| 29 মার্চ 2024
Categories
ভাসাবো দোঁহারে

ভাসাবো দোঁহারে: পাঁচটি ভালবাসার কবিতা । জুয়েল মাজহার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
 
 
 
 
অভিজ্ঞান
 
 
 
১.
চোখ দুটো দেখাও আমাকে। আমি
রাত্রির বাতাস, ঘ্রাণ
তবেই না বয়ে নিয়ে আসি
 
 
২.
কোথায় আশ্চর্য মেঘ?
কোথা গেলে ভিনদেশি? আমি যে কাতর
 
 
তোমার বাড়ির পাশে বসন্তে কোকিল হয়ে
দুপুরে গোপনে এসে ডাকি
 
 
 
 
ক্রমহননের পথ
 
 
অপাপবিদ্ধের মতো জোড়া জোড়া চোখ দেখে ভয়;
এই বুঝি রিরংসা নামের কোনো বিস্ফোরণ ঘটে
তবু নিথরতা;
দূরে ট্রেন চলমান, ঝাউবনে স্রোতকল্প দোলা
 
এসো, তোমাকে উদ্ভিন্ন করি রাতপরিদের নামে
ইন্দ্রিয়ের ক্ষমজলে, তরল ক্ষীরের মতো
গলমান নির্বেদের স্রোতে
 
 
সহস্র তিরের শব্দ, শত হুল তোমার পেছনে;
তুমি একা। তাতে ভয়!
 
ভয় বুঝি সংবেদনের কোনো ডানা?
 
তাহলে উড্ডীন হও, উড়ে চলো বনের ভেতর।
ক্রমহননের পথ পাড়ি দিয়ে দ্যাখো:
 
 
ঘাসে ঘাসে সিঁড়ি চলমান।
পর্বতের ধাপে ধাপে মনুষ্যখুলির ছায়া প্ররোচনা আকারে সাজানো;
 
আর দ্যাখো, জলের আঙুলে আঁকা চিত্রময়
শুয়ে আছো তুমি
 
 
তোমাকে ঘিরেই জাগে শত শত দেয়াল, প্রাকার;
ক্রমহননের পথ আমাকে বেষ্টন ক’রে
ঝুঁকে আছে তোমার উপর!
 
 
 
 
 
রাত্রি ও বাঘিনী
 
 
বাঘিনী আমারে শুধু ডেকে চলে ভরা পূর্ণিমায়
 
 
বারবার কাতর মিনতি করে আমি তারে বলি :
দয়া করো, আমায় খেয়ো না, আমি অসহায় অতি ছোটো জীব
 
 
বাঘিনী করুণা করে, আমাকে থাবায় পুরে কি ভেবে
ঘুমিয়ে পড়ে। এ-সুযোগে আমি তার মুঠো গ’লে নামি;
 
বুকে হেঁটে-হেঁটে তার গর্জনের সীমানা পেরোই
সন্তর্পণে ঢুকি পড়ি বনপ্রান্তে, পরিত্যক্ত ঘুমের গুহায়
 
 
ভাবি, বাঁচা গেল! ভাবি, আমাকে পাবে না আর তার
দাঁত-নখ, অত্যধিক প্রেমের আঁচড়
 
অবশেষে এ-গর্ভগৃহের ছায়ায় বসে আমি নিরাপদ!
 
থ্যাঁতলানো অণ্ড-শিশ্ন, কালশিটে ঊরু ও জঘন, আর,
এই দুটি রক্তমাখা ঠোঁটে বিশল্যকরণী ঘষে ফিরে পাবো
অনাঘ্রাত আমাকে আবার
 
আমাকে পাবে না আর বাঘিনীর অতিরিক্ত রতি-আক্রমণ!
 
কিন্তু হায়, প্রতিবারই স্বপ্নে বাঘিনী তবু পিছু নেয়;
তীব্র চোখে ফসফরাস জ্বেলে
এক লাফে সীমান্তের নদীটি পেরিয়ে
অতর্কিতে সামনে আসে; ভয়ানক দু’পায়ে দাঁড়ায়, আর
দু’বাহু বাড়িয়ে তার সে আমাকে কোলে তুলে নেয়;
 
 
ধীরে ধীরে চুমু খায়, ঠোঁটে ও গলায় তার দাঁত-নখ গেঁথে রক্ত চাটে
বেপরোয়া জ্বালামুখে আমাকে পুড়িয়ে শুধু কাবাব বানায়
 
 
শেষ রাতে মাতাল চাঁদের নিচে অ্যাম্বুলেন্স এসে
আমাকে উদ্ধার করে দ্রুত কোনো হাসপাতালে ছোটে
 
 
 
 
 
 
 
সামনে খুঁজি তাকে, পেছনে তাকাই
ঘুমের পোশাক গায়ে, দশ পায়ে নাচি
 
 
কোথায় সে? যখন সূর্য-পূজারির ঘরে
জ্বলে উঠছে উপমা, আগুন?
 
ঘোড়া ফেলে দিচ্ছে আমাকে আর তার জিন;
 
 
তবু বাতাস এক ঘোড়া।
সে ছুটছে আমাকে নিয়ে!
 
 
রাত্রির উপসংহার এলিয়ে পড়ছে মোরগঝুঁটিতে
তার শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে রক্তঘন চিৎকারের নদী
 
 
তখন কোথায় সে?
কোন গাঢ় কুয়োর অতলে তার শব?
 
নেকাবঢাকা কোন শরবনে গিয়ে তাকে খুঁজি!
 
পথের ক্লান্তিহেতু গ’লে যাচ্ছে খুর
আমার ঘোড়ার;
 
 
আমার হৃদয় আজ ঝুলছে অনেক ডালে ডালে
 
 
ঘুম পালিয়ে যাচ্ছে এক জানালা থেকে
আরেক জানালায়
 
ঘোড়া ফেলে দিচ্ছে আমাকে আর তার জিন
 
 
—এক চিৎকারের নদী থেকে আরেক চিৎকারের নদীতে!
 
 
 
 
আলট্রা মেরুন রাত
 
 
তোমাকে খুঁজতে এসে ঝর্নার কিনারে গিয়ে দেখি
সমস্ত জঙ্গল ঘিরে ঠুস্‌কে পড়ছে কালো রাত
 
সাঁকো নেই, চতুর্দিকে নদী;
 
 
জলের ডানার নিচে ওঁতপাতা হাঙ্গর, কুমির
 
 
তদুপরি ভয়! মাংসলোভী কাফ্রিদল
ছুরি আর অজস্র মুষল নিয়ে ঘোরে
 
 
তবু আমি তোমাকে দেখার লোভে
সকল গাছের দৈর্ঘ্য মেপে মেপে ওপরে উঠেছি;
 
চাক্ষুষ প্রমাণহীন সেই ছবি জ্বলবার আগে গেছে নিভে
 
তবু আলট্রা মেরুন রাতে একটি ইঁদারা তার সাক্ষ্যে টলোমল
 
 
হে গরুড়,ক্ষিপ্র ওজনহীন ডানা
তোমার স্ফটিকজলে শুয়ে আমি দেখব আকাশ
 
 
অবসরে কনুইবন্ধের নিচে
মদেচুর লাটাই নাচাব

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত