Categories
তৃতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা: যশোধরা রায়চৌধুরীর কবিতা
আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট
ঈশ্বর নিবাস
অবারিতদ্বার। অনন্ত মুখ। অকুলান নয় ভিড়ে
ছোট্ট ঘরটি। ঢুকতে পারব? দুরুদুরু বুক ধীরে
শান্ত হয়েছে । ” মিঠি-টিয়া” লেখা দরজার পাশে ছুতো
করে চলে গেছি। বাইরে দেখেছি অসংখ্য ছাড়া জুতো।
ঘরের মধ্যে আড্ডার স্বর, সবচে’ শান্ত, তাঁর
প্রায়শ নীরব। অথচ সবচে’ মন অবারিত দ্বার
আজও ত গেলাম। গেটম্যান বলে, নিবাসের, ‘উনি নেই।
থাকেন না আর আজকাল!’ ঠিক বলেছে এ-ভাষাতেই।
তিন তলা উঠি। দরজা বন্ধ। তালার আড়ালে ঘরও।
আজ ফিরে আসি শূন্যতা ছুঁয়ে। হাওয়া বইছিল খর।
আপনি ত নেই আপনি ত নেই আপনি কি নেই ঘরে?
কাকিমাকে নিয়ে কোথায় গেলেন? শূন্যতা চরাচরে।
গল্প
সমস্ত গল্পের মধ্যে এই এক আমি জেগে আছে
যখন আমাকে কেউ দেখছে না,
তখন আমি কী করি?
লুকনো ক্যামেরা দিয়ে শিশুদের দেখা হয় এইভাবে
মনোবিদ দেখে
সামনে চকলেট রেখে শিশুদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া হয়
আমারো পরীক্ষা চলছে, কিন্তু কেউ আমাকে দেখছে না।
কেউ না দেখার এক পরীক্ষাগারের মধ্যে কাচের বয়ামে
আমি একা বসে আছি… মা নেই, বাবাও নেই, শিক্ষক বা রাজা , প্রভু নেই
আমার ঈশ্বর নেই, আমার দাদা বা দিদি নেই
আমাকে দেখছে না কেউ, অনুমোদন দিচ্ছে না, বলছে না বাহ বাহ!
আমার ঊর্ধতন নেই কোন আর।
এ মুহূর্ত তীব্র আর ভয়াবহ , এ মুহূর্ত অবুঝ ও ক্লান্তিকর, তবু
এই মুহূর্তের কাছে নিবেদিত থাকতে চাই, এই অবস্থায় আমি করতে চাই যাবতীয় কাজ
যখন আমাকে কেউ দেখছে না, সেই ক্ষণে কী প্রচন্ড দেখা
নিজের, নিজেকে, এই অবলোকনের তীক্ষ্ণ আতশকাচের দিন আমাদের অধিকার করে।
আমরা
খুচরো পাপের মত প্রত্যাশা জেগেছে বলে, এসো
আমরা হাত ধরাধরি করে আলোকিত পথ ধরে হাঁটি
প্রেম তো কোথাও নেই, তবু এই শরীরের মিথ্যে ঘাঁটাঘাঁটি
এও এক ঊর্ধতন বাবুর কৃতার্থতা চায়, অনুমোদন যাতায়
জটিল ক্ষমতাপথে চিরকেলে খুনখারাবির রং লাগে।
খুচরো সময় জুড়ে এই এক নিধন জেগেছে
আমরা শরীরে মেখে নিই
কবি,কথাসাহিত্যিক
জন্ম ১৯৬৫, কলকাতা, দর্শনে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে। কবি ও গদ্যকার। পণ্যসংহিতা ( ১৯৯৬) প্রথম গ্রন্থপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকমহলে পরিচিতি।
কৃত্তিবাস পুরস্কার ১৯৯৮ ও বাংলা আকাদেমি অনিতা সুনীল কুমার বসু পুরস্কার ২০০৬। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ১৫ গল্পগ্রন্থ ও নিবন্ধগ্রন্থ বেশ কয়েকটি। অনুবাদ করেন মূল ফরাসি থেকে। বিবাহসূত্রে ফরাসি ভাষাবিদ তৃণাঞ্জন চক্রবর্তীর সঙ্গে আবদ্ধ।