| 19 এপ্রিল 2024
Categories
পাঠ প্রতিক্রিয়া

পাঠ প্রতিক্রিয়া: রোয়াল্ড ডালের দশ গল্প । রাজিয়া নাজমী

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

অনুবাদ সহজ কোন কাজ নয়। এর কারণ মূলত একজন ভিন ভাষার লেখকের লেখার শৈলী আরেকজন লেখকের পক্ষে হুবহু তুলে আনা একটু দুরূহ কাজ। যে কারণে অনেক লেখকই তাঁর লেখার তরজমা অন্য ভাষায় হোক চান না বা চাইলেই তাঁর দ্বিধা থেকে যায়। তারপরেও অনুবাদ প্রয়োজন। এবং এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অনেকেই সফলভাবে করেন।

ইদানীং অনুবাদ এবং ভাষান্তর নিয়েও কথা উঠেছে। অনুবাদ করতে গিয়ে মুল লেখকের ভাব ফুটিয়ে তোলার ঝুঁকি রয়ে যায় থেকে যায়, অনেকক্ষেত্রেই মুল লেখকের ভাব হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই ভাষান্তর করাতেই অনেকে স্বস্তি বোধ করেন।

মনিজা রহমান অনুবাদের এই ঝুঁকি মাথায় পেতে নিয়ে অনুবাদ করার জন্য বেছে নিয়েছেন এমনই একজন লেখকের লেখা যার লেখার ধরণকে আমরা ও. হেনরির স্টাইলে টুইস্ট অন টুইস্ট বলতে পারি। আবার তাঁর লেখা পড়ার সময় মনে হয় যেন সে এবং আমরা, একজন লেখক এবং তার পাঠকরা একসাথে ছিলাম। এবং তিনি আমাদের খেলার ছলে একটি গল্প শোনাচ্ছেন – তিনি কথাসাহিত্যিক রোয়াল্ড ডাল। যার কথাসাহিত্যে শিশুদের জন্য হোক বা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই হোক – গল্প বলার এই ধরনের ভঙ্গি, কথোপকথন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই রকম দেখা যায়।

ডাল’কে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা হলো, তার চরিত্রগুলির সমস্ত অযৌক্তিকতা বা নিষ্ঠুরতার জন্য তিনি কখনই তাঁর মতামত বা তাঁর বিচার আমাদের উপর চাপিয়ে দেন না। যেমন দ্য ওয়ে আপ টু হেভেন অথবা ল্যাম্ব টু দ্য স্লটার ( ভেড়ার পা ) গল্পে একটি চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছেন কিন্তু উচিৎ অনুচিতের বিচারের ভার ছেড়ে দিয়েছেন পাঠকের উপরে।

তিনি বলেছেন, ‘দ্যুতিময় চোখ দিয়ে আপনার চারপাশের পুরো বিশ্বকে দেখুন কারণ সবচেয়ে বড় রহস্যগুলি সর্বদা সবচেয়ে অসম্ভাব্য জায়গায় লুকিয়ে থাকে। যারা জাদুতে বিশ্বাস করে না তারা কখনই এটি খুঁজে পাবে না।‘

রোল্ড ডাল’কে পড়তে হলে তার সম্পর্কে কিছু জানা আবশ্যক। এই বইটি’তে লেখক এবং অনুবাদক বদরুজ্জামান আলমগীর মনিজা’র ‘অনুবাদ নিয়ে দুটি কথা’ লিখতে গিয়ে রোয়াল্ড ডাল সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়েছেন। যা পাঠককে উপকৃত করবে ডাল’কে কিছুটা জানতে। তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ লেখা বইটিকে নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে।

লেখক রোয়াল্ড ডাল ছোটদের সাহিত্যের জন্য জনপ্রিয় হলেও তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। মনিজা রহমান সেখান থেকে বেঁছে নিয়েছেন সেরা দশটি গল্প।যদি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে ব্যবচ্ছেদ না করি তাহলে বলতে হয় অনুবাদের কাজে তিনি সার্থক হয়েছেন। প্রতিটি গল্প পড়লে পাঠকের কোন সন্দেহ থাকবে না যে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে এর মান বজায় রাখতে।

তবে ব্যবচ্ছেদ যদি করতে হয় তবে বলবো, এত পরিশ্রমের ফসলে তিনি আরেকটু সময় এবং সাবধান হলে ভালো হতো। তাহলে কিছু কিছু জায়গায় পড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হত না। যদিও এমনটা খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রেই হয়েছে। যে ত্রুটি আমার কাছে মারাত্মক মনে হয়েছে তাহলো। মুল লেখকের নাম বইয়ের মলাটের উপরে লেখা হয়েছে ‘রোয়াল্ড ডালের’।

মারাত্মক ত্রটি বলছি এই কারণে যে মুল লেখকের নাম ‘রোয়াল্ড ডাল’ (Roald Dhal) রোয়াল্ড ডালের নয়। (যদিও এখানেও একটি কথা থেকে যায় ডাল হবে না ডাহল হবে।) যে পাঠক এই লেখকের সাথে পরিচিত নন তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে ধরে নিতে পারেন লেখকের নাম – রোয়াল্ড ডালের। এই বইটির নাম হতে পারতো ‘দশটি সেরা গল্প – রোয়াল্ড ডাল’। মনিজা রহমান তাঁর ভূমিকাতেও লেখকের নাম বরাবরই রোয়াল্ড ডালের বলেছেন। আমি বিশ্বাস করি তাঁর মত একজন ভাল লেখক এই ভুল করেছেন একেবারে অজান্তে।

তিনি যতটা মনোযোগী ছিলেন তাঁর অনুবাদে যেকোনো কারণেই হোক তিনি লেখকের নামের বেলায় ততটা মনোযোগী ছিলেন না। সবশেষে বলবো। যে গল্পগুলি তিনি বেছে নিয়েছেন তার প্রত্যেকটি অসাধারণ। এবং একটি গল্প পড়ার পর তৎক্ষণাৎ পরবর্তী গল্প যাওয়ার আগে পাঠকের সময় লাগবে গল্পের চমক আত্মস্থ করার জন্য। মনিজা রহমান সেই চমকগুলি ঠিকভাবে ধরে রেখেছেন। আমি আশা করছি তিনি আমাদের আরও অনুবাদিত বই পড়ার সুযোগ করে দেবেন।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত