| 29 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-৫) । জয়তী রায় মুনিয়া

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

বন্ধুরা, স্বাগত চিন্তামণির দরবারে।
মন খারাপ… কথাটি হামেশা উচ্চারণ করি। মন কি? দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না, অথচ প্রবল যার উপস্থিতি?

আজ আলোচনা হোক ষষ্ঠইন্দ্রিয় নিয়ে যার অপর নাম …মন। কেন জরুরি এই আলোচনা? মনে হয়, সমস্ত চর্চা যখন চলছে, এটিও চলুক। কার চোখ সুন্দর, ত্বক সুন্দর, চুল সুন্দর… প্রতিনিয়ত কমেন্ট আসছে, কিন্তু, মন সুন্দর… কোথায় আছে সেই কথা? অথবা, তার গুরুত্ব দিচ্ছে কে?
স্থুলশরীরে যা প্রত্যক্ষ তাই ই গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চইন্দ্রিয় অর্থাৎ, চক্ষু কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ও ত্বক।( এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় আছে, সেই হিসেবে আমাদের মোট ইন্দ্রিয় সংখ্যা দশ।/ শাস্ত্র বলেছে: ইন্দ্রিয় একাদশ সংখ্যক। একাদশ নম্বর ইন্দ্রিয় হল: মন/ একটু কঠিন বিষয়, তাই এইটি এড়িয়ে যাচ্ছি। )
ফিরে আসি আগের ধরতাই নিয়ে। মন বস্তুটি কি? তাকে তো দেখা যায় না।
মজার কথা হল, তাকেই দেখা যায়। এই মন আদেশ করে পঞ্চইন্দ্রিয়কে: ঐটি দেখো, তোমার তৃপ্তি হবে। ঐটি শোনো গদগদ হবে, খাও অথবা বলো তবে একেবারে দারুণ সুখী হবে। এই গন্ধ শুঁকে নাও দেখো কি রকম ভালো লাগে। তারপর? ত্বক সুন্দর রাখতে হবে সুস্থ রাখতে হবে সজীব সতেজ তবে ভালো থাকা যাবে।
অর্থাৎ, সাধারণ দৈনন্দিন জীবনে পাঁচটি ইন্দ্রিয়, যা কিনা আমাদের পাঁচটি মূল হাতিয়ার, তাকে পরিচালনা করছে, যাকে দেখা যাচ্ছে না সেই মন।

প্রসঙ্গত জানাই আজকের আলোচনা শুরু হ’ল , গুণী ব্যক্তি শৌভিক চক্রবর্তীর সঙ্গে আমার একটি আলোচনা নিয়ে। সেখানে তিনি বলেছিলেন: বিদেশিতত্ত্ব যত নিখুঁত বিশ্লেষণ করেছেন মনের ব্যাপারে, ভারতীয় দর্শন তেমনটি করে উঠতে পারেনি।

কথাটি যুক্তিযুক্ত। ফ্রয়েডের উদাহরণ এখন ছোট শিশুটি জানে কিন্তু শ্রীমদ্ভগবদগীতা , ফ্রয়েডের জন্মের কত হাজার বছর আগে বলে গেছে :
মনেরতে বু দ্ধতে অনেন
মন আমাদের নিয়ন্ত্রক। সুতরাং , মনের উপর প্রভুত্ব যদি করে ফেলা যায় তবে দুঃখের সত্তর ভাগ সমাধান। কারণ, যারা প্রকৃত অর্থে লড়াই করে দুঃখের সঙ্গে, কষ্টের সঙ্গে … অসীম সাহসী সেই সব মানুষ যায় না মনোবিদের কাছে , ফেসবুকে পোস্ট দেয় না হাহাকার অথবা কটূক্তি ভরিয়ে, দুঃখ তাদের বেশি, যারা নিরন্তর চর্চা করে দুঃখ নিয়ে। পিঁড়ি পেতে ডেকে বসিয়ে পান জল খাওয়ায়, অপরে কি করছে শ্যান দৃষ্টি দিয়ে দেখতে থাকে… দুঃখ বাসা বাঁধে তাদের ঘরে। সব থেকেও কিছুই যেন নেই। শূণ্য হাহাকার। আরো চাই। আরো কোথায় পাই?

গীতা কি সুন্দর ব্যাখ্যা করেছে! বলেছে, ইন্দ্রিয় সমূহ , মনের সাহায্যেই বিষয় ভোগে প্রবর্তিত হয়, আবার এই মনের সাহায্যেই মানুষ বিষয় ভোগ ত্যাগ করে আত্বজ্ঞান লাভ করে।
:মন এবং মনুষ্যাণাং কারণং বন্ধমোক্ষয়োঃ।
বন্ধস্য বিষয়াসঙ্গি মুক্তের্নিবষয়ং তথা।।


আরো পড়ুন: ধারাবাহিক: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-৪) । জয়তী রায় মুনিয়া


বিদেশ বাস সুখের ছিল। কিন্তু, সঙ্গ বা সঙ্গীরা ছিলেন । কঠোর এবং হৃদয়হীন। সেই সময় সৌভাগ্যবশত কিছু সুন্দর মানুষের সংস্পর্শে আসা হয়, যেখান থেকে শিখতে পারি, মন যদি অধীন হয় তবে বাইরের দুষ্ট শক্তি কিছু করতে পারেনা। কারণ, মন খারাপ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলতে থাকে অহরহ। তার থেকেই কিন্তু, বাইরের পঞ্চইন্দ্রিয় আক্রান্ত হয়।
গীতা বলেছে, মন সঙ্কল্পাত্বক। সংকল্প অর্থাৎ বিচার -বিবেচনা মনের অসাধারণ ধর্ম। সুন্দর দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যান অনেকে , লুকিয়ে থাকা পোকার কামড় অনুভূত হয় অনেক পরে।

মনঃ প্রগ্ৰহমেব চ। সারথি যেমন বল্গার সাহায্য রথের গতি নিয়ন্ত্রণ করে, বুদ্ধি ও মন তেমনি ইন্দ্রিয় সমূহ কে নিয়ন্ত্রণ করে।

: একটা কথা কিন্তু নির্মম সত্য, শেষে কিছুই থাকবে না। বিশাল ফ্ল্যাট গাড়ি খ্যাতি অর্থহীন মনে হবে। তাই, ভারতীয় দর্শন বারংবার বলেছে: রজো গুণ অর্থাৎ কামনা বাসনা আসক্তি থাকুক, তমো গুণ অর্থাৎ ভুল ভ্রান্তি কলহ ইত্যাদি ও থাকুক… কিন্তু লক্ষ্য হোক ,সত্ত্বগুণ। একমাত্র তখন মন প্রশান্ত ও নির্মল হয়। মানুষ তখন উত্তম সুখ অনুভব করে।
এই উপলব্ধি কতখানি সুখের কত আনন্দের বলে বোঝানো যায় না। তখন, পৃথিবীর সমস্ত আঘাত তুচ্ছ বোধ হয়। প্রয়োজনে ক্ষমা করে দেওয়া যায়। তবে, এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখা ভালো, দুষ্ট সঙ্গ পরিত্যাগ করতে কিন্তু শাস্ত্র নির্দেশ দিয়েছে। উত্তম সঙ্গ , উত্তম চিন্তার প্রসার ঘটায়। নতুবা , সঙ্গদোষে স্বভাব নষ্ট… এইটি বারংবার বলা হয়েছে। তাই, ক্ষমা করে দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু, সেই সঙ্গকে আবার প্রশ্রয় দেব কি না, সেইটি বলে দেবে , আবেগ নিয়ন্ত্রিত বুদ্ধি। সুতরাং, আমাদের শাস্ত্র এবং দর্শন লুকিয়ে রেখেছে শ্রেষ্ঠ মনোবিদের ঔষধি। উপযুক্ত সঙ্গী সঙ্গে নিয়ে চর্চা হোক, কারণ, চিন্তার উপর কিন্তু ময়লা জমে , শ্যাওলা পড়ে, সঙ্গী যদি ঝকঝক চিন্তাশীল বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়, মনের ময়লা কেটে গিয়ে মানুষ উন্নত চেতনার অধিকারী হয়, সুখী হয়।
প্রশান্ত মনসং হ্যেনং সুখমুত্তমম্
প্রশান্ত মন সর্ব সুখের কারণ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত