শারদ অর্ঘ্য কবিতা: একেলা ঝোরা । সুনীতি দেবনাথ
পাহাড়ে এলোমেলো অরণ্য ছায়ে
আলোছায়ার আলপনায় একেলা ঝোরা
তুমি রোদনে ভেসে যাও
তোমার দুপায়ে বাজে অনন্তের ঘুঙুর ঝুমঝুম
সারাটি দুনিয়া কান পেতে থাকে রাতদিন
অশ্রুতপূর্ব সে ধ্বনি শোনার প্রত্যাশায়
হলুদ হলুদ পাখিরা গান থামিয়ে
একতানমনা সে ধ্বনি শোনার আশায়
যেখানে ঝাঁপ দাও তুমি পাথর শয্যায়
ফেনিল আক্রোশে ছড়িয়ে পড়ো
দুপুর রোদে আকণ্ঠ তৃষ্ণায় চিত্রল হরিণ
জলপান করতে এসে বাঘের থাবায় শুয়ে পড়ে
তার উষ্ণ রক্তস্রোতে রক্তিম তুমি
উদাসী বিবশ ভেসে যাও নিরুদ্দেশে
রক্তের উত্তরীয় শরীরে জড়িয়ে আশ্লেষে
মানুষের সংসারে আজ এমনি রক্ত স্বাদ
খাদ্যখাদক সম্পর্ক ঔদাসীন্যে গিলে ফেলে
রক্ত বইছে তোমার সাধের ঘরে জ্বলছে আগুন
ঝলসানো শরীরের ক্ষুধা তবু দাউদাউ
বিকৃত মুখে রক্তের স্বাদ নোনতা

জন্ম পরাধীন অবিভক্ত ভারতের শ্রীহট্ট জেলার বিয়ানীবাজারের পঞ্চখণ্ডে। স্বাধীনোত্তরকালে ১৯৫০ সালে উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসেন ত্রিপুরা রাজ্যে । এরপর ঠিকানাহীন সবার মত ঠিকানা গড়ার লড়াই তাকে সরাসরি আক্রান্ত না করলেও, প্রভাবিত হয়েছি বটে। বয়স তখন পাঁচ। ঐ সময়ের অনেককিছু শুরুতেই তাকে অন্যভাবে দেখতে এবং ভাবতে শিখিয়েছে। শ্রেণী বিভক্ত সমাজের বীভৎস ছবি ছিলো তাঁর শৈশবের যন্ত্রণার ধারাপাত। জীবন তাকে স্বশিক্ষিত ও স্বশিক্ষক হতে শিখিয়েছে। প্রথাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে ত্রিপুরার বাসিন্দা হয়েও ত্রিপুরায় প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে হয়। ছোটবেলা থেকে সম্পদের তারতম্য অনুসারে শ্রেণীবিভাগ , তারচেয়েও কঠোরতর জাতপাতের শ্রেণীবিভাগ আর নির্মমতম নারীপুরুষের সামাজিক বৈষম্য দেখেছেন । কবিতা তাঁর প্রিয়ভূমি প্রতিবাদের ভাষা। নিয়মিত না হলেও প্রচুর কবিতা লিখেছেন জীবনের নানা পর্যায়ে। মন ভরছে না। একটা যন্ত্রণা, দারুণ একটা অতৃপ্তি সারাটা অস্তিত্ব জুড়ে। সমকাল তাকে ভাবায় তাই ছুটি নেই কবিতার, তাই গদ্য, প্রবন্ধর চেয়ে আজও কবিতাই তাঁর প্রিয়।