| 19 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-৬) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-৬।


 

 

ষ্টাফরুমে যেতে কার না ভয় লাগে! স্যাররা সবাই বসে এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন।তাদের সামনে যাওয়া বেশ অস্বস্তির। একটু ঘুর ঘুর করলেই কোন স্যার হয়ত বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে উঠবেন। কেউ বলবেন,“ কি চাই রে এখন? যা পালা। স্যারদের একটু বসতে দিবি না?”

ঠিক কথা। স্যারদের বিশ্রামের সময় ব্যাঘাত করা উচিত নয়। কিন্তু মৈনাকস্যার নিজেই এ সময় দেখা করতে বলছেন। ভয়ে ভয়ে তাই তারা দুজন স্টাফরুমের কাছে পৌঁছাল।

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রাজ হতাশ হল। সে ফিসফিস করে বলল,“স্যার কোথায় রে?”

“টিফিনে গেছে মনে হয়।“

তা হতে পারে। স্যারদেরও খিদে পায়। ফিরে যাওয়াই ঠিক করল রাজ। ফেরার পথ ধরতেই তার মুখ পলকে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। মৈনাকস্যার মাঠের ধারে গাছের বেদীতে বসে কয়েকটা ছেলের সাথে কথা বলছেন। বসে আছেন বলে তাকে তারা দেখতে পায় নি।

রাজরা দৌড়ে গেল। একটু পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। অন্যদের কথা শেষ হলে তারা কথা বলবে। ছেলেগুলো টেন-টুয়েল্ভের ছাত্র। একটা খেলার কথাই আলোচনা করছিল ওরা।রাজের মনে পড়ল গতকাল  তাদের স্কুলেরএকটা খেলা ছিল। সে নিয়েই কথা চলছে। রাজ কানখাড়া করে শুনল। সে পাড়ায় ম্যাচ খেলেছে কোথাও বাইরে খেলে নি। পাড়ায় সেবার চান্স পেতে পেতেও শেষ্মুহুর্তের জন্য রাজ ছিটকে গেছিল। তাকে সাইডলাইনের ধারে বসে থাকতে হয়েছিল। সেই দু;খটা  এখনো যায় নি। সে সমীহের চোখে তাই খেলার গল্প শুনতে লাগল। স্যার এখন একটা বড় দাদাকে ধমকাচ্ছেন।তিনি বলছেন, “ওইভাবে বল ধরে? এতদিন ধরে খেলছিস। জানিসই না কিভাবে পাশ দিতে হয়? তোকে আমি বলেছিলাম অনীক। বল বেশীক্ষণ রাখবি না। বলি নি?  তারপর কি হল দেখলি! একটা জেতা ম্যাচ হেরে ফিরলাম। আর তুই কি করলি অ্যাঁ? সন্তোষ? ডিফেন্স! একজনকে আটকাতে পারিস না।ফুটবল খেলতে এসেছিস?”

যাহ! কাল খেলায় স্কুল হেরে গেছে! মনমরা হয়ে গেল রাজ। স্যার এখন হেভি খাপ্পা হয়ে আছেন। তাদের সঙ্গে মনে হয়  না কথা বলবেন। তারা যে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকেও ভ্রুক্ষেপ করছেন না। নির্ঝর ভয়ে ভয়ে বলল,-“এখন চ। পরে আসব ।“

“দাঁড়া না।“

স্যার কিছুক্ষন গজগজ করলেন।তারপর   দাদাদের বললেন,“শোন। যা হবার হয়ে গেছে।মনে আছে তো মাসখানেকবাদে  শৈবালচন্দ্র সেন টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে।তার জন্য এখন থেকে প্র্যাকটিশ করতে হবে।“

শৈবালচন্দ্র সেন কে তা জানে না রাজ। তবে মনে হয় তিনি ফুটবল অনুরাগী ব্যক্তি ছিলেন।তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর লোকাল স্কুলগুলোর মধ্যে একটা টুর্নামেন্ট হয়। সাতআটটা স্কুলের টিম খ্যালে।


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-৫) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


অনীক বলে ছেলেটা একটু যেন মেজাজী। সে স্যারের কথা গ্রাহ্য করল না। সে বলল,“স্যার। কদিন ছাড় দিন। দুদিন পর না হয় প্র্যাকটিস করব।“

স্যারের মুখ থমথমে হয়ে গেল। তিনি ধমক দিয়ে বললেন,“খুব বড় প্লেয়ার হয়ে গেছিস !প্র্যাকটিস না করলেও হবে! তাই না?একবারও টুর্নামেন্ট জিতেছিস? গতবারের কথা ভাব। রামলাল স্কুলের কাছে কেমন হেরে গেছিলাম। মনে নেই? দাঁড়া।আমি আবার টিম সিলেক্ট করব।“

অনীক দুম করে বলল,“আমাদের তো টিম সেটই আছে স্যার।“

“কে বলল?  এই তো হেরে ফিরলি? তবু বড় বড় কথা!তোকে পরের ম্যাচে নেব কে গ্যারান্টি দিল।“

অনীক গোঁজ মেরে বলল,“নেবেন না। নেবেন না।“

স্যারের মুখ রাগে তোম্বা হয়ে গেল। রাজের মনে হল এখুনি না স্যার উঠে অনীককে মারতে শুরু করেন।ছেলেটা একটু বেশী বাঁদরামী করছে।

স্যার কিছু বললেন না। বেদী থেকে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর দাদাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,-  “রবিবার বিকেল তিনটের মধ্যে আমি প্র্যাকটিশ করাব।  তোরা যদি ভাবিস একদুবার খেলে চান্স পেয়ে গেছিস। তাহলে ভুল করছিস। আমি আবার সিলেক্ট করব।নতুন ছেলেদেরও দেখব।“ বলে স্যার দাঁড়ালেন না । স্টাফ্রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।

“স্যার। স্যার।“রাজ পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ডাকল।

মৈনাকস্যার থমকে দাঁড়ালেন। রাজদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীরস্বরে বললেন,“কি?”

“আপনি আসতে বলেছিলেন। স্যার।“বলে নির্ঝরকে দেখাল রাজ।

একবার তাকিয়ে স্যারের মনে পড়ল। তিনি বললেন,“ তো? দৌড় প্যাকটিশ করবি?”

নির্ঝর সাড়াশব্দ দিল না। রাজ  নিজেই উদ্দ্যোগ নিয়ে বলল,“হ্যাঁ। স্যার যাবে।“

স্যার মেজাজা দেখিয়ে বললেন, ”কেন ও কথা বলতে পারে না?  ঠিক আছে।আগে  ফুটবলের টিম সিলেকশন   মিটুক। তারপর।“ বলেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন,- “ফুটবল পারিস তুই?”

রাজ লাফিয়ে উঠে বলল,“আমি পারি স্যার।“

“তোকে বলেছি? কিরে তুই পারিস না?”

নির্ঝর  মাথা নেড়ে বলল,”অল্প-অল্প।“

“আচ্ছা। রবিবার  আয়।“বলে স্যার এগিয়ে গেলেন।কিছুটা দুর যাবার পর রাজকেও বললেন,“তুইও আসিস। বাড়িতে বলে আসবি দেরী হবে।“

রাজ খুশিতে ঝলমল করে উঠল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত