| 29 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস

বাংলার প্রত্ন-প্রযুক্তির ইতিহাস: প্রসঙ্গ সেচ । ড. মো. শাহিনুর রশীদ

আনুমানিক পঠনকাল: 15 মিনিট

বিশ শতকের ছয়ের দশকে বাংলায় ইঞ্জিন চালিত সেচ-যন্ত্রের প্রচলন শুরু হয়। এর পূর্ব পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতেই সেচ কার্য পরিচালিত হতো। সে সনাতন সেচ পদ্ধতি কতটা প্রাচীন অথবা বাংলার কৃষিতে সেচের প্রয়োজন ছিল কি না- তা ইতিহাস গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত হয়নি। তবে বাংলার সনাতন সেচ প্রযুক্তি সম্ভবত ফোকলোর চর্চায় প্রথম আলোচিত হয়েছে। সম্ভবত বাংলাদেশে সর্বপ্রথম অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল জলিল ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘লোকবিজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি’ গ্রন্থ রচনা করেন। একই সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় বরুণকুমার চক্রবর্তী রচিত ‘লোক প্রযুক্তি’।এর পর ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে লোকবিদ ওয়াকিল আহমদ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা-৭: লোকসংস্কৃতি গ্রন্থে’ লোক-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে বিস্তারিত আলোচনার অবতারণা করেন। তারপর ওয়াকিল আহমদ এ বিষয়ে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ‘লোকজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। লেখকগণ স্ব স্ব গ্রন্থে লোক-সেচ প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। নিঃসন্দেহে সে আলোচনা বাংলার সেচ প্রসঙ্গে পথিকৃৎ। কিন্তু তা সম্পূর্ণ নয়, বিশেষত তিনটি গ্রন্থেই বাংলার সকল সনাতন সেচ-যন্ত্রের আলোচনা অনুপস্থিত। শুধু তাই নয় সেচ-যন্ত্রসমূহ কী প্রযুক্তিযুক্ত তাও যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ‘কৃষি সরঞ্জাম (Implements)’ শিরোনামে যেসব সরঞ্জাম প্রদর্শন করছে তার মধ্যে সেচ-যন্ত্র বা উপকরণ একটিও নাই।এরূপ প্রেক্ষাপটে বাংলার সনাতন তিনটি সেচ-যন্ত্রের আলোচনা উপস্থাপন করা প্রাসঙ্গিক।

সেচের প্রেক্ষাপট: বাংলার কৃষি ছিল বৃষ্টি-নির্ভর এবং বৃষ্টিপাতের অভাব ছিল না বলে কৃষিও ছিল প্রধানত বর্ষাকেন্দ্রিক। এর অর্থ এ নয় যে, বাংলার কৃষিতে সেচের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ঐতিহাসিকগণ নিশ্চিত করেছেন প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ- নব্যপ্রস্তর যুগে বাংলা অঞ্চলেও কৃষির ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিহার, বাংলা ও ওড়িশার বেশ কিছু স্থানে নানা প্রজাতির ধান, আখ, কলা, হলুদ, আদা, বিভিন্ন কন্দ জাতীয় শস্য উৎপাদিত হ’ত। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সিন্ধু সভ্যতার মানুষ সেচ সম্পর্কে অবগত এবং দো-ফসলি চাষে অভ্যস্ত ছিল। তাদের সেচ পদ্ধতি ছিল বাঁধ ভিত্তিক। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় মনে করেন বাংলার অস্ট্রিকভাষীরা ছিলেন কৃষিজীবী। তারা যোগাযোগের জন্য ভেলাকারে গুঁড়ি কাঠের এক প্রকার লম্বা ডোঙা নৌকা তৈরি করত। লৌহযুগে যেসব কৃষি পণ্যের নাম পাওয়া যায় যেমন বিভিন্ন প্রজাতির ধান, তৈলবীজ, ডালশস্য, নানা ধরনের সবজি, লাউ, কুমড়ো, শশা, আখ, তুলা প্রভৃতি অনেকাংশে নিশ্চিত করে যে, এ সময়ে সেচ ব্যবস্থায় নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল।

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর যে শিলালিপির সূত্র ধরে বাংলায় ঐতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে সেই লিপিতেও ধান ও তৈলবীজের উল্লেখ রয়েছে। তবে সমগ্র প্রাচীনযুগের ইতিহাসে বাংলার সমৃদ্ধ কৃষির সংবাদের সাথে প্রাচীন লিপিমালায় ও সাহিত্যিক সূত্রে পুনঃ পুনঃ বাঁধের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব বাঁধ ছাড়াও জোলা, জোলক, জোটিকা, খাট, খাটিকা, খাড়ি, খাড়িকা, যানিকা, স্রোতিকা, গঙ্গিনিকা, হজ্জিক, খাল, বিল প্রভৃতি জলাধারে পানি সংরক্ষিত পানি সেচের জন্যও যে ব্যবহৃত হতো- তা সহজেই অনুমান করা যায়। জলাধার সংশ্লিষ্ট এসব শব্দের প্রত্যেকটিই বাংলার প্রাচীন লিপিমালায় উল্লিখিত হয়েছে। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর রচনায় পতঞ্জলি মাটিতে কূপ খনন করে পানি পাওয়া যায় এবং সে পানি থেকে অনেক গুণপ্রাপ্ত হওয়া যায় বলে উল্লেখ করেছেন। ছয় শতকের মধ্যপর্বে রচিত ‘অমরকোষ’ -এ জমির যে বারোটি শ্রেণির উল্লেখ করা হয়েছে তার শেষ দুটি হল নদীমাতৃক ও দেওয়ামাতৃক।জমির এ বিভাজন অনেকাংশে সেচের বিদ্যমানতাকে প্রমাণ করে। এছাড়া একাদশ শতাব্দীর পূর্বে রচিত কৃষি পরাশর -এ বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। সন্ধ্যাকর নন্দী (আনু. ১০৮৪-১১৫৫ খ্রি.) ‘রামচরিত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বরেন্দ্র-ভূমিতে নানা প্রকারের খুব ভাল ধান জন্মাত। এছাড়া খনার বচনেও বিভিন্ন কৃষি পণ্যের নাম, চাষ-পদ্ধতি ও সেচের তথ্য উল্লিখিত হয়েছে। উন্নত এ কৃষির সাথে সেচকার্যের কোন সম্পর্ক নাই একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই মনে হয় প্রাচীনযুগে কৃষির সমৃদ্ধিতে সেচের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মধ্যযুগে কৃষির নানা তথ্য পাওয়া যায়। তবে এসব তথ্যের মধ্যে একমাত্র ইবনে বতুতা ব্যতীত কেউই প্রত্যক্ষভাবে কৃষিসেচ সম্পর্কে কোন তথ্য উল্লেখ করেননি। ইবনে বতুতা ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে সিলেট থেকে নদীপথে সোনারগাঁও যাওয়ার সময় নদীর দুতীরে জলচক্র দেখেছিলেন। ইবনে বতুতা দর্শিত জলচক্র আর অন্য কোন সূত্রে প্রমাণিত হয়নি যে, বাংলার কৃষিতে সেচকার্যে জলচক্র ব্যবহৃত হয়েছে। জলচক্র প্রধানত ভারতের অন্য অঞ্চলে ব্যবহৃত একটি সেচ যন্ত্র। তবে সুলতান গিয়াস উদ্দীন ইওয়াজ খলজী যে অনেক বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ করেন তার সাথে সেচের সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক। একই ভাবে নাসির উদ্দীন মাহমুদ শাহ (১৪৪২-১৪৫৯ খ্রি.), রুকনউদ্দীন বারবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি.), আলাউদ্দীন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) কৃষি ও যোগাযোগের উন্নতির জন্য অসংখ্য বাঁধ, পুকুর, সেতু ও সড়ক নির্মাণ করেন, যা কৃষিতে সেচের প্রয়োজনীয়তাকে অনেকাংশে স্বীকার করে। মুঘলযুগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কুয়া, পুকুর ও খালের মধ্যে ধারণকৃত মৌসুমি বৃষ্টির পানি দিয়ে কৃত্রিম সেচব্যবস্থা চালু ছিল। তবে কৃত্রিম খাল খননের মাধ্যমেও সেচের পানি সরবরাহ করা হতো। অরহট বা রহট (যা পারসী চাকা নামে পরিচিত), চরস, লিভার রীতির ঢেঙ্কলী’র মাধ্যমে এসব পানি উত্তোলন করা হতো। ফরাসি পর্যটক ফ্রান্সিস বার্নিয়ার রাজমহলের নদীভিত্তিক অসংখ্য কৃত্রিম খাল খননের তথ্য পরিবেশন করেছেন; তা যে বন্যা ও সেচ ব্যবস্থাপনার নজির তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বাংলার বাংলাদেশ অংশে নদী ও খালের বহুলতার কারণে কৃত্রিম খাল খননের তেমন প্রয়োজন হয়নি। এসব তথ্য ব্যতীত পরোক্ষভাবে মধ্যযুগের অনেক সূত্রে ঐ সময়ে সেচকার্য যে চালু ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন, বছরে দুই থেকে তিন বার ধান বা অন্য ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন রবি শস্য যেমন- গম, তিল, জোয়ার, সর্ষে, বেগুন, লম্বা মরিচ, শশা, গাজর, তুলা, বিভিন্ন শাক-সবজি, যেসব উৎপাদনে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় সেসব শস্যের ব্যাপক চাষ ও রপ্তানির তথ্যের উল্লেখ থেকে মনে হয় কৃষির স্বর্ণযুগে সেচের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এছাড়া আঠারো শতকের কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্যের ‘শিবসংকীর্তন’-এ দেখা যায় গৌরি তার স্বামী শিবকে বলে দিচ্ছে যে, পুকুরের ধারে জমি নেবে যাতে জলের অভাবে তুমি পুকুর থেকে জল সেঁচে আনতে পার। সে বর্ণনাতে আরো দেখা যায় জমিতে আগাছা, জোঁক, মশা ও মাছির উপদ্রব কমাতে ধানগাছের মূলটুকু ভিজা থাকবে, এমন জল রেখে বাকি জল নালা কেটে ভাদ্র মাসে ক্ষেত থেকে বের করে দেন। আবার আশ্বিন-কার্তিকে ক্ষেতের জল বাঁধেন।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় বছরের বিভিন্ন সময়ে চাষ, নানা ধরনের ধান উৎপাদন, নানা প্রকারের সবজি ও রবি শস্যের চাষ, খনার বচনে সেচের উল্লেখ, পতঞ্জলি উল্লিখিত কূপ খনন করে পানি সংগ্রহ করা থেকে মনে হয় প্রাচীন যুগের কৃষি-কার্যে সেচেরও প্রয়োজন ছিল। মনে হয়, বাংলার কৃষকও ভূ-বৈচিত্র্যের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ সেচ-যন্ত্র আবিষ্কার ও তার যথাযথ ব্যবহার করেছে- যুগ যুগ ধরে; এ অনুসিদ্ধান্ত বাংলা অঞ্চলের তিনটি সেচ-যন্ত্রের প্রাচীনতা প্রমাণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলার সেচ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন দুইজন সেচ-বিশেষজ্ঞ। তারা হলেন উইলিয়াম উইলকক্স এবং কপিল ভট্টাচার্য। তাঁরা বাংলার বিদ্যমান সেচের তাত্ত্বিক আলোচনায় এক মত পোষণ করেননি। তাঁদের সাথে দ্বি-মত না করে, বাংলার কৃষিতে একেবারে কৃষক পর্যায়ে নিকট অতীতে যে সনাতন সেচ-যন্ত্রসমূহ ব্যবহৃত হতো, তা কতটা প্রাচীন তার আলোচনা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।

সাধারণভাবে কৃত্রিম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশেষত শুকনো মৌসুমে বর্ষণের অভাবে জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য পানি সরবরাহ করাকে সেচ বলা যায়। সেচ ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে জমিতে সরবরাহের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফসলের জমি থেকে ভূপৃষ্ঠের পানির উৎসের অবস্থান উঁচু বা নিচুতে হতে পারে। এদের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সেচকার্যের পদ্ধতি পৃথক এবং উপকরণ ও প্রযুক্তিও ভিন্নতর। বাংলা অঞ্চলে এসব পৃথক পৃথক প্রযুক্তির সনাতন সেচ-যন্ত্রসমূহের মধ্যে দোন, ডাব বা দুফ (Bucket/vessel), সেঁউতি (Bailing vessel) এবং উরি প্রধান। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মুহম্মদ আবদুল জলিল এ তিনটি যন্ত্রের মধ্যে শুধু দোন ও সেঁউতি সম্পর্কে খুব সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। বরুণকুমার চক্রবর্তী শুধু ‘ছ্যামত’ নামে সেঁউতির উল্লেখ করেছেন। অপর দিকে ওয়াকিল আহমদ ‘উরি’র আলোচনা সংযুক্ত করতে সক্ষম হলেও ‘ডাব’-এর তথ্য উপস্থাপন করেননি। অথচ ব্রিটিশ প্রতিবেদনে প্রাগুক্ত তিনটি সেচযন্ত্রই আঞ্চলিক নামেই উল্লিখিত হয়েছে।

বাংলা অঞ্চলের সনাতন সেচ-যন্ত্র:

দোন: বরেন্দ্র অঞ্চলের কোন কোন স্থানে এখনও দোনের ব্যবহার দেখা যায়। সারা বাংলায় দোন নানা নামে পরিচিত। যেমন: জাঁত, ডোঙ্গা, দোঙ্গা, দুনি, কুন্দা, কোন, জান্ট, প্রভৃতি অন্যতম। দোন হস্তচালিত ও লিভারভিত্তিক একটি সেচ-যন্ত্র (চিত্র ১)। ওয়াকিল আহমদ একে ডোঙ্গা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন কিন্তু মুহম্মদ আবদুল জলিল নাম দিয়েছেন ‘বড় সেঁউতি’। তবে এ নাম কোনো অঞ্চলে ব্যবহৃত হয় তা তিনি উল্লেখ করেননি। বাংলা একাডেমির অভিধানে দোন ও ডোঙ্গাকে পানি সেঁচার পাত্র বলা হয়েছে, যদিও একে পাত্র বলা যায় না। তবে দুনিকে উক্ত অভিধান বলছে ‘পুকুর বা নদী থেকে জল তোলার যন্ত্র’। আবার পানি সেঁচার জন্য ব্যবহৃত তালগাছের কাণ্ডের সেচ-যন্ত্র ঢাকা অঞ্চলে ‘দোন্’ নামে পরিচিত। দোন দেখতে অনেকটা নৌকার মত। আদিতে ব্যবহারের শুরুতে মনে হয় তালগাছের বাঁকা কাণ্ডের খোলস দোন হিসাবে ব্যবহৃত হতো। কেননা তালগাছের খোলসকে নৌকা হিসাবে ব্যবহার বাংলাদেশের আদি পদ্ধতি। অতি প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় তাল গাছ সুলভ ছিল। পরবর্তীতে দোন লম্বা জাতীয় কোন গাছের কাণ্ড থেকে তৈরি হতো (চিত্র ২)।

দোন কার্যত একটি ১৩-১৫ ফুট দীর্ঘ কাঠের খোল। খোলটি নৌকাকৃতির ও উপর দিক খোলা। তবে এর অর্ধাংশ সরল, এ অংশের শেষ দিক উন্মুক্ত থাকে এবং অন্য অর্ধাংশ মূলত বৃত্তচাপের মত, যা অপর অংশের তুলনায় অধিক প্রশস্ত কিন্তু প্রান্তভাগ ক্রমান্বয়ে সরু ও আবদ্ধ। একটি দোন অনেক বছর ব্যবহার করা যায়। সংরক্ষণের জন্য প্রতি মৌসুমে দোনে গাব বা আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া হয়। বর্তমানে দোনের ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। তবে এখনও বগুড়া জেলায় দোনের ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। বগুড়ায় ব্যবহৃত দোনসমূহ (স্থানীয়ভাবে ডোঙ্গা) টিনের তৈরি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে বিশ শতকের শুরুতে বাংলায় টিনের প্রচলন শুরু হলে টিনের পাত দিয়ে দোন তৈরি করা সহজ হয়। এরপর কার্যত দোন নির্মাণে কাঠের ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে। তবে এখনও অনেক বাড়িতে বা সৌখিন সংগ্রহশালায় কাঠের দোন সংরক্ষিত রয়েছে।

দোনের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের পানি ৭ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে তোলা যায়। তবে এটি ৩-৫ ফুটের উচ্চতা পর্যন্ত অধিক কার্যকর। দোনের মাধ্যমে সেচকার্য সম্পন্ন করতে হলে একটি fulcrum-এর ব্যবস্থা করতে হয়। তিনটি বাঁশের খুঁটির এক প্রান্ত ভালোভাবে রশি দিয়ে বেঁধে এদেরকে পিরামিডাকারে পানির উৎসের নিকটবর্তী স্থলভাগের প্রান্তে দাঁড় করিয়ে গর্তের মধ্যে বসাতে হয় (চিত্র ৩)। 

দুটি খুঁটি ভার বহন করে এবং অপর খুঁটিটি তাদেরকে উলম্ব রাখতে সাহায্য করে। অঞ্চলভেদে এ কাঠামো তৈরিতে কখনও দুটি বা একটি খুঁটি ব্যবহৃত হয়। এবার প্রধান দুটি খুঁটির সংযোগ ভাগের উপরে ইংরেজি ভি আকারের যে কোণ তৈরি হয় সেটাই লিভারের fulcrum- হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এবার fulcrum–এর উপর লম্বা একটি বাঁশ লিভার হিসাবে স্থাপন করতে হয়। এর ফলে লিভার দণ্ডটি fulcrum–এর দুই দিকে ভারবাহু ও বলবাহু হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়। এ লিভারের ভূপৃষ্ঠের অংশের ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেক সময় কাঠের গুড়ি, পাথর, ইট অথবা কলাগাছের কাণ্ড ও কাদা-মাটি সংযুক্ত করার ব্যবস্থা থাকে। এর আঞ্চলিক নাম ‘পরুনি’। লিভারের দণ্ডে অপর প্রান্ত অর্থাৎ পানির উৎসের দিকের অংশে পৃথক একটি লম্বা আঁকশি সংযুক্ত করে, আঁকশির বক্রমুখটি দোনের সরু প্রান্তের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। এবার একজন ব্যক্তি পানিতে মাচা বা ছোট ট্যাঁরের উপর দাঁড়িয়ে দোনের সরু প্রান্ত ধরে বৃত্তচাপাকৃতির অংশ পানিতে ডুবিয়ে খোলস ভর্তি করে। পানি ভর্তি দোনের এ অংশ এবার লিভারের অপর প্রান্তের ওজন এবং ব্যক্তির সাহায্যে উপরে উঠে। এতে পানি ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়। সেই পানি নালা দিয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেতে যায়। এটি প্রতি মিনিটে ১১৭ থেকে ৩৭৮ লিটার পানি উত্তোলন করতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে দোনের লিভার দণ্ডের দুই দিকই পালাক্রমে বলবাহু ও ভারবাহু হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

দোনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে জলস্তর থেকে অনেক উঁচুতে পানি উত্তোলন করা সম্ভব (চিত্র ৪)। প্রতি ধাপে ৫-৭ ফুট উঁচুতে পানি উত্তোলন করা যায়। দোনের সীমাবদ্ধতা হল এটি শুধু ভূ-পৃষ্ঠের সংরক্ষিত পানিই উত্তোলন করতে পারে; ভূ-অভ্যন্তরের পানি উত্তোলন করতে পারে না। বাংলাদেশ যেহেতু প্রাচীনযুগ থেকেই নদ-নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয়, দিঘিবহুল অঞ্চল সেহেতু বলা যায় দোন অত্যন্ত কার্যকর ছিল।

ডাব (Bucket/vessel) : ডাবও হস্ত চালিত ও লিভারভিত্তিক একটি সেচ-যন্ত্র (চিত্র ৫)। এ সেচ-যন্ত্রটির বিবরণ বা আলোচনা পূর্বোক্ত প্রথম ও তৃতীয় গ্রন্থে স্থান পায়নি। দ্বিতীয় গ্রন্থে ‘ঢেঁকিকল’ নামে একটি যন্ত্রের উল্লেখ করা হয়েছে, যা ডাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; তবে উক্ত কলটি সেচযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো কি না তা স্পষ্ট নয়। ডাব দেখতে অনেকটা কাটা ডাবের ন্যায় (চিত্র ৬)। 

আঞ্চলিক অভিধান মতে ডাব বরেন্দ্র অঞ্চলে বেতের তৈরি পানি সেঁচের উপকরণ। উনিশ শতকে দিনাজপুর জেলার পোরসাতে সেচের জন্য ডাবের ব্যবহারের কথা ব্রিটিশ প্রতিবেদনে উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছে তা মহীশুরের ব্যবহৃত সেচযন্ত্রের ন্যায়। এ সংশ্লিষ্ট শব্দ ডাব্কুয়াও বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচলিত, যার অর্থ পাটহীন মেটে কুয়া। আর ডুরি বরিশালে বৃহদাকার সেঁউতি। কোন কোন অঞ্চলে কুয়া থেকে পানি তোলার বালতি ডোল নামে পরিচিত। তবে সেচ-যন্ত্র হিসেবে ডাবের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি ভূ-অভ্যন্তরের পানি উত্তোলন করতে সক্ষম। তাই ডাবের সাথে কূপের একটি গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এ প্রকৃতির সেচ-যন্ত্র খ্রিস্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়েছে (চিত্র ৭)। 

Irrigation museum সেচ প্রযুক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহারের যে কালানুক্রম তৈরি করেছে, সে মতে ডাব পদ্ধতির জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ১৭ শতকে। বাংলায় আদিতে হয়ত কাঠ, বাঁশ বা বেতের হাতল ওয়ালা পাত্র, বিশেষত বালতি আকৃতির কোন পাত্রকে ডাব হিসাবে ব্যবহার করা হতো। বলার অপেক্ষা রাখে না কাঠ, বাঁশ বা বেত বরাবরই বাংলায় সহজলভ্য ছিল। পরে টিনের পাত দিয়ে ডাব তৈরির প্রচলন হয়। এর কার্যপদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে দোনের ন্যায়। দোন অপেক্ষা ডাবের পানি উত্তোলনের হার কম। এরপরও উলম্ব তীরের কারণে যখন দোন বা সেঁউতির মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা সম্ভবপর হয় না তখন ডাবই একমাত্র ভরসা (চিত্র ৫)। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে বাংলার বাইরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের অনেকগুলো ডাব বা জলপাত্র বা চামড়ার থলি চাকার সাথে বেঁধে ভূপৃষ্ঠের পানি এবং চাকা ও পাত্রগুলোর মধ্যে রশির শিকল তৈরি করে কুয়া বা অধিক নিচের পানি উত্তোলনের প্রচলন ছিল। কিন্তু বাংলা অঞ্চলে এরকম প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে হয় না। ডাব ১৬-২০ লিটার পানি ধারণ করে এবং তা দিয়ে ৮ থেকে ৯ ফুট নিচু থেকে পানি উত্তোলন করা যায়। হাওর, বিল, ঝিল, নদী, খাল, জলাশয় প্রধান বাংলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বরাবরই নাগালের মধ্যে ছিল।

সেঁউতি: সেঁউতি ঝুড়ি বা বেলচাকৃতির সরল একটি সেচ-যন্ত্র (চিত্র ৮)। চর্যাপদে এর উল্লেখ রয়েছে। ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে একে দোলনা সেচনীও বলা যায়। এর কয়েকটি স্থানীয় নাম: হিওট, সেচনী, উঁচা, উঁচি, হোচো, সেঁওত, ডবকি, হিথ, হিচুঁনি, ইচুঁনি, লুই, ডুরি, ঝাঝরা ইত্যাদি। সেঁউতি তৈরিতে আদিতে বেত বা বাঁশ ব্যবহৃত হতো, তার নিদর্শন এখনও টিকে রয়েছে (চিত্র ৯)। 

পূর্বেই বলা হয়েছে বাঁশ-বেত বাংলায় সহজলভ্য ছিল। তবে টিনের ব্যবহার প্রচলিত ও তা সহজলভ্য হওয়ার পর সেঁউতি তৈরিতে মনে হয় শুধু টিনই অধিক ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমে বর্গাকার টিনের পাতের তিন বাহুর প্রান্ত বাঁশের বাতা দিয়ে বাঁধতে হয়। অপর বাহুর প্রান্ত, বাহুর দৈর্ঘ্যরে অর্ধেক লম্বা দুটি বাতা দিয়ে বাঁধতে হয়। যাতে এ বাহুর বিভক্ত প্রান্তদ্বয় ভাঁজ করে একই রেখায় এনে বাঁধা যায়। ফলে টিন পাতটি বেলচার আকার ধারণ করে। এর সম্মুখভাগের দুই কোণে দুটি এবং উপর প্রান্তে দুটি রশি বেঁধে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। অনেক সময় বালতিতে রশি লাগিয়েও সেঁউতির কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়। দুজন লোক একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংযুক্ত রশি ধরে সেঁউতি দুলিয়ে উৎস থেকে পানি উত্তোলন করে থাকে (চিত্র ১০)। 

এ পানি নালার মাধ্যমে জমিতে যায়। সেঁউতি শুধু ভূপৃষ্ঠের পানি উত্তোলনে ব্যবহৃত হয়। সেঁউতির মাধ্যমে ৪-৫ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলন করা যায়। উৎস ৩ ফুটের মধ্যে থাকলে মিনিটে সেঁউতির মাধ্যমে ২২৭ লিটার পর্যন্ত পানি উত্তোলন করা সম্ভব হয়।

উরি: এটিও এক প্রকার সেঁউতি, এর নির্মাণ উপকরণ, নির্মাণ পদ্ধতি ও আকৃতি সেঁউতির অনুরূপ (চিত্র ১১)। এ সেচ-যন্ত্রটির প্রতি লোকবিদ ওয়াকিল আহমদই প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তবে এর ব্যবহার পদ্ধতি পৃথক। দুজনের পরিবর্তে একজন, একহাতে হাতল এবং অন্য হাতে রশি ধরে উরিকে সেঁউতির মত চালনা করে পানি উত্তোলন করে থাকে। ‘উরি’ সেঁউতির চেয়ে কম পানি উত্তোলন করতে পারে। তবে এটি একেবারেই অনাড়ম্বর একটি সেচযন্ত্র, যা ব্যবহার করতে কোন আনুষঙ্গিক উপকরণের আয়োজন করতে হয় না। ‘উরি’ যখন নৌকার পানি সেচে ব্যবহৃত হয়, তখন ‘হ্যামত’ হিসাবেও চিহ্নিত হয়।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সেচ প্রযুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য- ভূ-পৃষ্ঠ ও ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের সক্ষমতা- বাংলা অঞ্চলের চারটি সেচ-যন্ত্রই উক্ত দুই বৈশিষ্ট্যের সুসমন্বিত উদাহরণ। যা ভৌগোলিক পরিবেশের সাথে খুব মানানসই। এ চারটি সেচ-যন্ত্র পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়। যখন একই উৎস থেকে দীর্ঘ দিন সেচের জন্য পানি উত্তোলনের প্রয়োজন হয় তখন সাধারণত ‘দোন’ স্থাপন করা হয়। আর যখন তাৎক্ষণিক ও স্বল্প সেচের প্রয়োজন পড়ে বা ক্ষণে ক্ষণে পানির ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে সেচের প্রয়োজন পড়ে তখন ‘সেঁউতি’ ও ‘উরি’ব্যবহৃত হয়। অপর দিকে যখন কূপ থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হয় তখন অবশ্যই ‘ডাব’-এর সাহায্য নিতে হয়। উল্লেখ্য, যখন ভূ-পৃষ্ঠের পানি খুব খাঁড়া তীরের উপরে উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে, যেখানে পানির স্তর বেশি নিচু ‘দোন’ বা ‘সেঁউতি’ কাজ করতে সক্ষম নয় তখনও ‘ডাব’ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘বাংলাপিডিয়া’র মতে এসব সনাতন সেচ-প্রযুক্তিতেই ১৯৭১-৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট সেচের শতকরা ৫৬.৩১ ভাগ চাহিদা মিটেছে।

সেচ-যন্ত্রসমূহের প্রাচীনতা

পানি নিষ্কাশনের উন্নত ও কার্যকর ব্যবস্থা মনে হয় বাংলায় বিশেষত বরেন্দ্র অঞ্চলেও প্রচলিত ছিল। তার নিদর্শন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে; যা গারগইল/ গারগৈল (gargoyle/gurgoyle) নামে পরিচিত (চিত্র ১২)। কিন্তু এটি কৃষিতে সেচ-কার্যে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে মনে হয় না- এটি কার্যত ছাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য বিশেষত উক্ত পানি দেওয়াল থেকে একটু দূরে প্রক্ষেপ করার জন্য ব্যবহৃত হতো। এ পানি নিষ্কাশনী ব্যবস্থা ছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচলিত সনাতন সেচ-যন্ত্রসমূহের প্রাচীনতার প্রমাণ স্বরূপ নির্দিষ্ট কোন তথ্য বা ভৌত প্রত্ন-নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সম্ভবত এ ঘাটতির কারণেই বরেন্দ্র বা সারা বাংলার সনাতন কৃষি-প্রযুক্তির ইতিহাস প্রায় অনালোচিতই রয়েছে। উল্লেখ্য ভৌত-প্রত্ন নিদর্শন ও সমকালীন সাহিত্য (কাব্য, দিনলিপি, ভ্রমণকাহিনী, চিঠি, নথিপত্র প্রভৃতি) ব্যতীত অন্য কোন উৎসের তথ্য বাংলার ইতিহাস রচনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহৃত হয়নি। তবে ‘অন্য উৎস’ ব্যবহার করে বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের নতুন দিক উন্মোচন হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় দেখিয়েছেন। সে ভিন্ন উৎসের অন্যতম হলো প্রত্ন-শব্দ (proto-word/ archaic-word)। বাংলা ভাষার প্রত্ন-শব্দ বা শব্দের ব্যুৎপত্তি (Etymology) চর্চার তথ্য ব্যবহার করে বরেন্দ্র অঞ্চলের তিনটি সেচ-প্রযুক্তির ইতিহাস অন্বেষণ করা অসম্ভব নয়।

দোন: দেনের আঞ্চলিক নামসমূহের মধ্যে ডোঙ্গা, দোঙ্গা, দোন, দুনি, দুনী ও দ্রোণী বাংলা ভাষায় একই অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং এদের উৎসমূল যে একই তা সহজেই বোধগম্য। এ শব্দটি স্থানীয়। সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, ক্ষুদিরাম দাশ এবং বাংলা আভিধানিকগণ ডোঙ্গা শব্দকে সেচ-যন্ত্র অর্থে দেশী ও অস্ট্রিক মুণ্ডারি বা সাঁওতালি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উল্লেখ্য ডোঙ্গা ডিঙ্গি নৌকার অর্থও বহন করে। কারণ গাছের বিশেষত তাল গাছের কাণ্ড বা গুড়ি খোদাই করে যে ডোঙ্গা তৈরি করা হয়, তা একই সাথে সেচ যন্ত্র ও নৌকা হিসাবে ব্যবহৃত হতো।

ডাব: অপক্ক নারিকেল বাংলা ভাষায় ডাব নামে পরিচিত। ডাব শব্দটি দেশীয়। বাংলা ভাষায় এদের কাছাকাছি শব্দ ডুব, ডুবা, ডোবা, ডাবু, ডুরি, ডাবা, ডাব্বা প্রভৃতি। ডুব এর অর্থ পানিতে নিমজ্জন, অবগাহন, স্নান। বরেন্দ্র অঞ্চলে এখনও পুকুর বা নদীতে গোসল করাকে ডুব দেয়া বলা হয়। ডুবা বা ডুবা-ডুবি এবং ডোবা একই সাথে দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যথা, জলে নিমজ্জিত থাকা এবং ক্ষুদ্র জলরাশি বা জলভর্তি খাল ও জলাভূমি অর্থ প্রকাশ করে থাকে। এখানে নীচুজমি বা জলাভূমি অর্থে ডুবি ও ডোব শব্দ দুটি আর্যপূর্ব ভাষা থেকে আগত। আর ডুরি বরিশালে বৃহদাকার সেঁউতি। বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ যন্ত্র ডাব-এর আকৃতি, মধ্যস্থ পানি খাওয়ার জন্য কর্তন করলে অপক্ক নারিকেলের যে রূপ ধারণ করে তার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ। সেচ কার্যকর করতে বরেন্দ্র অঞ্চলের এ ডাবকে বার বার পানিতে ডুব দিতে হয়। এসব বিচারে মনে হয় শব্দসমূহের মধ্যে ডাব ও পানির সাথে একটি আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। ডাবু শব্দটি অস্ট্রিক সাঁওতালি। এর সাথে বাংলা ‘উর’ যোগে ডাবোর বা ডাবুর শব্দের উদ্ভব। এছাড়া ডাবরা, ডাবা’চ, ডুবু’চ, ডাবাডুবু অস্ট্রিক সাঁওতালি শব্দের অর্থ পুকুরের ঝাঁপা-ঝাঁপি করে জলে স্নান করা। আর অস্ট্রিক ডোল অর্থ কুয়ো থেকে জল তোলার লোহার পাত্র। আবার ডোব্ বরিশালে বালতি, ডোব পাবনায় ডোবা বা জলাশয়, ডাব্ রাজশাহীতে বেতের তৈরি পানি সেঁচার উপকরণ এবং ডাব্কুয়া পাটহীন মেটে কুয়া, ডুরি বরিশালে বৃহদাকার সেঁউতি। এসব তথ্য থেকে এ কথা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যায় সেচ-যন্ত্র ডাব এর সাথে বাংলায় আদি বসতি স্থাপনকারী অস্ট্রিক জনগোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

সেঁউতি: অভিন্ন অর্থে সেঁউতি শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ‘চর্যাপদ’-এ। একটি পদে উল্লিখিত হয়েছে-গঅন দুখোলে সিঞ্চহু পানী ন পইসই সান্ধি। পানি সেচনপাত্র অর্থে মধ্যযুগের প্রায় সাহিত্য নিদর্শনে এর ব্যবহার পরিদৃষ্ট হয়। সেঁউতি, সেউনি, সেচনী, সেঁউতী শব্দসমূহের সাথে সেচ শব্দের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অভিধান মতে সেঁউতি ও সেচ শব্দ সংস্কৃত সেচনী ও সিচ্ শব্দমূল থেকে উৎসারিত। সেঁউতি ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় উচি ও উ’চা নামে পরিচিত। আঞ্চলিক অভিধানে পানি সেঁচার এ আধারের আকৃতি ত্রিকোণাকার ও বাঁশের তৈরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেঁউতি বা উচি/ উ’চা সেচের সময় যেভাবে কাজ করে থাকে তার সাথে অস্ট্রিক শব্দ উ’চ্-এর যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। সাঁওতালি ভাষায় উ’চ্ -এর অর্থ লাফানো।

এ ছাড়াও বাংলা ভাষায় এমন কিছু শব্দ রয়েছে, যেগুলোর অর্থ কাঠ, বাঁশ, বেত প্রভৃতির তৈরি নানা প্রকৃতির সেচ উপকরণ বা সেচযন্ত্র। যেমন: ‘ছেনি’ রাজশাহী অঞ্চলে পানি সেচনের উপকরণ বিশেষ। সিলেটে পানি সেঁচার যন্ত্রকে কুন্দকোরা এবং কাঠের তৈরি আর এক সেচ উপকরণকে কুইন্ বলে। এর নিকটবর্তী শব্দ কুন্দা ময়মনসিংহে তালগাছের গুঁড়ির তৈরি নৌকা হিসাবে পরিচিত। আর একটি শব্দ নালা, অভিধান বলছে শব্দটির অর্থ জল বের হওয়ার খাত; এ শব্দ অপরিবর্তিত রূপে অস্ট্রিক সাঁওতালি থেকে বাংলায় এসেছে। এ শব্দসমূহ নিশ্চিতরূপে নির্দেশ করে সেচকার্যে ব্যবহারের জন্য বাংলার নিজস্ব কিছু সেচ যন্ত্র বা উপকরণ যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেগুলো হয়ত প্রাচীন যুগের আদি থেকেই প্রচলিত ছিল।

এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, বাংলা অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপনকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অস্ট্রিক-দ্রাবিড়রা ছিলেন প্রধান। গুপ্তযুগের পূর্বে বাংলা অঞ্চলে‘আর্য’ জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত অস্ট্রিক-দ্রাবিড়রাই ছিলেন প্রধান জনগোষ্ঠী। এদের ভাষা যথাক্রমে অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় নামে পরিচিত। অস্ট্রিক ভাষার বর্তমান প্রতিভূ হচ্ছে মুণ্ডারি ভাষা, যে ভাষা সাঁওতাল, মুণ্ডা, কোরওয়া, কোরবু প্রভৃতি জাতিসমূহ ব্যবহার করে থাকে। অপর দিকে দ্রাবিড় ভাষার উত্তরসূরি হলো: গোণ্ড, মালের, কুই (খন্দ), ওরাওঁ (কুড়ুখ) ভাষা। এ ছাড়া এ অঞ্চলের অপর প্রাচীন ভাষা হলো ভোট-চিনীয় বা ভোট-ব্রহ্ম; এ ভাষার বর্তমান প্রতিনিধি মেচ, বরা, রাভা, টিপুরা, বোডো প্রভৃতি ভাষা। আর যেহেতু বাংলা অঞ্চলের সনাতন তিনটি সেচ-যন্ত্রের নামই, যেমন- দোন, ডাব, সেঁউতি আর্যপূর্ব ভাষাগোষ্ঠী হতে আগত এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই বলা যেতে পারে সনাতন কৃষি-প্রযুক্তির সাথে আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রগাঢ় সম্পর্ক রয়েছে। সে সম্পর্কের সূত্র ধরে এ অনুমান অমূলক নয় মধ্যযুগের ন্যায় প্রাচীন যুগে এবং তারও পূর্বে বাংলা অঞ্চলের মানুষ কৃষিকার্যে বিশেষত সেচ কার্যে কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার জানত। বলার অপেক্ষা রাখে না দোন, ডাব এবং সেঁউতি এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এ সেচ-যন্ত্রসমূহ যে প্রযুক্তি বহন করে তা সমসাময়িক বিশ্বে প্রচলিত প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, দীর্ঘস্থায়ী কৃষি বিকাশে সহায়ক এবং প্রযুক্তি আরোপিত নয়, অনেকটা স্ব-উদ্ভাবিত, চিরায়ত ও লাগসই।

[এই রচনাটি আমার ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রত্ন-প্রযুক্তি: প্রসঙ্গ সেচ’ শীর্ষক প্রকাশিত (আইবিএস জার্নাল, সংখ্যা ২৬ (১৪২৫), জানুয়ারি ২০২০, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ. ৫১-৬৮) প্রবন্ধের সামান্য পরিমার্জিত রূপ।এর উন্নতর সংস্করণ মৎপ্রণীত গ্রন্থে প্রকাশের জন্য অপেক্ষমাণ।]

টীকা: কৃষি পরাশর

অধিকাংশের অভিমত কৃষি পরাশর ষষ্ঠ থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগের মধ্যেই রচিত হয়েছিল। কৃষি পরাশর ¬কৃষকের হিতার্থে সংস্কৃত ভাষায় রচিত কৃষি নীতিমালা বিষয়ক একটি রচনা। এর বর্ণনায় যে প্রকৃতির ভাষা ও কৃষির উল্লেখ করা হয়েছে তাতে ঋষি পরাশরকে বাঙালি বা পূর্বভারতীয় মানুষ মনে করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ রচনায় কৃষি বিষয়ক যে ধরনের জটিল ও অঙ্কবাচক তত্ত্ব আলোচনা করা হয়েছে, তাতে মনে হয় কৃষি ছিল সে সময় জ্ঞানচর্চার অন্যতম মৌল বিষয়। এর শ্লোকের সংখ্যা মাত্র ২৪৩। প্রথম নয় শ্লোকে কৃষি ও কৃষকের গুরুত্ব প্রকাশিত হয়েছে। এরপর সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব পেয়েছে কৃষির সময় নির্ধারণে। মাসভিত্তিক মেঘের পরিচয়, বৃষ্টিপাতের ধরন, পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে পরবর্তী ৭০টি শ্লোকে। তিন শ্লোকে (৮০-৮৩) কৃষিকাজে নিযুক্ত ব্যক্তির যোগ্যতা এবং এরপর ১১১ শ্লোক পর্যন্ত কৃষিকাজে নিয়োজিত পশু নির্ধারণ, সেসবের লালন-পালন প্রভৃতির নির্দেশনা সন্নিবেশিত হয়েছে। এর পরবর্তী (১১২-১২০) নয়টি শ্লোকে লাঙলের যন্ত্রাংশের বিবরণ, আকার-আকৃতি, উপাদান ও পরিমাপের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। এরপর (১২১-১৫৬) কৃষি সম্প্রসারণে ও কৃষি কাজে নানা ধরনের রীতিনীতি ও বিধিনিষেধ মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শস্যবীজ সংরক্ষণ, রোপণ-বপন, পরিচর্যা, ধান কাটার বিধি উল্লিখিত হয়েছে ১৫৭ থেকে ২১৩ শ্লোকে। পরবর্তী শ্লোকসমূহে মেধি স্থাপন, মেধির কাঠ ও সময় নির্ধারণ, আরাধনা, ফসল পরিমাপ ও সংরক্ষণ বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। দেখুন: KRSI-PARASARA, (Ed. & Trans. Girija Prasanna Majumdar and Sures Chandra Banerji), Calcutta: The Asiatic Society Calcutta, 1960; Upinder Singh, A History of Ancient and Early Medieval India, Delhi:Pearson Education, 2009, P. 30; Ryosuke Furui, “The Rural World of an Agricultural Text: A Study on The Krsiparasara”, Studies In History, 21, 2 N.S. (2005), New Delhi: Sage Publications, P. 149-171.

নির্বাচিত সূত্র:

দৈনিক করতোয়া, বগুড়া, ২ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রি.।

মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ও রাজিয়া সুলতানা, প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৯।

ওয়াকিল আহমদ (সম্পা.), লৌকিক জ্ঞানকোষ, ঢাকা: গতিধারা, ২০১১।

গোলাম মুরশিদ ও স্বরোচিষ সরকার, বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান (২য় খণ্ড), ঢাকা: বাংলা একাডেমি, ২০১৩।

গোলাম মুরশিদ ও স্বরোচিষ সরকার, বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান (৩য় খণ্ড), ঢাকা: বাংলা একাডেমি, ২০১৪।

আবদুল মমিন চৌধুরী, প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স, ২০১২।

আমরকোষ (গুরুনাথ বিদ্যানিধি ভট্টাচার্য স.), কলিকাতা: সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার, ১৪১৭।

আহমেদ কামাল, কালের কল্লোল: ইতিহাস, উন্নয়ন ও রাজনীতি, ঢাকা: সংহতি, ২০০৮।

আলি নওয়াজ, খনার বচন: কৃষি ও কৃষ্টি, ঢাকা: আফসার ব্রাদার্স, ২০১৪।

অনিরুদ্ধ দাস, দীর্ঘস্থায়ী কৃষি বিকাশ: ঐতিহাসিক পটভূমি ও আধুনিক সভ্যতার দায়, কলকাতা: গাঙচিল, ২০১০।

এবনে গোলাম সামাদ, বাংলাদেশঃ মানুষ ও ঐতিহ্য, রাজশাহী: লেখক, ১৯৭৮।

অতুল সুর, বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, কলিকাতা: জিজ্ঞাসা, ১৯৭৭।

অতুল সুর, বাঙালা ও বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতি, কলিকাতা: জ্যোৎস্নালোক, ১৯৯০।

ইরফান হবিব, মুঘল ভারতের কৃষি ব্যবস্থা (১৫৫৬-১৭০৭), কলকাতা: কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, ১৯৯৯।

নীহাররঞ্জন রায়, বাঙালীর ইতিহাসঃ আদিপর্ব, কলকাতা: দে’জ পাবলিশিং, ১৪০২ বঙ্গাব্দ।

পতঞ্জলি, ব্যাকরণ-মহাভাষ্য: পস্পশাহ্নিক (অনু. ও সম্পা. দণ্ডিস্বামী দামোদর আশ্রম), কলিকাতা: আদ্যাপীঠ, ১৯২৫।

বরুণকুমার চক্রবর্তী, লোক প্রযুক্তি, কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স, ২০০৪।

বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (অখণ্ড, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ সম্পা.), ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৯।

এবাদত হোসেন, চর্যা পরিচিতি, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯।

মমতাজুর রহমান তরফদার, মধ্যযুগের বাংলায় প্রযুক্তি ও সমাজ বিবর্তন, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৯৩।

মীনহাজ-ই-সিরাজ, তবকাত-ই-নাসিরী (অনু. আ.কা. মো. যাকারিয়া), ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ, ২০০৭।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত, ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স, ২০১০, পৃ. ৫৮।

মুহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, স্থাপত্য পরিভাষা, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৯৪।

যতীন সরকার, ‘ইতিহাস-গুরু রবীন্দ্রনাথ’, ইতিহাস, ত্রয়োদশ বর্ষ, বৈশাখ-চৈত্র ১৩৮৬, ঢাকা: বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, ১৯৮১।

ওয়াকিল আহমদ, লোকজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি, ঢাকা: গতিধারা, ২০১০।

কৃষ্ণপদ গোস্বামী, ‘বাঙ্গলার গ্রামের নামে অনার্য ও দেশী উপদান’, সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ৬৫ বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, ১৩৬৫, কলকাতা।

কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্য, তরাই-ডুয়ার্সের লোকায়ত শব্দকোষ, কলকাতা: প্যাপিরাস, ২০০৬।

কাজী মোজাম্মেল হক, ‘পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশঃ প্রেক্ষিত কৃষি’ বাংলাদেশ পরিবেশ ও কৃষি কনসালটেশন ২০০২, ঢাকা: বাপা, নভেম্বর ২০০২।

মুহম্মদ আবদুল জলিল, লোকবিজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি, রাজশাহী: মোঃ আব্দুর রহমান মুহ্সেনী, ২০০৪।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা, কলিকাতা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪।

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় শব্দকোষ (১ম খণ্ড), নিউ দিল্লী: সাহিত্য আকাদেমী, ১৯৬৬।

ভারতকোষ- চতুর্থ খণ্ড (দই- ফ্রেমিং), কলিকাতা: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিক ভূগোল: বিশ্ব ও বাংলাদেশ, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৩।

ক্ষুদিরাম দাশ, সাঁওতালি বাংলা সমশব্দ অভিধান, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ১৯৯৮।

“Mauryan Brahmi Inscription of Mahasthan”, Epigraphia Indica Vol. XXI (1931-32), New Delhi: Archeological Survey of India.

David W. Anthony, The Horse, the Wheel, and Language: How Bronze-Age Riders from the Eurasian Steppes Shaped the Modern World, Princeton and Oxford: Princeton University Press, 2007.

Dines Chandra Sircar, Select Inscriptions Bearing on Indian History And Civilization, Vol. I, Calcutta: University of Calcutta, 1965.

Francis Buchanan (Hamilton), A geographical, Statistical, and Historical Description of the District, or Zila, of Dinajpur in the Province, or Soubah, of Bengal (Calcutta: The Baptist Mission Press, 1833).

H. A. R. Gibb (Tan.), Ibn Battuta: Travels in Asia and Africa 1325-1354, New Delhi & Madras, 1992.

Irfan Habib, Tecnology In Medieval India, c. 650-1750, New Delhi: Tulika Books, 2009.

Irfan Habib, Tecnology In Medieval India, c. 650-1750, New Delhi: Tulika Books, 2009.

Kari W. Butzer, Early Hydraulic Civilization in Egypt: A Study in Cultural Ecology, Chicago and London: The University of Chicago Press, 1976.

Montgomery Martin, The History, Antiquities, Topography and Statistics of Eastern India, Vol. II: Bhagulpoor, Goruckpoor And Dinajepoor (London: W. H. Allen and Co., 1838).

Nani Gopal Majumdar (Ed., Trans & Nots), Inscription of Bengal, Vol. III, Rajshahi: The Varendra Research Society, 1929.

R. C. Majumdar, Radhagovinda Basak & Nanigopal Banerji, The Ramacaritam of Sandhyakaranandin, Rajshahi: The Varendra Research Museum, 1939.

Suniti Kumar Chatterji, The Origin and Development of The Bengali Language, Part I, Calcutta: Calcutta University Press, 1926.

www.banglapedia.org

www.irrigationmuseum.com

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত