| 19 এপ্রিল 2024
Categories
শারদ সংখ্যা’২২

শারদ সংখ্যা গল্প: প্রজন্মের গন্ধ । কুমার অজিত দত্ত

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

মাঝ রাতেই হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় কুতুবুদ্দিনের । কেমন একটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল যেন । উঠে বসেন তিনি । উঠে বসার পরই ধীরেধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে শ্বাস-প্রশ্বাস । এখন সে-কষ্টটি আর নেই । আজকাল মাঝে-মাঝেই রাতের দিকে ঘুমের ভেতর হয় এ-কষ্টটা । বলেন না সোফিওরকে । বললেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবে সে । ছোটাছুটি শুরু করবে , ডাক্তার ডেকে আনবে ।

রাত -নেই দিন-নেই সব সময়ই শঙ্কিত থাকেন কুতুবুদ্দিন তাঁর এই একমাত্র ছেলে সোফিওরকে নিয়ে । রেলের একটা ছোটোখাটো কাজ করে সে। টোসা রোজগার । যারফলে সংসার চালাতে গলদঘর্ম হতে হয় তাকে । তাঁর এই টাশলাগার কথা বললে অতিরিক্ত চাপ পড়বে ওর ওপর । নব্বই অতিক্রান্ত এ-জীবন আর কতো শুশ্রূষা নেবে।

আবার শুয়ে পড়েন কুতুবুদ্দিন। বালিশের পাশে রাখা নাতি রুবুলের জামাটা বুকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নেন । নাতির ঘ্রাণ । এ-ঘ্রাণ না পেলে ঘুম আসে না তাঁর । যবে থেকে নাতি রুবুল মুখে মুখে ছড়া বলতে শিখেছে তখন থেকেই সে তাঁর সঙ্গে শুতো । দাদাজির মুখের ছড়া না শুনলে ওর চোখ থেকে ঘুমগুলো যেন সব পালিয়ে যেত । তাঁরও নাতিকে কাছে না পেলে চোখে ঘুম আনতে বড় কষ্ট হতো। নাতিকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘ্রাণ নিতে নিতেই নিশ্চিন্তে ঘুমোতেন তিনি । এই সেদিন ইস্তক নাতি রুবুল ওঁর পাশেই শুতো।

আজকাল তো আর আগের মত শিশুটি নেই সে । বারো ক্লাশ পার করে সোমত্ত হয়ে উঠেছে । ছড়া আর রাজকন্যার গল্পগুলো কেমন করে মনের অজান্তে সরে গিয়ে জায়গা নিয়েছে অন্য গল্প— দেশ নিয়ে , রাজনীতি নিয়ে , পড়াশুনো নিয়ে । তবে সোমত্ত হয়ে গেলেও দাদাজিকে অর্থাৎ তাঁকে ছাড়া কিন্তু ঘুম হতো না ওর । এই সেদিনও , হায়দরাবাদ চলে যাওযার আগের রাতে , অন্যদিনের মতো , তাঁর পাশে এসে ওই সব নতুন গল্প করতে করতেই ঘুমিযে পড়েছিল রুবুল । এরপরই গল্প বলা থামিয়ে অন্যদিনের মতোই ঘুমণ্ত নাতির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন তিনি।অন্যদিনের মতোই খুঁজে পেয়েছিলেন হারিয়ে যাওয়া শিশু নাতিটিকে । ওই ভেবে ওকে অন্যদিনের মতোই আবেশে জড়িয়ে ধরেছিলেন , তারপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।রুবুল এখন হায়দরাবাদে , কম্পিউটার সাইন্স পড়তে গেছে । পড়া শেষ করতেই লেগে যাবে সেই চার বছর। এখন যে ওর কীভাবে ঘুম আসে ভেবেই পান না কুতুবুদ্দিন । প্রায় ছ-মাস বাদে একবার বাড়ি এসেছিল রুবুল। এখন কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ওর , আগের মতো কথা বলারও সময় পায় না । বেশিদিন থাকেনি , দু-দিন কাটিয়েই আবার চলে গেছে …। নাতির জামাটা আবার বুকের কাছে টেনে নিয়ে ঘ্রাণ নেন …। ঘুম আর আসে না। ঘুম বুঝি আজ রাতের মতো ফুরলো । বোধ হয় ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই । আজান বেজে উঠবে একটু বাদেই । আবার কষ্টেসিষ্টে উঠে পড়েন কুতুবুদ্দিন । শরীরটা ইদানিং উঠতে চায় না । কোমরটাও নড়বড়ে।

উঠে কিছুক্ষণ বসে থাকেন । বসে থাকতেও কষ্ট হয়। ওই বসা অবস্থাতেই শরীরটাকে অতিকষ্টে টেনে মশারির বাইরে আনেন । হাতড়িয়ে বেড -সুইচটা মুঠোয় নিয়ে সুইচ টিপে লাইট জ্বালান। বালিশের পাশে রাখা ভাঁজকরা চশমাটা খুলে চোখে লাগান । তারপর পা দুটো ঝুলিয়ে নিয়ে সারা শরীরের বল এনে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন । দু -পায়ের হাড়গোড়ের জোড়াগুলো তাঁর মটমটিয়ে ওঠে। দু-হাত দিয়ে কোমরটাকে ঠেক মেরে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ । তারপর ধীর পায়ে গিয়ে মশারি খোলেন । পরিপাটি করে আদরের হাতে ভাঁজ করে রেখে দেন বিছানার এক পাশে। এরপর কাছে রাখা পালকের ঝাড়নটা দিয়ে ঝাড়তে শুরু করেন বিছানা। ওই মুহূর্তে ছুটে আসে পুত্রবধু জহরা।

পুত্র সোফিওর বাড়িতে নেই , রাতের ডিউটিতে অফিসে আছে। জহরা অবাক হয়ে বলে ওঠে , কী হলো আব্বা আপনি এতো তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছেন!

কুতুবুদ্দিন অবাক হয়ে যান , কী বল গো বউ, তাড়াতাড়ি উঠতে যাব কেন, ভোর হয়ে এলো বলে, আরেকটু বাদেই আজান বেজে উঠবে …।

— আজান বেজে উঠবে , ঘড়িটার দিকে তাকান তো দেখি আব্বা —
জহরার গলায় বিস্ময় আরো লম্বা হয়!

কুতুবুদ্দিনের মনেই ছিল না ঘড়িটার কথা। দেয়ালে টিক-টিক বেজে চলেছে ছোট মেয়ে জোছনার দেওয়া ইলেকট্রনিক ঘড়িটা । ঘড়িটার দিকে তাকান তিনি। প্রথমে দেখে বিশ্বাসই করতে পারছেন না, আবার দেখেন, দু-চোখে আঙুল রগড়ে আবার দেখেন , তখন ঘড়িতে বাজে রাতে দুটো। ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে ফিরে তাকালেন জহরার দিকে । অনেকটা কাঁচুমাচু হয়ে বলেন তিনি , আমি ভেবেছিলাম ভোর হয়ে আসছে , আর ঘুম আসছিল না , ঠিক আছে উঠে পড়েছি যখন , কি আর করা , বসে-বসে আল্লার নাম নি …

জহরা আকুল হয়ে বলে, না আব্বা , ভোর হতে অনেক দেরি, আপনার শরীর আবার খারাপ হয়ে যাবে, শুয়ে থাকুন—
বলতে বলতে জহরা মশারিটা খুলে টানিয়ে দিতে শুরু করে।

কুতুবুদ্দিন পুত্রবধূর আদেশ অমান্য করতে পারেন না। সুবোধ ছেলের মতো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন। জহরা মশারিটা সুবিন্যস্ত করে চারপাশে গুঁজে দিয়ে বাতিটা নিভিয়ে দেয়। কুতুবুদ্দিন আবার ডুবে যান অন্ধকারে। নাতির জামাটা বুকে নিয়ে ঘ্রাণ নেন । কী জানি ঘুম আসে কিনা । আর কতো ঘুমোবেন ? এই নব্বই বছরে তো অনেক ঘুমোলেন । শেষ ঘুম যে কবে আসবে । আবার ঘ্রাণ নেন নাতির জামাটার । নাতি রুবুল হায়দরাবাদ থেকে চিঠি লিখেছে , বলেছে , তাঁকে হায়দরাবাদ নিয়ে যাবে , হায়দরাবাদী বিরিয়ানি খাওয়াবে, নিয়ে যাবে মশহুর গোলকুন্ডা ফোর্ট দেখাতে । গোলকুন্ডা ফোর্টের কাছে দাঁড়িয়ে আছে সে এমন একটি ছবিও পাঠিয়েছে চিঠির সঙ্গে।

গোলকুন্ডা ফোর্টের ইতিহাস তিনি পড়েছিলেন সেই হাই-স্কুলের বইয়ে , এখনো মনে আছে তাঁর। মনে মনে হাসেন কুতুবুদ্দিন ,কবে নিয়ে যাবে নাতি তাঁকে , ততদিন তিনি বাঁচবেন কিনা? ভাবতে ভাবতে দু-চোখ জড়িয়ে আসে তাঁর …ঢুকে পড়েন নাতির পাঠানো গোলকুণ্ডা ফোর্টের ওই ছবিটির ভেতর। …তিনি নাতি রুবুলকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গোলকুণ্ডা ফোর্ট। পাহাড় ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে পাহাড়ের গায়ে গড়ে ওঠা কেল্লাটার অবশিষ্টাংশগুলো দেখতে দেখতে অবাক হয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর কানে ভেসে আসছে যেন অজস্র ঘোড়ার পায়ের খুরের শব্দ আর মোঘল সৈন্যের রণহুঙ্কার । অধিকার করার অছিলায় আঘাতে আঘাতে ওরা ধ্বংস করে ফেলছে এই কেল্লা। তিনি আর রুবুল জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন , কিছু করার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না যেন। তিনি রুবুলকে ডেকে বলছেন , নাতি আমরা এমনি করেই কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোঘলদের বেবন্দেজ তামাশা দেখবো , আমরা কি বাধা দেব না এই না-জবাব কেল্লাটাকে বাঁচাতে?

রুবুল কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দেয় , আমরা কী করতে পারি দাদাজি?

—কেনো, আমরা এই বাঁদরগুলোকে ঠেঙিয়ে বিদায় করতে পারি না—বলতে বলতে তিনি তেড়ে এগিয়ে গেলেন মোঘল সৈন্যগুলোর দিকে। রুবুল পড়িমরি করে দাদাজিকে আটকাতে যায , চেঁচিয়ে বলে , দাদাজি যেও না , ওরা তোমায় মেরে ফেলবে , তুমি মরে গেলে আমি কার কাছে ঘুমোবো , আমায় ঘুম পাড়াবে কে —বলতে বলতে কেঁদে ফেলে নাতি ।

ওই মুহূর্তে ঘুম ভেঙে যায় কুতুবুদ্দিনের। . শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ভীষণ। ধীরে-ধীরে উঠে বসেন তিনি। একটা বিদঘুটে ব্যথা বুকের কাছ থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা শরীরে । শ্বাসকষ্টটা বেড়ে যাচ্ছে যেন । টান-টান হয়ে বসেন তিনি। নিজেই ডান হাত দিয়ে বুকের বাঁ পাশটা আলতো মালিশ করেন , বুঝি শেষ সময় ঘনিয়ে এলো তাঁর ! যণ্ত্রণায দুচোখ ভিজে ওঠে। মালিশের জন্যেই নাকি , একটু বাদেই ব্যথাটা কমে আসতে শুরু করে , শাসকষ্ট দূর হয়ে যায় । নির্জীব হয়ে বসে থাকেন কিছুক্ষণ। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে । বেশ গরম লাগছে । একটু সময় নিয়ে – নিয়ে মশারির বাইরে এসে বসেন। ভোরের নরম আলো ঘরে ঢুকে গেছে । ঘরের ভেতর দিক আলো-আঁধারিতে ঘেরা । বেড-সুইচ টেপেন না। আলো জ্বালালেই হয়তো পাশের ঘরে জহরা জেগে উঠবে । কিছুক্ষণ বসে থেকে বিছানার বাইরে এসে দাঁড়ান । ওই নরম আলোয় দিক খুঁজে পেয়ে জানলার কাছে পায়ে -পায়ে এগিয়ে যান । জানলাটা খোলেন । একটা দমকা নির্মল হাওয়া এসে লাগে তাঁর চোখেমুখে। বুক ভরে সে -বাতাস নেন টেনে । বুকের ভেতর কেউ যেন পাথর চাপা দিল । ডান হাতটা বূকের ওপর এনে রাখেন , শ্বাসগুলো সব বুকের কোথায় যে আটকে গেল বোঝেন না । একটা ব্যথা ছেয়ে যায় বুকে। চোখ দুটো বুজে ফেলেন । একটু বাদেই খুলে যায় শ্বাস । মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে । একটা ছোট্ট আরাম ছুঁয়ে যায় বুকের ভেতর । তখনই চোখের ওপর ভেসে ওঠে বিবি মেহের । মেহেরুন্নেসা । …সে কবে চলে গিয়েছ তুমি আমায় ছেড়ে এ-জহান থেকে , মেহের। জন্মরুগী সোফিওরকে মোটে বড় করেছ তুমি তখন । বোধশোধ কম বলে তুমি তো ওকে আদর করে ডাকতে হাঁদা বলে । তুমি সংশয়ে ছিলে মেহের , সোফিওর আদৌ লায়েক হয়ে উঠবে কিনা ? তাই আমার কাছে চেয়েছিলে আরেকটি সন্তান । কিন্তু হঠাৎই চলে গেলে আমায় ছেড়ে তুমি মেহের , কতো কতো আগে । কিছু বলারও সময় পাওনি আমায় । তোমার হাঁদা ছেলেকে লায়েক করেছি মেহের । সে এখন চাকরি-বাকরি করে বিয়ে করেছে , ছেলের আব্বুও হয়েছে । নাতি আছে তোমার মেহের , রুবুল , রুবুল নাম তার । একটু আগেও খোয়াবে কথা হয়েছে ওর সঙ্গে আমার , হায়দরাবাদে পড়াশুনা করে ও , সোফিওরের মতো হাঁদা নয় , …আপন মনে হেসে ফেলেন কুতুবুদ্দিন । তারপর মনে মনে আবার বলেন , তুমি যেখানেই থাকো মেহের, নিশ্চিন্তে থাকো …শোনো মেহের , সোফিওর প্রতিদিন তোমার কবরে গিয়ে ফুল দেয়, গেল কালও দিয়েছে , রুবুল এখানে থাকলে সে-ও ওর সঙ্গে যায , গেল কাল আমিও সঙ্গে গিয়েছিলাম ওর , ফুল দিয়েছি তোমায় …

…কুতুবুদ্দিন চোখ দুটো খুলে দেখেন ভোরের প্রকৃতিকে । এ-প্রকৃতি যেন আগে কোনোদিন দেখেননি তিনি। কেমন নতুন নতুন । বুকের আরামটা আটকে যায । একটা অস্বস্তি জেগে ওঠে । হঠাৎ টের পান চশমাটা তিনি চোখ থেকে খোলেননি। দ্বিতীয়বার শুতে যাবার সময় ওটা চোখেই ছিল। চশমাটা চোখে নিয়েই তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন , খোয়াবও দেখেছিলেন । মনে-মনে হাসেন তিনি । জানলা থেকে সরে গিয়ে ঘরের ভেতর চোখ ঘুরিয়ে দেয়াল ঘরিটার দিকে তাকান । কাঁটায় কাঁটায় পাঁচটা বাজে । কুতুবুদ্দিন ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। আজান বেজে ওঠার সময় হয়ে এলো মসজিদে । বিছানায় গিয়ে মশারিটা খুলে সুন্দর করে গুটিয়ে বালিশ সহ রাখেন খাটের বাক্সে । অন্যদিন নাতির জামাটাও যত্ন করে রাখেন ওখানে । কিন্তু আজ কেন জানি বাইরে রাখলেন, কাছে থাকা চেয়ারের হেলানটার মাথায়। পালকের ঝাড়ন দিয়ে বিছানাটা ঝেড়ে ঢেকে রাখেন আগ্রা থেকে আনা বিছানা-ঢাকার চাদর দিয়ে। চাদরটাকে টান-টান করতে অনেক সময় নেন । সকালে নিজের বিছানা গোছানো তাঁর রোজকার অভ্যেস। আজও সে-কাজের অন্যথা হলো না । তবে আজ যেন শ্রমটা বেশি হলো । হাঁপাচ্ছেন খুব। বুকের সেই অস্বস্তি ভাবটা বাড়ছে । সেদিকে গ্রাহ্য না-করে কুতুবুদ্দিন চান করতে যান গোসলখানায় । চানে সময় নেন না । পরিষ্কার ধোয়া জামা-কাপড় পরে নমাজি ফেজ টুপিটা মাথায় গলিয়ে নেন । ফিরে আসেন নিজের ঘরে । জহরা তখনও ওঠেনি । মেঝেতে পাতেন জায়নামাজ । একটু বাদেই আজান বেজে ওঠে আকাশে বাতাসে । কুতুবুদ্দিন পা দুটো পেছনের দিকে মুড়ে গোড়ালির ওপর বসে নিয়ে দু-হাত পেতে চোখ বুজে নমাজ শুরু করেন । ওই সময় একটা তীব্র কাশি গলায় এসে আটকে যায । নমাজ আর পড়া হয় না । জোরে -জোরে কাশতে শুরু করেন । মনে হচ্ছে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন ক্রমশ । ওই অবস্থায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে পুত্রবধূ জহরাকে ডাকেন , বউ বউ …

জহরা ছুটে আসে শ্বশুরের ডাক শুনে । দেখে , শ্বশুরমশাই জায়নামাজের ওপর শুয়ে আছেন আর লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছেন। অনেকটা আতংকিত হয়ে চেঁচিয়ে জহরা বলে ওঠে, কী হলো আব্বা তোমার, এমন করছ কেন?

কুতুবুদ্দিন হাত উঠিয়ে চেয়ারের হেলানের ওপর রাখা রুবুলের জামাটা দেখিয়ে বলেন , বউ নাতির জামাটা শিগগিরি নিয়ে এসো —

জহরা শ্বশুরমশাইর কথা মতো দ্রুত রুবুলের জামাটা নিয়ে এসে তুলে দেয় তাঁর হাতে । তারপর নিজের কোলের ওপর তাঁর মাথাটা রেখে , উৎকণ্ঠা মেশানো স্মিত গলায় জিজ্ঞেস করে , আব্বা , তোমার কী কষ্ট হচ্ছে বলো তো ?

কুতুবুদ্দিন নাতির জামাটাকে বুকে চেপে ঘ্রাণ নিতে নিতে জবাব দেন, শেষ ঘুম ঘনিয়ে এলো বউ , অন্ধকার নেমে আসছে , গভীর অন্ধকার…।

একটা নাভিশ্বাস উঠলো যেন তাঁর , তারপর অক্ষম , অস্পষ্ট গলায় শব্দ করেন মুখ দিয়ে , আল্লাহ …আল্লাহ …আল্লাহ …।

ধীরে ধীরে দু-চোখ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর , থেমে যায় বুকের স্পন্দন । কিন্তু মুখে একটা স্মিত হাসি …

জহরা কিছুই বুঝে উঠতে পারে না ।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত