ধারাবাহিক: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-৬) । জয়তী রায় মুনিয়া
মধ্যবয়স সাফল্যের সুনামি আগ্রাসন
বন্ধুরা! সু স্বাগতম
চিন্তামণির দরবার খুলে গেল আজকের জন্য।
ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে মাথা নিচু করতে হয় মৃত্যুর কাছে। বিখ্যাত হোন বা পথের ভিখিরি… এই একজায়গায় সকলে সমান। সকলেরই বস্ত্র উন্মোচন করে উলঙ্গ হয়ে মুছে যেতে হবে পৃথিবী থেকে। তবে কিসের অহংকার? কিসের এত অভিনয়? নিন্দা স্তুতি খ্যাতি অখ্যাতি সমস্ত পড়ে থাকে। কেউ পাত্তা দেয় না। খুব বেশি খ্যাতিমান হলে স্মরণসভা হয়, তারপরে যে কে সেই। হতাশা এবং মন খারাপ করে সময় নষ্ট না করা ভালো। এখন আলোচনা করব মধ্যবয়স নিয়ে। এই বয়সে কেমন যেন অন্ধকার গ্রাস করে। কিছুই ভালো লাগে না। কয়েকটি পর্ব ভাগ করে আলোচনা করব, সমস্যা ও সমাধান।
আলোচিত বিষয় হল, মধ্যবয়স। মানব জীবনের সবচেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়। যুগ এখন অন্যরকমের। সাফল্য আগেও চাইত মানুষ কিন্তু এখন খিদে বেড়ে গেছে তীব্রভাবে। এই চাওয়া সর্বস্ব মানুষের মধ্যে যেটার অভাব সবচেয়ে বেশি, সেটা হল সুকুমার বৃত্তির। ছোট ছোট কোমল ভাব বিনষ্ট হচ্ছে। সাফল্য এলো তো আরো চাই। লাগাতার এমন দৌড়ে হাঁফিয়ে যায় জীবন। জীবনের মালিক সেটা বোঝে না। সে কষে ধরে থাকে লাগাম চালায় চাবুক। একদিন হঠাৎ ফুরিয়ে আসে এনার্জি। তখন গ্রাস করে একাকীত্ব।
ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অর্থ শেষ কথা নয়। সফলতা শেষ কথা নয়। দেখতে হবে, কাজের পিছনে যতটুকু সময় দিচ্ছি নিজের জন্যে ততখানি দিচ্ছি কি না? অনেকেই ভাবেন, কাজটাই তার জীবন। কাজ করতে পারলে তিনি ভালো থাকবেন। খুব ভালো কথা। কিন্তু, হিসেব অনুযায়ী যদি না হয়? কোনো কারণে চলে যায় কাজের ক্ষমতা? তখন ? অবসাদের কালো মেঘ ঘিরে ধরবে আপনাকে।
আরো পড়ুন: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-৫) । জয়তী রায় মুনিয়া
কাজ করুন। সাফল্যের স্বাদ নিন। সেই সঙ্গে বন্ধু বা বান্ধবীর সঙ্গে সম্পূর্ন অন্য স্বাদের কথা বলুন। মনে রাখতে হবে, হঠাৎ করে কেউ মানসিক রোগী হয় না। দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে জন্ম দেয় মানসিক অবসাদের। যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর কু প্রভাব ফেলে। মধ্যবয়সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। কারণ শরীর এই সময় দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক নিয়ে চলে টানাপোড়েন। এইজন্য মনে রাখতে হবে, সাফল্য যেন সুনামি না হয়। প্রাণঘাতি না হয়।
মনে রাখতে হবে, সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনোটাই জীবনের চাইতে মূল্যবান নয়। আবেগকে গুরুত্ব দিন। গল্প করুন। সিনেমা যান। মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ব্যালান্স এমন হোক যেন ব্যর্থতা এলে সহজে নিতে পারেন। খ্যাতি আজ আছে কাল নেই। কিন্তু আনন্দ? চিরস্থায়ী হোক।
নিয়মিত নিজেকে লক্ষ্য করুন। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে নেতিবাচক সিগন্যাল এলে সরে আসুন। নিজের ঘরের লোক হলে, সমস্যা একটু জটিল হয় তখন সাইকো থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। মনের জোর বাড়িয়ে তুলুন। ওষুধ কাজ করে রাসায়নিক পদার্থ বা নিউরোট্রান্সমিটারের ওপর। কাউন্সিলিং কাজ করে জ্ঞানীয় বিকাশ , আচরণ ও মনের গড়নের ওপর।
মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। তার সঙ্গে মন উন্নত করতে বাধা কোথায়? উন্নত শক্তিশালী ঝকঝক মন সাহায্য করে ভালো কাজ করতে।
সুন্দর থাকুন। মন সুস্থ রাখুন।
জন্ম কলকাতায় হলেও কাজের সূত্রে ঘুরে বেড়াতে হয় দেশ বিদেশে। কখনো আমেরিকা তো কখনো থাইল্যান্ড কিংবা লন্ডন। আদতে নিজেকে ভ্রামণিক বলতেই ভালবাসেন। মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করা যদি পেশা হয় তাহলে নেশা হলো নানান বিষয়ে লেখালেখি। গল্প,প্রবন্ধ ও পৌরাণিক চরিত্র কথনের আঙিনায় অবাধে বিচরণ করেন তিনি। রামায়ণ ও মহাভারতের চরিত্র বিশ্লেষণে বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অল্প সময়েই। পেশার চাপ সামলেও কলকাতার বহু নামী পত্রিকায় লেখেন নিয়মিত। এছাড়াও লেখেন নানান ওয়েব পত্রিকায়। প্রকাশিত বই “সুপ্রভাত বন্ধুরা”, “ব্রহ্মকমল”, “দ্রৌপদী” ও “ছয় নারী যুগান্তকারী”। শেষোক্ত বইটি ২০১৯ এর বইমেলায় পত্রভারতীর পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়ে অল্পদিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশ পত্রিকার অনুগল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম দশজনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। টার্মিনাসের তরফে পেয়েছেন পুরস্কার। আমন্ত্রিত অতিথিরূপে সম্মাননা পেয়েছেন ত্রিপুরায় দুই বাংলার সাহিত্য শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে। বিভিন্ন স্কুলে মহাভারত নিয়ে বক্তব্য রাখার ডাক পড়ে মাঝে মাঝেই।
কাজ করেন মূলত মানুষের মন নিয়ে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জীবনের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তাকে অনুপ্রেরণা দেয় প্রতিনিয়ত।