| 16 এপ্রিল 2024
Categories
চিত্রকলা

ভ্যান গখ ও পিকাসো । ঋজু ঘোষ

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

জগজিৎ সিং-এর মৃত্যুর পর স্ত্রী চিত্রা সিং এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে গানের জগতের নামীদামি শিল্পীরা আসেন ও গানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জগজিৎ সিং অজাতশত্রু পুরুষ ছিলেন। শিল্পীরাও মন উজাড় করে তাঁদের শ্রেষ্ঠ নিবেদন করে গেছেন। রাশিদ খান গেয়েছিলেন বড়ে গুলাম আলীর ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’। এরচেয়ে ভালো গান বাছা যেত না। বদলে রাশিদ খান নিজের একটি গান গাইতেই পারতেন, না, তিনি বেছেছিলেন এমন এক শিল্পীর শ্রেষ্ঠতম ঠুংরি যা ভূ-ভারতে বিরল। আর কথাগুলির তো তুলনাই নেই। সেরা ও সঠিক নির্বাচন। এক শিল্পীর মৃত্যুতে আরেক মৃত শিল্পীর কাজ দিয়ে একজন জীবিত শিল্পী শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,
The Death of Casagemas, 1901, Picasso

এইরকম ঘটনা খুব কম ঘটে। বহুদিন আগে পিকাসো এইরকমই একটি ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় বন্ধু কার্লোস কাসাগেমাস-এর মৃত্যুর পর। কাসাগেমাস ও পিকাসো প্রায় সমবয়সী ছিলেন। দু’জন মিলে প্যারিসে আসেন ও একসাথে এক ষ্টুডিও ভাড়া করেন। এরপর তারা স্পেনে ফিরে যান এক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে। কাসাগেমাসের ব্যবহারে বিরক্ত পিকাসো তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করেন। কাসাগেমাস এরপর একাই প্যারিসে ফিরে আসেন। এরমধ্যে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। কাসাগেমাস ভালোবাসতেন জারমেইন নামে এক অসামান্যা সুন্দরীকে। নানা ঘটনাক্রমে জারমেইন কাসগেমাসকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলে এক নাটকীয় নৈশভোজে কাসাগেমাস প্রথমে জারমেইনকে হত্যা করার চেষ্টা করে বিফল হন ও পরে নিজে আত্মঘাতী হন।

এর কয়েক মাস পর পিকাসো প্যারিসে ফিরে আসেন। স্টুডিওতে একা পিকাসোকে কাসাগেমাসের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াত। এই ঘটনা তাঁর জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন আনে। এই সময় পিকাসো যেসব ছবি আঁকেন তাঁর বেশিরভাগেই নীল রঙের আধিক্য দেখা যেত। যা পিকাসোর আঁকার “ব্লু-পিরিওড” নামেও পরিচিত। “কাসাগেমাসের অন্ত্যেষ্টি” ও মৃত কাসাগেমাসকে পিকাসো এইসময় বেশ কিছু ছবিতে আঁকেন। প্রসঙ্গত যখন পিকাসো ও কাসাগেমাস একসাথে প্যারিসে স্টুডিও ভাড়া করে থাকতেন তখন মডেল ভাড়া করার মত পয়সা না থাকায় পিকাসো কাসাগেমাসকেই মডেল করে কিছু পোর্ট্রেট এঁকেছিলেন।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
Self Portrait, Gogh

এরমধ্যে একটি ছবি পিকাসো ভিন্সেন্ট ভ্যান গখের মত করেই এঁকেছিলেন। গখের প্যাটিশ বলা যায় এই কাজকে। কাসাগেমাসের মৃত্যুর পরে পিকাসো মাদ্রিদ থেকে ফিরে এলে প্রদর্শনীর জন্যে ছবি তৈরির চাপে থাকতেন। সেই সময়কার আবেগ অনুভূতি তাই পিকাসোর ছবিতে বারবার প্রকাশ পেয়েছে। পিকাসোর ছবি ধারাবাহিকভাবে দেখলে তাই মনে হবে আমরা যেন কারোর দিনলিপি পড়ছি। পিকাসো কাসাগেমাসের সাথে ভ্যান গখের মিল পেয়েছিলেন। ভ্যান গখও অবসাদগ্রস্থ হয়ে আত্মঘাতী হন। তাই কাসাগেমাসের মধ্যে পিকাসো গখ-কেই দেখতে পান। এঁকে ফেলেন গখের চেয়ার ও আত্মপ্রতিকৃতির অনুকরণে “মৃত্যুশয্যায় কাসাগেমাস”। মনে করা হয় পিকাসো ও কাসাগেমাস একসাথে কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া গখের প্রদর্শনী দেখেছিলেন। গখের এক্সপ্রেশনিস্ট ধারা পিকাসোর পক্ষে উপেক্ষা করা সহজ ছিল না। পিকাসোও সেজানকে তাঁর গুরু বলে মানতেন। আর সেজান গখেরও ভাবগুরু ছিলেন। এইসব মিলে পিকাসো যা সৃষ্টি করলেন তা বাকীদের থেকে একদম আলাদা।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,ভ্যান গখ ও পিকাসো
van Gogh’s Chair

পিকাসো নিজে বহু শিল্পীদ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কিন্তু সেই অনুপ্রেরণা পিকাসোর হাতে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত