Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, ভাষা

ভাষার উপনিবেশ বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (পর্ব-৪)

Reading Time: 10 minutes

বাংলা ভাষার উদ্ভব, উনিশ শতকে কলিকাতার সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিতদের দ্বারা সংস্কৃতায়িত বাংলার সৃষ্টি, বাঙালির সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে গত দুইশ বছর ধরে পরতে পরতে লেখা হয়েছে মিথ্যা আর ভুল তথ্যভিত্তিক বানোয়াট ইতিহাস। দুইশ বছর  ধরে আমরা  অইসব ভুল বা বানানো ইতিহাস মেনে নিয়ে এর ভিত্তিতেই পুনরায় আমাদের ভাষা আর সংস্কৃতির বয়ান রচনা করে গেছি। আর এভাবে বাংলা ভাষা পরিণত হয়েছে সংস্কৃতের উপনিবেশে। এই প্রথমবারের মত বানানো ইতিহাসের স্তর খুঁড়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বাঙালি সংস্কৃতির রদবদলের আদত ইতিহাস উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়েছেন উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক ফয়েজ আলম তার “ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস”বইয়ে।

ফয়েজ আলম ঐতিহাসিক ও ভাষাতাত্ত্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দেখিয়েছেন ‘বাংলা ভাষা সংস্কৃতের কন্যা’ এটি সচেতন চেষ্টায় তৈরি একটি মিথ্যা বয়ান, যে মিথ্যা রচনার পিছনে কাজ করেছে ধর্মীয় আবেগ ও উপনিবেশি প্রশাসকদের প্রশ্রয়। আসলে সংস্কৃত এবং বাংলা দুটো ভাষাই এসেছে স্থানীয় ভাষা থেকে (যাকে প্রাকৃত ভাষা বলা হয়ে থাকে)। প্রাচীনকালে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে (বর্তমান পাকিস্তানের অংশ বিশেষসহ) প্রচলিত স্থানীয় ভাষাকে কিছু নিয়মে বেঁধে দেন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির বাসিন্দা পাণিনি নামের এক পন্ডিত; সেটিই পরে ধর্মচর্চা আর ধর্মীয় লেখাজোকায় কাজে লাগানো হয় আর সংস্কৃত ভাষা নাম পায়। এটি কখনো কোনো মানবগোষ্ঠির মুখের ভাষা ছিলো না। একই সময়ে আমাদের দেশে প্রচলিত স্থানীয় ভাষা মানুষের মুখে মুখে স্বাভাবিক রদবদলের নানা ধাপ পার হয়ে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি বাংলা ভাষার আদি রূপ নেয় । সংস্কৃতের সাথে বাংলার কোনো সরাসরি সম্পর্কই নাই। অথচ দুইশ বছর ধরে ভাষার ইতিহাসে আর পাঠ্য বইপুস্তকে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের মা বানিয়ে রাখা হয়েছে। এরকম অনেক বানোয়াট ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছেন ফয়েজ আলম ভাষার উপনিবেশ বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস এই ধারাবাহিকে  আজ থাকছে পর্ব- ৪।


 

বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিবর্তন

বাংলা ভাষা বিকাশের কাল নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। ড: সুনীতিকুমার মনে করেন মগধে অর্বাচীন মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা বা মাগধ অপভ্রংশের কাল হলো ৮০০-১১০০ খ্রিস্টাব্দ। এ ভাষা থেকে প্রাচীন বাংলার বিকাশের সূচনা ১১০০ খ্রিস্টাব্দে। সুকুমার সেন মনে করেন দশম শতাব্দিতে বাংলা ভাষার উদ্ভব। ১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করার পর ড: সুনীতিকুমার ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সাহায্যে এর ভাষাকে বাংলা বলে চিহ্নিত করেন। তিনি এবং হরপ্রসাদ শাস্ত্রী উভয়েই তাদের আগের মতের সাথে মিলিয়ে চর্যাপদকে দশ থেকে বারো শতকের মধ্যকার রচনা বলে  মত প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ড: মুহম্ম্দ শহীদুল্লাহর মত অনেকটাই ভিন্ন। তিনি মনে করেন প্রাচীন বাংলা ভাষার সূচনা ৬৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এবং মাগধী প্রাকৃত থেকে নয়, বাংলার উদ্ভব গৌড়ী প্রাকৃত হতে গৌড়ী অপভ্রংশ হয়ে।২৭  তার মতে  চর্যাপদের রচনাকাল আট থেকে বারো শতক। রাহুল সংকৃত্যায়নও একই মত প্রকাশ করেন। তিনি বিভিন্ন সূত্র থেকে দেখান চর্যাকার সরহপা আট শতকের এবং লুইপা নয় শতকের মানুষ। কাজেই চর্যাপদ রচনার কালপর্বের শুরুটা আট শতকের পরে হতে পারে না। সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষার উদ্ভবের সূচনা কমপক্ষে আট শতক ধরতে হবে।

এ যাবত আলোচনার মর্মার্থ আমরা এভাবে সংক্ষেপে উল্লেখ করতে পারি।  আর্যরাভাষীরা ভারতে এসে বসতি প্রতিষ্ঠার পর ভারতের অধিবাসীদের সাথে ভাব বিনিময়ের প্রক্রিয়ায় স্থানীয়দের ভাষা ও আর্যভাষার মিশ্রণের সূচনা হয়।  এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উদ্ভুত হয় প্রাকৃত ভাষা, ভাষাতাত্ত্বিক পরিভাষায় ‘মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা’। ভারত এক বিরাট দেশ। এই বিরাট দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত স্থানীয় ভাষাগুলোরও ভিন্নতা ছিলো। সে কারণে প্রাকৃত ভাষারও অনেক আঞ্চলিক রূপভেদ দেখা দেয়। এ সময় লেখার রেওয়াজও ছিলো। বিভিন্ন শিলালিপি, স্তম্ভলিপি ইত্যাদি তার প্রমাণ। লিখিত হওয়ার কারণে লিখিত রূপের সাথে মৌখিক রূপের স্বাভাবিক পার্থক্যও দেখা দেয়। প্রথম স্তরের প্রাকৃত ভাষার মধ্যে আছে অশোক-প্রাকৃত ও অন্যান্য শিলালিপি ইত্যাদির ভাষা, পালি ও বৌদ্ধ মিশ্র সংস্কৃত (পরবর্তী সময়ে নামের সাথে কোনভাবে সংস্কৃত শব্দটি জুড়ে দেয়া হলেও এটি প্রাকৃত ভাষা)। আরো পরে প্রথম স্তরের উদীচী অঞ্চলের প্রাকৃত ভাষার উপর নিয়ম-কানুন চড়িয়ে পন্ডিত পাণিনী তৈরি করলেন সংস্কৃত ভাষার নমুনা, ৩০০/৩৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের কাছাকাছি। কাজেই বলা যায় সংস্কৃত হলো নিয়মের নিগড়ে আবদ্ধ স্থানীয় ভাষা প্রাকৃতের এক রূপ, যা কেবল লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বিতীয় স্তরের প্রাকৃত ভাষাগুলো হলো মাহারাষ্ট্রী, শৌরসেনী, অর্ধ-মাগধী, মাগধী, গৌড়ীয়, পৈশাচী। গৌড়ীয় প্রাকৃত ক্রমে রূপান্তরিত হয়ে গৌড়ীয় অপভ্রংশে পরিণত হয়। গৌড়ীয় অপভ্রংশ থেকে সাত-আট শতকের দিকে বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপের সূচনা। সুতরাং বাংলা ভাষার বিবর্তন রেখাটি এরকম: (স্থানীয় ভাষা+বৈদিক) > গৌড়ী প্রাকৃত > গৌড়ীয় অপভ্রংশ > প্রাচীন বাংলা।

১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগারে ২৩ জন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যের রচিত সাড়ে  ছেচল্লিশটা পদ নিয়ে তালপাতায় লেখা বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রাচীন রচনা চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ”হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা” নামে। প্রকাশের পর থেকে এ ভাষার প্রাচীনত্ব এবং লেখার কাল নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার সেন প্রমুখ মনে করেন তালপাতার বইটি ১২ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে লেখা। ১১৯৯ সালে অনুলিখন করা পঞ্চাকার পুঁথির লেখার সাথে মিল দেখে তারাপদ মুখোপাধ্যায় চর্যাপদের লেখার কাল বারো শতকের শেষার্ধ্ব বলে মত প্রকাশ করেছেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন চর্যাপদের রচনাকাল আট থেকে তের শতক পর্যন্ত বলে মত দিয়েছেন। ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহও মনে করেন চর্যাপদগুলি আট থেকে বারো শতকের মধ্যে রচিত। পরবর্তীকালে চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদসহ টীকা এবং নানা তথ্যসূত্রও আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে চর্যাপদ নামেই এটি পরিচিত। আমাদের আলোচনায় চর্যাপদ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ রচনা। কারণ এ বইয়ের ভাষিক নমুনা থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারব সূচনাপর্বে বাংলা ভাষার রূপ কেমন ছিলো।

চর্যাপদের ভাষায় সংস্কৃত শব্দ নেই বললেই চলে। বিভিন্ন চর্যায় ব্যবহৃত সংস্কৃত শব্দের পরিমাণ ৫-১০ শতাংশ মাত্র। চর্যাপদের বেশির ভাগ শব্দই প্রাকৃত ও বাংলা, অন্যান্য ভাষার শব্দও কিছু আছে। এ ছাড়া ধ্বনিতত্ত্ব. রূপতত্ত্ব ও শব্দভান্ডারে মুন্ডা ভাষার ব্যাপক প্রভাব দেখিয়েছেন ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।  বেদের ভাষায় পাওয়া যায় না এমন অনেক শব্দকেও সংস্কৃত শব্দ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অথচ এসব শব্দ স্থানীয় ভাষার হওয়ারই কথা। 

বাংলা ভাষার সূচনা পর্বে সংস্কৃতের বিশেষ কোনো প্রভাব পড়ে নাই। উপরে আমরা সংস্কৃত শব্দের যে হিসাব পেয়েছি তার অনেকগুলোই  প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে বাংলায় ঢুকেছে। প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ বিভিন্ন পর্যায়ে সাহিত্যের ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্ভবত তখনই প্রথমে সাহিত্যিক রূপে, পরে সাহিত্যিক রূপ হতে কথ্য প্রাকৃত ও কথ্য অপভ্রংশে সংস্কৃত শব্দের অনুপ্রেবেশ ঘটে থাকবে।

তাছাড়া বুৎপত্তি নির্নয়ের সময় সংস্কৃতকে ধরা হয়ে থাকে শব্দের প্রাচীনতম উৎস হিসাবে। প্রাকৃতের যে-সব শব্দ পন্ডিতদের হাতে বদলে গিয়ে সংস্কৃতে জায়গা করে নিয়েছে সেগুলোকেও ভুলভাবে সংস্কৃত শব্দ বলেই গণ্য করা হয়। এই নিয়ে একটু বিস্তারিত বলা দরকার। সংস্কৃত, প্রাকৃত, অপভ্রংশ, বাংলা ইত্যাদি ভাষা বা ভাষাস্তরের প্রাচীনত্ব নিয়ে যে সব কথাবার্তা হচ্ছে তার বেশিরভাগই অনুমান ভিত্তিক বা ‘ধরে নেয়া’। যেমন সংস্কৃতে লেখা সবচেয়ে প্রাচীন পান্ডুলিপির বয়স মাত্র ৮০০ বছরের কাছাকাছি। পাথুরে লেখা,  দেয়াললেখা ইত্যাদি কিছু আছে। সেগুলোকে প্রমাণক ধরলেও সংস্কৃতের নমুনার প্রাচীনত্ব খুব বেশি পেছনে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। কিন্তু প্রাকৃত ভাষার নমুনা আছে আরো হাজার বছর বা তারও বেশি আগের, অশোকের স্তম্ভলেখা, পাথুরে লেখা ইত্যাদিতে। কাজেই স্বাভাবিক হিসাবে প্রাকৃতকেই বেশি পুরানা ধরে নেয়ার কথা ছিলো। আমরা আগে ব্যাখ্যা করেছি কি কারণে সংস্কৃতকে প্রাকৃতের চেয়ে পুরানা ভাষা বলে প্রচার করা হয়েছে।


আরো পড়ুন: ভাষার উপনিবেশ বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (পর্ব-৩)


যাই হোক, শব্দভান্ডার ও শব্দের রূপ বিশ্লেষণের সময় এসব আনুমানিক কথার উপর নির্ভর করার সুযোগ নাই। যেহেতু লিখিত প্রমাণ রয়ে গেছে যে, পাণিনী তার সময়ে প্রচলিত প্রাকৃত ভাষার নমুনা নিয়ে কিছু নিয়মকানুনে সাজিয়ে সংস্কৃত ভাষা তৈরি করেছেন, তাই অস্বীকার করার উপায় নাই যে, প্রাকৃত হতে সংস্কৃতের উদ্ভব। এরপর মধ্যযুগ থেকে সংস্কৃতের সাহিত্যিক নমুনা পাওয়া যাচ্ছে। কালিদাস কিংবা যার কথাই বলি কারোরই মূল প্রাচীন রচনা পাওয়া যায়নি, পাওয়া গেছে অনেক পরের সময়ের লেখা পান্ডুলিপি। সংস্কৃতপ্রেমীরা দাবী করেন পান্ডুলিপি পরের কালে লেখা হলেও তার ভাষা অনেক আগের। এ দাবী আজগুবি। ৬ কিংবা ৭ শ বছর আগে লেখা পান্ডুলিপির ভাষাকে আড়াই বা তিন হাজার বছরের পুরানা ভাষা বলে দাবী করার মধ্যে কোনো কান্ডজ্ঞানের পরিচয় থাকে না। বইগুলা যদি ধর্মীয় রচনা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে একটা সম্ভাবনা আছে যে এসব বইয়ের মন্ত্রাদি মুখস্ত করে বংশ পরম্পরাক্রমে শেখানো হয়েছিলো। অনেকটা সেইসব সাহিত্যিক রচনার মত যেগুলোকে আমরা লোকসাহিত্য বলি। কিন্তু এভাবে একটা রচনা দুইএকশ বছর কিংবা বড়জোর তিনচারশ বছর অবিকৃত থাকতে পারে। লোকসাহিত্য বিশ্লেষণে এই পরিবর্তন খুব স্পষ্টভাবে ধরা পরে। তাই কোনো রচনা মুখে মুখে চলে আসার সময় প্রতি কয়েকশ বছর পর পরই কালের ভাষার উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে, কাহিনী রূপান্তরিত হবে, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর চিন্তা-রুচির ছাপ পড়বে। এভাবে মূলের অনেক কিছুই হারিয়ে যাবে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারাবে ভাষার ধরণ। অথচ সাতশ বছর আগের লেখা পান্ডুলিপির ভাষাকে দাবী করা হচ্ছে আড়াই তিন হাজার বছরের পুরানা ভাষা বলে!

বরং যৌক্তিক কথা হচ্ছে যে-যুগে পান্ডুলিপিটি লেখা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সেই যুগে প্রচলিত ভাষার ব্যাপক প্রভাব থাকবে পান্ডুলিপিতে। কাজেই অনেক পরের কালের লেখা সংস্কৃত পান্ডুলিপিতে ব্যবহৃত শব্দ মাত্রই সংস্কৃত এ দাবী করা যায় না। তাছাড়া, প্রাকৃত থেকে উদ্ভুত বলে সংস্কৃতের বেশিরভাগ শব্দই প্রাকৃতজাত। সুতরাং প্রাথমিকভাবে, আর্য ভাষার উপাদান হিসাবে শুধু সেইসব শব্দগুলোকেই সংস্কৃত বলে দাবী করা যায় যেগুলো বেদের ভাষায় আছে। প্রাথমিকভাবে বললাম এজন্য যে, বেদের প্রাপ্ত পান্ডুলিপিও খুব পুরানা নয়, কোনো কোনোটা ৪/৫ শ বছর আগে লেখা। এসব পান্ডুলিপিতে সমকালের ভাষা খুব প্রভাব ফেলেছে ধরে নেয়া যায়। ধরা যাক, ঋকবেদের যে পান্ডুলিপিটি ৪০০ বছর আগে লেখা হয়েছে তার ভাষা কি আড়াই হাজার বছর আগের ভাষা হতে পারে? বেদকে পবিত্র মন্ত্রাদির সংকলন ধরে নিলেও দীর্ঘ দুই হাজার বছর মানুষের মুখে মুখে চলে আসার সময় তার ভাষা বদলাবে না? মুখে মুখে চলে আসার সময় এবং লিখিত হওয়ার সময় প্রাকৃতিক কারণে ভাষা বদলে গিয়ে নতুন চলমান ভাষার ছাপ ধারণ করবে।

আর্য ভাষা ও সংস্কৃতের প্রাচীনত্ব উল্লেখ করার সময় একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া হয় এই পরিবর্তনের বিষয়টি। বরং ১২ শতক বা ১৫ শতকে লেখা বেদ বা রামায়ন কিংবা মহাভারত-এর ভাষাকে বলা হয় তিন হাজার বছরের পুরানা ভাষা। এবং সেই রচনার সকল শব্দকেই আর্য ভাষার শব্দ অতএব সংস্কৃত শব্দ বলে চিহ্নিত করা হয়। অথচ ফোর্ট উইলিয়ামী বাংলায় পাণিনীর ব্যাকরণের অনুসরণে বহু প্রাকৃতজাত ও পরিবর্তিত সংস্কৃত শব্দকে পুনরায় পরিবর্তন করে খাঁটি সংস্কৃত শব্দ হিসাবে পুনর্গঠিত করা হয়েছে। সুতরাং চর্যাপদের যেসব শব্দকে সংস্কৃত শব্দ মনে করা হয় তা আদতে স্থানীয়দের ভাষার শব্দও হতে পারে, অর্থাৎ প্রাকৃতের শব্দ হতে পারে পরে যাকে ‘পরিশুদ্ধ’ করে (পাণিনীর কায়দায় বদলে দিয়ে) সংস্কৃতে জায়গা দেয়া হয়েছে। কাজেই চর্যাপদে সংস্কৃত হিসাবে চিহ্নিত সব শব্দ সংস্কৃত কি না সেটিও ব্যাপক গবেষণার বিষয়। আমরা আপাতত ধরে নিলাম চর্যাপদের ৫-১০ শতাংশের এর মত শব্দ সংস্কৃত ।  

১২০০ খ্রিস্টাব্দের পরে এদেশে মুসলমানদের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সেইসূত্রে মধ্যএশিয়া, ইরান, আরব প্রভৃতি অঞ্চলের মানুষের অভিবাসন বাংলা ভাষায় ব্যাপক ও অনিবার্য রূপান্তর আনার মতো ঘটনা। এদেশে মুসলমানরা ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। ষোল শতকের শুরু থেকে আসতে থাকে পর্তুগিজরাও। আসে ওলন্দাজ, ফরাশি, ইংরেজ। ভারতে আর্যদের বসতি স্থাপনের সময় যা ঘটেছিলো এবারে নবাগতদের আগমণে একই ঘটনা ঘটে। মধ্যএশীয়, ইরানী, আরব, ইউরোপ প্রভৃতি অঞ্চলের মানুষদের সাথে স্থানীয়দের ভাব বিনিময়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আগতদের ভাষার শব্দ ও বাগবিধিসহ বিভিন্ন উপাদান ধীরে ধীরে বাংলা ভাষায় জায়গা করে নেয়। এ পরিবর্তন যতটা না লিখিত ভাষায় হয় তার চেয়ে বেশি ঘটে কথ্যবাংলায়। কারণ মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্য বলতে প্রধানত ধর্মীয় সাহিত্য ও প্রেমকাহিনী নির্ভর কাব্য বোঝায়। এর সাথে যুক্ত হয় বৈষ্ণব পদাবলী, যা একরকম ধর্মীয় সাহিতই। ধর্মীয় রচনা বরাবরই রক্ষণশীল। তার উপর কাব্য চর্চার ভাষার একটা রীতি যুগ থেকে যুগে অনুসরণের মাধ্যমে চলে আসার কারণে তার পরিবর্তন হয় ধীরে।

কিন্তু ভাববিনিময়ের প্রয়োজনে মুখের ভাষার পরিবর্তন আসতে পারে মুহূর্তের মধ্যে। এ প্রক্রিয়ায় পরবর্তী ৫০০ বছরে কথ্যবাংলায় এবং সেইসূত্রে লেখন রীতিতে প্রচুর পরিমাণে আরবী-ফারসি এবং কিছু পরিমাণে ইউরোপীয় ভাষার শব্দ, বাগবিধি, উপসর্গ, অনুসর্গসহ বিভিন্ন ভাষিক উপাদান জায়গা করে নেয়। এ সময় বাংলার শাসকরা দিল্লীর বিরেুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা করেন। ফলে স্বভাবতই তাদের টান দেখা দেয় বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি। এসময় দরবারী পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু-মুসলিম দুই দলেরই লেখকদের হাতে ফলে উঠে বাংলা সাহিত্যের বিপুল শস্য। এভাবে বাংলাদেশের ভাষা সামাজিক কারণেই বিবর্তিত হয়ে আঠারো শতক নাগাদ যে রূপ লাভ করে সেটিই প্রাক-উপনিবেশী বাংলা ভাষার মূলরূপ। মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে এবং সর্বশেষ আঠারো শতক ও উনিশ শতকের প্রথমার্ধের বইপত্র থেকে আমরা সেই ভাষার লিখিত রূপটা পাই যদিও তার মধ্যেও দুএকটা আঞ্চলিক বৈচিত্র দেখা দিয়েছিলো।

মধ্যযুগের শেষপর্বে বাংলা ভাষার রূপ ও বৈচিত্র কি রকম ছিলো তার একটা আভাস পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্রে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন:

আমাদের সমাজে সেকালে ভদ্র সমাজে তিন প্রকার বাঙ্গালা প্রচলিত ছিলো। মুসলমান নবাব ও ওমরাহদিগের সহিত যে সকল ভদ্রলোকের ব্যবহার করিতে হইত, তাঁহাদের বাঙ্গালায় অনেক উর্দ্দু মিশান থাকিত। যঁ^াহারা শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করিতেন তাহাদের ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ ব্যবহৃত হইত। এই দুই ক্ষুদ্র সম্পদ্রায় ভিন্ন বহুসংখ্যাক বিষয়ী লোক ছিলেন। তাহাদের বাঙ্গালায় উর্দ্দু ও সংস্কৃত দুই মিশান থাকিত। কবি ও পাঁচালিওয়ালারা এই ভাষায় গীতি বাঁধিত। মোটামুটি ব্রাহ্মণ পন্ডিত, বিষয়ী লোক ও আদালতের লোক এই তিন দল লোকের তিন রকম বাঙ্গালা ছিলো। বিষয়ী লোকের যে বাঙ্গালা তাহাই পত্রাদিতে লিখিত হইত, এবং নিম্ন-শ্রেণির লোকেরা ঐরূপ বাঙ্গালা শিখিলেই যথেষ্ট জ্ঞান করিত। কথক মহাশয়েরা বহুকালাবধি বাঙ্গালায় কথা কহিয়া আসিতেছেন। তাহারা সংস্কৃত ব্যবসায়ী, কিন্তু তাহারা যে ভাষায় কথা কহিতেন তাহা প্রায়ই বিশুদ্ধ বিষয়ীলোকের ভাষা।২৯ 

হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সুচিন্তিত মতামত সে কালের বাংলা ভাষার প্রকৃত অবস্থাটা নিখুঁত ভাবে নির্দেশ করে। সে কালে মুসলমান আমির-ওমরাহ-কাজীদের প্রায় সবাই ছিলেন অবাঙালি, নিচের দিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অনেকে ছিলেন উত্তর-ভারতের মানুষ। এদের সাথে কায়কারবারের ভাব বিনিময়ের জন্য স্থানীয় বাঙালিরা যে ভাষা ব্যবহার করতো তাতে প্রচুর উর্দ্দু শব্দের মিশাল থাকারই কথা। শুরুতে অবঙালিরাও প্রয়োজনে বাংলা ভাষা বুঝতে শিখেছে, আর তারা যাতে কথাবার্তা সহজে বুঝতে পারে সেজন্য বাঙালিরাও তাদের কথাকে হুজুরদের বোধযোগ্য করে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। এই যৌথ চেষ্টায় জন্ম নেয় আমির-ওমরাহ-আদালতের ব্যবহার্য ভাষা।

অন্যদিকে, শাস্ত্র ব্যবসায়ী ব্রাহ্মণদের শাস্ত্র ব্যবসায়ের একটা ভাষার কথা বলেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যেটি প্রচুর সংস্কৃত শব্দবহুল। শাস্ত্র ব্যবসায়ী ব্রাহ্মণরা শাস্ত্র-ব্যবসার কাজে এ ভাষা ব্যবহার করতেন। কিন্তু কথা বলতেন সাধারণ মানুষের মতই, সাধারণের ভাষায়। তৃতীয় একটা ভাষারীতির কথা বলেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যেটি সাধারণ মানুষের ভাষা। একে বলেছেন বিষয়ী লোকের ভাষা, যাতে উর্দ্দু (আরবী, ফারসী) ও সংস্কৃত দুই-ই পরিমাণ মত থাকতো। অর্থাৎ মুসলমানরা এদেশে বসতি করার পর মোটামুটি ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাভাবিক সামাজিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা সাধারণ মানুষের ব্যবহারে যে রূপ পায় সেটিই হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বিষয়ী লোকের ভাষা, আমরা একটু আগেই যে বাংলা ভাষার কথা বলেছি। শাস্ত্রী মহাশয় এই ভাষার নমুনা হিসাবে কবি ও পাঁচালিওয়ালাদের রচনা, সাধারণের চিঠিপত্র, চিঠা ইত্যাদির কথা নির্দেশ করেছেন।

এখানে একটা বিষয় মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করা দরকার। শাস্ত্রী মহাশয় নির্দেশিত ভাষার কালটা আঠারো শতকের শেষাশেষি এবং উনিশ শতকের সূচনা। এর আগে বাংলা ভাষার লিখিত রূপে খানিকটা ভিন্নতা এসেছিলো, যা উল্লেখ না করলে আলোচনাটা পুরা হয় না। চৌদ্দ, পনর, ষোল শতক পর্যন্ত সকল ধর্মীয় রচনা এবং ধর্মনিরপেক্ষ রচনার ভাষা কিন্তু আঠারো শতকের বাংলা ভাষার তুলনায় একটু বেশি সংস্কৃত নির্ভর। এর কারণও আছে। চর্যাপদের রচনায় আমরা দেখি সংস্কৃতের ব্যবহার কম, বাংলা শব্দ ও বাগবিধি বেশি। চর্যাপদের কালের পর পর অথবা শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে সেনবংশ। এই সেনেরা বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মচর্চায় নানা ভাবে হস্তক্ষেপ করে যা অনেকের জানা। এদের সময় বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মের জাতপাতের বিধান ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। বল্লাল সেনের উদ্যোগে পেশার ভিত্তিতে বহু নিম্ন-বর্ণে বিভিক্ত হয় হিন্দুধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষ। দেখা দেয় একটা রক্ষণশীল ও ধর্মীয় নির্যাতক সমাজ ব্যবস্থা যার মাথায় বসে থাকে রাজবংশ ও ব্রাহ্মণরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শাস্ত্রাদি চর্চা বাড়ে, তাই সংস্কৃত চর্চা বাড়ে। এ সময়েই লক্ষণসেনের রাজসভায় গোবর্ধন আচার্য, শরণ, ধোয়ী, ও উমাপতিধরের সাথে জয়দেবও সংস্কৃত কবি হিসাবে বিখ্যাত হন। এদের মধ্যে বাঙালি জয়দেবের খ্যাতি সবচেয়ে বেশি, যদিও একটি বাংলা কবিতাও তিনি রচনা করেননি। হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রাদির চর্চা এবং সেইসূত্রে সংস্কৃত সাহিত্য চর্চার একটা আদর্শ পরিবেশ তখন তৈরি হয়েছিলো যা রাজসভা থেকে শুরু করে পল্লীকেন্দ্রগুলো পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

এর পর পর মুসলমানরা বাংলার ক্ষমতায় এলেও আরো দুএকশ বছর সমাজ চলছিলো আগের নিয়মেই। কারণ মূল রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো মুসলমানরা, নিচের দিকে ভূস্বামী-জোতদাররা হিসাবে ছিলো আগেই জাঁকিয়ে বসা উচ্চশ্রেণীর হিন্দু। মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় তখন বাংলা কাব্য চর্চা নতুন করে সূচিত হয়। এ সময়ের বাংলা চর্চায় মূল ধারার সংস্কৃত কাব্যের প্রভাব তাই খুবই স্বাভাবিক।  এজন্য দেখা যায় সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রের ও ভাষার প্রভাব বাড়ছে পনর, ষোল শতকে রচিত কাব্যগুলোতে। চর্যাপদের সাধারণ মানুষের ভাষার আধিপত্য খর্ব হয়েছে। এর আরো একটা কারণ হলো মধ্যযুগের সাহিত্যের বেশির ভাগটাই ধর্মীয় সাহিত্য, বিভিন্ন ধর্মীয় আখ্যানের বিবরণ যার অনেকগুলোর মূল আবার সংস্কৃত ভাষায়। সে সময় অল্পকিছু মুসলিম কবির হাতে রচিত হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম-মুক্ত বা তথাকথিত স্যেকুলার সাহিত্য। কিন্তু মুসলমান কবিদের সামনে শিক্ষণীয় নমুনা বলতে ঐ সব ধর্মীয় সাহিত্যই। ফলে এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই এসব রচনায় সংস্কৃতের প্রভাব বেশি পড়েছে।

অন্যদিকে, বাংলা ভাষায় মুসলমানদের বসতি করার কারণে আরেকটা বড় পরিবর্তনের সূচনাও হয় তখন। বহিরাগত মুসলমানদের ভাষার সাথে মিশতে শুরু করে স্থানীয়দের ভাষা। মুখের ভাষায় অন্য ভাষার ্প্রভাব লক্ষ্যযোগ্য হতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু লেখনরীতিতে তার প্রভাব পড়তে লম্বা সময় লাগার কথা। আমরা লক্ষ করি সতর শতক থেকে কাব্যচর্চায় সংস্কৃতের প্রভাব আবার কমতে শুরু করে। এ ভাবে আঠারো শতকে এসে বাংলা ভাষা একটি বিশিষ্ট রূপ নেয়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যেটাকে বলেছেন বিষয়ী লোকের ভাষা বা সাধারণ মানুষের ভাষা। কবি ও পাঁচালিওয়ালাদের রচনা, সাধারণের চিঠিপত্র, চিঠা ইত্যাদি এই ভাষার নমুনা।  

১১৯৪ সালে গভর্ণর জেনারেলের কাছে ভদ্রলোক বাঙালিদের লেখা এক আর্জির নমুনা তুলে ধরেছেন শ্রীপ্রমথনাথ বিশী তার বাংলা গদ্যের পদাঙ্ক বইয়ে। লিখেছেন যে:

খুব সম্ভবত এই হচ্ছে তৎকালীন শিষ্ট সমাজের ভাষা, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যাকে বলেছেন বিষয়ীলোকের ভাষা। এতে ফারসি, বাংলা, সংস্কৃত (এবং ইংরেজী) সমস্ত মিশেল ঘটেছে আর কোন একটা দিকে ঝোঁক না থাকায় ভারসাম্য ঘটে আগের নমুনাগুলোর (ধর্মীয় রচনা ও আদালতের চিঠিপত্রর) চেয়ে সরল ও সুবোধ্য হয়ে উঠেছে। আরও একটি কথা: পরবতী কালের ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকদের অনেকের ভাষার চেয়ে এ ভাষা সরলতর।৩০ 

প্রমথনাথ বিশী যে ভাষার কথা লেখলেন সেটি আঠারো শতকের শেষের নমুনা। আমরা জানি বাংলা ভাষা তখন অচিরেই এক রাহুর মুখে পড়তে যাচ্ছে। সেই রাহুর নাম ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিতদলের জোট। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভাষায় “যাহারা শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করিতেন, তাহাদের ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ ব্যবহৃত হইত”;  দুর্ভাগ্যক্রমে ধর্মীয় শাস্ত্রাদি অধ্যয়নকারী এই শ্রেণীটির হাতেই বাংলা বই লেখার ভার দেয় ইংরেজরা। বাংলাদেশের ভাষার কি হলো না হলো সে বিষয়ে তো উপনিবেশী শাসকের মাথাব্যথা নাই। তার প্রয়োজন ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা শেখানোর জন্য বইপত্র। তাই হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর দ্বারা নির্দেশিত যে-বাংলা বাঙালি জাতির প্রধান ভাষা ছিলো তা পাশ কাটিয়ে নতুন এক ভাষা তৈয়ার করা হলো, যার মূল উপাদান সংস্কৃত শব্দভান্ডার আর তার ব্যাকরণ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>