| 19 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প ধারাবাহিক

মহানগরের নয়জন নিবাসী (পর্ব-২৭) । ডঃ দীপক কুমার বরকাকতী

আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট

মিজোরামের আইজল শহরের পদার্থ বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ দীপক কুমার বরকাকতী (১৯৪৮) অসমিয়া সাহিত্যের একজন সুপরিচিত এবং ব্যতিক্রমী ঔপন্যাসিক। আজ পর্যন্ত আটটি উপন্যাস এবং দুটি উপন্যাসিকা, অনেক ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাছাড়া শিশুদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারই ইংরেজি ভাষার একটি নতুন দিল্লির চিলড্রেন বুক ট্রাস্ট থেকে ১৯৯২ সনে প্রকাশিত হয়। দেশ-বিভাজন, প্রব্রজন, ভেরোণীয়া মাতৃত্ব (ভাড়াটে মাতৃত্ব), ধর্ম এবং সামাজিক বিবর্তন ইত্যাদি তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয়। আলোচ্য ‘মহানগরের নয়জন নিবাসী’উপন্যাসে ১৯৩২ সনে স্টালিনের বিরুদ্ধে লেলিনগ্রাডের নয়জন টলস্টয়বাদী গান্ধিজির অহিংসা নীতির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে করা আন্দোলনের ছবি ফুটে উঠেছে। তাঁর ইংরেজি ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ দুটি হল From Valley to Valley (Sahitya Akademi, New Delhi, 2010) এবং The Highlanders (Blue Rose Publishers, New Delhi, 2010)। বাংলা ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ ‘স্থানান্তর’ (অর্পিতা প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৭)। বাসুদেব দাসের অনুবাদে ইরাবতীর পাঠকদের জন্য আজ থাকছে মহানগরের নয়জন নিবাসীর পর্ব-২৭।


 

 

 

তৃতীয় খণ্ড

পুনরায় সময়ঃ১৯৮৯ সন। অক্টোবর শেষ ভাগ।

স্থানঃসাইবেরিয়া রয়াকুরিমগ্ৰাম

য়াকুরিম গ্রামের শ্রীযুক্তা নাডিয়া প’পভনার বাড়ির বাতাবরণ বড় গম্ভীর হয়ে পড়ল। বসে থাকা সমস্ত মানুষ চুপ করে রইল।

নাডিয়া প’পভনার প্রায় সাতান্ন বছর পেছনে ফিরে যাওয়া অসীমের দৃষ্টি ধীরে ধীরেসসীমে ফিরে এল। তার ভিজে ওঠা চোখের চোখের জল চার কুড়ির গণ্ডি পার করা গালের ভাঁজে ভাঁজেবয়ে গেল ।তাঁর হাতের কাছে থাকা একটা কোমল কাপড় চোখের কাছে তুলে নিল।

মহিলাটি বসে থাকা আরাম চেয়ারের নিচে শুয়ে থাকা কুকুরটা কু কু করে বিলাপ করতে লাগল।

চেয়ারটার পেছন দিকে এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে কথা শুনতে থাকা তরুণী নেলিয়াই চট করে নাডিয়া প’পভনার হাত থেকে কাপড়টানিয়ে বলল–’ দেখি ঠাকুরমা।’

সে আলতো  করে বৃদ্ধা নাডিয়া প’পভনার চোখ দুটো মুছে দিল।

‘ কেঁদনা।’– কণ্ঠে সে বলল।

‘ দেখি, তোর হাতটা দে তো।’ নাডিয়া প’পভনাআলতোভাবে তার হাতটা ধরল, তারপর হাতটা তার নিজের গালে লাগিয়ে চেপে দিল।

‘ তোরা কি আমাকে কাঁদতেও দিবি না?’ বৃদ্ধার চোখ দিয়ে হড়হড়  করে তপ্ত জল গড়িয়ে পড়ল।

তাঁর মনের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের মতো অনেক ছবি একসঙ্গে পার হয়ে গেল। সেই মা মাছারমান’ভনার,মিখাইলর,লিঅ’নিডর,ভিক্টর একছুর্স্কি, ভলক’ভ রিয়াজন’ভ এবং অন্য টলস্টয়বাদীদের, মারিয়া এবং ডিমিট্রিগরিনের সঙ্গে দুঃখের সময় এই সেদিন পর্যন্ত সংঘ না ছাড়াগ্রেবিল’ভের।

বৃদ্ধা নাডিয়া প’পভনার মনে পড়ললিঅ’নিডের কাছ থেকে পাওয়া প্রেমের স্বর্গানুভূতির কথা ,লিঅ’নিড অন্য টলস্টয়বাদীদের সংস্পর্শে মাটি, দেশ এবং মানুষকে ভালোবাসতে শেখার কথা, হিংসার ভাব মন থেকে দূর করে অহিংসার মনোভাবকে  গ্রহণ করা,গ্ৰেবিলভের সুরক্ষা দেওয়া অন্য একটি প্রেমানুভূতির কথা, মা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বান্ধবী মারিয়া, ডিমিট্রিগরিন এবং আনুক নেলিয়া জীবনের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া অকপট নির্মল ভালোবাসার কথা।

তাঁর দৃষ্টি যেন মুহূর্তের জন্য পুনরায় অতীতের  দিকে ধাবিত  হল।

য়াকুরিম গ্রামের অনতিদূর দিয়ে যাওয়া রেলপথে দূর  থেকে আসা রেলগাড়ির দীর্ঘ হুইসেল শোনা গেল। কাছে চলে আসা রেলের ঝকঝক শব্দ ধীরে ধীরে উচ্চকিত হয়ে উঠল।বিকেলের রেলটা উষ্টকূটের লেনা স্টেশন থেকে ব্লাডিভস্টকের দিকে যাচ্ছে। এই রেলে নাটাস্কা এবং ফিয়ডর আগের দিন মস্কো থেকে এসেছিল ।  

রেলটা নিশ্চয়খরস্রোতা লেনা নদীর ওপরের সেতুতে উঠেছে। কেননা তার শব্দ তীব্র হয়ে নাডিয়া প’পভনাদের বাড়ির রুমে ভেসে আসছে এবং বৃদ্ধাকে বাস্তবে ফিরিয়েআনছে।নাডিয়া প’পভনা নিজেকে সামলেনিল।সেফিয়ডরদের দিকে তাকিয়ে বলল আমরা লেনিনগ্ৰাড  থেকে রেলে এসেছিলাম। তখন এই উত্তরের দিকে থাকা’বাম’ রেলপথ  তৈরি হয়নি। কেবল বৈকাল হ্রদের দক্ষিণ তীর দিয়ে ট্রান্স সাইবেরিয়ানরেলপথটা  সোজাসুজি ব্লাডিভোস্টকেগিয়েছিল। আমরা উষ্টকুটেনেমেছিলাম। সেখান থেকে মাঝেমধ্যেপায়ে হেঁটে, মাঝে মধ্যে ঘোড়ায় উঠে এবং মাঝেমধ্যেনৌকায় এই গ্রামে পৌঁছেছিলাম।’

মহিলাটি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন–’ রেলপথ নির্মাণ করার সময় গ্রামের অনেক বাড়িঘর নষ্ট হল।আমাদের ঘর কিন্তু বেঁচে গেল। ইভান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এখানকার স্কুলের কাজে যোগদান করলাম। বাড়িতেগ্রেভিল’ভ আমাকে সঙ্গ দিতে লাগল এবং স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা আমাকে আনন্দ দিতে লাগল।’

‘ আর এখন’– সে বলল–’ এই যে ওরা দুষ্ট-দুটো আছে।’

নাডিয়া প’পভনানেলিয়া এবং আনুককেদেখিয়ে বলল–’ ওরা আমার সঙ্গী এবং সুখ দুঃখের সঙ্গী।’

সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। ঘরের উষ্ণতা কমে আসছিল। এই সময় উনুনে রোজ আগুন জ্বলে উঠে। আনুক ঘরের চিমনিতে খড়ি চাপিয়ে জ্বালাতে শুরু করেছিল । সে সেখান থেকেই মাথা ঘুরিয়ে ঠাকুরমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল।

রান্নাঘর থেকে দুধ, ডিম, মাখন, চিনি ইত্যাদির মিশ্রণে রান্না ব্লিনি নামের জলপিঠারচেনচেন শব্দ ভেসে এল।আনুক-নেলিয়াযায় বলে এক সপ্তাহ থেকে কাজে লাগানো প্রতিবেশী একটি মেয়ে দুপুরের আহার  রান্না করছে। জল পিঠার ফুরফুরে গন্ধ ভেসে আসছে।

গন্ধ পেয়ে প্রত্যেকের ক্ষুধা লাগল।

নাডিয়া প’পভনা  সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতিস্থ  হল। সে এবার কোনো আবেগ মিশ্রিত না হয়ে ফিয়ডরদের   দিকে তাকিয়ে বলল–’ জান ফিয়ডর, জান নাটাস্কা,লিঅ’নিডমিখাইলদের আর কোনো খবর পেলাম না। স্ট্যালিনের মৃত্যুর এক বছর পরে চুয়ান্ন সনে কোনো কারণ ছাড়াই বন্দি করে রাখা ডিমিট্রিগরিন ফিরে এল। কিন্তু সে তাদের কোনো খবর দিতে পারল না।


আরো পড়ুন: মহানগরের নয়জন নিবাসী (পর্ব-২৬) । ডঃ দীপক কুমার বরকাকতী


ফিয়‍ডর কিছু একটা বলতে গিয়েহঠাৎ চুপ করে গেল ।সে এবার নাটাস্কার দিকে তাকাল।সেই নয় নাটাস্কা ও কেসটার বিষয়ে  গবেষণা করার জন্য লিঅ’নিডএডলারদের বিচার প্রক্রিয়াটির বহু কথা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছে। অধ্যাপক মিখাইল ক্রিয়োচক’ভের তত্ত্বাবধানে ফিয়ডর  মহাফেজখানা থেকে উদ্ধার করা কেসটির ধারাবাহিক বিবরণের নকল এবং নথিপত্র কিছু সেও পেয়েছে। সেখান থেকেই সে জানতে পেরেছেসেই ‘ লেনিনগ্ৰাডেরনয়জন নিবাসী’কে বন্দি করার পরে ‘লিঅ’নিড এডলার এবং অন্যান্য’ নাম দিয়ে কেসটা ৫৩২১২  নাম্বারদিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছিল।তাঁরাপ্রত্যেকের ওপরে সরকার এবং বলসেভিকদের বিরুদ্ধে কাজ করে সরকার ফেলে দেবার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছিল । বিচারের প্রক্রিয়ায় কেউ তাদের অহিংসার পথ দিয়ে হিংসা রোধ করার লক্ষ্যের কথা লুকোয়নি।তাঁরা বারবার মহাত্মাগান্ধীর অহিংসা আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলনকে অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেছিল।বিচারালয়ের গোচর কার্যালয়ে রাখা কেসটার  ধারাবাহিক বিবরণ মতে মিখাইল ভেসিলিয়েভ নাকি গান্ধীর অহিংস ধ‍্যান ধারণা বহুল ভাবে প্রচার করে সরকারের ওপর প্রভাব ফেলার মানসে টলস্টয়বাদী  দলে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। মিখাইল ভেসিলিয়েভ বলেছিল – আমরা হিংসার বিরোধ করার জন্য গান্ধীপন্থার কথাই কেবল বলেছিলাম , কিন্তু প্রচারকার্যেগান্ধীপন্থাবহুলভাবেজনপ্রিয় করে তোলার আমাদের প্রয়াস গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া রোধ করল।’লিঅ’নিড এডলার বলেছিল পিটার যেলেনক’ভের কথা। তিনিই দেশে  চলা ক্রূর স্বৈরাচারী শাসনের অন্তিম ঘোষণার জন্য সরকারকে প্রভাবান্বিত করার জন্য গান্ধীবাদের অহিংস গণ অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব তুলে ধরেছিল ।লিঅ’নিডকে কেন্দ্র করে তাদের প্রত্যেকেই স্পষ্ট ভাষায়টলস্টয়বাদী  হিসেবে গান্ধীর অহিংসা আন্দোলনে বিশ্বাসী বলে  বারবার বলেছিল । কিন্তু প্রত্যেককেই নির্বাসনের রায়দেওয়াহয়েছিল ।লিঅ’নিড এডলার,পিটার যেলেনক’ভ এবং ভিক্টর একছুর্স্কিকে শ্বেত সাগরের ছলভেটস্কি দ্বীপে পাঠানো হয়েছিল। অন্যদের পাঠানো হয়েছিলসাইবেরিয়ায়।শ্বেতসাগরের দ্বীপে থাকা তিনজনকে অন্য অনেকের সঙ্গে ১৯৩৭  সনে পুনরায় একদিনের ভেতর বিচার করে বিকেলের দিকে ফায়ারিংস্কোয়ার্ডের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।ফিয়ডর তার গবেষণায় আভাস পেয়েছে  সেই ১৯৩৭ সনের অক্টোবর নভেম্বর মাসে লেনিনগ্ৰাড থেকে প্রায় আড়াইশো মাইল  উত্তরের সেণ্ডারম ম’খের পাইন গাছের জঙ্গলে এক হাজারের মতো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে হত্যা করে কবর দেওয়াহয়েছিল। তার মধ্যে ছিল রাশিয়ার গোড়া গির্জার প্রায় চারজন আর্চ বিশপ,ত্রিশ জনের মতো ক্যাথলিক যাজক, কয়েকশইউক্রেইনের লোক, কুড়িজনেরমতো টাটার এবং বেলারুশ নেতা, বিজ্ঞানী এবং সাহিত্যিক, জাহাজ নির্মাণ কারখানার কর্মী এবং এমনকি অন্য একজন জিপসি কিং। সঙ্গে ছিল অন্য কিছু মানুষ, যারা হঠাৎ নাই হয়ে গিয়েছিল। 

ফিয়ডর এমনকি মিলরেডড্রাচক’ভিটছএবং ব্রেংকলাজিটময় সম্পাদনা করা একটি বইয়ে পরবর্তী সম্পাদকের বিদেশি কমিউনিস্ট নেতার হত্যার সম্পর্কে লেখা একটি প্রবন্ধে অনেক দেশের নেতার কথা জানতে পেরেছিল।লিঅ’নিডমিট্রখিনের প্রবন্ধ থেকে ১৯৩৩ সনের ১মার্চ থেকে লেনিনগ্ৰাডের ইনস্টিটিউট অফ এনথ্রোপো’লজি এণ্ড এথনি’গ্ৰাফিতে অধ্যাপনা করা মিস্টারচেট্ট ওরফে বীরেন্দ্রনাথচট্টোপাধ্যায়কে ৩৭ সনের জুলাই মাসের এক রাতে ধরে এনে এক মাস দেড় মাসের ভেতরে গুলি করে হত্যার কথা জানতে পেরেছিল।ভারতীয় অবনী মুখার্জি এবং গোলাম এম্বিয়াখানলোহানীরও যে একইভাবে মৃত্যু হয়েছে সে কথাও ফিয়ডর জানতে  পেরেছিল। এগুলি ছাড়াইউক্রেইনের মহান রাজপ্রাসাদ কাজিমিয়েরঝরের ভেতরেও বহু পোলাণ্ডদেশীয় লোকের সঙ্গে হাজারের মতো স্থানীয় লোককে ত্রিশের  দশকের প্রথম ভাগে গণ কবর দেওয়ার কথা ফিয়ডর জানতে পেরেছিল।

নাডিয়া প’পভনার কথার উত্তরে ফিয়ডর কিন্তু এইসব কিছুই বলল না। সে মাত্র বলল–’ দেশের বহু লোক সেই সংকটময়সময়েরহস্যজনকভাবে নিরুদ্দেশ হয়েছিল।তাঁরাও নিরুদ্দেশ হল ঠাকুরমা।’

সে বলল–’ কিন্তু আমি জানতে পেরেছিলিঅ’নিড এডলার এবং অন্য টলস্টয়বাদীরাগান্ধীবাদের অহিংসা নীতি এবং অসহযোগ আন্দোলনে যে বিশ্বাসী ছিল এবং তাদের কার্যে যে তাকে প্রয়োগ করেছিল, সে কথা আদালতের মাঝখানে উচ্চস্বরে বারবার বলেছিল।’

যৌবনকালের অতি পরিচিত আদর্শ টলস্টয়বাদ, গান্ধীবাদ এবং অহিংস প্রতিরোধের নাম শুনে বৃদ্ধাটি পুনরায় আবেগিক হয়ে  পড়ল। তিনি কিছুক্ষণ ফিয়‍ডরের দিকে তাকিয়ে বললেন–’ তাই নয় কি ফিয়ডর?তাঁরা শেষ পর্যন্ত এই কথাটাই বলেনি কি?’

ফিয়ডরসায় দিল।

নাডিয়া প’পভনার দুই চোখ পুনরায় ছল ছলে হয়ে এল। তথাপি সে বলল–’ তারা সকলেই দেশপ্রেমিক ছিল। তারা প্রত্যেকেই দেশের লোককে ভালোবাসত। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা মানবপ্রেমী ছিল।’

ইতিমধ্যে বিশাল টেবিলটিতে একটা কাশির ওপরে ত্রিশটিরমতোব্লিনি এনে রাখা ছিল।তার চারপাশে ছিল মেখে খাবার জন্য ক্যাভিয়ার, টক জাতীয় এক ধরনের ক্রিম, জ্যাম এবং মধু। চিমনির আগুন খুঁচোতে থাকা আনুকও হাসতে হাসতে ভেতরে গিয়ে একটা ভটকার বোতল এবং কয়েকটিপেয়ালানিয়ে এসেছিল।

দেরি হয়েছিল। প্রত্যেকেরই ক্ষুধা পেয়েছিল। বৃদ্ধাটি ছাড়া প্রত্যেকেই টেবিলের চারপাশে বসল। প্রতিবেশীদের মেয়েটিনেলিয়ার সঙ্গে প্রথমে ভেতর থেকে আনা ধোঁয়ায় দেওয়া মাছ এবং সিদ্ধ শাকসব্জি টমেটো এবং শসার টুকরো গুলির সঙ্গে খেতে দিল। সঙ্গে সঙ্গে মানুষগুলি এক পেগ দু পেগ  ভটকা খেতে লাগল। তারপরে খেল বাঁধাকপি, আলু- পেঁয়াজ- রসুন- গাজর এবং মসলা মিশিয়ে রান্না করা চুরুহা। পরে ভিন্ন জিনিসের সঙ্গে মেখেব্লিনির সঙ্গে খেল মাংস । একেবারে শেষে খেল এক পেয়ালা গরম কফি । ‘রাজকীয়ভোজ, ঠাকুমা –– নাটাস্কা শ্রীযুক্তা প’পভক বলল।

 নাডিয়া প’পভনা মুচকি হেসে বলল–’ সবকিছুইওদের জোগাড়।’

ফিয়ডর জিজ্ঞেস করল – ‘ওরা চলে গেলে কীভাবে চলবে ঠাকুরমা?’ 

ঠাকুরমা কিছু বলতে চাইছিল। কিন্তু তার আগেই আনুক বলল – ‘আমরা যাব না ঠাকুমা।’

নেলিয়া বৃদ্ধাটিকে চামচ দিয়ে কিছু একটা খাইয়ে দিচ্ছিল। সে পিরিচটা এক জায়গায় রেখে তার হাত ধরে বলল – আপনার এত দুঃখ। আমরা যাব না।’

নাডিয়া প’পভনা তার হাতটা খামচে নিজের বুকে চেপে ধরে  আবেগের সঙ্গে বলল —’ সত্যিই যাবি না তোরা?’

কুকুরটা কু কু করতে লাগল।

বিদায়ের সময় ফিয়ডর বলল – ঠাকুরমা আমরা তোমাকে একবার লেনিনগ্ৰাডেনিয়ে যাব।’

‘লেনিনগ্ৰাডে? নাডিয়া প’পভনা  বলল–’ আমার স্বপ্নের লেনিনগ্ৰাডটা আর নেই। আমার প্রিয় সমস্ত মানুষ এখন হারিয়ে গেছে। কিন্তু নিষ্ঠুর সার্জেন্ট নিকোলাইয়াগুটকিনের কী হল?’

ফিয়ডর কোনো উত্তর দিতে পারল না।

সে মস্কোতেনাটাস্কার সঙ্গে ফিরে আসার সময়ঠাকুমার প্রশ্নটি তারমনে বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত