ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-২৪) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-২৪।
ইমন বলল, “জানিস? নির্ঝর খেলবে না।“
রাজ না জানার ভান করে বলল,- “তাই । কে বলল?”
“আরে জানি রে। সব জানি।“
ইমন হঠাৎ একটা চক্কর খেল।তারপর উত্তেজিতস্বরে বলল, “আমি জানতাম। জানতাম।এমনই একটা হবে।“
রাজ ওকে অবাক চোখে দেখল।নির্ঝর খেলবে না শুনে ওর এত আনন্দ। দেখে ওর গায়ে জ্বালা ধরছে। সে ইচ্ছে করেই ওকে বলতে পারে, “দ্যাখ ইমন, তুই ওর নখের যোগ্য নস। “ কিন্তু এখন তার মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করল না। নির্ঝরের সমস্যা না মেটা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। নিশ্চিত। তাছাড়া ইমনের আচরন দিনদিন আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেদিনও খেলার দিন ও নির্ঝরের পেছনে লেগেছিল। হঠাৎই ওর জার্সিটা খূঁজে পাচ্ছিল না। রাজ বুঝতে পেরেছিল এ কাজ একমাত্র ইমনই করবে। ওর চোখমুখ দেখেই সে বুঝতে পেরেছিল। রাজ বুদ্ধি করে ইন্দ্রদাকে জানিয়েছিল। ইমনকে নরমে-গরমে বুঝিয়ে জার্সিটা উদ্ধার করেছিল।
ইমন বলল,”নির্ঝরের জেঠার সঙ্গে তীর্থজেঠুর ব্যাপারটা জানতে পেরেছি।“
রাজ এখনও পুরো জানে না।মা বলেন নি। দুজনের মধ্যে কি গোলমাল তা মা জানেন। কিন্তু গোলমালের কথা সে ভাবছে না।সে ভাবছে নির্ঝরের বিষয়। আজ মা ওর বাড়ি একাই যাবেন বলেছেন। মা কি ম্যানেজ করতে পারবেন বঙ্কুজেঠুকে। সে ভাবে। নইলে নির্ঝর ছাড়াই তাদের খেলতে হবে। ইমনের কথায় খুব সে একটা আগ্রহ দেখাল না।উদাস গলায় বলল ,- “না।“
“আমি সেদিন বাবার মুখ থেকে শুনলাম।
“কি?”
“ওই দুজন একসাথে খেলত। ভাল খেলত। দুজনে খেলার জন্য মিলে চাকরীও পেয়েছিল।তারপর চাকরীতে প্রমোশন নিয়ে কি একটা গোলমাল হয়েছিল তাই দুজনের কাটাকাটি হয়ে গেছে।“
রাজ শুনল। কিন্তু ব্যাপারটা পরিস্কার হল না। গন্ডগোল কি নিয়ে তা সে বুঝতে পারছে না। দুজনেই যদি চাকরী করে তাতে আবার কি সমস্যা! নাহে! এ সমস্যা তার বোঝার কথা নয়।সে ছোটমানুষ, তার এখন একটাই চিন্তা নির্ঝর খেলবে তো? সে নিস্পৃহ ভঙ্গীতে বলল,”ও!”
ইমন হাসতে হাসতে বলল, “ওই নিয়ে দুজনের খুব ঝগড়া হয়েছিল।“
“তাই!”
“হ্যাঁ।“
রাজ দেখল একদিকে হেলতেদুলতে তীর্থজেঠূ ঢুকছেন। তার হঠাৎ মনে পড়ল একদিন নির্ঝরের জেঠা বঙ্কুর খেলার প্রশংসা তীর্থজেঠুই করছিলেন। সেই কথাটা ইমনকে বললেও ওর মাথায় তা ঢুকবে না।
তীর্থজেঠু মাঠে ঢুকে হেসে বললেন, “চল। চল।“
ইন্দ্রদা চলে গেছে আগেই। গোলে। ইদানিং ইন্দ্রদার খুব চাপ যাচ্ছে। চাকরী, পড়া খেলা ম্যানেজ করতেই কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। তবে ইন্দ্রদা বলেছে, তাদের মালিক খারাপ নন। খেলার ব্যাপারে খুব উৎসাহ। খেলা থাকলে ছেড়ে দিচ্ছে। ফাইনালের দিন খেলা দেখতে আসবে বলেছেন।
“তাই?”
“হ্যাঁ।
রাজ বলে,”বাহ। দারুন ব্যাপার।“
ইন্দ্রদা বলে, “ যদি শুভাশিসদার সামনে দুচারটে ভাল সেভ দেখাতে পারি তাহলে শুভাশিসদাকে বলব কলকাতায় কোথাও একটা ব্যবস্থা করে দিতে। কি রে? পারব না?”
“সিও্যর।“
দুটো দল করে খেলা শুরু হল। স্যার ও তীর্থজেঠু দুজনে মাঠের ধারে। স্যার তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছেন নির্ঝরের কথা। সে বেশিকিছু বলে নি। কি জানি স্যার যদি রেগে যান। তবে আজ মা গেছেন বঙ্কুজেঠুর সাথে দেখা করতে। সন্ধের মধ্যেই মা খবর আনবেন।
“আরে! কি হল? বল ধর?”
রাজ চমকে তাকাল। তাকে বল বাড়িয়ে ছিল অনীকদা। সে এতটাই অন্যমনস্ক ছিল ধরতে পারে নি। বলটা চোখের সামনে দিয়ে সাইড-লাইনে চলে গেল। ইন্দ্রদা গোল থেকে চেঁচিয়ে বলল, “খেলায় মন দে। রাজ।“
রাজ মাথা নীচু করল।সে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে। নির্ঝরের বিষয়টা না মিটলে তার স্বস্তি হচ্ছে না।মা নিশ্চয়ইএতক্ষনে বঙ্কুজেঠুর সাথে দেখা করেছেন।আশা করা যায় মা ঠিক ম্যানেজ করে ফেলেছেন। আগামীকাল থেকেই নির্ঝর আবার খেলতে আসবে।
দেড় দশক ধরে সাহিত্যচর্চা করছেন। পেশা শিক্ষকতা। নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। ‘কাঠবেড়ালি’ নামে প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়তে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস : ‘চার অঙ্গ’, ‘তিথির মেয়ে’, গল্পগ্রন্থ : ‘গল্প পঁচিশ’, ‘পুরনো ব্রিজ ও অন্যান্য গল্প’। ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘বীজমন্ত্র’ নামে একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখেছেন।
একসঙ্গে বেশ কিছু পর্ব পড়লে বেশ ভালো লাগে। আমারও তাই লাগল। তবে পরের পর্ব পড়ার ইচ্ছেটা আরো বেড়ে গেল এই পর্বের শেষের রহস্যর জন্য। অপেক্ষায় রইলাম। খুব ভালো লাগছে।