Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, হিমাংশু স্যার

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-২) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

Reading Time: 4 minutes

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-২।


 

সকালে  বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইছিল না রাজের। মা না ডাকলে তার বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করে না। তবে আজ মা কোনকারনে ব্যস্ত বলে  ডাকেন নি। ঘুম ভাঙার পর সে বাইরে ফটফটে আলোর দিকে তাকাল। কলাগাছটা যেন তার দিকে চেয়ে বলছে-,”কি! কাল কেমন ভয় পেয়েছিলে? রাজ একবার সেদিকে তাকিয়ে ফের লজ্জা পেল।সে চোখ কচলে কচলে উঠে   দাঁড়াল।

বাইরে দাঁড়াতে সে বুঝল মায়ের  কেন তার উপর নজর নেই। তার মনে পড়ল আজ বাড়িতে মেসোমশাইরা আসবেন। মেশো-মাসীরা আসা মানেই কদিন ধরে হইচই।মা-ও এ কদিন তার পড়া নিয়ে খুব একটা চিন্তা করবেন না।  সে বেশ আনন্দেই থাকবে। রাজ খুশী হল ।তবে সে ঠিক করে রাখল না পড়লেও পড়া-পড়া ভান তাকে দেখাতে হবে!

মা রান্নাঘরে বসে তদারকি করছেন।এখনো বাবাকে দেখতে পায় নি রাজ। সে মায়ের পাশে একবার  দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,“বাবা কোথায় মা?”

“কাজে গেছেন।“

“এত সকালে?”

“অফিসে আজ তাড়া আছে। কে যেন বাপু আসবে। তাই  সকাল সকাল  বেরোল।“

“আর ছোটমামা?”

“তার কি ফুরসত আছে? বাজার করতে পাঠিয়েছিলাম। ফিরে আসার পর সেই যে বেরোল আর ফেরার নাম নেই।“ বলেই মায়ের হঠাৎ কি খেয়াল পড়ল। মা বললেন,“ তুই এখন উঠলি যে বড়?  সারারাত নিশ্চয় ঘুমোস নি? টুবলু  বলল তো তুই নাকি অনেক রাত পছন্দ ওকে ঘুমাতে দিস নি?“

সাতসকালে মুখ ব্যাজার হয়ে গেল রাজের।ছোটমামার উপর তার রাগ হল। কথা নেই বার্তা নেই তার উপর কেমন দোষ চাপিয়েছেন ছোটমামা! সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,“মোটেই না ছোটমামা-ই  রাতে গল্প করছিল। ওইজন্যই ঘুম আসতে দেরী হল।“

মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,“আচ্ছা। বেশ। এবার মুখহাত পা ধুয়ে পড়তে বস।স্কুল যেতে হবে তো?”

রাজের স্কুলের নাম সুর্যনাথ হাই স্কুল।  বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। সাইকেলে যেতে মিনিট দশেক সময় লাগে। রাজ মাথা নেড়ে বলল, “সে যাব!  এখন কিছু খেতে দাও। খুব খিদে পেয়েছে।“

“ তুই পড়তে বস। দিচ্ছি।“

“কি খাবার?”

“তোর পছন্দের খাবার। লুচি আলুর-দম। আর শোন। পড়ার সময়  ফাঁকি দিবি না।“

আনন্দ করে রাজ পড়ার ঘরের দিকে এগোল। কিন্তু আনন্দটা  বেশিক্ষন স্থায়ী থাকল না। হঠাৎ মনে পড়ল স্কুলের বন্ধু নির্ঝরেরকথা। নির্ঝর কোনো দুষ্টুমি করে না। সে খুবই শান্ত। পড়াশোনায় খুব ভাল অথচ  ওর নাম মনিটরের খাতায় রোজ ওঠে। নাম ওঠার কারণ অদ্ভুত। সে ক্লাস চলাকালীন চুয়িংগাম বা বিস্কুট খায়। প্রায় প্রতি স্যারই এইজন্য তাকে বকেন। এরজন্য সে শাস্তিও পায়। হয় ওকে ক্লাসের বাইরে থাকতে হয়,নতুবা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

 গতকাল দুই পিরিয়ডে হিমাংশু স্যার এসেছিলেন। হিমাংশু স্যার রাগী নন।  স্যার আসার পরই  দুই মনিটর হীরক ও নীলেশ খাতা দেখিয়েছিল। স্যার নাম ডাকবার খাতার দিকে চোখ মেলেছিলেন। তিনি এক এক করে ডাকতে শুরু করে ছিলেন। নীলেশকে তিনি  নাম লেখার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।নীলেশ তা বলতে শুরু করেছিল।


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-১) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


 রাজরা জানে হিমাংশু স্যার কারুকেই খুব একটা শাস্তি দেন না।গতকালও তিনি তাই করেছিলেন। কারুকে  দুবার,তিনবার  ওঠবস করে ছেড়ে দিলেন। মনিটরদের খাতায় রাজেরও নাম উঠেছিল। তার অপরাধ সে ময়ূখের খাতার একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে দিয়েছে। দোষটা তার মোটেই নয়।  পাশে বসা  সোহান সেসময়ে গোপালফুল বানাচ্ছিল। তার কাগজ ফুরিয়ে গেছিল বলে সে রাজের কাছ থেকে চেয়েছিল।রাজ ব্যাগ থেকে আবার খাতা বার করার সময় পায় নি। সে তার পাশে বসা ময়ুখের খাতা থেকে একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে সোহানকে দিয়েছিল।ময়ুখ তার নামে নালিশ করার জন্য নীলেশরা তার নাম লিখেছে।

একটু পরে স্যার ডেকেছিলেন,“সৌম্যজিৎ  বিশ্বাস।“

রাজ নিজের নাম শুনে এগিয়ে গেছিল। হিমাংশু স্যার শাস্তি দিলেন মোটে চারবার ওঠবস করার। এ শাস্তি নয়, মজা। চারদিকে  বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে সে মহামেজাজে চারবার ওঠবস করেছিল।তারপর নিজের সীটে সে বসেছিল।

এক এক করে সবাইকে শাস্তি দেবার পর হিমাংশু স্যার নির্ঝরকে নিয়ে পড়েছিলেন। তিনি নীলেশদের জিজ্ঞেস করেছিলেন,“এর দোষ কি?”

নীলেশ বলেছিল“স্যার। ক্লাসে বসে ও সবসময় খায় ।“

হিমাংশু স্যার মাথা নেড়ে বলেছিলেন,“খুব খারাপ কাজ। কি খায় ও?”

“চুয়িংগাম।”

হিমাংশু স্যার হাসতেও গিয়েও গম্ভীর হয়ে গেছিলেন। তারপরবলেছিলেন,“হুম। ক্লাসে খাওয়া ঠিক নয়। একদম ঠিক নয়।এখন খাও কেন তুমি? এবার থেকে টিফিনে খাবে।“

কথা শুনে নির্ঝর মাথা নেড়েছিল।ও মাথা নাড়লেও পরেও ঠিক একই কাজ করবে।

হিমাংশু স্যার বলেছিলেন,“আচ্ছা। ও তো কারুকে ডিস্টার্ব করে নি। ও চারবার ওঠবস করবে।“

নির্ঝর চারবার ওঠবস করেছিল। সে  নিজের বেঞ্চে ফিরে যাবার উপক্রম করতেই স্যার বলেছিলেন,“শোন।”

“কি?”

“কি খেয়ে এসেছিস বাড়ি থেকে ?”

“কিছু না।“

হিমাংশু স্যার খানিকক্ষন হতবাক হয়ে বলেছিলেন, “ কিছু না কেন রে?”

“বাড়িতে সকালে রান্না হয় না স্যার। জেঠু পাঁচটাকা রোজ দেয়। খিদে পায় বলে   কোনদিন বিস্কুট বা চুয়িংগাম খাই।“

হিমাংশু স্যার থতমত খেয়ে বলেছিলেন, “তাহলে ভাত রুটি খাস না?”

“হ্যাঁ। খাই।স্যার। মিড ডে মিলে ।“

শোনার পর হিমাংশু স্যার নন, রাজরাও চমকে উঠেছিল। ওর সম্পর্কে সে বেশীকিছু জানে না। তবে সে জানে ও নাকি জেঠুর কাছে থাকে।  ওর মা নেই ।বাবা  অন্য কোথায়  যেন চলে গেছেন।

কালকের কথাটা মনে পড়ল এখন রাজের। বুকের মধ্যে খুব কষ্ট হল । নির্ঝর  ওর খুব চেনা বন্ধু নয়। ও কারুর সাথে  বেশী কথাও বলে না । তবু রাজের মনে হল সে যদি তার খাবারের ভাগ ওকে দিতে পারত তা বেশ হত।

সে দাঁড়িয়ে আছে দেখে মা জিজ্ঞেস করলেন,“কিরে? যা। আবার দাঁড়ালি কেন?”

“যাচ্ছি।“

“কিছু বলবি?”

রাজ আর অপেক্ষা করল না। সে নির্ঝরের  কথা জানাল মাকে। মা মন দিয়ে শুনলেন।মায়ের চোখমুখ কেমন পালটে গেল। তিনি একটা গভীর শ্বাস ফেলে বললেন,“ইস! বড় কষ্ট তো ছেলেটার। তুই ওকে একদিন বাড়িতে আনিস।“

“আনব মা?”

“ হ্যাঁ।আনবি।ওকে পেটপুরে খাওয়ালেই আমার মন জুড়োবে।এখন যা তুই।“

রাজ মায়ের গালে একটা চকাস করে চুমু দিল। তার মায়ের মতো মা নেই সে জানে। এ পাড়ার সবার বিপদে-আপদে তার মা আগে দৌড়ে যান। দুপুরের দিকে রাজ কতদিন দেখেছে কোনো ভবঘুরে দৈবাৎ চলে আসে মা তাকে যত্ন করে খাওয়ান।

রাজ খুশি মনে পড়ার ঘরের দিকে এগোল।

 

 

One thought on “ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-২) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

  • কি সুন্দর ছবির মত ছোটবেলা। তবে কিন্তু বড্ড কম। এক দিনের পক্ষে আধপেটা খাওয়া। আরো কয়েকটা প্যারা যদি বেশি হত…. স্বাদ নিতে নিতেই যেন খাবার শেষ হয়ে গেল।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>