| 20 এপ্রিল 2024
Categories
ইরাবতী তৃতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা

তৃতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যা গল্প: নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা । নাহার তৃণা

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

কোনো কোনো উইকএন্ডের রাতে বিশেষ কারণে এই পথসংলগ্ন এলাকার নৈঃশব্দ্য ছত্রখান হয়ে পড়ে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সারাদিনের জমকালো হইহুল্লোড়ের ঠমক খুইয়ে রাত্রিকালে রাস্তাটা সাধারণত চুপচাপই পড়ে থাকে। যত রাত বাড়ে নিঃসঙ্গতার সাথে ঘোট পাকানো অন্ধকার তত পথটা জুড়ে আসনপিঁড়ি হয়। তবে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে সেকথা বলা যাবে না। মাঝে মধ্যেই হুসহাস যানবাহন ছুটে যায়। বাড়িমুখো অনেকে পায়ে হেঁটে পথটা পেরিয়ে যে যার খোপে ঢুকে পড়ে। পথচারীর খুচরো আলাপের গড়ানো শব্দে কিছুক্ষণ পরপর পথটার নিঃসঙ্গতা আলোছায়া ঘেরা পার্কটায় গিয়ে হাওয়া খায়। রাত জাঁকিয়ে বসার আগেভাগে পথটার উপর দাঁড়ানো দোকানগুলোর দেয়াল ঘেঁষে নানা কিসিমের পরসা সাজিয়ে বসা কতিপয় হকারেরা একে একে যে যার বাড়ির পথ ধরে। সব হকারের বাড়ি আছে কিনা সেটা জানা নেই। আছে, এমনটা ভেবে নিতে ভালো লাগে। রাস্তার এক্কেবারে মাথায় বুকটান করে দাঁড়ানো পোস্ট অফিসটা দেখতে দেখতে চুপ মেরে যায়। আশপাশের বিল্ডিংগুলোর জানলা কিংবা দৃশ্যমান ফাঁক-ফোকর জুড়ে একে একে নানা মাপের আলো ফুটে ওঠে। দূরের ব্রিজটা থেকে এ সময় এদিকটায় তাকালে জ্বলে ওঠা আলোগুলোকে মালার মতো লাগে। অন্ধকারের গলায় জড়িয়ে থাকা আলোর মালা। পৃথিবীর নানান প্রান্তের লোকজনের সমাগমে এখন দেশটা কেমন গমগম করে। আজ থেকে পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগে এমনটা কল্পনার বাইরে ছিল। 

প্রধান সড়ক থেকে বেশ কয়েক কদম হেঁটে এলে মাঝারি একটা পার্ক, তার চার দিকে চারটা পথের দিশা চোখে পড়ে। উত্তরমুখী রাস্তার দুপাশ জুড়ে প্রায় একই রকমের একতলা দোতলা মডেল মডেল চেহারার সার বাধা বাড়ি। অধিকাংশ বাড়ির সামনে প্রায় একই ধাঁচের গাছ। ফুলের বাগান। বাড়ি লাগোয়া পেভমেন্টে দাঁড়ানো গাড়ি। সেসব গাড়ির অধিকাংশ কাছাকাছি মডেলের, রংও। এসব বাড়ির বাসিন্দারা নিজের নিজের বাড়ি চট করে কীভাবে যে চিনে নেয় সে এক রহস্য। এই পথটা বেশ ভাবগম্ভীর। মাপা ছন্দে চলে এদিককার দৈনন্দিন রুটিন। দক্ষিণে চলে যাওয়া পথে অনেকটা জায়গা নিয়ে একটা জিম, ইসাবেল রীডের ডেন্টাল ক্লিনিক, নানা কিসিমের উইগে সাজানো দোকান ‘সানশাইন’। তার ঠিক পাশের দোকানাটা ফাঁকা। মাসখানেক হলো ওঠে গেছে। আগে ওখানে একটা ডলার জেনারেল ছিল। এর মধ্যে পশ্চিমের পথটা প্রায় সারাক্ষণ ব্যস্ততায় ভরপুর থাকে। যেখানে দুটো বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। সুনসান সময়ে বিল্ডিং দুটো নিজেদের মধ্যে বিনবিন করে আলাপচারিতায় মত্ত থাকে। কত যে কথা ওদের! থাকবে নাই বা কেন। দুটো অ্যাপার্টমেন্ট ভর্তি নানা দেশের হরেক কিসিমের লোকজন, তাদের ঘিরে ফিনিয়ে ওঠা গুচ্ছের গালগল্প সারাক্ষণ পাক খেতে থাকে। সবটা বলে কুলিয়ে ওঠা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং দুটোর পক্ষে সম্ভব হয় না। কিছু গল্প এদিক ওদিক ঘুরেঘুরে একসময় কোথায় হারিয়ে যায়। তবে ওদের রোজকার আলাপে জেসিকার গল্প না থাকলেই নয়। জেসিকা ওদের গল্পের প্রাণ ভোমরা। 

এই এলাকাটা পুরোপুরি আবাসিক নয়। দুটো অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ছাড়াও মানানসই দূরত্বে খানকতক বাড়ি আর কিছু দোকানপাট রয়েছে। তার মধ্যে আছে একটা পার্লার কাম সেলুন, এন্টিক্সে বোঝাই ‘এ্যাটিক’ নামের পুরনো জিনিসের একটা দোকান। বুড়ি মার্থা আর তার স্বামী চালায় দোকানটা। মার্থা যেমন খিটখিটে, ওর স্বামী জনসন ততটাই মিশুকে স্বভাবের লোক। এই বয়স্ক দম্পতি ম্যাগনোলিয়ার তৃতীয় তলার বি- ০৬৬ নম্বর ফ্ল্যাটটায় থাকে। পথটার শেষপ্রান্তে ‘কাম এন্ড গো’ নামে বিশাল এক দোকান। দিনমান দোকানটায় লোকে গিজগিজ করে। তরিতরকারি, চাল-ডাল তেল মশলা মাছ-মাংস কাঁঠালের বিচি থেকে শুরু করে হেঁশেলের হেন জিনিস নেই যা দোকানটায় পাওয়া যায় না। ঘড়ির কাঁটা রাত আটটার ঘর ছোঁয়া মাত্র দোকানের ঝাপ পড়ে যায়। উৎসব পালাপর্বণে শপিং মলের দোকান গুলো যেখানে স্টোর আওয়ার বাড়িয়ে খোলা রাখা হয়, ‘কাম এন্ড গো’র ক্ষেত্রে সে নিয়মের ব্যতিক্রম হয়না কখনও। পূর্বদিকটা কল দ্য সাক; বাংলায় যাকে কানাগলি বলা হয়।

ফুলের নামে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং দুটোর নাম। পার্কটা ধরে সরাসরি এলে প্রথমটার নাম ম্যাগনোলিয়া আর পরেরটার ক্রিসেনথিমাম। জেসিকা থাকে ম্যাগনোলিয়ার চোদ্দ তলায়। আদতে তেরোতলা বলাই সঙ্গত। আনলাকি থার্টিনের অন্ধবিশ্বাস হেতু তেরতলাকে চোদ্দতলা ভেবে স্বস্তি পায় বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ। যেকারণে দুটো বিল্ডিংয়ের কোনোটাতেই তেরতলার নাম নিশানা নেই। সংখ্যাগণনার বিচারে যদিও তা ধোপে টিকে না। তর্কের ইচ্ছে থাকলে এ নিয়ে তর্ক একটা ফেনিয়ে তোলাই যায়। যদি অপছন্দই, তবে বিল্ডিংয়ের নকশায় বারো তলা পর্যন্ত রাখাই বাঞ্ছনীয় ছিল। কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। অবশ্য আমরা কোনো বির্তকে না গিয়ে গল্পের খাতিরে তেরতলাকে চোদ্দতলাই বলবো। জেসিকা যে ফ্লোরে থাকে সেখানে আরো কিছু অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার আছে। প্রতিটি ফ্লোরে বারোটি করে অ্যাপার্টমেন্ট থাকলেও চোদ্দতলায় একটাই। বিল্ডিংয়ের সবগুলোই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। প্রত্যেক ফ্লোরে এলিভেটর আছে ব্যতিক্রম চোদ্দতলা। জেসিকা কিংবা ওর কাছে যারা আসে, সবাইকে বারো তলা পর্যন্ত এলিভেটর চড়ে বাকি পথটুকু সিঁড়ি ভেঙে ওঠতে হয়। নিচে নামার সময়ও একই কায়দায় বারোতলায় নেমে এলিভেটরে চড়তে হয়। চোদ্দ তলার ফ্ল্যাটে জেসিকা একাই থাকে। আগে সে টিম হর্টনসে কাজ করত। কাজটা চলে যাওয়ায়  লরেন্সপ্লাজায় ট্যাটু শিল্পী হিসেবে সিলভিয়ার দোকানে বসে। ছুটির দুটোদিন তার নিজের জন্য বরাদ্দ থাকে।

প্রায় প্রত্যেক ছুটির সন্ধ্যায় ওর সঙ্গ লাভের আশায় কেউ না কেউ এসে উপস্হিত হয়। সামান্য টাকার বিনিময়ে যে কারো সঙ্গে বিছানা ভাগে জেসিকার আপত্তি নেই। ঊনত্রিশের ঝমঝমে তরুণী জেসিকা হেন নেশার বস্তু নেই যা সে গ্রহণ করেনি। মাঝে মধ্যেই নেশার বখরা নিয়ে কিংবা সঙ্গলোভীরা প্রতিশ্রুত টাকা পয়সা নিয়ে হুজ্জত করলে জেসিকা পুলিশে কল দেয়। বেশির ভাগ সময় মধ্যরাতের দিকে কাণ্ডগুলো ঘটে। প্যাঁ প্যাঁ সাইরেন বাজিয়ে পাড়া মাথায় তুলে পুলিশ এসে উপস্হিত হয়। তাতে ম্যাগনোলিয়ার  অনেকের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বিষয়টা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশও ঠোকা হয়েছিল বার কয়েক। কোনো সুরাহা হয়নি, সেটা অনেকেরই অখুশির কারণ। মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত নেশার জিনিস খাওয়ার ফলে জেসিকার ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আবার অনেক সময় সে ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। অধিকাংশ সময় উপস্হিত সঙ্গীই মেডিকেল হেল্পের জন্য হাসপাতাল বা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স সাইরেনের যুগলবন্দী চিৎকারে ঘুম ভাঙা পাড়া’টার ভ্রূতে কঠিন ভাঁজ পড়ে। যারা জেসিকার ভালো চায় তাদের মনে প্রতিবার ‘আহা কোন দুঃখে মেয়েটা এভাবে জীবনটা শেষ করতে চায়’ ভাবনাটা পাক খায়। আর যারা তার লাগামহীন ব্যবহারে ত্যক্ত- বিরক্ত, তারা গোপনে বলে, ‘জেসিকাটা মরে না কেন!’ ওরকম ঘটনার পর জেসিকা দুটো দিন লক্ষ্মী মেয়ের মতো থাকে। তারপর যেকার সেই।

এই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টগুলোর বেশির ভাগ বাসিন্দাই নানা কিসিমের জীবিকার সাথে যুক্ত। ছাত্র থেকে শুরু করে কর্মজীবনে অবসর নেওয়া অনেক বুড়োবুড়ি এখানে ডেরা বেঁধেছেন। তাদের ভরণপোষণের উৎস সরকারি অনুদান। শুধুমাত্র বুড়োবুড়িরা নন, সরকারি সুযোগসুবিধা প্রাপ্ত এই অ্যাপার্টমেন্টের কর্মযোগ্য অনেকেই কর্মস্হানের পথে না গিয়ে আলস্যে জীবন কাটিয়ে দিতে পছন্দ করে। এখানে কেউ একা থাকে, কেউ থাকে পরিবার অথবা সঙ্গীসহ। এক’শ পয়তাল্লিশটা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের সবার সবাইকে চেনার কথা নয়। প্রতি বছর অ্যাপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ একটা গেটটুগেদারের আয়োজন করে। তাতে খাওয়া-দাওয়া আর সামান্য গান বাজনার ব্যবস্হা থাকে। এই ছুতোয় একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ অ্যাপার্টমেন্টের সবাই সদ্ব্যবহার করে তাও নয়। তবে জেসিকাকে অনেকেই চেনে। যারা চেনে না, তার নামটা অন্তত জানে। তাদের অনেকেই গোপনে জেসিকার সঙ্গও কামনা করে। প্রকাশ্যে জেসিকা তাদের খুব একটা পাত্তাটাত্তা দেয় না। তবে ছয়তলার পশ্চিমমুখী অ্যাপার্টমেন্টের দক্ষিণ ভারতীয় ছাত্র কাম গায়ক কুমারভীরণকে জেসিকা বিশেষ পছন্দ করে। সেটা নিয়ে জেসিকার মধ্যে কোনো লুকোছাপাও নেই। গত বছর বিল্ডিং কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে কুমারভীরণের গানের সাথে তুমুল নেচেছিল জেসিকা। এসব অনুষ্ঠানে জেসিকা নিজেকে যত্ন করে সাজায়। এমনিতেই জেসিকা দুর্দান্ত সুন্দরী। সাজলে দুর্লভ ঝাড়বাতির মতো ঝলমল করে ওঠে। সেদিন সে সবার নজরের কেন্দ্রে থাকে। গতবারই প্রথম পরিচয় কুমারের সাথে। ভেবেছিল অন্যদের মতো কুমারও তার রূপের আঁচে মোমবাতির মতো গলে গিয়ে লেপ্টে থাকতে চাইবে। তার ভাবনা মতো কাজ হয়নি। নিজেই যেচে  কুমারের প্রতি তার মুগ্ধতা জানিয়েছিল। হাতে সময় থাকলে প্রায় সে এলিভেটর ধরে ছয়তলার করিডোরে নেমে পড়ে। যদি কুমারের দেখা পাওয়া যায়। কদাচিৎ তার আশা পূরণ হয়। যখন কুমারের সাক্ষাৎ পায় বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে ওঠে জেসিকা। জেসিকাকে নিয়ে কুমারভীরণের কোনো মাথাব্যথা নেই। এমুহূর্তে তার একটাই লক্ষ্য পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি জোগাড় করা। নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে আম্বিকাকে তার পাওয়া হবে না। আর তাকে না পেলে জীবনের সবটাই পানসে কুমারের কাছে।

কুমার জেসিকার কাছ থেকে দূরত্ব রেখে চলতে চেষ্টা করে। তাতেও মেয়েটার বিকার নেই। জেসিকা হচ্ছে সেই ধরনের মেয়ে অবহেলায় যে আরো মরিয়া হয়ে ওঠে। কুমার যত এড়িয়ে যায়, কী এক অমোঘ টানে জেসিকা ততই তার কাছাকাছি আসবার জন্য ছটফট করে। কুমারভীরণ স্বভাবে কিছুটা অন্তর্মুখী, জেসিকা তার বিপরীত। মুখের কোনো আড় নেই মেয়েটার। কখন যে কী বলে বসে। জেসিকার মতো ঝাঁ চকচকে সুন্দরীর এমন গায়েপড়া আচরণে পিত্তি জ্বালা করে। জ্বলনটা অবশ্য কুমারের নয়, ওমর শরীফের। জেসিকার মতো সুন্দরীকে নিয়ে ওমরের কথায় কুমার মুখ টিপে হেসেছিল। জানতে চেয়েছিল সে জেসিকার বন্ধত্ব চায় কিনা? শুনে আতকে ওঠার নাটকীয় ভঙ্গি করে দূরে সরে গিয়ে নিজের অনিচ্ছা জানিয়েছিল ওমর। ওই বিষয়ে কুমার আর কথা বাড়ায়নি। তবে আরো অনেকের মতো ওদের আলাপের ফাঁক ফোকরে প্রায় জেসিকা প্রসঙ্গ চলে আসে। আলাপে মেয়েটার নেশার অভ্যেস, হুটহাট মরবার বাই নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ জানাতে ভোলে না। জেসিকা নামের বিষণ্ন সুন্দরী মেয়েটির জন্য কোথাও একটা মায়া ওদের দুজনকে সন্তর্পণে বেঁধে রাখে।

কুমার এবং ওমরের প্রাথমিক পরিচয় ফেসবুকে। বর্তমানে একই অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা হওয়ায় তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। তারা একে অন্যে নিজেদের সম্পর্কে নানা তথ্য ভাগাভাগি করে নিলেও কী এক অজানা কারণে কুমার আম্বিকার ব্যাপারটা চেপে গেছে। বলি বলি করেও ওমরের বলা হয়ে ওঠেনি ওর পছন্দের জগতে নারীর জায়গা নেই। সেখানে কুমারের মতো কাউকেই বরং সে কাঙ্ক্ষা করে। কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে নিশ্চয়ই বলবে, তার পদক্ষেপ হিসেবে নিজেকে একটু একটু তৈরি করতে থাকে ওমর। বন্ধু হিসেবে ওমরের তুলনা হয় না; ওর মিশুক স্বভাব আর দায়িত্বজ্ঞানে মুগ্ধ কুমার। পড়াশোনার ফাঁকে ম্যাগডোনাল্ডসে কাজ করে কুমার। তাতে ওর পড়াশোনায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর ওমরের। খাওয়া দাওয়ার পর্ব তার অ্যাপার্টমেন্টে সারার ব্যাপারে কুমারকে বাধ্য করে ছেড়েছে ওমর। রান্নাবান্নার ভার সানন্দে নিয়েছে নিজের কাঁধে। দক্ষিণীদের মতো ওমরও যথেষ্ট ঝাল মশলায় অভ্যস্ত। কাজেই কুমারের খুব একটা সমস্যা হয় না। তাছাড়া কুমারের কাছ থেকে আর নেট ঘেটে সে বেশ কিছু দক্ষিণ ভারতীয় পদ রান্না শিখে নিয়েছে।  

ওমর  শরীফ দ্বিতীয়তলার রাস্তার দিককার এ-২৪ এর বাসিন্দা। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ছেলে ওমর। ওর পরিবার কট্টর গোড়া মুসলমান। প্রায়  অলৌকিকভাবে পরিবারের গোড়ামির ফাঁস কেটে সে এই দেশে পৌঁছেছে। না এলে কী হতো ভাবতে চায় না ওমর। ছাত্রাবস্হায় এক সময় কবিতা লেখার প্রচুর চেষ্টাচরিত্র করেছে। পত্রিকায় প্রকাশের জন্য প্রতি মাসে খানকতক কবিতা অমুক তমুক পত্রিকার সম্পাদক বরাবরে পাঠিয়েছে। কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি। তাকে ব্যর্থ কবি বলা যায়। নিজে কবিতা লেখায় সফল হয়নি বলেই কিনা কে জানে, সফল কবিদের সে দুচোখে দেখতে পারে না। গোপনে এখনও  সে কবিতা লিখে। তবে সেগুলো কোথাও প্রকাশ করে না। কয়েকটা ডায়েরি ভরে গেছে  অজস্র কবিতায়। এখন তার মাথায় ছোটো গল্পের নেশা সাওয়ার হয়েছে। সুযোগ পেলে ফেসবুকে নিজের ওয়ালে স্বরচিত গল্প দেয়। প্রশংসাও কম পায় না। প্রশংসাগুলো কতটা ওর লেখার গুণে, আর কতটা ওর নায়কোচিত চেহারা সুরতের কারণে ছুটে আসে বোঝা দায়। গল্প লিখলেও, নিজেকে সে মনেপ্রাণে কবি ভাবতে ভালোবাসে।

ফেসবুকের মজা হলো ছাইপাশ লিখলেও লেখক বনে যাওয়া যায়। কবিতা-গানের সূত্রে ফেসবুকে কুমার আর ওমরের পরিচয়, বন্ধুত্ব। পরবর্তীতে ড্যানফোর্থের বাঙালি পাড়া ছেড়ে কুমারের সূত্রে ম্যাগনোলিয়ায় এসে ওঠা। কুমার গায়ক, সে কবি- কী চমৎকার জুড়ি! কুমারের গানের মহাভক্ত ওমর। কুমারও ওমরের লেখালিখির উৎসাহ পছন্দ করে। যদিও সে ওমরের কবিতার আগামাথা তেমন বোঝে না। গান বিষয়ে তাদের কিছু পছন্দে বেশ মিল আছে। পুরনো দিনের গান নিয়ে কথা হয় ওদের। প্রায় ছুটির দিনে ওরা পালা করে একে অন্যের ফ্ল্যাটে আড্ডা দেয়, পুরনো দিনের গান শোনে।  কখনও কখনও ওমর স্বরচিত কবিতা পাঠ করে, কুমার গান গেয়ে শোনায়। সামনে বসে গান শোনার সাথে দেখার বিষয়টাও জড়িত। কুমারের গান চোখ বুজে শুনতে হয়। তাতে ওর অসাধারণ গায়কীর পুরোটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এটা ওমরের নিজস্ব ভাবনা। কুমার গান করার সময় এমন অবাঞ্ছিত মুখোভঙ্গি করে চোখ মেলে সে গান বেশিক্ষণ উপভোগ করা কঠিন। ছেলেটা এত পছন্দের হওয়া সত্ত্বে ওমরের পক্ষেও চোখ মেলে গান শোনা সম্ভব হয় না। ভালো লাগা চটকে যায়। কতবার ভেবেছে কুমারকে বলে আয়না দেখে প্র্যাকটিস করতে। কিন্তু তাতে যদি ক্ষেপে যায়! সৃষ্টিশীল মানুষেরা নিজের সৃষ্টি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য শুনতে খুব একটা অভ্যস্ত না। নিজেকে দিয়ে বোঝে ওমর। 

ওমর আগে ড্যানফোর্থের বাঙালি পাড়ার একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতো। আর ড্যানফোর্থ ও উডবাইন এভ্যিনিউয়ের উপর হার্ডওয়্যারের দোকানটায় কাজ করতো। ওর বিষয়ে দেশীয় কয়েকজনের মাত্রাতিরিক্ত কৌতূহল ওকে সর্তক হতে বাধ্য করে। কতদিন রাখঢাক করে থাকা সম্ভব জানা নেই যদিও। তার ভয় অসুস্হ দাদিজানকে নিয়ে। কোনোভাবে যদি একান-ওকান হতে হতে দেশে খবরটা পৌঁছায়! বৃদ্ধ বয়সে দাদিজান ধকলটা সইতে পারবেন না সে ব্যাপারে ওমর নিশ্চিত। শুধু দাদিজানই কেন, তার জন্মদাত্রী মা বা জন্মদাতা বাবাই কি ওর পরিচয়টা মেনে নিতে পারবেন? সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস হবে তাঁদের? বাসা বদলে ফেলার সাথে সাথে ওমর কাজও বদলেছে। ওর উপার্জন থেকে প্রতিমাসে তাকে দেশে টাকা পাঠাতে হয়। সংসারের দায়িত্ব পালনে তার অনীহা না থাকলেও দেশে যাবার ব্যাপারে ওমরের বিরাট অনিচ্ছা কাজ করে। স্হানীয় অতিকৌতূহলী বাঙালিরা যদিও ধরে নেয় পয়সা বাঁচানোর ধান্ধায় সে দেশে যায় না। কেন যায় না সে শুধু ওমরই জানে। নিজের গোপন গহীন পরিচয় নিয়ে সে শঙ্কিত। ওর জন্ম আর বেড়ে ওঠা এমন এক অদ্ভুতুড়ে এলাকায়, যেখানে নারীদের ভোট দেবার অধিকার নেই।  স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ওর দাদি,চাচি মা-খালাদের কেউ ভোটকেন্দ্রমুখী হননি। ওই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস নারীরা ভোট দিলে সমাজ সংসারে অনিষ্ট নেমে আসে। এমন অবিশ্বাস্য ফতোয়ার খুঁটিতে তার জন্ম এলাকার মানুষ যার যার গলায় একটা অদৃশ্য দড়ি বেঁধে দিব্যি জীবন পার করে দেয়। প্রশ্নহীন গোড়ামির শিকড় সেখানে কতটা গভীরে প্রোথিত বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন এক বাতাবরণে বেড়ে ওঠার কারণে সে খুব ভালোভাবেই জানে, তার সত্যিকার পরিচয় জানাজানি হলে পরিবার কিংবা সমাজ মুহূর্তের মধ্যে তাকে অস্বীকার করতে দ্বিধা করবে না। 

দাদিজানের অসুস্হতার ছুতো ধরে ওর বিয়ের কথা উঠেছে বেশ কয়েকবার। দেশে গেলে বিষয়টা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হতে বাধ্য। ওই পরিস্হিতি সামাল দিতে গিয়ে যদি তাকে সত্যি প্রকাশে বাধ্য হতে হয়, সেটা তার প্রাণের জন্যও হুমকির। সমাজ-সংসারের বিরুদ্ধে চাইলেই দাঁড়ানোর ক্ষমতা তার নেই। ওর মতো মানুষের জন্য দেশের তুলনায় বিদেশই নিরাপদ। অন্য রকম হওয়ার কারণে জীবনকে বলি দিতেও রাজী নয় ওমর। সে ঠিক করেই নিয়েছে যতদিন সম্ভব পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু দেশে সে আর ফিরছে না। 

জেসিকা ট্রেভরের জন্ম এ দেশেই। ওর পূর্বপুরুষ এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ গায়ানার জোন্স টাউনের বাসিন্দা ছিল। উনিশ’শ আটাত্তরের  কাল্ট গুরু জোন্সের প্ররোচনায় গণ আত্মহত্যার একটা ব্যাপার ঘটে গায়ানায়। জেসিকার দাদা-দাদি জোন্সের অনুসারী হলেও আত্মহুতির বিপক্ষে ছিল। সেসময় পরিবারের অনেকেই গাজুয়ারি সেই অন্ধবিশ্বাসের বলি হয়। সেই ঘটনায় জেসিকার দাদা-দাদির মন ভেঙে যায়। ঘটনার প্রায় এক মাসের মাথায় ডিসেম্বরের শেষদিকে, তল্পিতল্পা গুটিয়ে ওরা এই দেশে চলে আসে। জেসিকার বাবার বয়স তখন ঊনিশ কুড়ি। নতুন দেশে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে যথেষ্ট ঘাম-রক্ত ঝরাতে হয় ওদের। ততদিনে জেসিকার বাবা এন্টোনিওর সাথে মার্গারিটার পরিচয় প্রাথমিক স্তর পেরিয়ে গভীরতর হয়েছে। যথাসময়ে সেটা পরিণয়ের দিকে গড়ায়। বিয়ের বছর কয়েক পর জেসিকার জন্ম। ওর পিঠাপিঠি আরো দুই ভাই বোন আছে। বোনটা মিসিসিপির এক আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গকে বিয়ে করে এখন জ্যাকসনে থাকে। ফুটফুটে দুটো ছেলে মেয়ে তাদের ঘরে। ভাইও বিয়েশাদি করে গার্হস্থ্য জীবনে থিতু হয়েছে। লারা নামের তিন বছরের পরির মতো এক মেয়ে আছে। প্রত্যেক ক্রিস্টমাসে ওদের ওখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ সযত্নে এড়িয়ে যায় জেসিকা। আড়াই বছর আগে মা মারা গেছে। দাদা গেছে তার আগের বছর। দাদিকে নিয়ে বাবা ওয়েস্ট হিলের ওদিকটায় থাকে। সরাসরি পরিবারের কারো মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করে না জেসিকার। ফেসটাইমে দেখা সাক্ষাতের দায়িত্ব সারে। তবুও কী আর নিস্তার পায়। এক কথা দু’কথার পরই কবে জেসিকা বিয়েশাদি করছে সে নিয়ে দাদি ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে। বুড়ির এত বয়স তারপরও বোধবুদ্ধি টনটনে। ফাঁকি দেবার উপায় নেই। কথা ঘুরিয়ে জেসিকা অন্য প্রসঙ্গে যেতে চাইলেও বুড়ি গো ধরা খুকির মতো একই প্রসঙ্গে সাওয়াল জবাবের পর্ব খুলে বসে। তাতে করে অধিকাংশ দিনই এক রকম তিক্ততা দিয়ে ওদের আলাপ পর্বের ইতি ঘটে। জেসিকা কিছু দিন গুম মেরে থাকে। ওদের খোঁজ খবরে যায় না। প্রায় ভাবে মুখের উপর বলে বসে, শরীর ছাড়া জেসিকার যে একটা মন আছে তার হদিশ কোনো পুরুষ রাখতে আগ্রহী নয়। ঘরটা সে বাঁধবে কার সঙ্গে? যাকে পছন্দ হয় সেই তার রূপ, শরীর নিয়ে দুদিন মত্ত থাকে তারপর নেই হয়ে যায়। সে কী চায় না লারার মতো ছোট্ট একটা পরি তারও কোল জুড়ে আসুক। ঘর সংসার নামের রাজ্যপাটে পা ছড়িয়ে নিজের মতো থাকার একটা জীবন তারও হোক। হাইস্কুল ক্রাশ জোসেফ ভালোবাসার নামে তার সাথে যে বেঈমানীটা করেছিল সেসব ভুলে সে তো স্বাভাবিক জীবনের পথেই হাঁটতে চেয়েছিল। কিন্তু পারলো কই! তার কালিমাখা অতীতটা দিব্যি যখন তখন সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন সবকিছু কেমন হাতের বাইরে চলে যায়। দিশাহারা সে মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করে। যমেরও বুঝি অরুচি তার উপর।

ভারতীয় ছেলেটা আর ওর বন্ধু তাকে দেখে এমনভাবে ছিটকে সরে দাঁড়ায়- ভেতরে ভেতরে সে তখন ভেঙেচুরে যায়। আবার ওদের সাথে বন্ধুত্ব করার কেমন এক জেদও চেপে বসে। স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ করে তখন। জেসিকা কারো পেছন পেছন ঘুরে না বরং তাকে ঘিরেই চলে সঙ্গলোভীদের নিরন্তর ছুকছুকানি। জোসেফের দেওয়া ক্ষত কিংবা নিজস্ব একটা ঘরের জন্য হাহাকার যখন তাকে পুরো দস্তুর কাবু করে ফেলে; তখন সে মরতে চায়। অথচ প্রতিবার মৃত্যু কাছাকাছি এসেও কেমন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সব ভুলে আবার সে উঠে দাঁড়াতে চায়। হন্য হয়ে খুঁজে কার বুকের ভাঁজে কিংবা চোখের মায়ায় তার জন্য একফোঁটা আশ্রয় বরাদ্দ আছে। ওই ভারতীয় ছেলেটার নির্লোভ মায়া মায়া দুচোখের ভেতর হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে জাগে। এত কালি সে মেখেছে, ওর অশুচি শরীরটা সে পথেও কাঁটা বিছিয়ে রাখে। কুমারভীরণ ভাবেবাচ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে সে অস্পৃশ্য, ভ্রষ্টা। তারপরও সে অলীক কল্পনায় ভাসে। একবার, শুধু একবার যদি কুমার বলে ওর চোখের মায়ায় আশ্রয় হবে জেসিকা নামের চির দুঃখিনী ঘরহীনের। সব ছেড়েছুড়ে সে আবার জন্ম নেবে। যে জন্ম হবে অপাপবিদ্ধ সুন্দরের। 

ছুটির দিন হলেও আজ জেসিকা কাউকে তার ঘরে আসতে দেয়নি। আজ সে আকণ্ঠ পান করবে তার নিজস্ব বিষাদ। আকাশের গায়ে গোলপানা একটা চাঁদ দেখেছিল কিশোরী রাতের ঘন হতে থাকা অন্ধকারে। সে নিশ্চয়ই এই মধ্যরাতে আরো পুরুষ্ট হয়েছে। হাঘরে মেঘেরা তাকে চেটেপুটে শেষ করবার আগে তার মুখটা সে আরেকবার দেখতে চায়। ভদকার বোতলটা নিয়ে টালমাটাল পায়ে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ছাদের দিকে হাঁটা দেয় জেসিকা। যদিও অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ছাদে ওঠা নিষিদ্ধ।  কেয়ারটেকারকে সামান্য ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ দিয়ে না কে হ্যাঁ করতে সময় লাগেনি। গোলগাল চাঁদটা জেসিকাকে দেখে আরেকটু নিচে নেমে আসে। মুখোমুখি হয় দুজন দুজনের। চোখে চোখে চুপকথায় মেতে ওঠে ওরা। ছাদের এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা মাটিভর্তি বড় বড় ড্রামগুলোর গাছেরা একসময় জীবন্ত ছিল। এখন অশরীরী চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছদের জীবাম্শের উপর জ্যোৎস্নার আলো চুইয়ে পড়তে থাকে। অজানা মিষ্টি এক ফুলের সুগন্ধে ভরে ওঠে পুরো ছাদ। বাতাস বয়ে নিয়ে যায় সে সুগন্ধ।

অনেকদিন পর আজ কবিতার ডাক শুনতে পায় ওমর। সামনের জুনে প্রাইড প্যারেডে সে কুমারকে নিয়ে উপস্হিত হতে চায়। তার আগে কবিতায় জানিয়ে দিতে চায় মনের জমানো কথা। কবিতার প্রহর এসেছে এই রাতের নির্জনে। খোলা জানলা পথে অজানা ফুলের মিষ্টি গন্ধ এসে ভরিয়ে দেয় ওর ঘর। ঘোরগ্রস্তের মতো ওমর শরীফ কীবোর্ডে আঙুল চালায়। 

হঠাৎ বিকট শব্দে ছত্রখান হয় চারপাশের নিপাট নির্জনতা। শব্দটা নিচ থেকে আসে। একই সঙ্গে পার্ক করা এক বা একাধিক গাড়ি এমনভাবে অনবরত প্যাঁ প্যাঁ আওয়াজ তুলে যেন রাতের ঘন অন্ধকার কিংবা নীরবতকে ছিড়েখুড়ে অন্যকিছু বানাবে এখুনি। 

 

গল্পের শিরোনাম ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’ চলচ্চিত্র থেকে নেওয়া।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত