বসন্তের বদনাম
বসন্ত একটি ঋতুর নাম, এখন বসন্ত কাল। বসন্ত ভাইরাসবাহী মহামারীর নাম। হেমন্ত আর বসন্তের চিরকাল ঠেসাঠেসি। এ-ই নাতিশীতোষ্ণ সময়ে পাড়ার উঠতি ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে বনভোজনে করে। আমাদের সময়ে টেপরেকর্ডার, মাইক বেঁধে হই হুল্লোড় করে পাড়া মাতিয়ে বনে যেতাম। এখনো যায় তবে ধরন পালটে গেছে। বনে আর সেই চেনা প্রাচীন উপকারী বৃক্ষ নেই বিশ্বব্যাংক, এনজিওর কল্যাণে জলবায়ু বিধ্বংসী গাছের আধিক্যে।
তুলতুলে কোমল মুখে বসন্তের ছোঁয়ায় ভীষণ জ্বরের সাথে ছোঁয়াচে ফোস্কায় অপরূপ কপাল থেকে কপোল মুখশ্রী যেন দাবানলে পোড়া টিলা। কেউ কেউ ঝুপের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে পরস্পরকে চুমু খায়। একত্রে আক্রান্ত হয়ে ফেরে ঘরে, ভীষণ জ্বরে। জ্বলে যায় ঠোঁট-মুখ, শুকিয়ে যায় চোখ আর বুক।
আগামী চৈত্র সংক্রান্তি বৈশাখী উৎসবে তাদের আর কারও দেখা হলো না। বাবা মায়েরা বকাবকি তিরস্কারে মাস্ক হিজাব নেকাব পরিয়ে দিল তাদের। কেউ কাউকে চিনতে না পেরে ব্যর্থ মনোরথে কান্নায় বালিশ ভিজিয়ে চোখ লাল করে। নয়ন মেলে কাউকে দেখল না। যুদ্ধ, অপ-উন্নয়ন, বনের ওপর অধিক আগ্রাসন। নদীতে চর জেগে গেল, পাড়ে সারি সারি তামাকের চাষে সরিষা বন হারিয়ে গেল। বাবামায়ের পকেটে টাকা এল। হারিয়ে গেল উদ্দাম, উচ্ছ্বাসের প্রেমানন্দ। গুটি বসন্তের বদলে আমরা ফুসফুস হারানোর আর্থিক উন্নতি করলাম। বনভোজনে খেজুরগুড়ের চিতই পিঠা আর খাওয়া হল না।
অসুস্থ কবিতা
পপি ফুলের মধু পান করা দেহে
তোমাদের ক্ষমতার দাম্ভিকতা
আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে
বুলবুলির গানেরও মাধুর্য আছে
তাহাদের তাও নেই চর্বি জমেছে।
লৌকিক পারলৌকিক আদর্শের বুলি
কাকীয় সঙ্গীতের থেকেও কর্কশ লাগে
এ-ই অর্ধেক জীবনে কতো কতো দেখলাম
তিনি একবার যারে ছুড়ে ফেলে দেয়
তার গায়ে মশা-মাছি ও বসে না আর।
আমার আমাদের কৈশোর-তারুণ্যে
তোমাদের বক্তব্য কে স্বর্গীয় সুধা ভেবে
গোগ্রাসে গিলেছি মগজে মননে
৭৫র থেকে ৯৬কতো কতো তাজা প্রাণ
গিয়েছে অস্থাচলে
তোমাদের হিসেবের খাতায় নাম নাই
সে-ই সব তরতাজা প্রাণের
আছে শুধু কাড়ি কাড়ি ব্যাংক একাউন্ট
এসবের দীর্ঘশ্বাস যেন বুবুর আঁচলে না বিধে
তাই হোক আমার আমাদের মরণের পণ।
##
খ.
নির্লজ্জের মতো বাঁচার আকুলতা
আমার কোনদিনও ছিলো না নেই
কিন্তু একটি আরামদায়ক মৃত্যু চাই
অথচ বেহায়ার মতো নিয়ত
চিকিৎসা সেবা চাই-চাচ্ছি।
ছি: মানিক
তুমি তো নও আইয়ুব নবী
ক্ষতদেহে পোকামাকড় খাবে আর খাওয়াবে
তিলেতিলে দেহযন্ত্রণা সইবে?
মানিক
তোমার এ-ই রোগযন্ত্রণায় তুমি হারিয়েছ
তোমার আত্মমর্যাদা কাব্যের অহংকার
তুমি নও আইয়ুব নবী কবি হও
মায়াকোভস্কি কে পড়নি
অথচ মায়াকভস্কির সে-ই দু:সাহস
তুমি হারিয়েছ হাজার বছর আগে।
ছি: মানিক
তোমার লজ্জা করে না
ছি: তুমি এতো বেহায়া কেন?
কোন চিকিৎসার দরকার নাই
রণেশ দাশগুপ্ত কে স্মরণ কর।

কবি, শিশুতোষ লেখ, নব্বুইয়ের নির্যাতিত ছাত্রনেতা, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
১-গহীনে দ্রোহ নীল
২-শুভ্রতার কলঙ্ক মুখস্ত করেছি
৩-নৈনিতালের দিন
শিশুতোষ গল্প
১-বন বিহঙ্গের কথা
২-ইরাবতী ও কালাদান
সম্পাদক
গরান (ছোট কাগজ)
তড়িৎ বার্তা[email protected]