Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,বৈশাখ

ইরাবতী ধারাবাহিক: খোলা দরজা (পর্ব-১২) । সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

Reading Time: 2 minutes

ওভাবে সতীর দেহ নিয়ে সারা মাঠ ঘুরপাক খাওয়া সোজা কথা নয়।দীর্ঘদেহী সুপুরুষ ঘনাদার মাথায় ভাড়া করা জটা, সারাগায়ে ছাইয়ের মত পাউডার চূর্ণ,  কোমরে বাঘছাল। চোখ ভ্রু সব তুলি দিয়ে আঁকা,গলায় সাপের বেড়।একমনে সবাই শিবঠাকুরকে দেখছে তখন। মনে হচ্ছে, ক্যালেন্ডারের শিবঠাকুর মাটির পৃথিবীতে নেমে এসেছেন ।পাড়ার বুড়ি ঠাকুমা, দিদিমারা ভক্তি সহযোগে প্রণাম সেরে শিবঠাকুরের উদ্দেশ্যে পয়সা ছুঁড়ছেন।

আমরা নজর রাখতাম সতীর দিকে।সে চোখ খুলছে, না খুলছে না?ন্যাড়া ঠোঁটে লিপস্টিক আর মাথায় পরচুলা লাগিয়ে, মায়ের লাল সিল্কের কাপড় পরে সতী সাজত। আমাদের খুব হিংসে হত।এক আধবার আমাদেরও সতী সাজালে, কী আর এমন ক্ষতি ছিল? ন্যাড়া নিজের ভাইপো কিনা! তাছাড়া ও তো মাঝেমাঝেই চোখ পিটপিট করে সবকিছু দেখে। মৃত সতীর তো সারাক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার কথা ।ওর থেকে আমরা ঢের ভালো সতী সাজতে পারি।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,বৈশাখ


বলাবাহুল্য এসব কথা কোনদিনই মুখে বলা যায়নি।আর বরাবর ঘনাদার ভাইপো ন্যাড়া অথবা খ্যাপা সতী সেজেছে।

আরো একটু বয়স বাড়ার পর ওইসব মেলা বা অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যোগ হল। তখন অভিভাবকদের কড়া নজর এড়িয়ে দেখাশোনা করার জন্য আদর্শ স্থান ছিল ওই মেলা প্রাঙ্গন বা পয়লা বৈশাখের বিচিত্রানুষ্ঠানের ক্ষেত্র। কত তৃষিত নয়ন যে ওই সুযোগে মিলিত হয়েছে তার হিসাব নেই।

দুটো কারণে আমরা সক্রিয় ভূমিকায় থাকতাম না।দর্শক হয়েই দিন কাটত।প্রথমটি হল বাড়ির শাসন,যা সর্বদা হৃদয়ে টিক্‌টিক্‌ করে আমাদের সামলে সুমলে রাখত। দ্বিতীয় বিষয়টি হল ইমেজ রক্ষার দায়।স্কুলে যারাই ভালো রেজাল্ট করত অলিখিত ভাবে তাদের ওই দায়ভার বহন করতে হত।তাই ওইসব সুসময়ে আমাদের ভূমিকা ছিল নিতান্ত ভীরু দর্শকের।

মনে হত এক্ষেত্রেও কবি যথার্থ বলেছেন “ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার।”

মনে আছে সেই সময়ে কলেজে অনার্সের বন্ধু একটি মেয়ের প্রেম কাহিনি আদ্যোপান্ত শুনতাম আমরা। সে প্রেমের পুরোটাই ছিল নির্বাক সিনেমা। দুজনের কেউ কারো  সঙ্গে কথা বলেনি কোনদিন।মেয়েটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে জানলায় দাঁড়াত।আর ছেলেটি সেই জানলার সামনে দিয়ে সাইকেলে চলে যেত।যাবার সময় চোখ তুলে সে একবার মেয়েটির দিকে তাকাত। ওই দৃষ্টিপাতেই তাদের প্রেম আবদ্ধ ছিল।মানে প্রেমের সবটুকু উড়ান ওই জানলার গরাদের পেছনেই ডানা ঝাপটেছে।নীল আকাশে তা্র কোন মুক্তি ঘটেনি।


আরো পড়ুন: ইরাবতী ধারাবাহিক: খোলা দরজা (পর্ব-১১) । সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়


 

প্রতিদিন আমরা জানতে চাইতাম ঘটনা প্রবাহ কতদূর গেল,আর হতাশ হয়ে ওই জানলাতেই ফেরৎ আসতাম।অন্য জায়গায় মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার সঙ্গে কথা বলে বুঝেছিলাম, সে বিবাহিত জীবনে অসুখী নয়।তবে ওই নির্বাক সিনেমাটিও তার জীবনে স্থায়ী আসন পেতে রেখেছে।

আবার অন্য কথায় চলে যাচ্ছিলাম।আসলে প্রেম বস্তুটি এমন,যা জীবনের সঙ্গে এমনিতেই জড়িয়ে থাকে। যে কোন কথায় তার অনাবিল আনাগোনা।

যা বলছিলাম,বাঙালির বারোমাসের তেরো পার্বণের সূচনা হত ওই পয়লা বৈশাখের শুভদিনে। সারাবছর ধরে তার রেশ থাকত। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে আমাদের যবের ছাতু আখের গুড় দিয়ে মেখে খাওয়ানো হত। খুব ভাল না লাগলেও খেতাম। কেন ওইদিনে ছাতু খেতে হত বলতে পারবনা। তাছাড়া নীলের দিনে মায়েদের শিব পুজোর উপোসের তরমুজ, ফুটি,আঙুরের ভাগ পেতাম আমরা।আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে ছিল মুসলিম পল্লী। তাদের রোজা চলত ওই সময়েই,ফলে সন্ধেবেলা তারাও প্রচুর ফল খেতেন ।

ছোট থেকে অনেকগুলো নববরষের ছোঁওয়া পেয়েছি আমরা । একসময় একটু বড় হয়েছি যখন, বাড়ির কিনে দেওয়া ছাপা শাড়ি আর নতুন ব্লাউজ আমাদের ভাগ্যেও জুটেছে। সেসময়, প্রায় বারো তেরো বছর বয়স অবধি, পাড়ার ছেলেমেয়েরা মিলে বাড়ির ছাদের কাপড় শুকোতে দেবার তারে শাড়ি ঝুলিয়ে, নকল স্টেজ বানিয়ে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। সেসব অনুষ্ঠানে কে স্ক্রিন মানে কাপড়ের ওই পর্দা সরাবে ফেলবে, তাই নিয়ে বেশ ঝামেলা হত।সবাই চাইত ওই গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বটি নিতে। আর অনুষ্ঠানে  একটা গানের নাচ কখনোই বাদ পড়ত না। সেটি হল, “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>