শান্তভাবেবয়ে চলেছিল।
নীল ছাপ পড়া ঘোলা জলের উপরে নীল আকাশ ঘুরে বেড়ানো চিল পাখি গুলির ডানায়ফটফটে রোদ পড়ে মাঝে মাঝে গাঢ় মুগা রঙ ঝলসে উঠে। এমনিতেপাখিগুলোকে কালো বলে মনে হয়। নীল আকাশে কালো পাখি। চিল না ফিশিং ঈগল, ব্রহ্মপুত্রের তীরে থাকে। অসমিয়াতেফিশিং ঈগলকে কী বলে? কনুয়া নাকি?
একটু হালকা বাতাস বইছিল। বাতাসে শীতের সামান্য আভাস: আর কিছুদিন পরই শীত পড়বে। গা পুড়িয়েদেওয়া রোদটা কোমল, আরামদায়ক হয়ে পড়বে। বাইরে বসে রোদ পোহানো যাবে। কমলাগুলিপাকবে। মিষ্টি হবে। উষ্ণ রোদে মিষ্টি কমলা খেতে ভালো লাগবে। আর মাত্র কিছুদিন বাকি আছে…
বাড়িটারওপরমহলের দীর্ঘ বারান্দায়শ্রীমান একা বসে আছে। সামনে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র। একা একা বসে থেকে তার বিরক্ত লেগে লেগে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। অঞ্জুদা নেই, তাই বারান্দার দু প্রান্তে পাহারা দিতে থাকা ছেলে দুটিও নেই। নিচেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ঘরটা মানুষে ভর্তি হয়ে আছে। নিচে রুমগুলিতে পেতে নেওয়া বিছানা গুলিতে অনেক ছেলে এখনও শুয়ে আছে বোধহয়। রাতে ওরাবেরিয়েগিয়েছিল, সকালবেলাহয়তো ফিরে এসেছে। এসে এখনও শুয়ে আছে। রাতে ওরাগাড়িনিয়ে ঘুরেছিল। নানা জায়গায়গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল সে কথা শ্রীমান জানেও, আবার জানে না। কেউ তাকে ভেঙ্গেবলেনি। কিন্তু সে জানতে পেরেছে। ওরা বালির খাদানেযায় নাকি…
অথবা কোনো নির্জন পাথরের কুঁয়্রেরিতে ,কোনো অরণ্য প্রান্তে।যায় নাকি বালির খাদানে?একটা ধাতব শব্দ যেখানে হয়তো নির্বাপিত করে তোলে একটা জীবন।
এক ধরনের অনামী উত্তেজনা এবং এক গোপন ত্রাসে শ্রীমান অস্থির হয়ে উঠল।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল এবং অস্থিরভাবে লম্বা বারান্দার এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত পায়চারি করতে লাগল।
সমগ্র ঘরটাতে যেন একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।এক ধরনের মিশ্রিত উত্তেজনা।ভয়গুলি যেন ঘরের কোণে জমাট বেঁধে বসে আছে।যেন গলে গলে বেরিয়ে আসবে।ধীরে ধীরে অসহ্যকর হয়ে উঠেছে এই পরিস্থিতি।একমাসেরবেশি শ্রীমান এই ঘরটিতে ঢুকে বসে আছে।অঞ্জুদা তাকে রেখে দিয়েছে।সঙ্গদানের জন্য না তাকে সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষাকরার জন্য সেই বিষয়ে মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। হয়তো বিপদ আছে, হয়তো নেই। বাবা তার থাকাটা পছন্দ করছে। তাকে প্রায়ই ফোন করে বাড়ির কাজকর্মের খবর দিয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: অর্থ (পর্ব-২২) । ধ্রুবজ্যোতি বরা
‘বাড়ির কাজ খুব দ্রুত চলছে। এত দ্রুত কাজ আগে হলে কথাই ছিল না। কবেই বাড়ি তৈরি হয়ে যেত। নিচের বাজারের ঘরগুলি সব হয়ে গেছে।অফিস করে নেওয়া আমাদের রুম দুটি ছাড়া। সেগুলি শেষে করাই ভালো হবে। সব কাজগুলি শেষ করে। তুই কি বলছিস? বাবা ফোনে জিজ্ঞেস করেছিল।
‘পার্টিগুলি দোকান বানাতে শুরু করেছে নাকি?’ সে জিজ্ঞেস করেছিল।
‘ বেশিরভাগের আধা-আধি আলমারি বানানো হয়ে গেছে। দিনরাত কাজ চলছে। সাহাবাবুর তো বানানো শেষ হয়ে গেছে। একজনই কিছু করেনি।পুরোনো আলমারিগুলোকে টানাহেঁচড়া করছে। আজ একপাশে রাখে, কাল আরেক দিকে।’ বাবা বেশ স্ফুর্তির সঙ্গে কথা গুলি বলল।’ আর ভাঙ্গা দাঁতগুলোর জায়গায় নতুন নকল দাঁত একটা লাগিয়েনিয়েছে। সোনা দিয়েবাঁধিয়েনিয়ে একটা পাথর লাগিয়েনিলে ভালো ছিল‐- হাসলেইজ্বলজ্বলকরত।’ বাবা ফোনে খুক খুক করে হাসতে লাগল।
শ্রীমান একটু জড়োসড়ো হয়ে পড়ল।
‘ আমি যাব দাঁড়াও। একবার নিজে গিয়ে দেখে আসব,’ সে বলল।
‘না না আসতে হবে না। আসবি না। বাবা তাাড়াতাড়ি বলে উঠল।
শ্রীমান কিছুই না বলে কিছুক্ষণ নীরব হয়ে রইল। বাবা আবার শুরু করল।’ তুই একদম ঘোরাফেরা করবি না। ওখানেই থাক। ওখানে থাকলে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকতে পারি। দিনকাল বড় খারাপ হয়ে পড়েছে। বাবা তুই একদম বাইরে বেরোবি না। সেদিন… …’
‘সেদিন কি হয়েছে?’ শ্রীমান তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করল।
‘ না না, সেরকম কিছু নয়। আমারই ভুল হয়েছিল বলে মনে হয়।’
‘ কী হয়েছিল বাবা, খোলাখুলি বল তো।’ শ্রীমানের কণ্ঠস্বরে জরুরী সুরটা শুনে বাবা চিন্তায়পড়ে গেল। বলব না বলে ভাবা কথাটা মুখ দিয়েবেরিয়েযাওয়ায় তার নিজের উপরেই রাগ হল। অন্যদিকে শ্রীমানের বুকটা হঠাৎ ধড়ফড় করতে লাগল।’
‘ বলতো কী হয়েছিল?’
‘ না ,সেরকম কিছু নয়।’ বাবা হালকা সুরে কথাটা বলল।
‘ সেদিন কয়েকটি ছেলে তোর খোঁজে এসেছিল, অপরিচিত ছেলে। সন্ধ্যেবেলা তোর জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল। আমি পরে জানতে পারলাম।’
‘ কারা? কী ধরনের ছেলে?’
‘ কী ধরনের ছেলে জানিনা। প্রথম দিন তো আমার সঙ্গে দেখাই হল না।’
‘ আবার এসেছিল নাকি?’
‘ পরের দিন একটি ছেলে এসেছিল।’
‘ আগের দিন আসা ছেলে বলে কীভাবে বুঝতে পারলে?
‘কাঞ্চা তাকে দেখেছিল।’
‘ তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল?’
‘আমার সঙ্গে কথা বলেছিল।’
‘তুমি কী বললে?’
‘ আমি বললাম তুই ফ্ল্যাট গুলোর জন্য ফিটিং কিনতে বোম্বাই গিয়েছিস। সেখানে জিনিসপত্রগুলি সস্তায়পাওয়াযায়।’
‘ কিন্তু কি জিজ্ঞেস করেছিল ওরা?’ বাবার বুদ্ধির তারিফ করলেও শ্রীমানের মনে ভয়টা ক্রমশ বাড়ছিল। একটুকরো ভারী পাথরের মতো যেন ভয়টা বুকের মাঝখানে বসে গেছে‐- এক টুকরো বরফের মতো জমাট বেঁধে গেছে।
‘ তোর কথাই জিজ্ঞেস করছিল। কাঞ্ছা কেও জিজ্ঞেস করেছিল।’
‘ ওদের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলে কি?’
‘ জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাকিদের সঙ্গে তো আমার দেখাই হয়নি। কাঞ্ছার সঙ্গে হয়েছিল। সে আর কী জিজ্ঞেস করবে। আমার যার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।’
‘কী বলেছিল? কী বলেছিল সে?’
‘কেমন যেন এড়িয়ে যেতে চাইছিল। ভালো করে কিছুই বলতে পারছিল না। আসলে তখনই সন্দেহ হল।’
‘আগে বললে না কেন?’
‘ আমাদের তো ভুলও হতে পারে, কে জানে হয়তো তোর পরিচিত। তবু শোন বাবা, সাবধানের মার নেই। তুই একেবারে বাইরে বেরোবি না। এখন বাড়িতেও তোকে আসতে হবে না… …’
‘ কী হল বাবা। আমার কথা শুনছিস তো?’ শ্রীমানকে নীরব হয়ে থাকতে দেখে বাবা বেশ উদ্বিগ্নতার সঙ্গে জিজ্ঞেস করল।’ শোন বাবা, আমাদের একষ্ট্রা সাবধান হতেই হবে। ভাইটিকেও আমি পাঠিয়েদেওয়ার কথা ভাবছি… …’
ভাইটিকে?’ দুর্বলভাবে শ্রীমান জিজ্ঞেস করল
‘ তার ইন্টারনশিপ আজ শেষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে সার্টিফিকেট পাবে। ওদের সঙ্গের কয়েকটি ছেলে দিল্লি যাবে। সেখানকার হাসপাতালে কাজ করবে। পোস্ট গ্রাজুয়েটএন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করবে । সে আমাকে জিজ্ঞেস করল । আমি সঙ্গে সঙ্গে যেতে বলেছি । থাকুক, সে গিয়েদিল্লিতে থাকুক। এখানে পরিস্থিতি তো দিনের পর দিন খারাপ হয়ে চলেছে।’
‘ এখন রাখছি বাবা,’ নিজের অজান্তে শ্রীমানের কণ্ঠস্বরটা বড়ো দুর্বল এবং বিষন্ন হয়ে বের হল। সে ফোনটা বন্ধ করে দিল। কর্ডলেস ফোনটা হাতে নিয়ে সে অনেকক্ষণ নীরবে পেছনের লম্বা বারান্দায় বসে রইল।
বুকের মধ্যে জমাট বাধা ভয়টার সঙ্গে এক ধরনের বোঝাতে না পারা বিষাদ তার মনটাকেঘিরে ধরল। ঘরটাতে তার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে এল- পেছনের খোলা বারান্দায় বসে থাকা সত্ত্বেও। অস্থির হয়ে এসে সিঁড়িদিয়ে নিচের বারান্দায় নেমে গেল। বারান্দাটা থেকে সে নিচের ঘর গুলির কথা ভাবল। পাঁচ ছয়টা করে তক্তাপোষ এবং ফোল্ডিং খাট ঘরটিতে পেতে রাখা আছে এবং সেগুলোতে শুয়ে- বসে ছেলেগুলি কথা বলছে। শ্রীমানের হঠাৎ নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ বলে মনে হল। এক পা দু পা করে সে ধীরে ধীরে বারান্দা থেকে পেছনের বাগানে নেমে গেল।
মালী খুব যত্ন করে বাগানটা তৈরী করেছে।
অনেক ফুলের গাছ লাগিয়েছে সে। গাছগুলি দ্রুত বেড়ে চলেছে, কিন্তু একটি গাছেও ফুল নেই, একটিও কলিফোটেনি।
একটা গাছের ছায়ায় কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে রাখা আছে। শ্রীমান ধীরে ধীরে গিয়ে তারই একটা চেয়ারে বসে সামনের টেবিলে পা তুলে দিল। এক গভীর অবসাদ যেন তাকে ঘিরে ধরল। শরীরটা চেয়ারেছেড়েদিয়ে সে চোখ দুটি বুজেনিল। হয়তো তার ঘুমের ভাব এল।
হ্যাঁ তার ঘুম পেয়েছিল। চোখের পাতা দুটি যেন ভারী হয়ে আসছিল। ঝড় এসেছে । ব্রহ্মপুত্রের বুকে ঝড় এসেছে।
আকাশ গুম গুম করে ঝড় এসেছে। মেঘে ঢাকা দিগ্বলয়ের প্রান্ত থেকে গুম গুম ধ্বনির শব্দ ক্রমশ সমস্ত আকাশে ছড়িয়েপড়ছে। বহুদূর থেকে যেন বড়োবড়ো কিছু ট্রাক অবিরাম ভাবে ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসছে।
বিশাল বিশাল মেঘের টুকরোয় আকাশটা ফুলে ফেঁপে উঠছে। মেঘের স্তর থেকে ওপরের দিকে জায়গায়জায়গায় উঠে গেছে মেঘের এক একটি বিশাল স্তম্ভ। আর ক্রোধী মেঘগুলি ক্রমশ আকাশ জয় করে ছড়িয়েপড়ছে। বুকের মধ্যে ঝলসাচ্ছে বিদ্যুতের চমক, আরম্ভ হয়েছে গর্জন… …
বাতাস শীতল হয়ে উঠছে। জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ ভারী বাতাস।
এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়েছে। সজোর বৃষ্টি। দুই এক ফোঁটা বৃষ্টি এসে শ্রীমানের মুখে পড়ছে, শরীরে পড়ছে। সে হাত দিয়ে মুখ থেকে বৃষ্টির ফোঁটা গুলি মুছে দিল।
হাতের মধ্যে এটা কি? লাল লাল! রক্তের মতো?
রক্ত বৃষ্টি– রক্ত বৃষ্টি!
হঠাৎ কোথাও বজ্রপাত পড়ার বিকট শব্দ হল।
শ্রীমান ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠে বসল। কোথায় কোথায়? বৃষ্টি তো পড়ছে না দেখছি। কোথায় বৃষ্টি? ঝড় !ঝড় কোথায়?
সে চোখ দুটি মেলে এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগল।
পরিষ্কার ফটফটে আকাশ। নীল আকাশ।
মাথাটা সজোরে ঝাঁকিয়ে সে যেন ভয়াবহস্বপ্নটাররেশটুকু মন থেকে তাড়িয়েদেওয়ার চেষ্টা করল। মাথাটা যেন তার একটু ঘুরে গেল। চারপাশের জিনিসগুলি ঘুরতে ঘুরতেথেমে গেল। হঠাৎ তার বমি বমি ভাব পেল।
বিহারী মাছের বেপারী থেকে কিনে নেওয়াবাড়িটা এবং চারপাশের বাগানটা যেন কিছু পাতলা সুতো দিয়েঘিরে রেখেছে , প্রায় অদৃশ্য বিদ্যুৎ- প্রবাহী সুতো এবং সেই সুতোগুলো দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উদ্বিগ্ন উত্তেজনার প্রবাহ। মাঝেমধ্যে এক মুহূর্তের জন্য দেখা যাচ্ছে সেই প্রবাহের চমক । সেরকম সুতো তার শরীর থেকেও বের হচ্ছে … …
সে বারান্দার দিকে তাকাল।
ভেতরের ঘর থেকে তিন-চারটি ছেলে বারান্দায়বেরিয়ে এসেছে। এবং জিন্সপরা ছেলেগুলি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। ওরাআড়মোড়া ভেঙ্গে পা গুলি টানটান করছে। ফ্রি হ্যান্ডব্যায়াম আরম্ভ করেছে। হাত দুটি দুপাশে মেলে দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে একবার ডান পায়েরবুড়ো আঙ্গুল আবার বাঁপায়েরবুড়ো আঙ্গুল স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। ছন্দোবদ্ধ গতিতে ওদের হাতগুলি দুলছে‐দুলছে।ওদেরচারপাশেউত্তেজনারপ্রবাহকেন্দ্রীভূতহচ্ছে‐টানটানহয়েপড়েছেবাতাস।
ওরা শিকারে যাবার জন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছে‐- শ্রীমানহঠাৎভাবল।শিকার, শিকারের খোঁজে যাবে ওরা।সেশিউরে উঠল। বুকের মাঝখানের বরফের টুকরো যেন একটু নড়াচড়া করে উঠল। শ্রীমান অন্যদিকে ঘুরে বাগানটাতে হাঁটতে শুরু করল।
বিকেল এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রোদ কোমল হয়ে উঠেছে, ছায়া গুলি কোমল হয়ে উঠেছে এবং বাগানের গাছগুলি পাতার নিচে একটু একটু করে সন্ধ্যার অন্ধকার জমা হতে শুরু করেছে, একটু একটু করে জানা-অজানার মাধ্যমে। জঙ্গলের শ্বাপদ গুলির ঘুম ভাঙারসময়…
অনুবাদক