| 29 মার্চ 2024
Categories
সাক্ষাৎকার

ইরাবতীর মুখোমুখি প্রথম দশকের কবি কস্তুরী সেন

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

প্রথম দশকে বাংলা কবিতার জগতে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন নতুন মাত্রায়। তিনি শব্দ যাদুকর, মায়াজাল বিছিয়ে বলেন নাম নিচ্ছি মাস্টারমশাই কিংবা ধীরে বলো অকস্মাৎ তিনি প্রথম দশকের কবি কস্তুরী সেন  তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শৌনক দত্ত।


 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,কস্তুরী সেন
 
 
শৌনক দত্ত: কবে থেকে কবিতা লিখছেন?
 
 
কস্তুরী সেন: কবিতা লিখবার অভ্যাস আবাল্য, অবশ্য প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কবিতা বলা তো চলে না। মিল দিয়ে দিয়ে বাক্যগঠনে উৎসাহ দিতেন অভিভাবকেরা, ছোটদের পত্রিকায় সেসব সমিল ছড়া ছাপা হত। পরে স্কুল কলেজ জীবনেও ক্রমশ কবিতা পড়তে থাকা ও লিখতে চেষ্টা করার কাজ বজায় থেকেছে।
 
 
 
প্রথম কবিতা লেখার কথা মনে আছে? সেই কথা শুনতে চাই।
 
কস্তুরী সেন: প্রথম লেখা বলে আলাদা করে মনে নেই। প্রথম দিকে কবিতা ছাপা হলে উৎসাহ দিতেন শিক্ষকেরা, আমার ছেপে বেরনো কবিতা নিয়ে তাঁদের সেই আনন্দ মনে আছে।
 
 
লেখালেখির শুরু কেন বলে মনে হয়?
কস্তুরী সেন: আমার বন্ধুসংখ্যা কম। অদ্যাবধি আমি প্রায় বন্ধুহীন। নিজের কথাগুলি কোথাও, কোনও ফর্মে কাউকে বলবার প্রয়োজন ছিল। কবিতা পড়বার অভ্যেসের ফলে সাদা পাতার সঙ্গে কবির কমিউনিকেশনের যে আনন্দ, তার একটা আঁচ পেতাম সম্ভবত। কারও সঙ্গে কথা বলবার মতো, স্বগতোক্তি হলেও তা তো মানসিক সঙ্গই। সচেতনে লেখা শুরু বোধহয় এ থেকেই।
 
 
কবিতার মানুষ আপনি । আপনার কাছ থেকে কবিতার কথা জানতে চাই। কবিতাকে কিভাবে দেখেন?
 
 
কস্তুরী সেন: এই প্রশ্ন আমাকে মাঝেমাঝেই কেউ কেউ করেছেন। আমি আতান্তরে পড়েছি। এর নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সহজ না। এটুকু বলব, কবিতা আমার কাছে ক্যাথারসিস। মোক্ষণ। যে কথাগুলি আমার একান্ত করে বলবার, কিন্তু সামাজিক মানুষ হিসেবে সকল সময়ে আমি তা বলতে পারব না, বলতে পারব না কারণ সমাজ বা পরিবারে আমার একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে, সময়নিবদ্ধ যাপন আছে, এবং অধিকাংশক্ষেত্রেই আমার বলবার কথাগুলি সে যাপনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, বরং বিযুক্ত, প্রলাপই প্রায়…সেইসব কথা, ভালবাসবার, ঘৃণা করবার, সামাজিক ‘আমি’র প্রচ্ছদ থেকে মুক্তি পেয়ে দ্বিতীয় আমি, দ্বিধাহীন আমিকে উদযাপন করবার সেইসব কথাই আমার কবিতা মূলত। ডায়রিও কি বলা চলে না? স্বীকার করি অন্তত এযাবৎ কবিতা লিখবার ক্ষেত্রে খুব সমাজসচেতন বা সময়সচেতন হয়ে কিছু লিখতে চাইনি। তেমন লেখা একেবারেই লিখিনি তা নয়, কিন্তু সেক্ষেত্রে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লেখা হয়েছে। কখনও বা আপনা থেকেই প্রভাব ফেলেছে পরিপার্শ্ব, দেশকাল। তবু, তা আমার আদত বলবার কথা নয়। লেখার মধ্য দিয়ে নিজের বাস্তব থেকে, চারপাশ থেকে বেরিয়ে চলে যাওয়াই আমার প্রবণতা। এর বাইরেও সহস্র রকমে কবিতাকে দেখা যায়, কিন্তু আমার কাছে কবিতায় এই নিজের মতো করে বাঁচাটুকুই মূল কথা।
 
 
কবিতা জীবনের শুরুতে কারা আপনার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিলেন?
 
 
কস্তুরী সেন: আলাদা করে বলা তো মুশকিল। আমি বাংলা ভাষাসাহিত্যের ছাত্রী। পড়তে গিয়ে হাজার বছরের বাংলা কবিতার যে বিরাট বিপুল প্রবাহ, তার সঙ্গে যত পরিচিত হয়েছি, ততই প্রভাবিত হয়েছি। আধুনিক কবিতার বিভিন্ন দশকের কবিদের দ্বারা যেমন বিনা প্রশ্নে, তেমনই চর্যা থেকে শুরু করে মঙ্গলকাব্য কিংবা আরাকানসাহিত্য, বাংলা কবিতার কোন পর্বে আচ্ছন্ন না হয়ে থাকা সম্ভব আসলে। একেকটি কবিতা, একেকটি পঙক্তির সামনে পাঠক হিসেবে হাঁটু মুড়ে বসে থাকা যায় আজীবন।
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,কস্তুরী সেন
 
 
কবিতা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে এই যে ব্লগ, বারোয়ারি ব্লগ, ফেসবুক, সাহিত্য-পোর্টাল তথা অনলাইনের এই ভার্চুয়াল পৃথিবীকে কীভাবে দেখেন?
 
কস্তুরী সেন: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মনে করি। একটা বড়সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছবার রাস্তা খুলে গিয়েছে অনলাইন মাধ্যমগুলির কারণে। আরও বড় কথা প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীনির্ভর সাহিত্যচর্চা বা ব্যক্তি ও দলগত পছন্দ অপছন্দ যে বড় ভূমিকাটি অনেক সময়েই নিত এর আগে, মূলত নবীন লেখকের ক্ষেত্রে, প্রবীণদের ক্ষেত্রেও বহুসময়েই, সেই বাধা বহুগুণে অপসৃত হয়েছে। অবশ্যই এর ভালমন্দ দুটি দিকই রয়েছে, ফিল্টারেশনের অভাব ঘটছে বহুক্ষেত্রে, পাঠক ও লেখক, উভয়তই মানের নিম্নগামিতাও দেখা যায় অনেকসময়েই…তবু, বহুসংখ্যক মানুষের কাছে বহুসংখ্যক বাংলা কবিতা পৌঁছচ্ছে বেশি করে, অজস্র ভাল লেখা হারিয়ে যাচ্ছে না, এ কথা অনস্বীকার্য।
 
 
সমকালীন কবিদের লেখা কবিতা সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
 
কস্তুরী সেন: একাধিক দশকের কবিরা লিখছেন আমার সময়ে, উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর অজস্র কবিতা উঠে আসছে। অগ্রজদের সঙ্গে সঙ্গে বিস্মিত করছেন নতুনরাও। এ মুহূর্তে বাংলা কবিতায় অজস্র ভিন্নস্বর দেখছি, যদি প্রথম দশক ধরে বলতে হয়, ব্যক্তিমত এই যে এই দশককে নির্দিষ্ট কোনও ছকে বেঁধে ফেলা যাচ্ছে না যে, ছক ভেঙে যাচ্ছে, চারিত্র‍্য তছনছ হয়ে যাচ্ছে যে বারবার, সেটিই এ দশকের সবচেয়ে বড় জোরের জায়গা।
 
 
 
সাহিত্যের ক্ষেত্রে রাজনীতি, সিন্ডিকেট, দলবাজি ইত্যাকার বিষয়কে কীভাবে দেখেন?
কস্তুরী সেন: সাহিত্যের সর্বাধিক অন্তরায় হিসেবে দেখি। অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না, এইটেই সবচেয়ে দুঃখের ও ক্ষতির।
 
আপনার শিক্ষকতা জীবন কি কোনভাবে কবিতাকে প্রভাবিত করে?
 
কস্তুরী সেন: শিক্ষকতার ক্ষেত্রে একটি লাভ এই যে, অজস্র ছাত্রের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ হয়। জীবনগুলিকে কাছ থেকে দেখতে পাই, কবিতায় তার কিছু প্রভাব তো পড়বেই।
 
 
বইয়ের নাম ‘ধীরে, বলো অকস্মাৎ’ কেন?
 
কস্তুরী সেন: নিশ্চিত নই নিজেও। হয়ত আকস্মিক কোনও উচ্চারণের প্রত্যাশায়। যদিও এটি আমার প্রথম বই, ২০১৭ সালে। এর পরে সাম্প্রতিক অন্য দুটি বই রয়েছে। দ্বিতীয় বই ‘নাম নিচ্ছি মাস্টারমশাই’ ২০১৯ সালে, এক্ষেত্রে আমি সত্যিই নাম নিতে চেয়েছি আমার কবিতা জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, গুরুর ভূমিকা রয়েছে এমন একজন মানুষের। তৃতীয় বইয়ের পাণ্ডুলিপি আমন্ত্রণ করে প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ২০২১ সালে, কস্তুরী সেনের কবিতা নামে। এটি তাঁদের নবস্পন্দন গ্রন্থমালা সিরিজের প্রথম নির্বাচিত বইগুলির একটি, নামকরণের দায়িত্ব আমায় নিতে হয়নি। কবিতা হোক বা গ্রন্থনাম, নামকরণের ক্ষেত্রে আমি নিজেকে খুব পটু মনে করি না।
 
 
বইগুলির কবিতাগুলি কখন লেখা হয়েছে?
কস্তুরী সেন: গত পাঁচ ছ বছরে মূলত। যত সাম্প্রতিক বই, তত সাম্প্রতিক কবিতা।
 
 
ধীরে বলো অকস্মাৎ প্রকাশ পায় ২০১৭ সালে একবছরের বিরতির পরে এলো ‘নাম নিচ্ছি মাস্টারমশাই’ এই যে সময়কাল তার মধ্যে আপনার কবিতার স্বরে, ভাবনায় ও নির্মাণে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তনটা কি সময়ের নিয়মে নাকি প্ল্যানিং ওয়ার্ক? আমার মনে হয়েছে প্রথম বই প্রকাশের পরেই আপনি বুঝেছিলেন আপনার পাঠক কারা এবং তারা কী পড়তে চায়, ফলে সেটার জন্য আপনি তৈরি হয়েছেন?
 
 
কস্তুরী সেন: আমার প্রধান দুর্বলতা, এবং অক্ষমতাও হয়ত এই যে কবিতার ক্ষেত্রে আমি প্ল্যানফুলি কিছু করতে পারিনি কখনওই। পাঠকসংযোগ আনন্দ দেয়, কিন্তু সেইটিকে উদ্দেশ্য করে কবিতা লেখা সম্ভব হয়নি কখনওই। আপনার মনে হওয়াকে সম্মান করেই জানাই, এযাবৎ তিনখানি বইয়ের লেখার ক্ষেত্রেই যদি আমার বয়ান, কবিতা ভাবনা বা নির্মাণে কিছু বদল ঘটে থাকে, তা কবিতার নিজস্ব নিয়মে ও চাহিদায় ঘটেছে। পরিকল্পিতভাবে একেবারেই নয়।
 
 
একজন কবি হিসেবে রিডার রেসপন্স থিওরি নিয়ে আপনার মত কী?
কস্তুরী সেন: যতদূর জানি ষাটের দশকের শেষদিকে এই তত্ত্বের বিকাশ, পাঠককে অনেকদূর সহযাত্রী বা সতীর্থ ধরে নিয়ে। আমি নিজে কবিতা লেখার মুহূর্তে যে কোনও তত্ত্ব থেকে দূরত্বে থাকি, নয়ত লেখা সম্ভব হয় না। তাই আলাদা করে এ থিওরি নিয়ে কিছু বলবার জায়গা নেই। কিন্তু এ তত্ত্বের মূল কথা বিষয়ে সম্ভবত আগের প্রশ্নেই আমার উত্তর কিছুটা দিয়েছি, যাকে পরিকল্পিতভাবে কমিউনিকেট করা বলে তা, অথবা প্রতিক্রিয়াপ্রত্যাশায় কলমচালনা করা, অন্তত লিখবার সময়ে সে কথা ব্যক্তিলেখক হিসেবে আমার মাথায় থাকে না।
 
আপনার দ্বিতীয় বই ‘নাম নিচ্ছি মাস্টারমশাই ’ ২০১৯ এ প্রকাশ পেল, এই বইটির জন্যই আপনি পেয়েছিলেন  ‘কথাস্বপ্ন পত্রিকা’ পুরস্কার এবং ‘একুশে’ সৃজন সম্মান। শিল্প সাহিত্যের ঔৎকর্ষের ক্ষেত্রে সম্মাননা বা পুরস্কার আদৌ কোনো ভূমিকা রাখে কি? রাখলে কেমন তা, আপনার কী মনে হয়?
 
কস্তুরী সেন: শিল্প সাহিত্যের মান পুরস্কারের ভূমিকার উপর নির্ভরশীল বলে মনে করি না। পুরস্কার অবশ্যই অনুমোদন। পুরস্কারপ্রাপ্তি আনন্দের, প্রতিটি পুরস্কার পুরস্কৃতের দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়, পুরস্কারের ভূমিকা বলতে এটুকুই মনে করি।
 
 
আজকাল কবিতায় দেখি গল্প থাকে না, ন্যারেটিভ থাকেনা। আপনার সমসাময়িক কবিদের মতো আপনার কবিতাতেও সেটা দেখা যায় না। এই বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
 
কস্তুরী সেন: কবিতায় গল্প থাকা কোনও নির্দিষ্ট শর্ত নয়। কিন্তু থাকে না এমনও তো নয়। গল্পের আভাস তো থাকেই বহু কবিতায়।সমসময়ের বহু লেখাতেই তা দেখেছি, আমার একাধিক লেখায় তা রয়েছে, একাধিক কবিতায় নেইও। আমার প্রতিটি বইতেই একাধিক কবিতায় কাহিনি বা কাহিনির আভাস রয়েছে, ‘নাম নিচ্ছি মাস্টারমশাই’ থেকেই একটি কবিতা উদ্ধৃত করি…
 
 
 
 
‘তারা
 
সন্ধেবেলা দেরি করে ফেরা
 
অশান্তির বাড়তি টিউশন
 
দোষ দেওয়া, দোষ নেওয়া ভেসে যাচ্ছে সংসারডোঙায়
 
নারীটি করিৎকর্মা,
 
পুরুষ অর্ধেক রাতে সন্তানের মুখে অপলক
 
— শখের রেওয়াজ গেছে!
 
— আমারও তো লেখালিখি সব!
 
নব্বই সালের পাড়া, জেদ করে ভিন্ন হাঁড়ি
 
রক্তচক্ষু যৌথ পরিবার;
 
পড়োশিনি ক্ষুণ্ণমুখ বউটির তবু নীচুস্বরে
 
‘উনি না হলে কি আর এতকিছু একা পারতাম!’ —
 
 
 
 
অন্ধকারে, লেবুফুলে, মাঝেমধ্যে দীর্ঘ রাস্তায়
 
বাড়িতে ফেরার পথে মনে পড়ে অনটন…
 
অসমাপ্ত ন্যাড়া ছাদে
 
বাবা, মা’কে তারা চেনাচ্ছেন।’
 
 
এ একেবারেই গল্প। আমার বাবা মায়ের গল্প। আবার অনেক কবিতায় গল্পের চিহ্নও থাকে না। আমার সমসময়ের কবিতার ক্ষেত্রেও এমনই দেখেছি। নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
 
আপনার কবিতায় এক ধরনের নস্টালজিয়ার ব্যাপার লক্ষ করা যায়। স্মৃতিকাতরতা, গৃহকাতরতা ইত্যাকার বিষয়। আমার মনে হয় আপনি এইসব থেকে ঠিক বের হতে চান না, এইসবের ভিতরে থাকতেই আপনার ভালো লাগে। আমি কি ভুল বললাম?
 
কস্তুরী সেন: যা আমার কাছে নেই আর, তা আমি কবিতায় নির্মাণ করতে চাই অনেকসময়েই। না ভুল বলেননি। এ থেকে আমি বেরতে চাই না।
 
 
কাব্যরচনা তো একটা চ্যালেঞ্জ তা সেটা কতটা প্রতিভানির্ভর, কতটা প্রস্তুতিনির্ভর বলে মনে করেন?
 
কস্তুরী সেন: দুইই প্রয়োজনীয়। পরিপূরক বলা চলে। প্রতিভাহীন প্রকৃত কবি বা প্রস্তুতিহীন প্রকৃত কবিতা অলীক শব্দ।
 
 
একজন কবির পঠন-পাঠন কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
 
কস্তুরী সেন: ঔচিত্য নিয়ে তো আমি বলবার কেউ নই, কিন্তু যে ভাষায় তিনি লিখছেন, সে ভাষার সাহিত্য ও দর্শনে তাঁর ন্যূনতম যাতায়াত থাকলে সম্ভবত লিখবার ক্ষেত্রে তা তাঁকে কিছুটা এগিয়ে রাখে। সঙ্গীতকেও আমি কবিতার প্রেক্ষিত মনে করি, প্রথাগত শিক্ষার কথা বলছি না যদিও।
 
 
সামাজিক মাধ্যম ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে প্রতিদিন একজন  চাইলে একশজন  কবির কবিতা পড়তে পারছে, এই  অধিক পাঠ কি সেই কবির মনোজগতে ও লেখায় প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন?
 
কস্তুরী সেন: কোন কবির? সেই একশজন কবির প্রত্যেকের মনোজগতে? আপনি কি প্রতিযোগিতা বা এজাতীয় কিছু বলতে চাইলেন? মনে  হয় প্রতিবার সাদা পাতার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কবি নিজেই নিজের প্রতিযোগী, তার আগের প্রতিটি কবিতার নিন্দা প্রশংসা সফলতা সেই প্রত্যেকবার শুরুর মুহূর্তে মিথ্যে৷ আলাদা করে পাঠকের কাছে বিকল্প বেড়ে যাওয়াতে কবি প্রভাবিত হন বলে আমার মনে হয় না।
 
 
আপনার প্রিয় বই? যা সব সময় কাছে রাখতে চান?
 
কস্তুরী সেন: গীতবিতান।
 
 
প্রিয় কবি?
কস্তুরী সেন: একাধিক প্রিয় কবি রয়েছেন। বর্তমান সময়ে অজস্রজন রয়েছেন, আগামীদিনে আরও অজস্রজন হবেন। সর্বকালীন হিসাবে হয়ত কালিদাস বলব, বিদ্যাপতি বলব, রবীন্দ্রনাথ বলব। এভাবে বলা অসম্ভব। এই তিন নামের পাশে মনে ভেসে আসছে অন্তত আরও ত্রিশটি নাম, এত নাম লিখবার জায়গা আপনি আমায় দেবেন?
 
প্রিয় কবিতা?
কস্তুরী সেন: অজস্র। একেক মুহূর্তে একেক কবিতা প্রিয়।
 
ভবিষ্যতে কি মানুষ কবিতা লিখবে–পড়বে? কবিতার কি আর প্রয়োজন হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে?
কস্তুরী সেন: মানুষের মগজ যতদিন যন্ত্রে পরিণত না হচ্ছে ততদিন মানুষ কবিতা পড়বে, কবিতা লিখবে বলেই বিশ্বাস। এর চেয়ে বড় পরিত্রাণ কম।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত