| 29 মার্চ 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প

অনুবাদ গল্প : ফুনেস, তার স্মৃতি । হোর্হে লুই বোর্হেস

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

অনুবাদ : জুয়েল মাজহার

 

তাকে আমার মনে পড়ে (যদিও পবিত্র এই ক্রিয়াপদটি ব্যবহারের কোনো অধিকার আমার নেই– এ দুনিয়ার এ অধিকার ছিল শুধু একজনের এবং সে লোক এখন মৃত); তার হাতে ধরা ছিল কালো এক আবেগ-কুসুম, সে এমনভাবে তাকিয়ে থেকেছিল যেন কেউ কখনো তাকায়নি এমন ফুলের দিকে ; যদিও প্রদোষের আলো থেকে সন্ধ্যার আলোর রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ এর দিকে তাকিয়ে থেকেছে জীবনভর।

তাকে আমার মনে পড়ে– সিগারেটের পেছনে তার অনড় মুখচ্ছবি, তার মুখের আদিবাসী আদল, সুদূর আর একা। মনে পড়ে (মনে হয়) বিনুনির মধ্যে একাকার তার সরু-লম্বা আঙুলের কথা। ওই হাতগুলোর পাশে বান্দা ওরিয়েন্টালের আস্তিনের ছাপঅলা একটি চা-মাপার পাত্রের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে, বাড়িটির জানালায় নলখাগড়ায় তৈরি হলদে পর্দার কথা, যাতে আঁকা অস্পষ্ট এক জলাভূমির ছবি। আমার কানে স্পষ্ট বাজে তাঁর কণ্ঠস্বর– ধীরলয়ের, ঘৃণামাখা, অতীত যুগের পূর্ব-উপকূলবাসী কঠোরস্বভাবী লোকদের মতো আনুনাসিক সেই কণ্ঠস্বর, যাতে এ যুগের ইতালীয় টান ছিল না। তিন বারের বেশি তাকে দেখার সুযোগ আমার হয়নি ; শেষবার দেখেছিলাম ১৮৮৭ সালে…।

আমাদের মধ্যে যারা তাকে চিনতাম তাদের সবারই উচিত তাকে নিয়ে কিছু না কিছু লেখা– এমনটা ভাবতে আমার ভালোই লাগে ; আমার বর্ণনা হতে পারে সংক্ষিপ্ততম আর নিঃসন্দেহে অকিঞ্চিৎকর, তবে কোনোক্রমেই সবচে কম পক্ষপাতমূলক হবে না। দুভার্গ্য যে আমি একজন আর্হেন্তীয়, আর তাই অসংযত উল্লাসের হাতে নিজেকে সঁপে দিতে পারব না আমি, যেটা উরুগুয়েতে এক বাধ্যতামূলক রীতি ; বিশেষ করে বিষয়বস্তু যখন হয় কোনো উরুগুইয়ানকে নিয়ে। নাকউঁচু, ফুলবাবু, শহুরে চাপাবাজ– ফুনেস এ জাতীয় অবমাননাকর শব্দ উচ্চারণ করত না, তবে আমি ভালো করেই জানি তার হয়ে আমি এসব দুর্ভাগ্যজনক বিষয়ের অবতারণা করেছি। পেদ্রো লিয়ান্দ্রো ইপুচে লিখেছেন, ফুনেস ছিলেন অতিমানবদের গোত্রের সূর্বসূরি– ‘বাঁধনহারা আর মাতৃভাষাপ্রেমিক এক জরাথুস্ত্র’, এ নিয়ে আমি কোনো তর্কে যাব না, তবে এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে সে ছিল ফ্রাই বেনতোস শহরের এক মস্তান, নিরাময়-অযোগ্য বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও তার ছিল। ফুনেসকে নিয়ে আমার প্রথম স্মৃতিটা বেশ জ্বলজ্বলে। ১৮৮৪ সালের মার্চ অথবা ফেব্রুয়ারির এক বিকেলে তাকে দেখেছিলাম। সে বছর গ্রীষ্মযাপনের জন্য আমার বাবা ফ্রাই বেনতোসে নিয়ে যান আমাকে । আমি আসছিলাম সানফ্রান্সিসকোর সেই খামারবাড়ি থেকে আমার জ্ঞাতিভাই বার্নার্দো আয়েদোর সঙ্গে। আমরা এসেছিলাম ঘোড়ায় চড়ে, মহা আনন্দে গান গাইতে গাইতে। আসাটা আমার আনন্দের একমাত্র কারণ ছিল না। ঘিনঘিনে গুমট একটা দিনের পর, দক্ষিণা বায়ুতাড়িত বিপুলাকায় ধূসর-নীলাভ এক ঝড়ে গোটা আকাশটা ঢাকা পড়ে গেল। ঝড়ো হাওয়া গাছপালার গায়ে খ্যাপার মতো চাবুক হেনে চলেছে ; আর আমার মনে এই আতঙ্ক (গোপন আশা) জাগল যে, খোলা গ্রাম-প্রান্তরে অঝোর বৃষ্টি আমাদের চমকে দেবে। যেন ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছি আমরা। দেখতে দেখতে এক সরু রাস্তায় এসে পড়লাম, যার দু পাশে মাটি থেকে বেশ উঁচু ইটবাঁধানো ফুটপাথ। হঠাৎই অন্ধকার হয়ে এল ; মাথার উপর দিকে দ্রুত আর প্রায় অনুচ্চ পদশব্দ শুনতে পেলাম। চোখ তুলে দেখি, উপরের সরু আর ভাঙ্গাচোরা ফুটপাথ ধরে একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে, যেন বা দৌড়াচ্ছে এক সরু, ভাঙাচোরা দেয়ালের উপর দিয়ে। মনে পড়ে সে পরত, রাখালদের মতো, খাটো, ঢিলে পাজামা, খড়ের তলিঅলা কটন স্লিপার, তার কঠিন মুখে ধরা সিগারেট–সবকিছুই এখন যে সীমাহীন ঝড়ো মেঘ জেগেছে তার পটভূমিতে হয়ে উঠেছে লক্ষ্যযোগ্য। অপ্রত্যাশিতভাবে বার্নার্দো তাকে লক্ষ করে চেঁচিয়ে উঠল, কয়টা বাজে, ইরেনেয়ো?” আকাশের দিকে একদম না তাকিয়ে, এক মুহূর্ত দেরি না করে ইরেনেয়ো জবাব দিল, আটটা বাজতে চার মিনিট বাকি, বুঝলে হে, পুঁচকে বার্নার্দো হুয়ান ফ্রান্সিসকো। তার কর্কশ কণ্ঠে ঝরে পড়ছিল বিদ্রুপ।

আমি খুব অন্যমনস্ক ছিলাম তাই যে বাতচিতের উদ্ধৃতি এখানে দিলাম, সেটার দিকে আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হতো না, যদি না জ্ঞাতি ভাইটি আমাকে খেয়াল করিয়ে দিত; এলাকায় ছেলে বলে ওর মধ্যে এক ধরনের বড়াই কাজ করত, আর সে কারণে ওই ছোকড়ার খোঁচা-মারা কথাকে পাত্তা না দেয়ার ভান করল সে।

ও আমাকে বলল গলির ওই ছোকড়ায় নাম ইরোনেয়ো ফুনেস, সে এ-ও জানাল যে, ওই ছোকড়ায় মাথায় কিছুটা ছিট আছে ; একটা  হচ্ছে লোকজনকে সে খুব একটা পাত্তা দেয় না আর সব সময়ই কয়টা বাজে সেটা জানা নিয়ে ঘড়ির মতো ব্যস্ত। ভাইটা আমাকে এও জানাল যে, ইরেনিয়ো গ্রামের ইস্ত্রিকার মহিলা মারিয়া ক্লিমেন্তেনা ফুনেসের ছেলে। কেউ কেউ বলে সল্টিং হাউসের এক ডাক্তারের (ও’কনর নামের এক ইংরেজ) ছেলে সে, আবার কেউ কেউ বলে ওর বাবা এল সালতো প্রদেশে ঘোড়ার প্রশিক্ষক হিসেবে অথবা ষাঁড়টানা গাড়ি চালিয়ে জীবিকানির্বাহ করতেন। ইরোনিয়ো থাকত ওর মায়ের সঙ্গে, ভিয়া লস লাউরেলেস-এর মোড়ে।

১৮৮৫ এবং ১৮৮৬ সালে মন্তেভিদেয়ো শহরে আমরা গ্রীষ্মকালটা কাটালাম। ১৮৮৭ সালে ফ্রাইবেনতোসে ফিরে এলাম। স্বাভাবিকভাবেই আমি আমার চেনাজানা লোকেদের হাল-হকিকত সম্বন্ধে খোঁজখবর করলাম এবং সবশেষে “সময়মাপক ফুনেসের” কথা। আমাকে বলা হলো যে, সানফ্রান্সিসকোর এক খামারবাড়িতে এক বুনো ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে সে পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যায়। ওই অস্বস্তিকর সংবাদটা শোনার পর আমার যে কেমন লেগেছিল সে কথা আজো মনে পড়ে। যে একটিবার আমি তাকে দেখেছিলাম, তখন আমরা সানফ্রান্সিসকোর খামার বাড়ি থেকে ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি ফিরছি, আর সে হেঁটে যাচ্ছে উঁচু ভূমির ওপর দিয়ে। আমার ভাই বার্নার্দের মুখে শোনা নতুন এই ঘটনাটা স্বপ্নের মতো শোনাচ্ছিল, যেন বা এর পুরোটাই অতীতের উপাদান দিয়ে তৈরি। আমি জানতে পারলাম ইরোনোয়া তার বিছানা থেকে নামতে পারে না, তবে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে বাড়ির পেছনের ডুমুর গাছটির দিকে অথবা কোনো এক মাকড়সার জালের দিকে। সন্ধ্যাবেলা তাকে নিয়ে বসানো হতো জানালার ধারে।

সে এমনই গর্বিত এক তরুণ ছিল যে, সে এমন ভান করত যেন ঘোড়ার পিঠ থেকে ওই ভয়ানক পড়ে যাওয়াটা আসলে তার জন্য শাপেবর হয়েছে…. লোহার শিকঅলা জানালাটার পেছনে, খাটের ওপর শোয়া অবস্থায় তাকে আমি দুবার দেখেছি, যা রূঢ়ভাবে তার চির-বন্দিদশাকেই ফুটিয়ে তুলেছিল– শুয়ে আছে সে স্থাণুর মতো, মুদিত চোখজোড়া ; যথারীতি স্থবির-অচঞ্চল সে বিভোর হয়ে আছে গন্ধতরুর সুরভিত পল্লবের কথা ভেবে।

কিছুটা গর্বের সঙ্গে আমি বলতে চাই যে, ঠিক প্রায় একই সময়ে আমি রীতিসিদ্ধ উপায়ে লাতিন ভাষা শেখা শুরু করি। আমার স্যুটকেসে করে আমি বয়ে বেড়াতাম ল্যামন্ডের (Lhomond) দ্য ভিরিস ইলাসত্রিবাস (De viris illustribus)  কিশেরাতের থেসারাস (Thesaurus of Quicherat) জুলিয়াস সিজারের টীকাভাষ্য (Julius Caesar`s Commentaries) ; এবং সেই সঙ্গে প্লিনির নাতুরালিস হিস্তোরিকার (Pliny`s Naturalis Historica) অনেকগুলো খণ্ড- যা একজন লাতিনপন্থি হিসেবে আমার যৎসামান্য মেধাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল (এখনো যায়)। ছোট শহরে কিছুই গোপন থাকে না ; ইরোনেয়ো শহরের উপকণ্ঠে তার বাড়িতে বসে অচিরেই এসব ভিনদেশি গ্রন্থের আগমনবার্তা জেনে যায়। সে আমাকে সযতেœ লেখা মনরাঙানো এক চিঠি পাঠায় ; সে চিঠিতে সে আমাকে আমাদের “সংক্ষিপ্ত শোচনীয়” সাক্ষাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেটা ছিল ১৮৮৪ সালের ৭ ফেব্র“য়ারি। সংক্ষেপে, প্রশংসার সুরে সে ওই বছরেই প্রয়াত আমার চাচা দন গ্রেগরিও হায়েদো “গৌরবময় ইতুসায়েঙ্গো যুদ্ধে তার দুই মাতৃভূমির প্রতি যে বীরত্বব্যঞ্জক অবদান রেখেছিলেন”, চিঠিতে সংক্ষেপে এর সপ্রংশস উল্লেখ করে ; সেই সঙ্গে সে আমাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানায় আমি যেন আমার কেনা  একটি বই তাকে ধার দিই, সঙ্গে পাঠবস্তু পুরোপুরি বোঝার জন্য একটা অভিধানও তাকে দিই, “যেহেতু লাতিন ভাষাটা এখনো আমি ভালোভাবে রপ্ত করতে পারিনি। ” বইগুলো সে ভালো অবস্থায় যথাশিগগির ফিরিয়ে দেবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। চিঠিটা ছিল নিখুঁত, হরফগুলো খুবই চমৎকারভাবে বিন্যস্ত ; বানানগুলো আন্দ্রেস বেইয়ো-নির্দেশিত (Andres Bello) রীতি অনুসরণ করে লেখা : Y-র জন্য I ;  g-র জন্য j; প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা এক ধরনের মস্করা। আমার ভাই আমাকে আশ্বস্ত করল এখানে ঠাট্টা মস্করার কিছু নেই : “এই, এই হলো গিয়ে ইরোনেয়ো। ”

অভিধান হলেই চলে, জটিল লাতিন ভাষা পড়ে বোঝার জন্য আর কিছু লাগে না, এমন ভাবনাকে ঔদ্ধত্য, মূর্খতা, নিজের সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি রকমের উচ্চ ধারণা নাকি নির্বুদ্ধিতা বলব জানা ছিল না আমার। ফুনেসের ভ্রান্ত ধারণার পুরোপুরি অপনোদনের জন্য আমি তাকে কিশেরাতের গ্রাদাস আদ পারনাসাম এবং (Gradus ad Parnassum of Quicherat and the Pliny) প্লিনির বই পাঠালাম।

[১৪ ফেব্রুয়ারিতে বুয়েনোস আইরেস থেকে একটি টেলিগ্রাম পেলাম ; এতে বলা হয়েছে আমি যেন অবিলম্বে সেখানে ফিরে যাই, কারণ আমার বাবার অবস্থা “মোটেই ভালো নয়”। ঈশ্বর আমায় ক্ষমা করবেন ; তবে কিনা জরুরি তারবার্তা পাওয়ার মর্যাদা ও সংবাদটির নেতিবাচকতা ও ইতিবাচক ক্রিয়াবিশেষণের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা ফ্রাই বেনতোসের সবার কাছে তুলে ধরা, পুরুষসুলভ ঔদাসিন্য দিয়ে দুঃখ-শোকে অবিচল থাকার ভান করে আমার নিজের দুঃখকে নাটকীয়তা দেয়ার লোভ। এসবই সম্ভবত আমাকে আমার প্রকৃত বেদনাবোধ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। তল্পিতল্পা গোছানোর পর আমি বুঝতে পারাম যে আমি গ্রাদাস আদ্ পারনাসাম এবং প্লিনির হিস্তোরিয়া নাতুরালিস সঙ্গে নেইনি। পরের দিন সকালে স্যাটার্ন জাহাজ যাত্রা শুরু করবে ; খাওয়া দাওয়া সেরে ওই রাতে হেঁটে আমি ফুনেস-এর বাড়ি গেলাম। দিনটা যেমন, রাতটাও তার চেয়ে কম পীড়াদায়ক ছিল ছিল না দেখে অবাকই হলাম।

ওদের বাড়ি পৌঁছার পর ফুনেস-এর মা দরজা খুলে আমাকে স্বাগত জানালেন। তিনি আমাকে বললেন ইরোনিয়ো পেছনের ঘরে আছে। তিনি এও বললেন,  ঘর অন্ধকার দেখে আমি যেন আবার অবাক না হই, কেননা ইরেনেয়ো রাতে অবসরের সময়ে বাতি না জ্বালিয়ে থাকতে পছন্দ করে। আমি টাইল করা ফাঁকা জায়গাটা হেঁটে পার হয়ে দ্বিতীয় ফাঁকা জায়গাটায় পা রাখলাম। সেখানটায় একটা আঙুরলতার ঝাড় ; মনে হলো নিকষ কালো অন্ধকারে এসে পড়েছি। তখন হঠাৎই কানে এলো ইরেনেয়োর বিদ্রুপমাখা উচ্চকিত গলা ; কণ্ঠে তার লাতিন ভাষা ; অন্ধকার থেকে ভেসে আসা আনন্দ-গদগদ সেই কণ্ঠ কোনো একটা রচনা থেকে পাঠ করছে অথবা কোনো প্রার্থনার শ্লোক বা জাদুমন্ত্র আওড়াচ্ছে। রোমান শব্দমালা ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে প্যাটিওর নিরেট বুকে। সংশয়কম্পিত আমার মনে শব্দগুলোকে অবোধ্য অসংলগ্ন আর বিরামহীন বলে মনে হলো ; পরে, ওই রাতের বিপুল কথোপকথনের সুবাদে আমি জানলাম, এগুলো প্লিনির নাতুরালিস হিস্তোরিয়ার (Naturalis Historia) সপ্তম পুস্তকের চব্বিশতম অধ্যায়ের প্রথম অনুচ্ছেদ। ওই অধ্যায়ের প্রতিবাদ্য হচ্ছে স্মৃতি ; শেষ কথাগুলো ছিল : IL nihil non isdem verbis reddertur auditum.

গলার স্বর একটুও না বদলে ইরেনেয়ো আমাকে ঘরের ভেতরে আমন্ত্রণ জানাল। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ধূমপান করে চলেছে সে। আমার মনে হয় না যে পরদিন ভোরের সূর্য উঁকি দেবার আগ পর্যন্ত তার মুখটা দেখতে পেয়েছিলাম। মনে পড়ে তার মুখে ধরা সিগারেটের ক্ষণক্ষায়ী আগুনের কথা। ঘরটিতে এক ধরনের স্যাঁতসেঁতে অনুগ্র গন্ধের উপস্থিতি। আমি বসলাম। আমি আমার টেলিগ্রাম প্রাপ্তি এবং সেই সূত্রে বাবার অসুস্থতার কথা বললাম তাকে।


আরো পড়ুন: অনুবাদ গল্প: কয়েদির কাপড় । নগিব ‎মাহফুজ


এবার আমি আমার কাহিনীর সবচেযে জটিল জায়গাটায় এসে পড়েছি। যেহেতু পাঠকমাত্রই বুঝতে পারছেন অর্ধশতাব্দী আগের এই কথোপকথনটুকু ছাড়া পুরোটা কাহিনীতে আর কোনো অভিমুখ ছিল না একথা শুরুতেই বলেছি। সে আমাকে কী কী বলেছিল তা আর বলতে চাই না, সেগুলো এখন চিরতরে উদ্ধারের অতীত হয়ে গেছে। আমি বরং আমাকে বলা ইরেনেয়োর কথাগুলো বিশ্বস্ততার সঙ্গে সংক্ষেপে তুলে ধরব। পরোক্ষ আলোচনা হয় দূরবর্তী আর দুর্বল। আমি জানি যে, আমি আমার কাহিনীর কার্যকারিতা বিসর্জন দিচ্ছি। আমি শুধু আমার পাঠকদের সেই রাতের ধোঁয়াটে ভঙ্গুর অস্পষ্ট কথোপকথন কল্পনায় কান পেতে শুনে নিতে বলব। সে সব কথা রীতিমতো বিস্ময়-বিমূঢ় করে দিয়েছিল আমাকে। ইরেনেয়ো হিস্তোরিয়া নাতুরালিসে বর্ণিত বিস্ময়কর স্মৃতি বিষয়ে লাতিন এবং স্প্যানিশ উভয় ভাষায় বয়ান শুরু করল : পারস্যের রাজা সাইরাস (Cyrus) তার সেনাদলের প্রতিটি সৈন্যের নাম বলে দিতে পারতেন ; মিত্রিদাতেস ইউপাতোর (Mithridates Eupator) তার সাম্রাজ্যের ২২টি ভাষায় বিচারকার্য সম্পন্ন করতেন ; সিমোনিদেস (Simonides) স্মৃতিকলার উদ্ভাবন করেছিলেন ; মিত্রোদোরাস (Mitrodorus) কোনো কিছু একবারমাত্র শুনেই তা অবিকল নির্ভুল বলে দিতে পারতেন। অকপট ভঙ্গিতে ইরেনেয়ো আমাকে বলল, এসবে লোকে অবাক হয় জেনে তার বরং অবাকই লাগে ; সে আমাকে বলল, সেদিন মেঘমেদুর বিকেলে আসমানি রঙের ঘোড়টা তাকে পিঠ থেকে ফেলে দেবার আগে, অন্যসব খ্রিস্টানের মতো সে ছিল দৃষ্টিহীন, বধির, স্বপ্নচারী আর স্মৃতিহারা। (আমি তাকে কাঁটায় কাঁটায় সময় বলে দেওয়ার, নামবাচক পদ মনে রাখার ব্যাপক কেরামতির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চেষ্টা করলাম ; কিন্তু আমার কথায় ভ্রুক্ষেপও করল না সে। ) সে বলল, ঊনিশ বছর ধরে স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে আছে সে ; না তাকিয়েই দেখতে পায় সে, না শুনেই শ্রবণে সক্ষম, তার স্মৃতি থেকে সবকিছু, প্রায় সবকিছু মুছে গেছে। ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল সে। যখন চেতনা ফিরল বর্তমান তার কাছে এত প্রাচুর্য নিয়ে আর এতটাই উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিল যে, তা হয়ে উঠল অসহনীয়। তার সবচেয়ে পুরনো আর সবচেয়ে তুচ্ছ স্মৃতির বেলায়ও একই ব্যাপার ঘটল। জ্ঞান ফেরার কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারল চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে সে। কিন্তু তাতে কোনো ভাবান্তরই হলো না তার। তার যুক্তি, নড়াচড়া করার শক্তি হারালেও খুব বেশি মূল্য দিতে হয়নি তাকে। আর এরই সুবাদে তার ইন্দ্রিয়ানুভূতি আর স্মৃতি হয়ে উঠেছে পরিপূর্ণ আর অভ্রান্ত।

চকিতে আমরা টেবিলে তিনটি মদের গ্লাস দেখতে পেলাম। ফুনেস আঙুরের প্রতিটি দানাকে এক নজর দেখে নিল, যেগুলোকে পেষণ করে বানানো হয়েছে এই মদ ; সেই সঙ্গে প্রতিটি লতানো ঝাড়, বৃন্ত আর কুঁড়িকে। ১৮৮২ সালের ৩০ এপ্রিল সকালে দক্ষিণ আকাশের মেঘমালার আকার কেমন ছিল সেটাও মনে ছিল তার এবং সে তার স্মৃতির গহীনে ওই মেঘমালাকে চামড়ার বাঁধানো একটি বইয়ের ডিজাইনে স্ফটিক দানার সঙ্গে তুলনা করতে পারত ; বইটা সে একবারমাত্র দেখেছিল। অথবা তুলনা করতে পারত কেব্রাচো যুদ্ধের (Battle of the Quebracho) প্রাক্কালে রিও নেগ্রেতে (Rio Negro) এক মাঝির হাতে উৎক্ষিপ্ত পালকের সঙ্গে। কোনো সাদামাটা স্মৃতি ছিল না তা। দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রতিটি ছবিই হচ্ছে মাংসপেশির সংবেদনের, তাপীয় সংবেদন ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত।   সে তাঁর প্রতিটি স্বপ্ন, প্রতিটি খেয়ালি কল্পনার পুনর্নিমাণে সক্ষম ছিল। পুরোপুরি একটা দিনকে সে দু’থেকে তিনবার পুনর্নির্মাণ করত ; একটিবারও কাজে কোনো ভুল করেনি সে। সে আমাকে বলেছিল : “পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে গোটা মানবজাতির ভাণ্ডারে যত স্মৃতি জমা হয়েছে, আমার নিজের স্মৃতির সঞ্চয় তার চেয়েও বেশি”, সে আরো বলেছিল : “আমার স্বপ্নেরা অন্য লোকেদের জাগ্রত মুহূর্তের মতো’’ এবং ভোরের দিকে সে আমাকে বলল : “বুঝলে জনাব, আমার স্মৃতি হচ্ছে গিয়ে ময়লার আস্তাকুঁড়ের মতো।”

ব্ল্যাকবোর্ডে আঁকা একটি বৃত্ত, একটি সমকোণী ত্রিভুজ, রম্বস। এই কাঠামোগুলোকে আমরা মনে মনে কল্পনা করে নিতে পারি। তরুণ ঘোড়ার ঝড়ো কেশর, গিরিপথে গবাদিপশুর পাল, ঈষৎ কম্পমান অগ্নিশিখা এবং এর অপরিমেয় ছাই, প্রলম্বিত জাগরণের মধ্যে একজন মৃতের অনেক মুখচ্ছবির আদল নিয়ে ইরেনেয়ো সেটাই করতে পারত। আমি জানি না আকাশে কত তারা দেখতে পেত সে।

[সে আমাকে এসব কথাই বলল; তখন অথবা পরে কখনোই তার কথায় সংশয় জাগেনি আমার মনে। সেদিনগুলোতে না ছিল সিনেমা, না ছিল গ্রামোফোন; তথাপি আমার কাছে এটা বিস্ময়কর, এমনকি অবিশস্য মনে হয়, কেউ কেন ফোনেসকে নিয়ে কোনো নিরীক্ষায় এগিয়ে এল না। আসল ব্যাপার হচ্ছে, যা কিছু পেছনে ফেলে আসা সম্ভব তাকে হেলাভরে পেছনে ফেলে আসতেই অভ্যস্থ আমরা। বোধ করি, আমাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, আমরা অমর এবং আগে বা পরে সবাই সবকিছু করে ফেলবে বা জেনে ফেলবে।

অন্ধকারের মধ্যে, ফোনেসের কণ্ঠস্বর বেজেই চলছিল। সে আমাকে বলল যে, ১৮৮৬ সালের দিকে সে অভিনব এক গণণা-পদ্ধতির উদ্ভাবন করে এবং দিন কয়েকের মধ্যেই সে ২৪ হাজারের কোটা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। সে তা লিখে রাখেনি, কেননা একবার সে যা ভাবে তা আর কখনো মন থেকে তার মুছে যায় না। আমার বিশ্বাস, তার প্রাথমিক প্রণোদনা ছিল একটি ব্যাপারে তার অস্বস্তি। আর সেটা হচ্ছে “তেত্রিশ জন উরুগুইয়ান দেশপ্রেমিকের” জন্য একটিমাত্র শব্দ এবং প্রতীক নয়, বরং দরকার দুটি প্রতীক এবং তিনটি শব্দ। পরে সে অন্যসব সংখ্যার বেলায়ও তার উদ্ভট নিয়মের প্রয়োগ করে। নজির দিয়ে বলি, সাত হাজার তেরোর (৭০১৩) বদলে সে বলত, “মাক্সিমো পেরেস” (Maximo Perez) ; সাত হাজার চৌদ্দর (৭০১৪) বদলে সে বলত, “রেলপথ”, অন্য সংখ্যাগুলো হচ্ছে, “লুইস মেলিয়ান লাফিনুর”, “ওলিমার”, “সালফার”, “গদা”, “তিমি”, “গ্যাস”, “কড়াই”, “নোপোলিয়ঁ”, “অগাস্টিন দ্য ভিদিয়া”,। পাঁচ হাজার (৫০০০) না বলে সে বলত “নয়” (৯)। প্রতিটি শব্দের সঙ্গে সে জুড়ে দিত বিশেষ এক চিহ্ন, এক ধরনের নির্দেশক। পরেরগুলো ছিল খুবই জটিল… আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম সম্পর্কহীন অসংলগ্ন শব্দমালা যেকোনো গণণা-পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতিহীন। আমি তাকে বললাম যে, যখন কেউ বলে “৩৬৫”, তখন সে আসলে বলে, “তিনটি শত, ছয়টি দশ এবং পাঁচটি এক” “নিগ্রো তিমোতেয়ো  অথবা মাংস-কম্বল”-এর মতো “সংখ্যাকে” বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। ফোনেস  বোধ করি আমার কথা বুঝতে পারেনি, নয়ত বুঝতে চায়নি।

[সপ্তদশ শতকে লক (Locke) একটি বাগধারাকে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নিয়েছিলেন (এবং নাকচ করেছিলেন) যাতে প্রতিটি আলাদা বস্তু, প্রতিটি পাথরখণ্ড, প্রতিটি পাখি এবং গাছের ডালের ছিল আলাদা ও নিজস্ব নাম। ফুনেস একদা অনুরূপ এক বাগধারার কথা ভেবেছিল, কিন্তু পরে অতি সাধারণীকৃত আর দ্ব্যর্থক বিধায় সে ধারণা ত্যাগ করে। ফুনেস কেবল প্রতিটি বনের প্রতিটি গাছের প্রতিটি পাতাকেই স্মরণ করত না, বরং সেই সঙ্গে ওই পাতাটিকে দেখা ও কল্পনা করার মুহূর্তের স্মৃতিকেও জাগিয়ে তুলতে পারত। সে প্রতিজ্ঞা করল যে, সে তার যাবতীয় অতীত-অভিজ্ঞতাকে সত্তর হাজার স্মৃতিতে নামিয়ে আনবে, যেগুলোকে সে সংখ্যাটি দিয়ে বিচার করবে।

দুটো বিবেচনা থেকে পরে অবশ্য সেটা করা থেকে সে নিবৃত্ত হয়: কাজটা অন্তহীন আর সেইসঙ্গে অর্থহীন। সে দেখল যে, যখন তার মৃত্যু হবে তখনো তার শৈশবের সব স্মৃতির শ্রেণীকরণের কাজ শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না।

[আমি যে দুটি প্রকল্পের (স্বাভাবিক সংখ্যাক্রম প্রকাশের জন্য অসীম এক শব্দভাণ্ডার এবং স্মৃতিতে ধৃত সব ছবির জন্য ব্যবহারযোগ্য একটি মনো-ক্যাটালগ) কথা উল্লেখ করলাম, সেগুলো উদ্ভট হলেও তাতে এক ধরনের মহিমা আছে। এগুলো আমাদের ফুনেসের হতবিহ্বল করা কাজ সম্বন্ধে ক্ষীণ আভাস পেতে, সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সহায়তা করে। আমরা যেন ভুলে না যাই, সাধারণ, নিষ্কাম ধারণাকে বোঝার ব্যাপারে ফুনেস ছিল অপারগ। “কুকুর” এই বর্গ-প্রতীকটি সব আকার ও প্রকারের বিসদৃশ প্রাণীগুলোকে অভিন্ন পরিচয়ের অন্তর্ভূক্ত করেছে এটা দেখা তার জন্য “শুধু কঠিনই ছিল না, সেই সঙ্গে এটা তাকে বিরক্ত করছিল যে, বিকেল তিনটা চৌদ্দ মিনিটের (এক পাশ থেকে দেখা) কুকুরটাকে বিকেল তিনটা পনেরো মিনিটে (সামনের দিতে থেকে দেখা) দেখা কুকুরের সঙ্গে একই নামে ডাকা হবে। আয়নায় তার নিজের মুখ, তার নিজের হাত, প্রতিবারই তাকে অবাক করত। জোনাথন সুইফট লিখেছিলেন, লিলিপুটের সম্রাট ঘড়িতে মিনিটের কাঁটার চলার মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারতেন ; ফুনেস অবিরতভাবে দুর্নীতির নিঃশব্দ অগ্রসরমানতা, দন্তক্ষয় আর ক্লান্তিকে আঁচ করতে পারত। মৃত্যুর, আর্দ্রতার ক্রমশ  এগিয়ে আসা লক্ষ করেছিল সে। এক বহুরূপময় এক পৃথিবীর নীরব, উজ্জ্বল দর্শক ছিল সে, জগৎ ছিল ক্ষণস্থায়ী এবং প্রায় অসহনীয়ভাবে যথাযথ। বাবিলন, লণ্ডন নিউ ইয়র্ক তাদের চোখ ধাঁধানো জৌলুস দিয়ে মানুষের কল্পনাকে অতি-অভিভূত করেছে। এসব মহানগরীর ওইসব জনবহুল টাওয়ার অথবা ওই জলকল্লোলিত এভিনিউগুলোর এমন কেউ নেই যে কোনো এক ক্লান্তহীন বাস্তবের উত্তাপ ও চাপ অনুভব করেছে, যে অফুরন্ত বাস্তব ইরোনিয়োকে তার দক্ষিণ আমেরিকান দীনহীন খামার বাড়িতে কুঁরে কুঁরে খেয়েছে। ঘুমানো তার জন্য দুরূহ হয়ে উঠল। ঘুমানো মানে পৃথিবী থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে অন্ধকারে ফুনেস তার চারপাশের বাড়িগুলোর দেয়ালের প্রতিটি ফাটল আর গড়নের কথা কল্পনা করত। (আমি আবারও বলছি তার সবচেয়ে মামুলি স্মৃতিগুলোও ছিল দৈহিক আনন্দ ও কষ্টের ব্যাপারে আমাদের যে ধারণা তার চেয়েও নিখুঁত আর অনুপুঙ্খ)। পূর্ব দিকের যে অংশটি তখনো শহরের অংশ হয়ে ওঠেনি, আর বাড়িঘর ওঠেনি, সেখানে কিছু নতুন অপরিচিত বাড়িঘর ছিল; ফুনেস সেগুলো কালো, ঘনবদ্ধ, সমরূপ ছায়ায় রচিত বলে কল্পনা করত। ফুনেস সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে ঘুমাতে যেত। সে এমন কল্পনাও করত যেন সে পড়ে আছে কোনো এক নদীতলদেশে, ঢেউ এসে হেলায় ধাক্কা দিচ্ছে তাকে পাথরের গায়ে। অনায়াসে সে রপ্ত করে ফেলল ইংরেজি, ফরাসি, পর্তুগিজ আর লাতিন ভাষা। তথাপি আমার সন্দেহ হয়, ভাবনার জগৎটা তার খুব একটা মজবুত ছিল না। চিন্তা করা মানে পার্থক্য ভুলে যাওয়া, সাধারণীকরণ করা, বিমূর্ত করা। ফুনেসের আতিশয্যভরা পৃথিবীতে বিশদ ছাড়া, প্রায় পরস্পর-সন্নিহিত বিশদ ছাড়া কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না।

প্রত্যুষের ঝলমলে আলো মাটির প্যাটিওর গভীরে এসে পড়ল।

ঠিক তখনই সে মুখটাকে দেখতে পেলাম আমি, যে মুখ রাতভর কথা বলেছে। ইরেনেয়োর বয়স ছিল ঊনিশ। জন্ম তার ১৮৬৮ সালে। ব্রোঞ্জের মূর্তির মতো মনে হলো তাকে মিশরের চেয়েও প্রাচীন, দৈববাণী আর পিরামিডের চেয়েও প্রাচীন। মনে হলো, আমার উচ্চারিত প্রতিটি কথা, আমার প্রতিটি মুখভঙ্গি অথবা আমার হাতের প্রতিটি ইশারা বেঁচে থাকবে তার দুর্মর স্মৃতিতে। অর্থহীন অঙ্গভঙ্গি করে ফেলেছি এই ভয়ে আমি ছিলাম অপ্রস্তুত বিমূঢ়।

ইরেনেয়ো ফুনেস মারা গেল ১৮৮৯ সালে, ফুসফুসে কফ জমে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত