Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,ভূতের

গীতরঙ্গ লোকগাঁথা: ভূতের বিয়ে চীনের প্রথা

Reading Time: 3 minutes

এ আবার কেমন আজব বিয়ের প্রথা? মৃতকে বিয়ে দেওয়া হয় জীবিত একজনের সঙ্গে। আর এ নিয়ম পালিত হয়ে আসছে বিগত ৩ হাজার বছর ধরে। শুধু তা-ই নয়, দু’জন মৃত ব্যক্তির সঙ্গেও বিয়ের রীতি রয়েছে সেখানে।

চীনের শানসি প্রদেশে এমন বিয়েকে বলা হয় ‘ঘোস্ট ম্যারেজ’ বা ‘ভূতের বিয়ে’। যদি কোনো পুরুষ বা নারী অবিবাহিত অবস্থায় মারা যান; তখন তাদের জীবিত একজন নারী বা পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। রীতি অনুসারে, মৃত ব্যক্তির জন্য বিবাহযোগ্য কাউকে না পেলে অন্য এক মৃতের সঙ্গে বিয়ে দেয় পরিবার।

jagonews24

এমন বিয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে যৌতুক প্রথা। কনের পরিবার বড় অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন বরের পরিবারের কাছ থেকে। যদিও বয়স, শ্রেণি ও বংশ মর্যাদার ওপর নির্ভর করে যৌতুকের বিষয়টি। ভূত বিয়ের দিন উভয় পরিবারই একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

উৎসব হিসেবে তারা ‘ভূত বিয়ে’ পালন করে থাকেন। সারাদিন অনুষ্ঠান ও খাওয়া-দাওয়ার পর মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে মৃত নারীর শরীরের হাড় পুরুষের কবরে দেওয়া হয়। যদিও দু’জনের আলাদা কবর দেওয়া হয়ে থাকে।

jagonews24

ভূত বিয়ের সময় এসব পরিবার সাধারণত একজন ধর্মযাজকের সঙ্গে পরামর্শ করেন। মৃত অবিবাহিত নারীরকে যখন ভূত বিয়ে দেওয়া হয়; তখন বর নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘটে আজব কাণ্ড। একটি লাল রঙা বড় খামের মধ্যে অর্থ ঢুকিয়ে রেখে দেওয়া হয় রাস্তার মাঝখানে। যদি কোনো পুরুষ খামটি উঠিয়ে নেন; তাকে জোর করে মৃত নারীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। এমনকি ওই বরের পরিবার থেকে অর্থও আদায় করা হয়।

ভূত বিয়েতে মৃতকেও যেমন সাজানো হয়; তেমনই জীবিতকেও। জাকজমকতার অন্ত থাকে না এমন বিয়েতে। বিয়ের সময় মৃত নারীকে পরানো হয় সাদা রঙের গাউন। সেইসঙ্গে ভারি গয়না দিয়ে সাজানো হয়। অন্যদিকে বরকেও সাজানো হয় পরিপাটি করে। চীনের বেশ কিছু এলাকায় এমন রীতি পালিত হয়। এমন বিয়ের মূল ভাবনা হলো, ‘মৃত্যুর পরও কেউ একা নয়’।

jagonews24

এ কারণে হাজার হাজার বছর ধরে এমনই কুসংস্কারে ডুবে আছে চীনারা। ভয়ানক বিষয় হলো, এ ভূত বিয়ের জন্য অনেকে পাত্র-পাত্রী না পেয়ে অবশেষে কবরস্থান থেকে মৃতদেহও চুরি করে থাকেন। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। ২০১৫ সালে শানসি প্রদেশের একটি গ্রাম থেকে ১৪ জন নারীর মরদেহ চুরি হয়। অনেকে অর্থের লোভে লাশ চুরি করে বিক্রি করে দেন ওইসব পরিবারের কাছে; যাদের ভূত বিয়ের প্রয়োজন।

২০০৮-২০১০ সাল ধরে গবেষণা চালিয়ে চীনের সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা বিভাগের প্রধান হুয়াং জিংচন বলেন, ‘মৃত নারীর লাশ অনেক টাকার বিনিময়ে বেচা-কেনা করা হয়। ৩০-৫০ হাজার ইউয়ানে বিক্রি হয় এসব চুরি করা লাশ। কিছু কিছু পরিবার এমন রীতি মানতে ১০ লাখ ইউয়ান দিয়েও চুরি করা মৃতের লাশ কিনেছে।’

jagonews24

মঙ্গোলিয়ার লিয়াংচেং কাউন্টিতে পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন ২০০৬ সালে। তিনি এক নারীকে খুন করে তার লাশ বিক্রি করে দেন ভূত বিয়ের জন্য। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে চাইনিজ ঘোস্ট ম্যারেজকে কেন্দ্র করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের কয়েকটি জেলায় যেমন শানসি প্রদেশ; সেখানে প্রায় যুবক কয়লা উত্তোলনের কাজ করেন। আর এ কাজে মৃত্যুঝুঁকিও অনেক। তাই সেসব এলাকার অনেক যুবক অল্প বয়সেই মারা যান। আর এভাবে যদি কোনো যুবকের মৃত্যু হয়; তখন ঘটা করে তার সঙ্গে জীবিত বা মৃত নারীর বিয়ে দেওয়া হয়।

jagonews24

এক্ষেত্রে যুবকের পরিবার বড় অঙ্কের অর্থ কিংবা সম্পদ দিয়ে জীবিত নারীকে খুঁজে বের করেন। বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের নারীরা ভূত বিয়ে করে স্বামী ছাড়াই শ্বশুর বাড়িতে বিধবা হয়ে দিন কাটায়।

অনেক চীনা উপজাতিরা বিশ্বাস করেন, মৃতদের ইচ্ছা পূরণ করা না হলে পরিবারের বাকিদের উপর দুর্ভোগ নেমে আসে। এজন্য মৃত ব্যক্তিকে শান্তি দেওয়ার জন্য ভূত বিয়ের আয়োজন করা হয়। এমন রীতি উত্তর ও মধ্য চীন, শানসি ও হেনান প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় পালন হয়ে আসছে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>