| 19 এপ্রিল 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক: খোলা দরজা (পর্ব-২৭) । সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

একটি মেয়ের বাবা মা দেখেশুনে বড় জমিদার বংশের ছেলের সঙ্গে নিজের সদ্য স্কুলের গন্ডি পেরোন সুন্দরী মেয়ের বিয়ে ঠিক করলেন। বিয়ের পরে জানা গেল ছেলে হাফ পাগল। তার সঙ্গে একঘরে শোওয়ার ভয়ে মেয়ে সারারাত পালিয়ে বেড়ায়। অবশেষে সেই মেয়ে বাপের বাড়ি ফিরে এলো। বিবাহ বিচ্ছেদ হল।মেয়েটি তারপরে পড়াশুনা করে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, নিজে্র পছন্দের  ভাল ছেলের সঙ্গে সুখে সংসার করতে লাগল।

না, এটি শ্রদ্ধেয় লেখক সমরেশ মজুমদারের উপন্যাসের কাহিনি নয়।আমার পরিচিত লোকের বাড়ির সত্য ঘটনা। সেই মেয়েটিকে দ্বিতীয় বিয়ের আগে অবধি বাড়ির লোকেরা অনেক ভর্ৎসনা করেছেন।আজ তার সুখের সংসারে তারাও নিত্যি যাওয়া আসা করেন।

তবে ওই মেয়েটিকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। সে নিজের কাজের মাধ্যমেই কবির বাণীকে সার্থক করেছে।

“যাব না বাসরকক্ষে বধূবেশে বাজায়ে কিঙ্কিনি –

আমারে প্রেমের বীর্যে করো অশঙ্কিনী।”

এমন কটা মেয়ে পারে?গোধুলির কনে দেখা আলোয় অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে মেয়েরা  বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়।আর বিয়ের পরে হয়ত ক্রমাগত শারীরিক আর মানসিক অত্যাচারের বলি হয়ে তারাই আত্মহননের পথ বেছে নেয়।উল্টোটাও ঘটে ।হয়ত বিয়ের পরে বেশি স্বাধীনতা আর সম্মান পেয়ে কেউ কেউ নিজেকে আরো বিকশিত করে।

কনে দেখা প্রসঙ্গে আরো দুটো গল্প বলা যেতে পারে।আগে খুব অল্পবয়সেই সাধারণ ঘরের মেয়েদের প্রতিষ্টিত পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিতেন অভিভাবকেরা।আমরা তখন প্রাইমারি স্কুলে, ক্লাস থ্রি তে পড়ি।রাস্তার ধারে দোতলায় যোগমায়াদির বাংলার ক্লাস চলছে।হঠাৎ শুনি জোরে জোরে শাঁখ বাজছে।ক্লাসেই রব উঠল, বরকনে আসছে। অমনি পড়াশুনা ছেড়ে সবাই জানলার ধারে ভিড় করল।দেখি সত্যি সত্যি  রাজকন্যার মত রূপবতী এক কনে তার বরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে  এগিয়ে আসছে।সেই কনের মুখ আজও আমার স্মৃতির মুকুরে তেমনি উজ্জ্বল হয়ে আছে।পরে বিভিন্ন বয়সে সেই মেয়েটিকে দেখেছি।তার নিজস্ব বয়সের পলি আমার দৃষ্টিকে কখনোই আচ্ছন্ন করতে পারেনি।তখনও সে আমার চোখে সেই রাজকন্যা হয়েই ধরা দিয়েছে।


আরো পড়ুন: খোলা দরজা (পর্ব-২৬) । সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়


আর এক নতুন কনেকে দেখেছিলাম ওই বয়সেই।তখন অবস্থাপন্ন ঘরে বউকে আশীর্বাদ করে সোনার মুকুট দেওয়ার রেওয়াজ ছিল।বরকনের গাড়ি দাঁড়িয়েছিল একটি গলিতে।আমরা ঠাকুর দেখার মত করেই উঁকিঝুঁকি মারছিলাম।দেখলাম লাল বেনারসী পরা এক সুন্দরী কনে তার সুপুরুষ বরের পাশে বসে আছে।

কে যেন বলল, “দেখ দেখ সোনার মুকুট পরেছে।” দেখলাম সত্যিই কনের মাথায় সোনার মুকুটটি জ্বলজ্বল করছে। সেদিন তার গালে খসে পড়া মুক্তোর মত অশ্রুবিন্দুটিও আমার নজর এড়ায়নি।আজ ও স্মৃতির মণিকোঠায় ওই সোনার মুকুট আর মুক্তাবিন্দু খচিত মুখটি স্বযত্নে ধরে রেখেছি।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

কমবয়স থেকে আজ অবধি কত কনে দেখলাম।হাঁটা পথে,ট্রেনে, নৌকায়,রিক্সায়, ভ্যানে, পুরনো যুগের ভাষায় ‘মোটরগাড়িতে’,আজও তেমনই লাগে।সেইরকম আনন্দেই মন ভরে ওঠে।কনেরা হয়ত পাল্টেছেন।কনে দেখার চোখ পাল্টায়নি আজো।

কনেরা কেমন পালটে যাচ্ছেন ,এবার সেই প্রসঙ্গে আসি।

এই তো সেদিন,আমার এক আত্মীয়ের ছেলে নিজের বিয়ে ঠিক করে বাবা মাকে জানাল।বাবা মা দুরুদুরু বক্ষে কোন এক গবেষণাগারে মেয়ের সঙ্গে সাক্ষ্যাৎ করতে গেলেন।মেয়ে খুব বিদুষী হলেও ভীষণ স্বাভাবিক।খুবই বিনয়ী।মেয়ের সঙ্গে আলাপ করে খুশী হয়ে তারা নিজের ছেলেকে জানালেন, “ঠিক আছে।”আমি পরে তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম “ঠিক না হলে কী করতে?”  

তারা বলেছিলেন, “মেনে নিতাম।কেননা বিয়ে তো ছেলেমেয়ে করবে।তাদের ঠিক লাগছে যখন,  বিয়ে হতই।আমাদেরটা উপরি পাওনা।”

ছেলেমেয়েদের মনোভাবই সব, একথা বলার মত অভিভাবক আজ ঘরে ঘরে।সিনেমাতেও ছায়াদেবীর মত জাঁদরেল শাশুড়ি আর দেখা যায়না।

আর একটি সম্বন্ধের ক্ষেত্রেও দেখলাম মেয়ের মাকে মেয়ের ভাবী শাশুড়ি বলছেন, “মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই আপনারা আসুন, মেয়ে শ্বশুর বাড়ির ঘরদোর দেখে যাক।”

তারপর দেখলাম মা বাবার সঙ্গে মেয়েও এলো।মুখে তার সহজ স্বাভাবিক হাসি।দিব্যি সবার সঙ্গে গল্পগুজব করে সে ফিরে গেল।এ বিয়েটাও পছন্দের।

আমার খুব আনন্দ হল দেখে যে দিন বদলাচ্ছে।কনে দেখা আলোয় কনে নিজেকে দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে,নিজেও দেখেশুনে নিচ্ছে সবকিছু।অবলা মেয়েরা শক্তিময়ী হয়ে উঠছে ক্রমশঃ।

   

   

        

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত